<p>গত একযুগে ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার বেশিরভাগ খাল-বিল, নদী-নালা ও হাজার বিঘা পতিত জমি থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে বিক্রি করেছেন প্রভাবশালী মাটিখেকোরা। বর্তমানে সেই তারাই হানা দিয়েছেন পাট-পেঁয়াজ ও ধানের জমিতে। তারা খননযন্ত্র (ভেকু মেশিন) দিয়ে তিন ফসলি জমির উর্বর মাটির ওপর থেকে এক থেকে দেড় হাত (টপ সয়েল) তুলে নিয়ে অবৈধ ট্রলি গাড়িতে করে ইটভাটায় নিয়ে বিক্রি করছেন। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না তাদের। ফলে একদিকে জমির উর্বরতা হারিয়ে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে দিন যাচ্ছে আর সালথা-নগরকান্দার মানচিত্র ছোট হয়ে আসছে।</p> <p>সম্প্রতি সালথা ও নগরকান্দার কয়েকটি ইউনিয়নের গিয়ে দেখা যায়, শতশত বিঘা পতিত জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তিন ফসলি জমিতেও খনন করা হয়েছে পুকুর। কোনো কোনো জমির উর্বর অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমির এসব মাটি কেটে ট্রলি গাড়ি ও ড্রাম ট্রাকের সাহায্যে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে সড়কগুলোয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শতশত ফিটনেসবিহীন অবৈধ ট্রলি গাড়ি। এসব গাড়ির অবাধ চলাচলের কারণে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। ট্রলিতে বহন করা মাটি সড়কের ওপরে পড়ে থাকছে। যে কারণে বৃষ্টি হলেই সড়ক ভিজে পিচ্ছিল হয়ে তৈরি হচ্ছে মরণফাঁদ। আবার অনেক সড়কের পিচঢালাও উঠে যাচ্ছে। ফলে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে।</p> <p>স্থানীয়রা বলছেন, ফসলি জমি ধ্বংসের জন্য শুধু মাটি ব্যবসায়ীরাই দায়ী নয়, জমির মালিকরাও দায়ী। কারণ মাটিখেকোদের নগদ টাকার লোভে পড়ে থাকেন জমির মালিকরা। এই সুযোগে কৌশলে জমির মালিকদের নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ফসলি জমির মাটি কিনে নেন মাটি ব্যবসায়ীরা।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের রাধানগর পূর্বপাড়া খালের ব্রিজ এলাকায় নবা সিকদারের বাড়ির পাশে ও একই এলাকার হাসান সিকদারের জমি থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ইউনিয়নের গোপালিয়া গ্রামে শাহজাহান মেম্বার ও মুরাদ, যদুনন্দী ইউনিয়নের বড় খারদিয়া গ্রামে অবুঝ, সাধুহাটি গ্রামে রিপন ফকির ও কাবুল, গট্টি ইউনিয়নের দোহারগট্টি গ্রামে মাহমুদ, মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কাগদী বাতাগ্রাম গ্রামে গৌরঙ্গ মালো ও ওবায়দুর এবং আটঘর ইউনিয়নের জয়কাইল গ্রামে জামাল হোসেন নামে ৯ জন মাটি ব্যবসায়ী ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে অবাধে ইটভাটায় বিক্রি করছেন।  </p> <p>অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র এসব মাটিখেকোদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে মাটি বাণিজ্য করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। যে কারণে মাটি কাটা ও বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না।</p> <p>গতকাল শনিবার (২১ ডিসেম্বর) নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাফী বিন কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে বছরজুড়েই অবৈধ মাটি ও বালু কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চালিয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকাও জরিমানা করা হয়। তারপরেও দেখা যায় আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটি চক্র মাটি কেটে বিক্রি করছেন। দিনে অভিযান চালালে, রাতে কাটছেন।’</p> <p>এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফসলি জমি রক্ষায় জমির মালিকদেরও সচেতন হতে হবে। তারা লোভে পড়ে মাটি বিক্রি করছেন। যে কারণে আজ ফসলি জমি ধ্বংসের পথে। এ ব্যাপারে সবার সচেতন হওয়া জরুরী।’</p> <p>সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাটি কাটার খবর পেলেই সেখানে অভিযান চালানো হয়। তবে একটি চক্র রাতের আধারে মাটি কাটছে বলে জানতে পেরেছি। যেসব জায়গায় মাটি কাটা হচ্ছে, খোঁজ-খবর নিয়ে সেখানে অভিযান চালানো হবে।’</p>