<p>বরগুনার বেতাগী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত দুই অর্থবছরে দুই ডজনের বেশি অস্তিত্বহীন প্রকল্প ও অর্ধশতাধিক প্রদর্শনী, কৃষকের স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। তবে এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই কৃষি কর্মকর্তা।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ ও ২৪-২৫ অর্থবছরে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত মানের ধান, পাট ও বীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ, তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খামার যান্ত্রিকীকরণসহ ২৮টি প্রকল্প নেওয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজস্ব খাত থেকে এক কোটি ৫৪ লাখ ৭১ হাজার ৩২৫ টাকা বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। কিন্তু কোনো প্রকল্পই বাস্তবায়ন করা হয়নি।</p> <p>এ ছাড়া একই জমিতে একাধিকবার বিভিন্ন প্রদর্শনীর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বরাদ্দের পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ‘রবি, আউশ ও আমনের প্রদর্শনী’, ‘পতিত জমি ও বাড়ির আঙিনায় সবজি ও পুষ্টি বাগান’ এবং ‘কন্দাল ফসল ও ফলজ বাগান’- উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে এ রকম অর্ধশতাধিক প্রদর্শনীর কার্যক্রম কাগজে-কলমে শেষ করা হয়েছে। কিন্তু কৃষকরা এ সব প্রদর্শনীর সাইনবোর্ড ছাড়া কিছুই দেখেননি। এ সব প্রদর্শনীর এক কোটি ২৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা। এভাবে দুই অর্থবছরে প্রকল্প ও প্রদর্শনী খাতে মোট দুই কোটি ৭৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা লুট হয়।</p> <p>কৃষকদের প্রশিক্ষণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। প্রশিক্ষক না দিয়েই কৃষকদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে উত্তোলন করা হয়েছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ভাতার অর্থ। এই খাতে কৃষকপ্রতি বিভিন্ন প্রশিক্ষণে প্রায় তিন হাজার ৯০০ টাকা বরাদ্দ থাকে। উপজেলায় তালিকাভুক্ত প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। যদিও সবাই এ সব প্রশিক্ষণ পান না। তবে যতগুলো প্রশিক্ষণ কেবল কাগজে-কলমে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে প্রায় ১০ হাজারের বেশি কৃষক রয়েছেন। সেই হিসাবে তিন কোটি টাকার ওপরে দুর্নীতি হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রণোদনার আওতায় সহায়তাপ্রাপ্ত কৃষকের তালিকায় রয়েছেন পাঁচ হাজার ২০৫ জন। বলা হয়েছে, তারা সবাই এক হাজার টাকা করে সহায়তা পেয়েছেন, আনুষঙ্গিকসহ ওই প্রণোদনায় টাকার পরিমাণ অর্ধকোটির বেশি (৫২ লাখ ৯৫ হাজার ৭০০ টাকা)।</p> <p>সরেজমিনে ভুক্তভোগী কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকরা এসব বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাদের স্বাক্ষর জাল করে মাস্টাররোল তৈরি করে ভুয়া প্রশিক্ষণ ও কৃষি উপকরণ বিতরণের নামে এ সব অর্থ লোপাট করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ ও সহায়তাপ্রাপ্তদের তালিকায় নাম থাকা কৃষক আয়নাল সিকদার, আলতাফ হাওলাদার, জব্বার সিকদার, তৈয়ব আলী বলেন, তারা নাম লিখতে জানে না অথচ তাদের স্বাক্ষর এলো কিভাবে, এটা তাদের জানা নেই।'</p> <p>হোসনাবাদ ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষক মহসিন হাওলাদার বলেন, 'তালিকায় আছে, আমি তিন একর জমি চাষাবাদ করি। আজ পর্যন্ত কোনোদিন প্রশিক্ষণের জন্য কৃষি অফিস ডাকেনি। কৃষি যন্ত্রপাতি, বীজ বা আর্থিক সুবিধা দূরে থাক কোনোদিন এক কেজি সারও পাইনি।'</p> <p>বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের বাসিন্দা শামসুল হক একই রকম তথ্য দিয়ে বলেন, মাসুদ নামের এক ব্যক্তি কৃষি অফিসের মাড়াই মেশিন ক্রয় করেছেন বশির নামের এক সার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। </p> <p>২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য বিতরণ করা হয় দুটি কম্বাইন হারভেস্টর মেশিন, ২১টি পাওয়ার থ্রেসার, ১৯টি সিডার। বেতাগী উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া মোট ৪২টি যন্ত্রে সরকারের ভর্তুকি ও কৃষকদের অর্থ মিলিয়ে মোট ৭৮ লাখ ৩২ হাজার ৮৫৭ টাকার আধুনিক কৃষিযন্ত্র ক্রয় করা হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ অর্থ সরকারের ভর্তুকি বাবদ, বাকি ৩০ শতাংশ কৃষকদের। </p> <p>বেতাগী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ বলেন, তালিকাভুক্ত কৃষক ছাড়া কাউকে কৃষি উপকরণ কিংবা সার, বীজ দিই না। নিয়মানুযায়ী কোনো কৃষককে কোনো উপকরণ দিতে না পারলে তিনি তো অভিযোগ করবেনই।'</p>