জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার এক বছর আজ। গত বছরের ১৫ মার্চ কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। এর আগে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যার কথা সবাইকে জানান। এই ঘটনার এক বছর পার হলেও তার মায়ের করা আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি পুলিশ।
জবি ছাত্রী অবন্তিকার আত্মহত্যা
এক বছরেও চার্জশিট জমা দিতে পারেনি পুলিশ, আসামিরা জামিনে
কুমিল্লা (উত্তর) প্রতিনিধি

এ ঘটনার পর পর আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান আম্মান সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
মামলার অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জবির বেশ কিছু শিক্ষার্থী অবন্তিকাকে মানসিক নির্যাতন করেন।
ঘটনার রাত থেকে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন জবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত বছরের ১৮ মার্চ আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান আম্মান সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
দেশব্যাপী আলোচিত এ ঘটনার দুইদিন পর জবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে জবি প্রশাসনও কোনো কোন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি তাদের তদন্ত রিপোর্টে কি এসেছে তাও জানানো হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। এরই মধ্যে তদন্ত সংশ্লিষ্ট জবি প্রশাসন জানিয়েছেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ ও সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বেগম বলেন, সহপাঠীর প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় তার মেয়েকে দেড় বছরের অধিক সময় ধরে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত তার কিছু সহপাঠি। এতে শিক্ষকদের কাছে প্রতিকার চেয়েও আমার মেয়ে সাহায্য পায়নি। কারণ শিক্ষক-প্রক্টর সবাই ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে একই গ্রুপের লোক হওয়ায় এতদিন তদন্ত এগোয়নি। কিন্তু পুলিশ এক বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি।
তাহমিনা শবনম আরও বলেন, মৃত্যুর আগে অবন্তিকা ফেসবুক পোস্টে স্পষ্ট করেই বলে গেছে ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করি তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী আর তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। সুনির্দিষ্ট করে বলে গেলেও এখনও কেন মামলার চার্জশিট দিতে গড়িমশি করছে?
জবি সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় জবি প্রশাসন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন। প্রতিবেদনের বিষয়ে মোবাইল ফোনে অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে ৪৫ জনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গত বছরের ১৩ জুন প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে কী আছে, এ নিয়ে কোনো তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কী আছে, তা আজও জানতে পারেনি অবন্তিকার পরিবার। জবির তদন্ত প্রতিবেদন ‘গোপন’ রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে অবন্তিকার বাবা মারা যান। আমার ছেলেও ছোট। মেয়ের বিচারের জন্য এখন একাই লড়াই করতে হচ্ছে আমাকে। মেয়েকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য জবিতে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু সেখানকার কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মানসিক নির্যাতনে মেয়েকে অকালে জীবন দিতে হলো। এ মৃত্যুর দায় জবি প্রশাসন এড়াতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার দুই হোতাকেও তো আদালত জামিন দিয়েছে। তারা কি আদৌ শাস্তি পাবে? জড়িতদের নাম তদন্ত কমিটি ও পুলিশকে দিয়েছি। তদন্ত ও বিচারের নামে আমার সঙ্গে প্রহসন করা হচ্ছে।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জবির রেজিস্ট্রার ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াস উদ্দিন বলেন, গত জানুয়ারিতে সিন্ডিকেট সভায় অবন্তিকার আত্মহত্যার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুসারে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আত্মহত্যার সঙ্গে কারা জড়িত এ বিষয়গুলো স্পর্শকাতর। তাই এখনই এসব বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে যারাই জড়িত, বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, অবন্তিকার মোবাইল ফোনের গ্যালারিতে থাকা বেশ কিছু ছবি, স্কিন শট, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের বেশ কিছু খুদে বার্তা পাওয়া গেছে, যা তদন্তে সহায়ক হয়েছে। অবন্তিকার মোবাইল ফোনটি আদালতের অনুমতি নিয়ে পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। এর প্রতিবেদনও এসেছে।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক প্রতিবেদন না আসায় এতদিন আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করতে বিলম্ব হয়েছে। এখন সবকিছু আমাদের হাতে আছে। শিগগিরই প্রতিবেদন আদালতে দেওয়া হবে।
সম্পর্কিত খবর

৩৪ দিন কিশোরীকে আটকে রেখে ধর্ষণ, যুবক গ্রেপ্তার
সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা

সাভারের আশুলিয়ায় ১৩ বছরের এক কিশোরীকে অপহরণ করে ৩৪ দিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মামলায় অভিযুক্ত যুবক মোফাজ্জল হোসেন ওরফে শাকিলকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা তালুকদার। এর আগে দুপুরে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার মো. মোফাজ্জল হোসেন শাকিল (৩৮) ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানার চরকৃষ্ণপুর এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে। তিনি বর্তমানে আশুলিয়ার জামগড়া বটতলা ডিস অফিস সংলগ্ন রাশেদের বাড়ির ভাড়াটিয়া।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও থানা পুলিশ জানায়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া বাঁশতলার ভাড়াবাসা থেকে বের হলে ওই কিশোরীকে অপহরণ করা হয়। এরপর রাতে বাসায় ফিরে না আসায় আত্মীয় স্বজনদের বাসাসহ সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী কিশোরী জানায়, তাকে কৌশলে অপহরণ করে একটি বাসায় নিয়ে আটক রাখে মোফাজ্জল। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় তাকে ধর্ষণ করে।
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা তালুকদার বলেন, উদ্ধারের পর ভুক্তভোগী কিশোরীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তার বোন বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করলে অভিযুক্ত মোফাজ্জল হোসেন শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শ্লীলতাহানির অভিযোগে বাবা-ছেলে আটক
কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় যৌন নিপীড়ন ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে বাবা-ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সকালে কলমাকান্দা উপজেলার পোগলা ইউনিয়নের এক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীর বাবা স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এবং অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। একপর্যায়ে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করেন।
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেনে জানান, ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে বাবা-ছেলে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে আগামীকাল শুক্রবার সকালে জেলা আদালতে সোর্পদ করা হবে।

অটোরিকশা যাত্রীদের গাছে বেঁধে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের এনায়েতপুর-নজরপুর সড়কে ডাকাতির ঘটনায় সাতজন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তিনজন ডাকাতির সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিনূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় পুলিশ।
এছাড়াও ডাকাতি হওয়া একটি অটোরিকশা ও একটি মোবাইলফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা পেশাদার ডাকাত ও ছিনতাইকারী। তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যেকের নামে একাধিক ছিনতাই-চুরির মামলা রয়েছে। এমনকি একজন ডাকাত দলের সদস্য ঘটনার দুই দিন আগে জামিনে মুক্ত হয়ে এসে পুনরায় ডাকাতিতে অংশ নিয়েছে।
এর আগে, গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাত ৯টার দিকে গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর-আড্ডা আঞ্চলিক সড়কের নজরপুর এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাতরা একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে অটোরিকশার যাত্রীদের গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইলসহ অটোরিকশাটি নিয়ে যায়।

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা অমিত শর্টগানের লাইসেন্সের আবেদন যা বলেছিলেন
রংপুর অফিস

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক অমিত বণিক এনপিবি পিস্তল ও শর্টগান ব্যবহারে বিশেষ বিবেচনায় লাইসেন্সের আবেদন করেছিলেন। তার আবেদনের কপি কালের কণ্ঠ পেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেপ্তার করে রংপুর পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
আবেদনে অমিত বণিক নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে দাবি করেন লেখেন, ‘আমি রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম,নীলফামারী জেলায় বহুজাতিক মোবাইল ফোন অপারেটর কম্পানি, বহুজাতিক মোবাইল সেবা ফাইনান্স সার্ভিস, ঢেউটিন এলপিগ্যাসসহ একাধিক ব্যবসা পরিচালনা করছি। ব্যবসা ছাড়াও রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান পরিচালক, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদকসহ একাধিক ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত আছি। এছাড়াও সরকারি প্রতিষ্ঠান-বিডার সদস্য, ভোক্তা অধিকারের সদস্য, লায়ন্স ক্লাবের পরিচালক, মানবতার বন্ধন ও রংপুর মহানগর কমিউনিটি পুলিশের প্রতিষ্ঠাতা ও সদস্য।’
ওই আবেদনে অমিত বণিক আরও দাবি করেন, ‘আমি ও আমার পরিবার আওয়ামী লীগের মতাদর্শী।
তবে ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে কি আদেশ জারি হয়েছে তা জানা যায়নি। গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) অমিত বণিককে গ্রেপ্তার করে মহানগর পুলিশ।