দেখতে অনেকটা চার চাকার প্রাইভেটকারের মতো। হেডলাইট, স্ট্রেয়ারিং, গিয়ার, ব্রেক, হর্ণ, মিউজিক স্পিকার, ওপর কাঠের ছাদ ও বসার সিট সবই আছে। শুধু গ্লাস আর এসি নেই। তবে এটি সত্যিকার ইঞ্জিন চালিত প্রাইভেটকার নয়।
কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই কড়ই গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি প্রাইভেটকারের মতো গাড়ি বানিয়ে নিজেই তা চালিয়ে এলাকায় রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন কাঠমিস্ত্রি তাজুল ইসলাম লিটন। ইতিমধ্যেই দৃষ্টিনন্দন এই গাড়িটি নিয়ে তিনি শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে যাত্রী আনা-নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন।
তাজুল ইসলাম লিটন (৩৮) কুমিল্লা সিটি করর্পোরেশন এলাকার ১৬নং ওয়ার্ডের সংরাইশ এলাকার মো. নুরুল ইসলামের ছেলে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় ৫ম শ্রেণির বেশি লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি তার।
পরে শুরু করেন কাঠমিস্ত্রির কাজ। টানা ১২ বছর কাঠমিস্ত্রির কাজ করে তা ছেড়ে অটোরিকশা চালানো শুরু করেন লিটন। তার সংসারে মা-বাবা, স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এই গাড়ির চাকায় ঘুরছে তাদের ভাগ্য।
তাজুল ইসলাম লিটন জানান, আমার চালানো অটোরিকশাটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন অটোরিকশা কিনতে দোকানে গিয়ে দাম শুনে বাড়ি ফিরে আসি। যেহেতু নিজে কাঠের কাজ জানি পরে কিভাবে কাঠ দিয়ে গাড়ি বানানো যায় ৬ মাস ধরে এমন পরিকল্পনা করে কাঠ ও সরঞ্জাম যোগার করে টানা তিন মাস কাজ করে নিজেই বানিয়ে ফেলি কাঠের তৈরি একটি প্রাইভেটকারের মতো একটি গাড়ি। এই গাড়িতে ব্যবহার করা হয়েছে কড়ই গাছের শুকনো কাঠ, পুরানো গাড়ির যন্ত্রাংশ, লাইট, গিয়ারিং ও চাকা।
তাজুল ইসলাম লিটন বলেন, গাড়িটি অনেকটা প্রাইভেট কারের মতো। তবে এটির পুরো বডি কাঠের তৈরি।
চারটি ব্যাটারিতে বিদ্যুতের সাহায্যে চার্জ করা হয়। যা একবার চার্জ দিলে পুরো দিন চালানো যায়। এটি পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী এ গাড়িটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, এটি দুর্ঘটনার কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ সামনে ও পেছনে চারটি চাকা রয়েছে। পেছন থেকে বা সাইড থেকে অন্য কোনো গাড়ি ধাক্কা দিলেও উল্টাবে না।
তিনি বলেন, রাস্তায় এটি নিয়ে বের হলে সব মানুষ তাকিয়ে থাকে। গাড়ির কাছে এসে ভিড় করে, জানতে চান কিভাবে এটি বানিয়েছি। পথচারীরা এক নজর দেখার জন্য গাড়ির চারপাশে ভিড় করে কেউ কেউ আবার এ গাড়িটির সঙ্গে নিজের ছবি তুলছেন।
লিটন বলেন, গাড়িটিতে আরো ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার কাজ বাকি রয়েছে। গাড়িতে গ্লাস, দূর্বা ঘাস লাগাব। বৃষ্টির পানিতে যেন কাঠ নষ্ট না হয় রঙ করাব। আমার কাছে তো অত টাকা নেই তাই তিন চার দিন হলো সড়কে গাড়ি বের করেছি ভাড়ার টাকা জমিয়ে বাকি কাজগুলো করব।
সংরাইশ গ্রামের অটোরিকশা চালক জসিম উদ্দিন বলেন, এটি নতুন আবিষ্কার। এমন গাড়ি আর দেখিনি। পরিবেশ বান্ধব গাড়ি দেখে আমারও বানানোর আগ্রহ হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রেদোয়ান হাসান বলেন, একজন কাঠমিস্ত্রির বুদ্ধির প্রশংসা করা লাগে। তিনি গাড়িতে যে কারুকাজ করেছেন তা অসাধারণ। ‘কাঠ দিয়েও যে পরিবেশ বান্ধব ও নান্দনিক ডিজাইনের যানবাহন বানানো যায়, এর আগে কখনোই দেখিনি। দেখে খুব ভালো লাগল। আমার কাছে মনে হচ্ছে এই গাড়ির চাকায় ঘুরছে দরিদ্র লিটনের ভাগ্য।
১৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন বাবুল বলেন, লিটনের গাড়িটি যদিও আমি দেখিনি কিন্তু লোক মারফতে শুনেছি। কাঠ দিয়ে বানানো এমন গাড়ি কুমিল্লায় আর দেখিনি। তার হাতের কাঠের কারুকাজ সুন্দর।