ঢাকা, শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫
৩০ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৪ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫
৩০ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৪ রমজান ১৪৪৬

পাঠ্যবই ছাপতে ব্যয় বেড়েছে ৭০০ কোটি টাকা, মানে উন্নতি

শরীফুল আলম সুমন
শরীফুল আলম সুমন
শেয়ার
পাঠ্যবই ছাপতে ব্যয় বেড়েছে ৭০০ কোটি টাকা, মানে উন্নতি

চলতি বছর বিনা মূল্যে পাঠ্যবই ছাপতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বেশি লাগছে। গত বছর বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপতে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ বছর ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা। এতে বই মুদ্রণে ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।

ছাপার ব্যয় বৃদ্ধি ৭০০ কোটি টাকাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে বই ছাপায় বিপুল অঙ্কের টাকা বেশি লাগার পেছনে অন্যতম দুটি কারণ পাওয়া গেছে।

আরো পড়ুন

বাংলাদেশি রোগী বয়কট না করার সিদ্ধান্ত ভারতের চিকিৎসকদের

বাংলাদেশি রোগী বয়কট না করার সিদ্ধান্ত ভারতের চিকিৎসকদের

 

সূত্র জানায়, গত বছর ছাপা হয় প্রায় ৩৪ কোটি, কিন্তু এ বছর ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ পাঠ্যবই। মূলত নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিকে বিষয় ছিল ১০টি, কিন্তু আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ায় বই হয়ে যাচ্ছে ১৩টি। এ ছাড়া দশম শ্রেণির জন্য এবার বিশেষভাবে বই করতে হচ্ছে।

সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বই বেশি ছাপতে হচ্ছে। এতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। অন্যদিকে আগের কয়েক বছরে সঠিক মানের বই দেওয়া হতো না। অনেক সময় নিউজপ্রিন্টেও বই ছাপা হতো, যেখানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জেনেশুনেও ছাড় দিত।

এতে মুদ্রাকররা নির্ধারিত দরের চেয়ে কম দিয়ে বইয়ের কাজ নিতেন। কিন্তু এবার এনসিটিবি থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনোভাবেই মানহীন বই তারা গ্রহণ করবে না। দরপত্রের স্পেসিফিকেশনে যত শর্ত আছে, তা মানতে হবে। তাই এবার মুদ্রাকররা নির্ধারিত দরের চেয়ে কিছুটা বেশি দর দিয়েছেন। এ ছাড়া গত বছরের চেয়ে কাগজসহ অন্যান্য সব উপকরণেরই দাম বেড়েছে।

এতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বেশি লাগছে।

আরো পড়ুন

হাসিনা সরকার পতনের চার মাস : ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আহতরা

হাসিনা সরকার পতনের চার মাস : ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আহতরা

 

প্রেস মালিকরা বলছেন, এবার কাগজের দাম প্রতি টন প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। এতে প্রতি ফর্মা কাগজের দাম পড়েছে এক টাকা ৯৪ পয়সা, কাভারের দাম ২৫ পয়সা, প্রিন্টিং ১২ পয়সা, বাইন্ডিং ১৫ পয়সা, কাভার ইউভি বা প্রিন্টিং পাঁচ পয়সা, পরিবহন খরচ পাঁচ পয়সা, ব্যাংক ইন্টারেস্ট আট পয়সা এবং ট্যাক্স বাবদ দিতে হয় ২১ পয়সা।

ফলে সব মিলিয়ে প্রতি ফর্মার পেছনে খরচ হয় দুই টাকা ৮৫ পয়সা। আর মাধ্যমিকে প্রতি ফর্মার রেট দেওয়া হয়েছে তিন টাকা বা এর সামান্য কমবেশি। তবে প্রাথমিকে ফোর কালার প্রিন্টিং এবং ৮০ জিএসএম কাগজ হওয়ায় সেখানে রেট আরো কিছুটা বাড়িয়ে তিন টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৪৫ পয়সা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।

প্রেস মালিকদের ভাষ্য, ‘গত বছর কাগজের টন ছিল ৯০ হাজার টাকা, ব্যাংক ইন্টারেস্ট ছিল ৯ শতাংশ, যা বর্তমানে ১৬ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। আর্ট কার্ডের দাম গত বছর ছিল ৯০ হাজার টাকা, যা এবার এক লাখ ২৫ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর এবার আমরা চাই ভালো মানের বই দিতে, দরপত্রের সব স্পেসিফিকেশন পূরণ করতে।

আরো পড়ুন

দুই বছরের জন্য জাতীয় সরকারের প্রস্তাব নুরের

দুই বছরের জন্য জাতীয় সরকারের প্রস্তাব নুরের

 

এ জন্য যে দর দেওয়া প্রয়োজন, তা আমরা দিয়েছি। এ ছাড়া আমাদের প্রেসগুলোতে বছরের তিন মাস কাজ হয়। বাকি সময় বসে থাকতে হয়। কিন্তু স্থায়ী স্টাফদের ছেড়ে দেওয়া যায় না। তাই যদি প্রতি ফর্মায় ১৫ থেকে ২০ পয়সা লাভ করতে না পারি, তাহলে আমাদের অস্তিত্বই টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।’

তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার সাড়ে ছয় কোটি বই বেড়েছে, বইয়ের ফর্মা বেড়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবে আমরা গত বছরের চেয়ে বেশি টাকা চেয়েছি। এ ছাড়া আমরা এবার মানের দিক দিয়ে কোনো ছাড় দেব না। টাকা কিছুটা বেশি লাগলেও সবচেয়ে ভালো মানের বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেব।

কিন্তু প্রেস মালিকরা এবার প্রাক্কলিত দরের চেয়ে বেশি দর দিয়েছেন। অথচ গত বছর তারা অনেক কম দিয়েছিলেন। আমরা তো একটা হিসাব করেই দিই। তারা যদি প্রাক্কলিত দরের মধ্যেই থাকেন, তাহলে কিন্তু কোনো কথা উঠত না। আর তারা যদি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কাজ করেন, সেই ইন্টারেস্টের হিসাব তো আমরা করব না। তবে এ বছর আমাদের হাতে সময় নেই, তাই ফর্মাপ্রতি দর কিছুটা বেশি হলেও পুনঃ দরপত্রে যাওয়া সম্ভব হয়নি।’

আরো পড়ুন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঐক্যের ডাক দিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঐক্যের ডাক দিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ

 

এনসিটিবি সূত্র জানায়, আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২টি পাঠ্য বই ছাপার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের বই ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি। বাকি প্রায় ৩০ কোটির বেশি বই মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কারিগরি স্কুলের।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে, যা প্রায় পাঁচ কোটি। আর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির প্রায় ২০ কোটি বইয়ের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিও করা হয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির দরপত্রের সব কাজ শেষে ফাইল ক্রয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ফিরে এলেই কার্যাদেশ দেওয়া হবে। নবম শ্রেণির দরপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। দশম শ্রেণির দরপত্রের সময়সীমা শেষ হয়েছে। এই চার শ্রেণির ১৫ কোটি বইয়ের কাজ এখনো শুরু হয়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাধ্যমিকের বই ছাপার চুক্তি হলেও ইন্সপেকশন এজেন্ট নিয়োগ না দেওয়ায় তারা কাজ শুরু করতে পারছেন না। কারণ নিয়ম অনুযায়ী, ইন্সপেকশন এজেন্টের রিপোর্ট ছাড়া বিল পাওয়া যায় না। এখন ইন্সপেকশন এজেন্ট ছাড়া কাজ শুরু করলে পরে অন্য কোনো জটিলতায় পড়তে হতে পারে। তাই তারা সব প্রক্রিয়া শেষেও কাজ শুরু করছেন না।

এ ব্যাপারে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘ইন্সপেকশন এজেন্টের দরপত্রটি পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তাই নিয়োগ দিতে দেরি হচ্ছে। তবে এনসিটিবির নিজস্ব যে মনিটরিং টিম আছে, আপাতত তারাই কাগজ পরীক্ষা করে কাজ শুরু করবে। এতে কোনো সমস্যা হবে না।’

আরো পড়ুন

পীরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু

পীরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু

 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ বছর প্রেস মালিকদের চুক্তির পর থেকে বইয়ের কাজ শেষ করার জন্য মাত্র ৪০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। অথচ গত বছর তা ছিল ৭০ দিন। প্রেস মালিকরা এ সপ্তাহেই চুক্তি করলেও এত কম সময়ে তাদের অর্ধেকের বেশি বই করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া চারটি শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশই এখনো দেওয়া হয়নি। ফলে সেগুলোর ৪০ দিন পেরোতেও অনেক সময় পার হয়ে যাবে। ফলে এবার বছরের শুরুতেই সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সব বই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

রাতের রানি রজনীগন্ধা

    সপ্তম শ্রেণির কৃষিশিক্ষা বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ে তোমরা রজনীগন্ধা ফুল সম্পর্কে জেনেছ। রাতের রানি নামে পরিচিত এই ফুল বিষয়ে আরো যা জানতে পারো—
আল সানি
আল সানি
শেয়ার
রাতের রানি রজনীগন্ধা

‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’ সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে বাংলা গানের এই লাইন হয়তো তোমরা অনেকেই শুনেছ। সুগন্ধি এই ফুল Asparagaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। রাতে ফোটে ও সুগন্ধ ছড়ায় বলে এর নাম রজনীগন্ধা। ফুলদানিতে এই ফুল সাত থেকে ১০ দিন সজীব থাকে।

প্রতি রাতেই সুগন্ধ ছড়িয়ে ঘরের পরিবেশকে বিমোহিত করে। ইংরেজিতে Tuberose নামে পরিচিত এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Agave amica. এই ফুলের আদি নিবাস মেক্সিকো। দেশীয় ফুল না হলেও বাংলাদেশে সারা বছরই পাওয়া যায় রজনীগন্ধা। ভারতীয় উপমহাদেশে এই ফুল পর্তুগিজদের হাত ধরে আসে।

বাণিজ্যিক চাহিদার দৃষ্টিকোণ থেকে এই ফুলের জুড়ি নেই। বিয়ে, জন্মদিন, পূজা-পার্বণ এই ফুল ছাড়া জমেই না। ঘরের শোভা বাড়াতে ফুলদানিতে এর অবস্থান অনন্য। এ ছাড়া মালা, পুষ্পস্তবক, বেণি ও মুকুট তৈরিতেও এ ফুল ব্যবহৃত হয়।

এই ফুলের নির্যাস থেকে সুগন্ধি দ্রব্যও তৈরি করা হয়। রজনীগন্ধা লম্বা ডাঁটার মাথায় মঞ্জরি আকারে হয়। এর পুষ্পদণ্ডের প্রথম ফুল ফুটলেই ডাঁটিসহ ফুল কাটতে হয়। ভোরের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় অথবা পড়ন্ত বিকেলে ফুল কাটতে হয়। ধারালো ছুরি বা সিকেচার দিয়ে মাটি থেকে ৪-৬ সেন্টিমিটার ওপরে ফুলের ডাঁটি কাটতে হয়।

এর ফলে গোড়ার বাড়ন্ত কুঁড়ির ক্ষতি হয় না।

রজনীগন্ধার সাধারণত তিনটি জাত; যেমন—সিঙ্গল, সেমিডাবল, ডাবল আমাদের দেশে দেখা যায়। এর মধ্যে সিঙ্গল জাতে রয়েছে পার্ল, বোম্বে, ক্যালকাটা ও সিঙ্গল মেক্সিকান। ডাবল জাতে রয়েছে ডাবল পার্ল ও প্রোজ্জ্বল। সিঙ্গল জাতের ফুলগুলোতে পাপড়ি এক সারিতে হয়। দেখতে সাদা ও খুব সুগন্ধযুক্ত হয়। প্রোজ্জ্বল, সেমিডাবল, ডাবল জাতগুলোতে দুই বা তার বেশি পাপড়ি দেখা যায়। দেখতে হালকা লালচে ধরনের এবং কম সুগন্ধযুক্ত হয়।

মার্চ-এপ্রিল মাস রজনীগন্ধার কন্দ লাগানোর উপযুক্ত সময়। আমাদের দেশের যশোর, সাভার, নরসিংদী প্রভৃতি এলাকায় এখন বাণিজ্যিকভাবে এই ফুলের চাষ হচ্ছে। টবে উপযুক্ত মাটিতে পাশাপাশি কয়েকটি কন্দ লাগিয়ে নিয়মিত পানি ও মাঝেমধ্যে সামান্য  খৈল ও গোবর পচানো মিশ্রণ দিলে ভালো ফুল পাওয়া যায়।

রজনীগন্ধা গাছে নানা রকম রোগ হয়। এর মধ্যে বোট্রাইটিস পাতায় দাগ ও ব্লাইট অন্যতম। পাতায় ও কাণ্ডে এই রোগের প্রকোপ বেশি। এই রোগ দমনে রোভরাল (ম্যানকোজেব) ০.২ শতাংশ হারে সাত থেকে ১০ দিন অন্তর স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

মন্তব্য

১৫ জুলাই ঢাবিতে হামলা : উসকানিদাতা ৭০ শিক্ষক ও ১২২ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
১৫ জুলাই ঢাবিতে হামলা : উসকানিদাতা ৭০ শিক্ষক ও ১২২ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী
ঢাবিতে হামলা

গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ৭০ জন শিক্ষক ও ১২২ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম উঠে এসেছে তথ্যানুসন্ধান কমিটির কাছে। এসব শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নানাভাবে হামলায় ইন্ধন ও উসকানি দিয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে জানা যায়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের হাতে এ প্রতিবেদন জমা দেন তথ্যানুসন্ধান কমিটির সদস্যরা। এরপর সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন কমিটির আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল হক সুপণ।

প্রতিবেদনে হামলার ঘটনায় মাত্র ২৫ শতাংশ তারা তুলে আনতে পেরেছেন বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২২ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করেছি। বহিরাগত অনেকেও হামলায় জড়িয়েছে।

বিশেষত মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

মাহফুজুল হক বলেন, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মেয়েদের বাস থেকে নামাচ্ছে এবং পেটাচ্ছে। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। বিশেষত মেয়েগুলোকে ধরে ধরে পেটানো হচ্ছে।

একজন মেয়ে হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে চাচ্ছিল, তার হাত ধরে রেখেছে, এটা তো শ্লীলতাহানির পর্যায়ে পড়ে।

হামলাকে পূর্বপরিকল্পিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৫ জুলাইয়ের হামলা ছিল পুরোটাই পরিকল্পিত। সেখানে দুটি গ্রুপ ছিল সাদা ক্যাপ পরিহিত; একটি গ্রুপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে, আরেকটি গ্রুপ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে। হামলায় সরকারি বাংলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পাওয়া গেছে। আগে থেকে পরিকল্পনা না হলে এভাবে সম্ভব না।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের ফটকের এবং জরুরি বিভাগের ভেতরেও হামলা হয়েছে। ডাক্তারদের চিকিৎসা না দিতে বলা হয়েছে। সেসব ভিডিও আমরা পেয়েছি।

প্রতিবেদনে তারা জানান, হামলার নিকৃষ্টতম দিক ছিল নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং হাসপাতালে গিয়েও হামলা করা হয় এবং ডাক্তারদের চিকিৎসা প্রদানে বাধা প্রদান করা হয়। এটিকে তারা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।

সেদিন মেয়েদের টার্গেট করে মারা হয়েছে উল্লেখ করে মাহফুজুল হক সুপণ বলেন, মেয়েদের ওপর হামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও (ছাত্রলীগের)। এসব হামলায় প্রশাসন অবগত থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে প্রশাসনের নেগলিজেন্সের (অবহেলা) প্রমাণ পেয়েছি আমরা।

তিনি বলেন, উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের সামনে মেয়েদের পেটানো হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন কিছু জানে না। ১৬ তারিখ বাইরে থেকে বাস এনে মুহসীন হলের মাঠে রাখা হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কোনো ব্যবস্থা দেখিনি। মুজিব হলের পকেট গেট দিয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ করানো হয়েছে, হলের কর্মচারীরা প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের ফোন দিয়েছেন। তারা ফোন ধরেননি। এখানে শুধু অবহেলা হয়েছে ব্যাপারটা এমন নয়, হয়তো তারা এসব জানতেন। জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেননি।

তিনি বলেন, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মেয়েদের পেটানো হচ্ছে। আমাদের কাছে অস্বাভাবিক লেগেছে, উপাচার্য বা প্রশাসনের কেউ উঁকিও দেননি। কোনো মন্তব্যও করেননি। পরবর্তী সময়ে কোনো ব্যবস্থাও নেননি।

প্রায় ৭০ জন শিক্ষক হামলা উসকে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তদন্তে দেখেছি, যারা আন্দোলন করছে, তাদের ‘পাকিস্তানের দালাল’, ‘শিবিরকর্মী’ বা ‘ছাত্রদলকর্মী’- বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন এসব শিক্ষক। ছাত্ররা এসব পোস্ট প্রিন্ট করে আমাদের কাছে জমা দিয়েছে। সেসব শিক্ষকও এমন কথা স্বীকার করেছেন এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

এ প্রতিবেদনে হামলা ও সহিংসতার কতটুকু কাভার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আরো শনাক্ত করার সুযোগ আছে। তবে আমরা মনে করি, ২৫ ভাগ তুলে আনতে পেরেছি আমরা।

সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ব্যক্তিগত ভিডিও সংগ্রহ করেছি। কিন্তু আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পাইনি। প্রত্যেক হলের হার্ডড্রাইভ খুলে নিয়ে গেছে। ভিসি চত্বরের হার্ডড্রাইভে আমরা কিছু পাইনি। অনেক জায়গায় ক্যামেরা এমনভাবে লাগানো, শুধু গাছ দেখা যায়।

প্রতিবেদনের সঙ্গে দেওয়া সংবাদ সংক্ষেপে সত্যানুন্ধান কমিটি জানায়, হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ জমা দিয়েছিল, তার সঙ্গে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার কনটেন্ট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান বিচার-বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।

আরো পড়ুন
বিএসএমএমইউ’র নাম বদল করে ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়’ অনুমোদন

বিএসএমএমইউর নাম বদল করে ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়’ অনুমোদন

 

প্রতিবেদন গ্রহণ শেষে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেটে তোলা হবে। এরপর তদন্ত কমিটি, ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ আইনি প্রক্রিয়াগুলো হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শিক্ষার্থীর নামে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে মশাল মিছিল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
শেয়ার
শিক্ষার্থীর নামে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে মশাল মিছিল
ছবি: কালের কণ্ঠ

ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী আদৃতা রায় ও ১১ জন আন্দোলনকারীর
বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মশাল মিছিল হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে মশাল মিছিল বের করে একদল শিক্ষার্থী। মিছিল শেষ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

মিছিল ও সমাবেশ চলাকালে শিক্ষার্থীরা পুলিশের আক্রমণের বিচার ও অব্যাহত ধর্ষণ এবং নিপীড়ন ও সন্ত্রাস থেকে জনগণকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানান।

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সজিব আহমেদ জেনিচ বলেন, ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্লাটফরমটি ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে। গত পরশু আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করেছে পুলিশ। আন্দোলনরত মেয়েদের গায়েও পুলিশ আক্রমণ করেছে। এই পুলিশ হচ্ছে আওয়ামী লীগের সেট-আপ দেওয়া পুলিশ।

যে রাষ্ট্র ধর্ষককে ধরতে পারে না, ধর্ষণ নির্মূল করতে পারে না, আছিয়াকে বাঁচাতে পারে না, সেই রাষ্ট্র কোন সাহসে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে পুলিশকে দিয়ে হামলা করে। আমরা ধিক্কার জানাই। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার পর বেহায়ার মতো আন্দোলনকারীদের ওপর মামলাও করেছে। আদৃতা রায়সহ যাদের নামে মামলা হয়েছে অবিলম্বে তাদের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

মন্তব্য

ইফতারির সঙ্গে ৫০০ টাকা করে পেলেন শিক্ষার্থীরা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ইফতারির সঙ্গে ৫০০ টাকা করে পেলেন শিক্ষার্থীরা
সংগৃহীত ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের আয়োজনে প্রতিদিনই ইফতার বিতরণ করা হয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে। তবে আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ইফতার বিতরণের সময় ইফতারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় একটি করে ৫০০ টাকার নোট।

এক তুর্কী নাগরিক শিক্ষার্থীদের এই টাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বিকেলে ৪টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল সংলগ্ন এলাকায় এই দৃশ্য দেখা যায়।

 

আরো পড়ুন
নারী-শিশু নির্যাতনে বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করুন : খেলাফত মজলিস

নারী-শিশু নির্যাতনে বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করুন : খেলাফত মজলিস

 

জানা যায়, তুরস্কের সংস্থা ‘টিকা’র সহযোগিতায় এ আয়োজন করা হয়। অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ ইফতারের আয়োজনেও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থীর জন্য এই আয়োজন করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন এবং ইফতার ও টাকা সংগ্রহ করছেন।

 

এ সময় একজন মন্তব্য করেন, ‘শিবিরের ইফতার প্রোগ্রামে আজ ইফতারির পাশাপাশি তুর্কি মেহমান লাইনে দাঁড়ানো সবাইকে ৫০০ টাকা করে দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নিঃসন্দেহে এবার সেরা রমজান অতিবাহিত হচ্ছে।’

সুলতান আরেফিন নামে একজন লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের আজকের ইফতারে তুরস্কের সংস্থা টিকার সহযোগিতা ছিলো। আজকের ইফতারের আইটেমও স্পেশাল।

সাথে ছবির এই তুর্কি ভদ্রলোকটি ঈদের শুভেচ্ছা হিসেবে ৫০০ টাকা দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ