<p>সভ্যতার সূচনালগ্নে অবকাঠামো বা স্থাপনা নির্মাণে ইট খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে প্রয়োজনীয় এ সামগ্রীটির ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে ইট ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে, ইট উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কারণ, ইটের ভাটাকে কার্বন নিঃসরণের প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।</p> <p>সারা বিশ্বের ইট ভাটার ৯০ শতাংশ উৎপাদন এশিয়া মহাদেশের রাষ্ট্র- চীন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এর যৌথভাবে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বার্ষিক কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ ১৭ শতাংশ, আর এর জন্য ইট ভাটাগুলো বহুলাংশে দায়ী।</p> <p>বর্তমানে, সারা দেশে নির্বিঘ্নে চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী ৭ হাজার ৯০২টি ইটভাটার কার্যক্রম। এর মধ্যে ৩ হাজার ২০০ ইট ভাটাই অবৈধ। ইটখোলায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে আমদানিকৃত নিম্নমানের কয়লা। এ কয়লা পোড়ানোয় প্রচুর পরিমাণে ছাই তৈরি হয়। একই সাথে প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষ নিধন হচ্ছে। </p> <p>অন্যদিকে, ইটভাটা থেকে বায়ুমণ্ডলে দূষিত উপাদানও যোগ হচ্ছে। এসব দূষিত উপাদানের মধ্যে পার্টিকুলেট ম্যাটার, কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার অক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায়  ১৫ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড ইটখোলা থেকে নির্গত হয়ে বায়ুমণ্ডলে যোগ হচ্ছে, ফলে দূষণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।</p> <p>যদি এই দূষিত উপাদানের নির্গমন বায়ুমণ্ডলে অব্যাহত থাকে, তাহলে স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে নাকচ করে দেওয়া যায় না। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে সরকার বিভিন্ন সময় নানান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিভিন্ন সময়ে অভিযান চলমান রাখছে এবং অবৈধ ইটভাটার কারণে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গ্রামীণ সড়কসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজে ইটের পরিবর্তে ব্লকের ব্যবহার বৃদ্ধি করেছে সরকার।</p> <p>বাংলাদেশ সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে সরকারি স্থাপনাগুলোতে ইটের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এবং সেই অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারি কাজে শতভাগ ব্লক ব্যবহার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যদি এ হারে প্রতি অর্থবছরে নির্মাণকাজে ব্লকের ব্যবহার বাড়ানো যায় তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ইটের ব্যবহার হ্রাস পাবে।</p> <p>পরিবেশ ও বায়ুদূষণের কারণে রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এ কারণেই, স্থাপনা তৈরির জন্য মানুষ এখন পরিবেশ-বান্ধব নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারে বেশ উৎসাহী; পাশাপাশি এটি ব্যয় সাশ্রয়ীও।</p> <p>ভবন নির্মাণে ইটের বদলে ব্লকের ব্যবহার করলে ব্যয় অন্তত ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। কারণ ভবন নির্মাণের সময় যেখানে একটি হলো ব্লকের ব্যবহার করা হয়, সেই সমপরিমাণ স্থানে পাঁচটি পোড়া ইটের দরকার হয়। বর্তমানে বাজারে একটি হলো ব্লকের খুচরা দাম ৩৮-৪৫ টাকা। আর ইট প্রতিটির দাম ১২ টাকা। ফলে পাঁচটি ইটের দাম ৬০ টাকা হলে সেই সমপরিমাণ স্থানে একটি ব্লকের দাম পড়ে ৪৫ টাকা।</p> <p>তাছাড়াও, কনক্রিট ব্লক ব্যবহারের আরো নানাবিধ সুবিধা রয়েছে যেমন সহজে স্থাপনযোগ্য যার ফলে সময় বাচে, আগুন তাপ ও শব্দ প্রতিরোধক, হাইড্রোলিক চাপের মাধ্যমে তৈরি হয় যার কারণে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং টেকসই হয়।</p> <p>ভবন নির্মাণে ইটের পরিবর্তে বালু, সিমেন্ট ও নুড়ি পাথরের ব্লক ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এ খাতের গবেষকরা বলছেন, এটি পরিবেশবান্ধব এবং ব্লকের তৈরি ভবন ভূমিকম্প সহনীয়। এর ব্যবহারে নির্মাণ ব্যয়ও কম। গত নয় বছরে ভবন নির্মাণে পোড়া ইটের বদলে বেড়েছে কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার।</p> <p>আশার বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে দেশে বেশ কয়েকটি কম্পানি  পরিবেশবান্ধব কংক্রিটের ব্লক উৎপাদন করছে যার মধ্যে মীর গ্রুপের মীর কংক্রিট ব্লক আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।</p> <p>ইতিমধ্যে, সরকারও ভবন নির্মাণে ইটের ব্যবহার কমিয়ে ব্লকের ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। কংক্রিট ব্লক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, কারিগরি সহায়তাসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।</p> <p>গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে ব্লক ব্যবহারকে উৎসাহিত করা গেলে বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে ‘টেকসই নগর ও জনপদ’ গড়ে তুলতে পারবে এবং এর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব।</p>