কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করেছে মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। শ্রমিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের ৬ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা এই কর্মবিরতি পালন করেন। দাবি না মানলে বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে তারা জানান।
কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন ও যানজটমুক্ত রাখতে গাড়ি সিরিয়ালের জন্য আমরা সর্ব সম্মতিক্রমে টোকেনের ব্যবস্থা করি।
এমন সুন্দর কর্মসূচির বিপরীতে আমরা উপহার হিসেবে পেলাম মিথ্যা মামলা।
তিনি বলেন, গত ২৪ মার্চ রাতে সিরিয়াল ভঙ্গ করে টোকেন না নিয়ে নবীনগর রাস্তার মাথা থেকে যাত্রা শুরু করে সমন্বয়ক পরিচয়দান কারী কয়েকজন ব্যক্তি। আমাদের লাইন ম্যান আবুল কালাম তাদের এই নিয়ম ভঙ্গের প্রতিবাদ করলে তাকে তারা মারধর করে উল্টো চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে পুলিশে দেয়। এই ঘটনায় আবুল কালামকে থানায় লোকজন দেখতে গেলে বেশ কয়েকজন সমন্বয়ক তাদের ওপর চড়াও হয়ে মারধর করেন।
পরে থানায় হামলার অভিযোগ এনে দুটি মিথ্যা মামলা করেন।
ইদ্রিস আলী আরো বলেন, ঘটনায় উপস্থিত না থাকা ব্যক্তিও মামলার আসামি হয়েছেন। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আমরা এই কর্মসূচি নিতে বাধ্য হয়েছি। অনতি বিলম্বে মামলা প্রত্যাহার না করলে বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, থানায় হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে থানার উপপরিদর্শক আলী আক্কাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় যুবদল নেতা মাসুদ রানাকে প্রধান আসামি করে ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করা হয়।
অন্যদিকে চাঁদাবাজি ও হামলা করে মারধরের ঘটনায় উপজেলার আকবপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবু ফয়সাল বাদী হয়ে শ্রমিক দল নেতা আবুল কালামকে প্রধান আসামি করে ৩০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী বলেন, ‘গত ২৪ মার্চ ইফতারের আগে আমরা তিনজন একটি অটোরিকশায় আকবপুর গ্রামে যাচ্ছিলাম। অটোরিকশাচালক মুরাদনগর হয়ে সরাসরি নবীনগর রাস্তায় না গিয়ে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
কারণ জানতে চাইলে চালক বলেন, ‘ওই দিক দিয়ে গেলে ৫০ টাকা জিপি (চাঁদা) দিতে হবে।’ তখন আমি চালককে সোজা পথে যেতে বলি। কিন্তু নবীনগর সড়কের মুখেই চালককে চাঁদা দেওয়ার টোকেন আছে কি না জিজ্ঞেস করা হয়। চালক টোকেন নেই জানালে কয়েকজন তাকে মারধর শুরু করেন। যাত্রীরা নেমে মারধরের কারণ ও চাঁদা কে তুলতে বলেছে জানতে চাইলে তারা হামলা করেন। চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে এসে তাদের রক্ষা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আবুল কালামকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর হামলার ঘটনায় অভিযোগ করতে তারা থানায় যান।
উবায়দুল সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘আমাদের ওপর হামলার খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫ থেকে ২০ জন থানার সামনে এসে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মিছিল করেন। এর মধ্যে যুবদল নেতা মাসুদের নেতৃত্বে ৭০ থেকে ৮০ জন দেশি অস্ত্র নিয়ে থানায় হামলা করেন। আমরা তিন-চারজন থানা ভবনের গেটের ভেতরে ছিলাম, বাকিরা ছিলেন বাইরে। তারা প্রথমে আমাদের বাইরে থাকা অন্তত ১৫ জনকে পিটিয়ে আহত করেন। এ সময় পুলিশ গেট বন্ধ করে দিলে তারা গেট ভেঙে থানায় প্রবেশের চেষ্টা করেন। পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন যুবদল নেতা মাসুদ রানা।’
থানায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুবদল নেতা মাসুদ রানা বলেন, ‘পুরো ঘটনার নেপথ্যে উপদেষ্টা আসিফের চাচাতো ভাই উবায়দুল সিদ্দিকী। আবুল কালামের স্ট্যান্ডের একটি সিএনজির (অটোরিকশা) সঙ্গে উবায়দুলকে বহনকারী সিএনজির ঘষা লাগে। এ সময় উবায়দুল নেমে অটোরিকশার চালককে চড়-থাপ্পড় দেন। তখন গন্ডগোল বাধলে আবুল কালাম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তারা একটু দূরে গিয়ে পুলিশের খবর দিয়ে আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করায়। পরে আমাদের কিছু লোক থানায় গিয়ে ওসি সাহেবের কাছে জানতে চায়, কেন অন্যায়ভাবে আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করছে। এ সময় ওসি রুমের ভেতরে আমাদের লোকদের জিম্মি করে উবায়দুলসহ পেটাতে থাকেন। পরে ফেসবুকে লাইভে মানুষ ঘটনাটি জানতে পেরে থানায় যান তাদের ছাড়িয়ে আনার জন্য। মূল ঘটনা হলো এটা। তারা এখন মিথ্যাচার করছে আমাদের বিরুদ্ধে। উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা চলছে।