সাভারে ঈদের ছুটি বৃদ্ধি, বন্ধ কারখানা খুলে দিয়ে শ্রমিকদের ওভারটাইম পরিশোধসহ দাবি আদায়ে আন্দোলনের ঘটনায় আটক ৬ শ্রমিকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তৈরি পোশাক শ্রমিকরা।
আজ মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে সাভারের হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর-মানিকগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় জিন্স ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি লিমিটেড কারখানার দুই হাজার শ্রমিক। এ সময় কারখানা বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলা-মামলার প্রতিবাদ জানিয়ে দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষের অপসারণ দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তারা।
আরো পড়ুন
‘জিয়ার সৈনিক, এক হও লড়াই করো’ স্লোগান তুলে মাসউদের ওপর হামলা : এনসিপি
সরেজমিনে আন্দোলনকারী শ্রমিক ও পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে সাভারের হেমায়েতপুর ঋষিপাড়া এলাকার জিন্স ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি লিমিটেড কারখানার দুই হাজার শ্রমিক ঈদের ছুটি বৃদ্ধিসহ ওভারটাইম পরিশোধের দাবিতে আন্দোলনসহ কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন।
এ নিয়ে দফায় দফায় শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় কোনো সমাধান না হওয়ায় কারখানায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ভাঙচুর, সহিংসতা ও মারামারি করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করায় কম্পানির সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৩(১) অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে আজ সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করতে এসে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখে বিক্ষোভ করেছে।
একপর্যায়ে শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর-মানিকগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আধাঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদেরকে সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে থাকে।
তবে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এ সময় সড়কের পাশে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যান।
আরো পড়ুন
ব্যাংককে নেওয়া হতে পারে তামিমকে
কারখানাটির কোয়ালিটি শাখার নারী শ্রমিক নিলা আক্তার বলেন, ‘এই মাসে ছুটি দিলে আমরা পুরো মাসের বেতনটা পাই। সেখানে মালিকপক্ষ বলেছে ২০ দিনের বেতন দেবে এবং ৮ দিনের ছুটি দেবে। আমরা দাবি করেছি ২০ দিনের বেতনের সঙ্গে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ৪০ ঘণ্টা ওভারটাইমের টাকা এবং ছুটি আরো ২ দিন বাড়িয়ে দিতে হবে।
প্রয়োজনে আমরা ঈদের পরে এসে ২ দিন ছুটির যে ডিউটি সেটি করে দেবো। কিন্তু মালিকপক্ষ এতে রাজি না হয়ে ছুটি ১দিন বাড়াতে চাইলেও বেতন ২০ দিনেরই দিবে বলে জানায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘কারখানার শ্রমিকরা দাবি আদায়ে কাজ বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন করলে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। তাদের কথা অনুযায়ী সব শ্রমিক একত্রিত হলে কারখানার জিএম অস্ত্রসহ বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে এসে কারখানার ভেতরে রাখেন। আমরা শ্রমিকরা সকালে আইডি কার্ড না দেখিয়ে কারখানায় প্রবেশ করতে পারি না, সেখানে অস্ত্রধারী বহিরাগত লোকজন কিভাবে কারখানায় প্রবেশ করল?’
সুইং অপারেটর ইমরান বলেন, ‘আমরা মালিক পক্ষের কাছে পুরো মাসের বেতন চেয়েছি কিন্তু মালিকপক্ষ বলছে ২০ দিনের বেতন দেবে।
এরপর আমরা বলেছি ২০ দিনের বেতন দিয়ে ওভারটাইমের টাকা এবং ১০ দিন ছুটি দিতে হবে। কিন্তু মালিকপক্ষ আমাদের দাবি না মেনে উল্টো আন্দোলনের ঘটনা ৬৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এবং গত রাতে ৬ জন শ্রমিককে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এরমধ্যে ২ জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’
আরো পড়ুন
মাঠে নামার আগে তামিমের জন্য দোয়া চাইলেন ক্রিকেটাররা
অপর শ্রমিক শিউলি আক্তার বলেন, ‘মালিকপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে বহিরাগত লোকজন দিয়ে কারখানায় লুটপাট ও ক্ষতি করিয়ে আমাদের ওপর দায় এবং বিরুদ্ধে মামলা দেবে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ আমাদের ডেকে জানায় আপনারা সবাই বাসায় চলে যান। আজ মঙ্গলবার সকালে আমরা কারখানার মালিককে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করব। এরমধ্যে কোনো সমাধান না করেই রাতে পুলিশ আমাদের ৬ জন শ্রমিককে ধরে নিয়ে গেছে।’
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, জিএম কেন বহিরাগত লোক নিয়ে এলেন আমাদের মারার জন্য? আমাদের যে ৬ জনকে ধরে নিয়ে গেছে তাদেরকে ছেড়ে দিতে হবে এবং দাবি আদায়ে আন্দোলনের ঘটনায় কারো বিরুদ্ধে মামলা হয়নি সেটি নিশ্চিত করতে হবে, আগামী ৬ মাসের মধ্যে কোনো শ্রমিক ছাটাই করতে পারবে না, আমাদের দাবি দাওয়া মেনে নিতে হবে এবং কম্পানি চালাতে হলে পুরনো ম্যানেজমেন্টকে পরিবর্তন করতে হবে।
শ্রমিকদের আটকের বিষয়ে সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিঞা বলেন, ‘কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৪ জন শ্রমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। তবে ৬ জন আটকের বিষয়টি সঠিক নয়।’