<p style="text-align:justify">ছাত্রশিবিরের উপস্থিতির কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যাননি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।</p> <p style="text-align:justify">গতকাল শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনারকক্ষে জাবিসাসের দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠান হয়। এতে আমন্ত্রণ জানানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের।</p> <p style="text-align:justify">আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে শিবিরের নেতৃবৃন্দ থাকায় অনুষ্ঠান বর্জন করে শাখা ছাত্রদল।</p> <p style="text-align:justify">বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রহমান কবির হত্যার জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করা হয়। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে কবিরের লাশ সামনে নিয়ে জাকসুর নেতৃত্বে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ ব্যানারে ক্রিয়াশীল সব সংগঠন মিলে শিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।</p> <p style="text-align:justify">সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিও ছিল। সংগঠনটি শিবিরের কার্যক্রম নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠান ছাড়াও এরই মধ্যে ছাত্রশিবিরের নেতারা জাবিসাসের কার্যালয়ে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। তাদের দেওয়া উপহারও নিয়েছেন জাবিসাস সদস্যরা।</p> <p style="text-align:justify">শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের ঐতিহাসিক দায় রয়েছে। ১৯৮৯ সালে ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রহমান কবির হত্যাকাণ্ডের সাথে শিবিরের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিল। যে কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি সংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘ওই ২২টি সংগঠনের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিও ছিল। আমরা মনে করি, অমীমাংসিত বিষয়গুলো সুরাহা ব্যতীত শিবিরের সাথে এক টেবিলে বসার সুযোগ নেই।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি এ-ও বলেন, ‘সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমরা দেখা করে অভিনন্দন জানিয়েছি।’</p> <p style="text-align:justify">গত বছরের ২৯ অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে আসে। ওই দিন দিবাগত রাত ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করেন।</p> <p style="text-align:justify">সেই মিছিলে অংশ নেওয়া ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় শিবিরের উপস্থিতি সত্ত্বেও গতকাল জাবিসাসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘জাবিসাসের প্রগ্রামে আমরা নিয়মিতভাবেই গিয়ে থাকি। শিবিরের ব্যাপারে জাবিসাসের নতুন কমিটির কাছে আমরা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য প্রত্যাশা করি।’</p> <p style="text-align:justify">অমর্ত্য বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকতার কারণে আমরা প্রগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি, মানে এই নয় যে, আমরা শিবিরকে গ্রহণ করেছি বা শিবিরের রাজনীতি আমরা মেনে নিচ্ছি।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘শিবিরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল যে ২২টি সংগঠন, এর মধ্যে জাবিসাসও একটি। শিবিরের কমিটি প্রকাশের পর আমরা নানাভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছি। জাবিসাস তাদের অবস্থান এখনো পরিষ্কার করেনি।’</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সজিব আহমেদ জেনিচ বলেন, ‘জাবিসাসের প্রগ্রামে আমরা সব সময় যাই। সামাজিকতার কারণেই আমরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। তবে এর মানে এই নয়, আমরা শিবিরের রাজনীতিকে স্বীকার করছি। আমরা শিবিরের বিষয়ে আগের অবস্থানেই আছি।’</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি জাবিসাসের সভাপতি মেহেদী মামুন। সদ্য সাবেক সভাপতি আরিফুজ্জামান উজ্জলের সঙ্গে যোগাযোগ করেও বক্তব্য পায়নি কালের কণ্ঠ।</p> <p style="text-align:justify">জাবিসাসের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছাত্রদল গতকাল অনুপস্থিত ছিল। আমি কয়েকবার তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা সাড়া দেননি। শিবিরের উপস্থিতির কারণেই যদি তারা বয়কট করবেন বা আসবেন না, এটা তারা আমাদের জানাতে পারতেন। কিন্তু তারা তা জানাননি।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘২২টা সংগঠন তাদের নিষিদ্ধ করেছে, এটা শুনেছি। কোনো প্রোপার ডকুমেন্টস পাইনি। যেহেতু আমরা দায়িত্বে আসলাম গতকালকে, যদি এ রকম ডকুমেন্টস থেকে থাকে এবং সাংবাদিক সমিতি এই ২২টা সংগঠনের একটা হয়, তাহলে আমরা এক্সিকিউটিভ মেম্বাররা বসে সিদ্ধান্ত নেব। রাষ্ট্রীয় আইন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে কোনো সংগঠন নিষিদ্ধ না হলে তো আমরা কিছু করতে পারি না। আমরা রাজনৈতিক সংগঠন না, সামাজিক সংগঠন; যে সংগঠন সবার জন্য।’</p> <p style="text-align:justify">বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্যমত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিবির নিষিদ্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১৪২তম সভায় শিবির নিষিদ্ধের প্রস্তাবনা আসে। সভার সিদ্ধান্ত ছিল ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাবহির্ভূত বিধায় এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়’।</p>