জবি ছাত্রী অবন্তিকার আত্মহত্যা

এক বছরেও চার্জশিট জমা দিতে পারেনি পুলিশ, আসামিরা জামিনে

কুমিল্লা (উত্তর) প্রতিনিধি
কুমিল্লা (উত্তর) প্রতিনিধি
শেয়ার
এক বছরেও চার্জশিট জমা দিতে পারেনি পুলিশ, আসামিরা জামিনে
জবি ছাত্রী অবন্তিকা ও তার মা তাহমিনা শবনম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার এক বছর আজ। গত বছরের ১৫ মার্চ কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। এর আগে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যার কথা সবাইকে জানান। এই ঘটনার এক বছর পার হলেও তার মায়ের করা আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি পুলিশ।

এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অবন্তিকার মা ও তার পরিবার। এছাড়াও তদন্ত রির্পোট গোপন রাখায় ন্যায় বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। 

এ ঘটনার পর পর আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান আম্মান সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন।  

মামলার অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জবির বেশ কিছু শিক্ষার্থী অবন্তিকাকে মানসিক নির্যাতন করেন।

এ ঘটনায় অবন্তিকা জবি শিক্ষকদের সহযোগিতা চেয়েও না পেয়ে ছুটিতে গিয়ে গত বছরের ১৫ মার্চ কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।

আরো পড়ুন
ইউক্রেনকে হারিয়ে ফ্লোরবলে সোনা জিতল বাংলাদেশ

ইউক্রেনকে হারিয়ে ফ্লোরবলে সোনা জিতল বাংলাদেশ

 

ঘটনার রাত থেকে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন জবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত বছরের ১৮ মার্চ আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান আম্মান সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

দেশব্যাপী আলোচিত এ ঘটনার  দুইদিন পর জবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে জবি প্রশাসনও কোনো কোন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি তাদের তদন্ত  রিপোর্টে কি এসেছে তাও জানানো হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। এরই মধ্যে তদন্ত সংশ্লিষ্ট জবি প্রশাসন জানিয়েছেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ ও সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

’ 

অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বেগম বলেন, সহপাঠীর প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় তার মেয়েকে দেড় বছরের অধিক সময় ধরে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত তার কিছু সহপাঠি। এতে শিক্ষকদের কাছে প্রতিকার চেয়েও আমার মেয়ে সাহায্য পায়নি। কারণ শিক্ষক-প্রক্টর সবাই ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে একই গ্রুপের লোক হওয়ায় এতদিন তদন্ত এগোয়নি। কিন্তু পুলিশ এক বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি।

আরো পড়ুন
প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে আটক সেই নেতাকে বহিষ্কার করল শিবির

প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে আটক সেই নেতাকে বহিষ্কার করল শিবির

 

তাহমিনা শবনম আরও বলেন, মৃত্যুর আগে অবন্তিকা ফেসবুক পোস্টে স্পষ্ট করেই বলে গেছে ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করি তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী আর তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। সুনির্দিষ্ট করে বলে গেলেও এখনও কেন মামলার চার্জশিট দিতে গড়িমশি করছে?

জবি সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় জবি প্রশাসন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন। প্রতিবেদনের বিষয়ে মোবাইল ফোনে অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে ৪৫ জনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গত বছরের ১৩ জুন প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে কী আছে, এ নিয়ে কোনো তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। 

এদিকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কী আছে, তা আজও জানতে পারেনি অবন্তিকার পরিবার। জবির তদন্ত প্রতিবেদন ‘গোপন’ রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম।

আরো পড়ুন
‘বাঁচতে চাইলে এক লাখ টাকা বিকাশ করো’

‘বাঁচতে চাইলে এক লাখ টাকা বিকাশ করো’

 

তিনি বলেন, ২০২৩ সালে অবন্তিকার বাবা মারা যান। আমার ছেলেও ছোট। মেয়ের বিচারের জন্য এখন একাই লড়াই করতে হচ্ছে আমাকে। মেয়েকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য জবিতে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু সেখানকার কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মানসিক নির্যাতনে মেয়েকে অকালে জীবন দিতে হলো। এ মৃত্যুর দায় জবি প্রশাসন এড়াতে পারে না। 

তিনি আরো বলেন, ঘটনার দুই হোতাকেও তো আদালত জামিন দিয়েছে। তারা কি আদৌ শাস্তি পাবে? জড়িতদের নাম তদন্ত কমিটি ও পুলিশকে দিয়েছি। তদন্ত ও বিচারের নামে আমার সঙ্গে প্রহসন করা হচ্ছে।  

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জবির রেজিস্ট্রার ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াস উদ্দিন বলেন, গত জানুয়ারিতে সিন্ডিকেট সভায় অবন্তিকার আত্মহত্যার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুসারে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আত্মহত্যার সঙ্গে কারা জড়িত এ বিষয়গুলো স্পর্শকাতর। তাই এখনই এসব বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে যারাই জড়িত, বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, অবন্তিকার মোবাইল ফোনের গ্যালারিতে থাকা বেশ কিছু ছবি, স্কিন শট, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের বেশ কিছু খুদে বার্তা পাওয়া গেছে, যা তদন্তে সহায়ক হয়েছে। অবন্তিকার মোবাইল ফোনটি আদালতের অনুমতি নিয়ে পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। এর প্রতিবেদনও এসেছে। 

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক প্রতিবেদন না আসায় এতদিন আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করতে বিলম্ব হয়েছে। এখন সবকিছু আমাদের হাতে আছে। শিগগিরই প্রতিবেদন আদালতে দেওয়া হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মোহনপুরের বিলে পড়ে ছিল মস্তকবিহীন লাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
শেয়ার
মোহনপুরের বিলে পড়ে ছিল মস্তকবিহীন লাশ

রাজশাহীর মোহনপুরে সইপাড়া এলাকায় বিলকুমারী বিলের ডোবা থেকে মস্তকবিহীন একটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রবিবার ভোরে লাশটি উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, লাশটি গত ৯ মার্চ রাতে নিজ জমিতে সেচ দিতে গিয়ে নিখোঁজ সইপাড়া গ্রামের আলতাফ (৫২) হোসেনের। এর আগে দেহবিহীন তাঁর মস্তক উদ্ধার করা হয়েছিল।

স্থানীয়রা জানান, আলতাফকে হত্যা করে লাশটি সেখানে পুঁতে রাখা হয়েছিল। তবে স্থানীয়রা আজ রবিবার দুপুরে ওই ডোবায় লাশটি দেখতে পান। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হলে পুলিশের একটি টিম ও সিআইডির একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে।

আরো পড়ুন

আ. লীগকে নিষিদ্ধ করেই বাড়ি ফিরব : শরীফ উসমান হাদী

আ. লীগকে নিষিদ্ধ করেই বাড়ি ফিরব : শরীফ উসমান হাদী

 

এদিকে গত ৯ মার্চের পর সইপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেনের প্রতিবেশী রুস্তমের ছেলে শরিফুল ও রাসেল এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।

 

আরো পড়ুন

করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখে উন্নীত করার প্রস্তাব দিল সিপিডি

করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখে উন্নীত করার প্রস্তাব দিল সিপিডি

 

মোহনপুর থানার ওসি আতউর রহমান জানান, ‘পারিবারিক কলহের জেরে আলতাফ হোসেনকে খুন করা হয়। এর আগে, তার দেহবিহীন মাথা উদ্ধার করা হয় বিল থেকে। আজ রবিবার বিলকুমারী বিল থেকে যে দেহটি উদ্ধার করা হলো, সেটি আলতাফ হোসেনের বলেই ধারণা করা হচ্ছে।’

মন্তব্য

২ শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি
কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি
শেয়ার
২ শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১
প্রতীকী ছবি

যশোরের কেশবপুরে দুই শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আব্দুল হামিদ নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার (১৬ মার্চ) তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

হামিদ সুফলাকাটি ইউনিয়নের আডুয়া গ্রামের বাসিন্দা

পুলিশ জানায়, শুক্রবার দুই শিশুকে (৭) বাড়ির পাশে ডেকে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন হামিদ। পরে বাড়িতে গিয়ে মায়ের কাছে এ কথা জানায় তারা।

এ ঘটনা জানাজানি হলে হামিদকে ধরে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা।

কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনা উল্লেখ করে এক শিশুর মা হামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন।

মন্তব্য

বাহুবলে হত্যা মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
বাহুবলে হত্যা মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের চাঞ্চল্যকর তাজুল হত্যা মামলার পলাতক আসামি মারুফ মিয়াকে (৩৭) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল শনিবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে করাঙ্গী ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তার মারুফ মিয়া দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে।

র‌্যাব-৯ সিলেটের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম শহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, র‌্যাব-৯ শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্পের একটি অভিযানিক দল মারুফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে।

তাকে বাহুবল থানায় হস্তান্তর করা হলে রবিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। 

মন্তব্য

১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আলু নিয়ে গেলেন স্বেচ্ছাসেবক ও শ্রমিক লীগের নেতারা

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
শেয়ার
১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আলু নিয়ে গেলেন স্বেচ্ছাসেবক ও শ্রমিক লীগের নেতারা
ছবি : কালের কণ্ঠ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আদালতের জারি করা ১৪৪ ধারা অমান্য করে কৃষকদের মালিকানাধীন জমির ফসল (আলু) তুলে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। শনিবার (১৫ মার্চ) হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর এলাকায় এ কাজ করেন তারা।  

এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুই পক্ষের মারামারির ঘটনাও ঘটে। এ সময় ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশকে জানান ভুক্তভোগী কৃষকরা।

তখন পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ফারুক আহমদ পান্না জড়িতদের মদদ দিচ্ছেন। 

স্থানীয় সূত্র ও থানায় করা অভিযোগ থেকে জানা গেছে, হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর গ্রামে বাড়উগাঁও মৌজায় বিভিন্ন দাগে দুই একর কৃষিজমি চাষ করেন কৃষক মুহিবুর রহমান, নাইওর মিয়া, আব্দুল বাছিত বাচ্চু, আব্দুল গফুর, আব্দুস শহীদ, আব্দুল মন্নান, আব্দুল আজিজ, ফয়সল মিয়া গং। তাদের কৃষিজমি থেকে কয়েক দফায় ফসল (আলু) তুলে নিয়ে যান হরিচক গ্রামের বাসিন্দা, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান (৩৫), দুই নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক খালিস মিয়া ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কয়ছর মিয়া (৪০)।

তাদের নেতৃত্বে সহযোগী শাহিন মিয়া, আব্দুস সালাম সুরুজ, আব্দুর রশীদ, ছবদর আলী, আকমল ও ওয়াজিদ গং ছিল। 

এ ঘটনায় ভূমি দখলের অভিযোগ এনে ২৭ ফেব্রুয়ারি কৃষক মুহিবুর রহমান বাদী হয়ে ফজলুর গংয়ের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় আদেশ অনুযায়ী উভয় পক্ষকে বিরোধপূর্ণ ভূমিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মুহিত মিয়া ১৪৪ ধারার নোটিশ জারি করেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ফজলুর ও কয়ছর গং শনিবার সকালে মুহিবুর গংদের কৃষিজমিতে জোরপূর্বক লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে প্রবেশ করে কয়েক লাখ টাকার আলু তুলে নিয়ে যান।

 

১১ মার্চ দুপুরে ফজলুর গং লুৎফুর রহমান সুমনসহ স্থানীয় কৃষকদের মালিকানাধীন জমি থেকে মাটি কেটে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন লুৎফুর। 

পরে ফজলুর গংয়ের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় অভিযোগ করেন লুৎফর। অন্যদিকে অবাধে মাটি কাটা ও কৃষিজমি থেকে ফসল আলু তোলার বিষয়ে বাধা দিতে গেলে প্রতিপক্ষের হামলায় মুহিবুর ছেলে মাহবুব হোসাইন (৩০) আহত হন।

মুহিবুর রহমান, নাইওর মিয়া, লুৎফুর রহমানসহ আরো অনেক কৃষক বলেন, ‘প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের দোসর ফজলুর ও কয়ছর গং আমাদের মৌরসি জমি জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। মনু নদীর চর এলাকায় আমাদের জমিতে আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করি।

জমি থেকে ফসল উত্তোলনের সময় আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বাধা দেয় তারা। ওই ঘটনায় কুলাউড়া থানা ও আদালতে মামলা করি। পরে আদালতের নির্দেশ ভঙ্গ করে প্রতিপক্ষরা ফসলিজমি থেকে প্রায় ৪০০ মণ আলু তুলে নিয়ে যায়। যার বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু পুলিশ তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের হাজীপুর ইউনিয়নে বিএনপি নেতা পান্না প্রতিপক্ষকে মদদ দিচ্ছেন।’ 

ফজলুরকে একাধিকবার কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে কয়ছর তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা কেন কৃষকদের জমি থেকে আলু তুলব এবং মাটি বিক্রি করব। ঠিকাদার মাটি আনছে ডিসি খতিয়ানের জমি থেকে এবং কিছু মাটি কৃষকদের টাকা দিয়ে আনছে।’ 

অভিযোগ অস্বীকার করে পান্না বলেন, ‘আসন্ন হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ মহল আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। যারা কৃষকদের জমি থেকে ফসল ও মাটি কেটেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলেছি।' 

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আল-আমিন সরকার বলেন, ঠিকাদার যদি কৃষকদের জমি থেকে ক্ষতিপূরণ ছাড়া মাটি নিয়ে থাকে, তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আর কৃষকের জমির মালিকানা থাকলে তাকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হবে। 

এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুহিত মিয়া বলেন, জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ থাকায় আদালতের নির্দেশে ১৪৪ ধারার নোটিশ দিয়েছি। নোটিশ ভঙ্গকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।  

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আপছার বলেন, আদালতের নির্দেশ ভঙ্গ করে কৃষকদের জমি থেকে ফসল তোলার অভিযোগ পেয়েছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন বলেন, কৃষকদের মালিকানাধীন জমি থেকে এভাবে কেউ মাটি কেটে নিতে পারবে না। কৃষকদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ পেলে মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ