<p>জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াজেদ আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যান নিজেই ১৯ জন দরিদ্র কার্ডধারী ভুক্তভোগীর ২৪ মাসের বরাদ্দকৃত ৪৫৬ বস্তা চালের মধ্যে ১৮ মাসে ৩৪২ বস্তা ভিজিডির চাল আত্মসাৎ করেছেন। অথচ ভুক্তভোগীরা এই ১৮ মাসে এক ছটাক চালও পাননি। </p> <p>নামের তালিকা থাকা সত্ত্বেও অসহায় মানুষগুলোর ভাগ্যে সেই চালের কোনো সংবাদও পৌঁছায়নি। চেয়ারম্যানের এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষ চরম ক্ষুব্ধ। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।</p> <p>গত বুধবার (২ অক্টোবর) ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হয়ে পলাতক রয়েছেন। এরপর প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে মো. জাহিদুল ইসলাম দায়িত্ব পান। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকার থেকে বরাদ্দকৃত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মাসের ৮৫৮ বস্তা ভিজিডি চাল বিতরণের সময় ৩৮ বস্তা চাল উদ্বৃত্ত দেখতে পান। </p> <p>চাল বিতরণের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি তালিকাভুক্ত কার্ডধারীকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু কার্ডধারী ৪২৯ জনের মধ্যে ৪১০ জনকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি ভিজিডির চাল বিতরণ করলেও চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী তালিকাভুক্ত কার্ডধারী ১৯ জনকে গত ১৮ মাস ধরে কোনো চাল সরবরাহ করেননি। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে পরিষদ থেকেও তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি।</p> <p>ওই ইউনিয়নের মেম্বার আমজাদ হোসেন ও বাদশা মণ্ডল বলেন, ‘চেয়ারম্যান পলাতক থাকার আগে থেকেই এসব আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলামও গোপনে চাল বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। আমরা বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করেছি। এরপর চাল বিক্রি করা বন্ধ হয়। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে চাল বিতরণের সময় এসব গরিব মানুষের নামে চাল তোলা হলেও, তারা চাল নিতে ইউনিয়ন পরিষদে আসেননি।’ শুধু ১৯ জনই নয়, তালিকা ঘেঁটে দেখলে আরো অনেকের নাম পাওয়া যাবে, যারা দীর্ঘদিন ধরে চাল পাননি বলে জানান ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা।</p> <p>ভুক্তভোগী দূর্গাপুর-বহুতী গ্রামের বাসিন্দা মোছা. মাহমুদা বলেন, ‘আমার নাম চালের তালিকায় ১৮ মাস ধরে আছে, অথচ আমি কিছুই জানি না। কেউ এসে জানায়নি। সম্প্রতি আমাকে বলা হয় গুদামে আমার চাল রয়েছে। কিন্তু আমি কিসের চাল নেব, তা জানি না। চাল দিতে হলে গত ১৮ মাসের চালও আমাকে দিতে হবে।’</p> <p>মাদাই গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী মোছা. দেলোয়ারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গরিবের নামে বরাদ্দকৃত ১৮ মাসের  চাল চেয়ারম্যান নিজেই বিক্রি করেছেন। আমরা তার উপযুক্ত শাস্তি চাই।’</p> <p>তবে প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ইউপি সদস্যদের নিয়ে চাল বিতরণ করেছি। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর চাল বিতরণের সময় দুই মাসের ৩৮ বস্তা চাল উদ্বৃত্ত পাই, যা পরিষ্কারভাবেই ওয়াজেদ আলী চেয়ারম্যানের দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়। ১৯ জন কার্ডধারী চাল নিতে না আসায় বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি।’</p> <p>উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাহফুজা খাতুন জানান, তালিকাভুক্ত ১৯ জন ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, গত ১৮ মাসে তারা চাল বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। এখনো ৬ জনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।</p> <p>এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা গত ১৮ মাসের চাল দাবি করেছেন। আমরা ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, প্রত্যেক ভুক্তভোগী তাদের ন্যায্য অধিকার পাবেন।’</p>