<p>রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার খন্দকার গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে অভিজ্ঞতার সদন জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর সময়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে দুই বছরে দুবার পদোন্নতি নেওয়ার পাশাপাশি অনিয়ম করে উপ-রেজিস্ট্রার থেকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। </p> <p>বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদুক) অভিযোগ করা হলে দুদক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে জানায়। পরে ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর দুদক অভিযুক্ত খন্দকার গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগ প্রমাণসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে উপস্থাপন করে এবং কর্তৃপক্ষের লিখিত বক্তব্য চেয়ে ১০ দিনের সময় বেঁধে দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মজিব উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি এর সত্যতা পায়। সর্বশেষ গত ২ জুন ওই কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।</p> <p>বুধবার (২ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। </p> <p>অনুসন্ধানে জানা গেছে, খন্দকার গোলাম মোস্তফা ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার পদে ছয় মাসের (অ্যাডহক) চুক্তিতে যোগ দেন। ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর সহকারী রেজিস্ট্রার পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে ওই বিজ্ঞপ্তির আলোকে আবেদন করেন তিনি। ২০১৪ সালের ২৩ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৪০তম সভায় তাঁকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।</p> <p>সূত্রটি জানায়, খন্দকার গোলাম মোস্তফা স্থায়ী নিয়োগ পেলেও এক বছর পর ২০১৫ সালে তার চাকরি স্থায়ী হয়। ২০১৭ সালের ১৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ নিয়োগ পাওয়ার এক মাসের মাথায় ১৬ জুলাই তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার পদ থেকে উপ-রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি পান। ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটের ৬৩তম সভার অনুমোদনে তিনি উপ-রেজিস্ট্রার পদ থেকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি পান। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুই বছরে দুবার পদোন্নতি নেন তিনি।</p> <p>অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, খন্দকার গোলাম মোস্তফা তাঁর চাকরির ব্যক্তিগত ফাইলে অ্যাডহক ভিত্তিতে যোগদানের সময় জমা দেওয়া অভিজ্ঞতা সনদে ‘দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ছড়া ও বিলে মৎস্য উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, কুড়িগ্রাম’-এ চাকরির অভিজ্ঞতা দেখিয়েছেন ২০০২ সালের ১৯ আগস্ট থেকে ২০০৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পরবর্তীতে উপ-রেজিস্ট্রার পদ থেকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতির সময় দেখানো অভিজ্ঞতা সনদে একই প্রকল্প পরিচালক (স্বপন কুমার দেব)-এর স্বাক্ষরে ‘দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ছড়া ও বিলে মৎস্য চাষ এবং ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, কুড়িগ্রাম’-এ চাকরির অভিজ্ঞতা দেখিয়েছেন ২০০২ সালের ১৮ আগস্ট থেকে ২০০৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।</p> <p>বিশ্ববিদ্যালয় অনুসন্ধান কমিটির গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘খন্দকার গোলাম মোস্তফার উপস্থাপিত অভিজ্ঞতা সনদ দুটির মধ্যে একটির প্রকল্প শিরোনাম ‘দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ছড়া ও বিলে মৎস্য উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, কুড়িগ্রাম’ এবং অন্য প্রকল্পের শিরোনাম ‘দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ছড়া ও বিলে মৎস্য চাষ এবং ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, কুড়িগ্রাম’। অর্থাৎ একটিতে বিলে মৎস্য উন্নয়ন, অন্যটিতে বিলে মৎস্য চাষ উল্লেখ আছে। সনদপত্র দুটি অসঙ্গতিপূর্ণ। অভিজ্ঞতা সনদ দুটিতে প্রকল্প পরিচালক (স্বপন কুমার দেব)-এর স্বাক্ষরের ভিন্নতা সন্দেহজনক’।</p> <p>এছাড়াও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘খন্দকার গোলাম মোস্তফার ব্যক্তিগত ফাইলে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে যোগদানের সময় পেশকৃত জীবনবৃত্তান্তে ‘দশের পশ্চিমাঞ্চলের ছড়া ও বিলে মৎস্য উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, কুড়িগ্রাম’-এ চাকরির অভিজ্ঞতা অংশে ওভার রাইটিং করা হয়েছে। এতে ২০০৮ সালের ৩০ জুনের স্থলে ২০০৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর করা হয়েছে।</p> <p>প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘২০১৭ সালের ১৬ জুলাই সিন্ডিকেটের ৫৩তম সভার কার্যবিবরণীতে ‘সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনের দিন থেকে এই নিয়োগ কার্যকর হবে’ উল্লেখ রয়েছে। ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই সিন্ডিকেটের ৫৩তম সভার অনুমোদনক্রমে ১৬ জন কর্মকর্তা সহকারী রেজিস্ট্রার পদ হতে উপ-রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি পান। যাদের মধ্যে ১৫ জনের নিয়োগপত্রে ‘সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনের দিন থেকে এই নিয়োগ কার্যকর হবে’ উল্লেখ রয়েছে। শুধুমাত্র, খন্দকার গোলাম মোস্তফার ব্যক্তিগত ফাইলে সহকারী রেজিস্ট্রার পদ থেকে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে উপ-রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি সংক্রান্ত দুই ধরণের নিয়োগপত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। যদিও ৫৩তম সিন্ডিকেট সভায় এই নিয়োগপত্রের ভিন্নতার বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই।’ খন্দকার গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে অভিজ্ঞতা ও নিয়োগপত্রে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।</p> <p>একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে অভিজ্ঞতা ও নিয়োগপত্রে অসঙ্গি দেখা দিলেও এসবের কোনো ব্যাখ্যা অনুসন্ধান কমিটি পায়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।</p> <p>অভিযোগ আছে, সহকারী রেজিস্ট্রার থেকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি পেতে যে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন তা খন্দকার গোলাম মোস্তফার ছিল না। শুধু ভিসির আস্থাভাজন ও সরকার দলের ক্ষমতার দাপটে তিনি এই অনিয়ম করেছিলেন। এসব অনিয়মের বিষয়ে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রেজিস্ট্রার, সিন্ডিকেট সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব বরাবর আবেদন করেছিলেন।</p> <p>এসব বিষয়ে খন্দকার গোলাম মোস্তফা কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী উপ-রেজিস্ট্রার জাহিদুর রহমান দুদকে অভিযোগ করেছেন। দুদক বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনকে ফরোয়ার্ড করেছেন। কমিশন আমার, জাহিদুর রহমান ও রেজিস্ট্রারের বক্তব্য চেয়েছেন। পরে জাহিদুর রহমান তার অভিযোগ প্রত্যাহার করে বলেছেন, এই অভিযোগ আমি করিনি এবং স্বাক্ষরটিও আমার না। সুতরাং এই অভিযোগের কোনো কার্যকারিতা নেই।’</p> <p>অভিজ্ঞতার সনদ সঠিক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার দাখিল করা অভিজ্ঞতা সনদ ঠিক আছে। বিপক্ষের লোকজন এসব করছে, যার কোনোটার ভিত্তি নেই।</p> <p>বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি নতুন মানুষ। আমার কাছে এখন পর্যন্ত এমন কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’</p>