<p>নীলফামারীতে আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে বেড়েছে বিভিন্ন রোগ-বালাই। এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। সোমবার (১৪ অক্টোবর) নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের ১৭০ শয্যায় ভর্তি ছিলেন ৪৫১ রোগী। এতে করে বেড়েছে ভোগান্তি।</p> <p>সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় রোগীর গাদাগাদি অবস্থা। শয্যা সংকটে বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝে এবং বারান্দায় ঠাঁই হয়েছে রোগীর। এমনকি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষের দরজার সামনেও দেখা গেছে রোগীর বিছানা।<br /> ওয়ার্ডের বারান্দায় ৪৩ দিন বয়সী শিশু রহমতকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন জেলা সদরের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের বাজিতপাড়া গ্রামের গোলাপী বেগম (৩০)। শ্বাস কষ্ট, জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে তিন দিন আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।</p> <p>গোলাপী বেগম বলেন, ‘ছোট ছাওয়াটাক ধরি তিন দিন থাকি মাঝিয়াত আছ মুই। আইতোত মশা কামেরাছে। জ্বর, সর্দির ছাওটাক বাতাস লাগেছে। ডাক্তার দেখি যায়ছে, হাসপাতাল খালি অক্সিজেন দেছে, ইনজেকশন হামাক কিনি আনির লাগেছে।’</p> <p>একই অবস্থা জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের তাজমিরা আক্তারের (১৮)। তিনি তার সাত মাস বয়সী শিশু সন্তান তাহিমকে জ্বর, সর্দি, শ্বাস কষ্টে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে।</p> <p>তাজমিরা বলেন, ‘জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাস কষ্টের জন্য ছাওয়াটাক ধরি হাসপাতালোত আছি। ভিতরোত জায়গা খালি নাই, বাহিরোত থাকির লাগেছে। এতে হামার খুব কষ্ট হছে।’</p> <p>শিশু ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স শারমিন আক্তার জানান, এ ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ১৭টি। সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ভর্তি ছিল ১৪০ জন শিশু। স্থান সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতে বিছানা করে দিতে হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।</p> <p>নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দিলীপ কুমার রায় বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণে প্রতি বছরের ন্যায় এই সময়টাতে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি বেড়েছে। এখন শিশুদের ব্রংকিওলাইটিস, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জ্বর, খিঁচুনি রোগ বেড়েছে। এসব রোগীকে মেঝেতে রাখা ঠিক হবে না। কিন্তু স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে থাকতে হচ্ছে।</p> <p>হাসপাতাল ঘুরে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী দেখা গেছে। ২০ শয্যার মহিলা ওয়ার্ডে ছিল ৯৪ জন, ২৫ শয্যার পুরুষ ওয়ার্ডে রোগী ছিল ৭৩ জন, ১০ শয্যার সার্জারি ওয়ার্ডে ৫৮ জন, ১৬ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ছিল ৪৫ জন এবং ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ছিলেন ৮ জন রোগী।</p> <p>নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু আল হাজ্জাজ জানান, ২০১১ সালে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় হাসপাতালটি। শয্যা বাড়াতে ২০১৩ সালে ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে আটতলা ভিত্তির ছয়তলা একটি ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় সেই বছরের ২৫ জুলাই। কাজ শেষ হলেও আসবাবপত্র সরবরাহ না হওয়ায় ভবনটি চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে পূর্বের ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে ১৭০টি শয্যা করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।</p> <p>তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে মেঝেতে থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। ১৭০ শয্যার বিপরীতে সোমবার ৪৫১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। বহির্বিভাগে প্রতিদিন এক হাজার ২০০ এর অধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এর বাইরে জরুরি বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা দিতে হয় দুই শতাধিক রোগীকে।</p> <p>ওষুধের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রতি বছর আমাদের গড়ে ৫০ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। কিন্তু বরাদ্দ বাড়ছে পাঁচ শতাংশ করে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে সব ওষুধ দেওয়া যাচ্ছে না।</p>