করোনাকালে মানুষের মধ্যে মাল্টিভিটামিন খাওয়ার প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছিল। সে সময় ভাইরাসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকরাই কিছু ভিটামিন নেওয়ার পরামর্শ দিতেন। কিন্তু এই সময়ে সেই ভাইরাসের প্রকোপ না থাকলেও কিছু কিছু মানুষের এখনো মাল্টিভিটামিন খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে।
অনেকের ধারণা এই ধরনের সাপ্লিমেন্ট বা ট্যাবলেট খেলেই সুস্থ থাকবেন।
এই ধারণা আদতে শরীরের জন্য ঠিক না ভুল, তা জানুন এই প্রতিবেদন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের মতে, অকারণে এবং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মাল্টিভিটামিন খাওয়ার কোনো দরকার নেই। গুরুতর অসুস্থ না হলে, শরীরে ব্যাপকভাবে পুষ্টির ঘাটতি না হলে এই ধরনের ভিটামিন খাওয়ার প্রয়োজন নেই। রোগী যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে সেই কারণেই ভিটামিন সাজেস্ট করা হয়।
আরো পড়ুন
অতিরিক্ত পেইনকিলার সেবনে স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি
অনেক ধরনের ভিটামিনের ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়। কিছু ওষুধ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি হয় না। আবার কিছু সাপ্লিমেন্টের নাম ওষুধের দোকানে গিয়ে বললেই পাওয়া যায়, প্রেসক্রিপশনের দরকার পড়ে না। এগুলো ‘ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ’ ও ‘নিউট্রাসিউটিক্যালস’।
ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে বিক্রি হয় বাজারে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা জানান, অনেক ধরনের মাল্টিভিটামিন রয়েছে, যেগুলো খাওয়ার কোনো দরকার নেই। খেলে শরীরে তার কোনো উপকারিতাও মেলে না। তা ছাড়া চিকিৎসকরাও জানেন না, এতে কী কী উপাদান থাকে। সে দিক দিয়ে বিচার করতে হলে এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকরও।
দেহে অস্বাভাবিকভাবে ভিটামিনের মাত্রা বেড়ে গেলে ‘হাইপারভিটামিনোসিস’ নামের একটি জটিল অবস্থা তৈরি হয়। তখন বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, হজমের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, ক্লান্তি, জয়েন্টে ব্যথার মতো নানা উপসর্গ দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে কিডনি, লিভারেরও বারোটা বাজায় এই ধরনের মাল্টিভিটামিন।
আরো পড়ুন
বাতের ব্যথা কমাবে যে ভেষজ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনি কোন ধরনের ভিটামিন খাচ্ছেন, কত দিন ধরে খাচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করছে শরীরের ওপর কী প্রভাব পড়বে। যেমন অত্যধিক পরিমাণে ভিটামিন ডি খেলে হাড়ের ওপর চাপ পড়ে।
রোগীর শরীরে কোন ভিটামিন কতটা পরিমাণে প্রয়োজন তার ওপর ভিত্তি করে ভিটামিন ও মিনারেলের ওষুধ দেন চিকিৎসকরা। তারা যে ভিটামিন ও মিনারেলের ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন, সেগুলো রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝে করেন।
তারা আরো বলছেন, মানুষ প্রতিদিন যে ভাত-রুটি-তরকারি খান, তাতেই দেহে পুষ্টির ঘাটতি মিটে যায়। বাজারে যখন যে ধরনের শাকসবজি, ফল পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো খেলেই দেহে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়।
আরো পড়ুন
কাগজের কাপে চা-কফি খেলে কী ক্ষতি
এ ছাড়া দানাশস্য, শাক-সবজি, ফল, বাদাম, মাছ, দুধের মতো খাবার থেকেই পুষ্টি পাওয়া যায়। আলাদা করে মাল্টিভিটামিন খাওয়ার দরকার নেই। বাজারে যে সবজি ও ফল পাওয়া যায় সেগুলোই খান। অবশ্যই সেগুলো তাজা হওয়া চাই, ফ্রোজেন নয়। যেমন রুটি, ভাত, ওটস, ডালিয়া, চিঁড়া এই ধরনের দানাশস্য জাতীয় খাবারে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায়।
লেবুজাতীয় ফল খেলেই দেহে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি মিটবে। আমলকী, পেয়ারা থেকেও ভিটামিন সি পাওয়া যায়। বাদাম, দুধ, দইয়ের মতো খাবার থেকেও যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায়।
মাছ খেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মিলবে। ডাল থেকেও ভিটামিন, মিনারেল পাবেন। এগুলো খেলেই আর আলাদা করে আয়রনের ট্যাবলেট বা মাল্টিভিটামিন খেতে হবে না বলে জানিয়েছেন ডাক্তার ও পুষ্টিবিদরা।
আরো পড়ুন
সম্পর্কের ভীত মজবুত হতে পারে যে তিন গুণে
সূত্র : এই সময়