সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ রবিবার (৩০ মার্চ) ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গার মানুষ। চট্টগ্রামের লক্ষ্মীপুরসহ পটিয়া, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীসহ বিভিন্ন জায়গায় ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের লক্ষ্মীপুরে ১১ গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ আজ রবিবার ঈদ উদযাপন করছেন। আজ সকাল ১০টায় রামগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব নোয়াগাঁও তালিমুল কুরআন নূরানী মাদরাসা ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন শতাধিক মুসল্লি।
এ উপজেলার ৪টি ও রায়পুর উপজেলার একটি মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে নয়, হানাফি মাজহাব অনুসারে ঈদ পালন করছেন বলে জানিয়েছেন ইমাম ও মুসল্লিরা।
আরো পড়ুন
জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও, জয়পুরা, বিঘা, বারোঘরিয়া, হোটাটিয়া, শরশৈই, কাঞ্চনপুর ও রায়পুর উপজেলার কলাকোপাসহ ১১টি গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ ঈদ আনন্দে মেতে উঠেছে। তারা পৃথকভাবে স্ব স্ব এলাকার মসজিদে ঈদের নামাজের আয়োজন করেছেন।
সকাল সাড়ে ৭টায় রামগঞ্জ পৌরসভার জাহাঙ্গীর টাওয়ার, সাড়ে ৯টায় পূর্ব বিঘা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, পশ্চিম নোয়াগাঁও জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। হানাফি মাজহাব অনুসারে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা একদিন আগে ঈদ পালন করে আসছেন।
ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন ও হারুনুর রশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৌদির সঙ্গে মিল রেখে তারা রোজা রাখেন। আবার সৌদির সঙ্গে মিল রেখেই রোজা ভাঙেন তারা।
পৃথিবীর কোথাও একবার চাঁদ দেখা গেলেই ঈদ উদযাপন করতে হবে। সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গেছে। এতে তারা সারাবিশ্বের সঙ্গে মিল রেখেই মাজহাব অনুযায়ী ঈদ পালন করছেন। ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। পুরো দেশে একইভাবে ঈদ পালনের নিয়ম চালু করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
আরো পড়ুন
ঈদ কবে, জানা যাবে সন্ধ্যায়
এদিকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ রবিবার দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়াসহ মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারী শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পবিত্র ঈদুল ফিতরের ঈদ উদযাপন করেছেন। সকাল ১০টায় মির্জাখীল দরবার শরীফের মাঠে অনুষ্ঠিত ঈদ জামাতের ইমামতি করেন দরবারের বড় শাহজাদা ড.মাওলানা মোহাম্মদ মকছুদুর রহমান। ওই জামাতে আনুমানিক এক হাজারের অধিক মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ ও মোনাজাত আদায় করেছেন।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী উপজেলার মির্জাখীল দরবার শরীফের আকিদার মুসলমানেরা এ ঈদ উদযাপন করছেন। প্রায় আড়াই শতাধিক বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপন করে আসছেন মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরা।
মির্জাখীল দরবার শরীফের মেঝ শাহজাদা মোহাম্মদ মছুদুর রহমান বলেন, ‘প্রায় আড়াই শ বছর আগে সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল গ্রামে হযরত মাওলানা মোখলেছুর রহমান (রহ.) হানাফি মাজহাবের ফতোয়া অনুযায়ী পৃথিবীর যেকোনো দেশে চাঁদ দেখা গেলে রোজা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহাসহ সব ধর্মীয় উৎসব পালন করার ফতোয়া দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরা একই নিয়মে সব ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে আজ রোববার ঈদ-উল-ফিতরের ঈদের নামাজ আদায় করে ঈদ উদযাপন করছি।’
এ ছাড়া পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর ৮টি গ্রামের মুসল্লিরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন আজ রবিবার। জাহাঁগিরিয়া শাহসূফি মমতাজিয়া দরবার শরিফের অনুসারীরা দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আসছেন।
আরো পড়ুন
অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায়ে আবাসিক হোটেল থেকে ১২ নারী-পুরুষ আটক
জানা গেছে, উপজেলার নিজহাওলা, পশুরবুনিয়া, চরযমুনা, উত্তর পশুরিবুনিয়া, সেনেরহাওলা, কাছিয়াবুনিয়া, ফুলখালী, কোড়ালিয়াসহ ৮টি গ্রামে দরবার শরিফের অনুসারীরা সৌদি আরবের চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ঈদ পালন করে থাকেন। তারা বিশ্বাস করেন, বিশ্বের যেকোনো স্থানে চাঁদ দেখা গেলে তা ইসলামিক ঐক্যের অংশ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। এই কারণে তারা সৌদি আরবের সঙ্গে একদিনে রমজান শুরু করেন এবং ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন।
জাহাঁগিরিয়া শাহসূফি মমতাজিয়া দরবার শরিফের অনুসারী ইউসুফ আলী সিরাজুল বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে রাঙ্গাবালীর এসব গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সকালে সবাই মিলে ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছি, এরপর একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই। শুধু রাঙ্গাবালীতেই নয়, দেশের আরো অনেক স্থানে রয়েছে । সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ উদযাপনের এই নিয়ম চলমান রয়েছে এবং আগামী দিনেও তা অব্যাহত থাকবে।’