<p>গ্রামের মানুষ তাদের বাড়িতে লালন-পালন করা দেশীয় প্রজাতির গাভির দুধ বিক্রি করতে সমেবেত হন এখানে। এতে দুধ বিক্রেতা আর ক্রেতাদের ভিড়ে মিলনমেলায় পরিণত হয় স্থানটি। প্রতিদিন দুধ বিক্রি করে পয়সা নিয়ে ফিরে যান বাড়িতে। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার ধলেশ্বরী নদীর কোল ঘেঁষে গোপালপুর বাজারে প্রতিদিন এ দৃশ্যের দেখা মেলে।</p> <p>সরজমিনে দেখা যায়, কারো হাতে কলস, কারো হাতে জগ, কেউ আবার মাথায় নিয়েছেন পাতিল। প্রতিদিন সকাল হলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় সাটুরিয়া উপজেলার রাজৈরের খেয়াঘাটে। নদী পাড়ি দিয়ে যুবক, বৃদ্ধ ও নারীরা এসে হাজির হন গোপালপুর বাজারে। সাটুরিয়ার বরাইদ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এভাবে দল বেঁধে বিক্রি করতে আসেন তাদের গরুর দুধ।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="চোরাচালানের তথ্য দিতে গিয়ে তথ্যদাতাই ধরা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/05/1728123201-b8e343c94caf894b516fc4aca8faaec1.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>চোরাচালানের তথ্য দিতে গিয়ে তথ্যদাতাই ধরা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/05/1432062" target="_blank"> </a></div> </div> <p>জানা গেছে, উপজেলার বরাইদ, রাজৈর, ছনকাসহ আশপাশের ১০‌টি গ্রামের কৃষকের প্রায় সবার বাড়িতেই রয়েছে একাধিক গাভি। প্রতিদিন সকালে গাভির দুধ দোহানোর পর তা বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন গোপালপুর বাজারে। দৈনিক এ বাজারে প্রায় ৬০০ থে‌কে ৮০০ লিটার দুধ বিক্রি হয়। ৪৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে এ বাজারে দুধ বিক্রি করেন তারা।</p> <p>বাজার ঘুরে জানা যায়, বাজারে কেউ আসছেন দুধভ‌র্তি কল‌সি মাথায় করে, হাতে বাল‌তি ঝু‌লিয়ে। বাজারে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে দুধ কি‌নতে আসা পাইকা‌ররা তাদের হাত থেকে দু‌ধের পাত্রটি নি‌য়ে ডি‌জিটাল মে‌শি‌নে দু‌ধের প‌রিমাণ মে‌পে দাম দি‌য়ে দি‌চ্ছেন। বাজা‌রে দুধ কি‌নে শত শত ড্রা‌মে ভ‌রে দুধ নি‌য়ে যা‌ন ভ‌্যান গা‌ড়ি ও পিকআপে ক‌রে। ১ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হ‌য়ে যায় দু‌ধের বাজার‌।</p> <p>রা‌জৈর চ‌রের সা‌হেদা বেগম (৪৫) ব‌লেন, তার চারটি গা‌ভি র‌য়ে‌ছে, গা‌ভিগু‌লোর ২৫ কে‌জি দুধ হয়। সে ও তার দুই না‌তি মি‌লে দুধ বি‌ক্রি কর‌তে প্রতি‌দিন ধ‌লেশ্বরী নদীর খেয়াপার গোপালপুর বাজা‌রে যান। তার ম‌তো রা‌জৈর চ‌রের তিন শতা‌ধিক কৃষক গোপালপুর বাজা‌রে দুধ বি‌ক্রি ক‌রেন।</p> <p>বাজা‌রে দুধ বি‌ক্রেতা‌দের অনে‌কের দা‌বি, সিন্ডিকেটের কারণে গরু পালনকারী দুধের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত। পাইকাররা যারা দুধ কিনতে আসেন, তারা দাম নির্ধারণ ক‌রে দেন। ফলে বিক্রেতারা অসহায়। বাধ্য হয়ে দুধ বিক্রি করেন কম দামে।</p> <p>দুধ বি‌ক্রি কর‌তে আসা কৃষক সামসুল আলম (৪৫) ব‌লেন, তিনি ৮ কে‌জি দুধ নি‌য়ে এ‌সে‌ছেন বি‌ক্রি কর‌তে। বাজা‌রে দু‌ধের দাম ৪৫ থে‌কে ৬০ টাকা। মাঝেমধ্যে কমেও যায়। প্রায় তিন বছর ধ‌রে এভাবেই দল বেঁধে দুধ বিক্রি করতে আসেন গোপালপুর বাজারে। গ্রামের এত মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে বাজারে আসার মজাই অন্যরকম। তার সঙ্গে তার গ্রামের যে কয়জন এ বাজারে দুধ বিক্রি করার জন্য আসেন, তারা দুধ বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে বাজার থেকেই প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিয়ে যান।</p> <p>স্থানীয় আলম হোসেন (৫০) জানান, প্রতি‌দিন গোপালপুল বাজা‌রে দেড় থে‌কে দুই শ মণ দুধ বি‌ক্রি হয়। দুধের বাজার‌টি মাত্র ১ ঘণ্টার ম‌ধ্যে শেষ হয়ে যায়। সকা‌লে দল বেঁধে মানুষ আসে দুধ বিক্রি কর‌তে।</p> <p>দুধ কিন‌তে আসা পাইকার স্বপন ঘোষ জানান, ক‌য়েক বছর ধ‌রে তিনি গোপালপুর বাজার থে‌কে দুধ কে‌নেন। প্রতি‌দিন ২০ থে‌কে ২৫ মণ দুধ কিনে নেন। বাজারে দু‌ধের দাম কে‌জিপ্রতি ৪৫ থে‌কে ৬০ টাকা। </p> <p>অন‌্য জায়গার থে‌কে দু‌ধের দাম কম নয় দা‌বি ক‌রে তিনি জানান, দু‌ধের মান ভালো ব‌লে তারা এ বাজার থে‌কে দুধ সংগ্রহ করেন।</p> <p>সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইমরান হোসেন বলেন, গোপালপুর বাজারে প্রতি‌দিন প্রায় দেড় থেকে দুই শ মণ দুধ বি‌ক্রি হয়। দুধ বিক্রি করে এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি তারা এলাকায় দুধের চাহিদাও মেটাচ্ছেন এবং অন্য এলাকার তুলনায় সাশ্রয়ী মূল্যে দুধ পাচ্ছেন স্থানীয়রা। প্রা‌ণিসম্পদ দপ্তর থে‌কে খুব শিগগিরই এক‌টি প্রকল্প চালু হ‌চ্ছে, তা‌তে ওই এলাকার গা‌ভি পালনকারী‌দের প্রশিক্ষণসহ অন‌্যান‌্য সু‌যোগ-সু‌বিধা দি‌তে পার‌ব।</p>