ময়মনসিংহে বহুতল ভবন থেকে পড়ে তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনায় চিরকুট ও ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২৯ মার্চ) নিহতের ঘর থেকে এসব উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এই চিরকুট থেকে ঘটনার মূল রহস্য জানা গেছে।
শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর গাঙ্গিনাপাড় ট্রাফিক মোড় ১৩ তলা বনানী ভবনের ছাদ থেকে পড়ে আত্মহত্যা করে ত্রিপর্ণা ভদ্র একা নামের এক কিশোরী।
তিনি তারাকান্দা উপজেলার বারইপাড়া গ্রামের নেপাল চন্দ্র ভদ্রের মেয়ে।
আরো পড়ুন
নড়াইলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা নিহত, আহত ১০
উদ্ধার করা চিরকুটে লেখা ছিল, ‘নমস্কার, আমি ত্রিপর্ণা ভদ্র নিজের ইচ্ছায় আজ মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এর জন্য কেউ দায়ী নয়।’
অন্যদিকে একটি ডায়েরিতে লেখা ছিল একজন জ্যেতিষীর কথা।
তিনি নিহতের পরিবারের আত্মীয় হন। তার নাম অজিত কুমার নাগ (৬০)। তাকে নিয়ে অনেক কথা রয়েছে ডায়েরিতে। যেখানে বর্তমান দুনিয়ার রহস্যময় সব কথা একা আয়ত্ত করে নেয়। এতে তিনি মানসিকভাবে বেসামাল হয়ে যান। বর্তমান দুনিয়ার কর্মকাণ্ড তার ভালো লাগে না। ক্ষণিকের এই জীবন তুচ্ছ। আগাম সব ভবিষ্যদ্বাণীও এই ডায়েরিতে লেখা রয়েছে। সেই সঙ্গে জ্যোতিষী অজিত নাগই সর্বেসর্বা ছিল। তার কথার বাইরে তার যাওয়া সম্ভব না। এটার জন্য পরিবারের অনেক বাধা রয়েছে যা তার ভালো লাগে না। তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চান। এই জন্য বেশ কয়েকবার মরতে চাইলে ওই অজিতের ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। এখন সময় কাছে।
আরো লেখা আছে, তিনতলা বা পাঁচতলা থেকে মরতে গিয়ে মরা যাবে না। হয়তো পুঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। এটা হবে লজ্জার। তাই ১২ বা ১৩ তলা থেকে লাফ দিলে মৃত্যু নিশ্চিত হবে।
আরো পড়ুন
বাকিতে মাংস বিক্রি না করায় ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১৫
স্থানীয়রা জানায়, অজিত নিহতের মায়ের সর্ম্পকে মামা। তিনি জ্যেতিষী হিসেবে পরিচিত। প্রায় তিন বছর ধরে একাদের বাসায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন তিনি। ওই সময় নেপালের ছেলে ত্রিপিদ ভদ্রকে আলাদা সময় দিতেন অজিত। দুই ভাই-বোনকে জ্যোতিষী বিদ্যা পড়াতেন তিনি। এ অবস্থায় অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ত্রিপিদ হয়ে উঠেন অন্য জগতের মানুষ। এতে পরিবারের লোকজন তাকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু সরাতে পারেননি অজিতকে। তিনি অনিয়মিত হলেও বাসায় গিয়ে একাকে সময় দিতেন।
একার মা লিপি ভদ্র জানান, ২০২২ সালের পর থেকেই তার মেয়ে বদলাতে থাকে। বাসায় যেই যান তাদের হাত দেখেই ভবিষ্যতবাণী করে দেয় মেয়ে। নিজেকে অন্য একটি জগতের মানুষ ভাবতে থাকে। এর মধ্যে অজিত নাগ কমপক্ষে চারটি বই দেন পড়ার জন্য। সবগুলিই ইংরেজিতে লেখা ছিল। গত তিন মাস আগে বইগুলি পড়া সম্পন্ন হলে ফেরত দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে আরো পড়ার আগ্রহী হয়ে উঠে। আর এতে বাধা দেওয়া হলে পরিবারের প্রতি ক্ষিপ্ততা দেখানো শুরু করে।
আরো পড়ুন
দক্ষিণ গাজায় ‘অত্যন্ত কঠোর যুদ্ধে’ ফিরছে ইসরায়েলি সেনারা
তিনি আরো জানান, মৃত্যুর দুই দিন আগেই নিজের ও তার মোবাইল ফোন থেকে সব ধরনের ছবি মুছে ফেলে এবং সবাইকে এ জগতের কর্মকান্ড থেকে নিজেদের গুঠিয়ে রাখার নির্দেশ দেয়। ঘটনার দিন সে নিজের মোবাইলটি রেখেই বাসা থেকে বের হয়।
লিপি ভদ্রের অভিযোগ, তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য এস্ট্রোলজার অজিতই অনেকাংশে দায়ী। এই জন্য তিনি অভিযোগও করেন।
এ বিষয়ে জানতে অজিত কুমার নাগকে ফোন করলে মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে জানান, একার লেখা একটি চিরকুট ও ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। বিশেষ করে ডায়েরিতে অজিতে সম্পর্কে অনেক কথা লেখা রয়েছে। সেই সুত্র ধরে আগানো হচ্ছে। তা ছাড়া মৃত্যুর বিষয়টা এখন পরিষ্কার হয়েছে। ওই অজিতই মৃত্যুর মুল পেক্টর হতে পারে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আরো পড়ুন
নাম বলেন কোন খেলোয়াড় বয়স্ক, রিপোর্টারকে ম্যানসিটির মিডফিল্ডার
২০২২ সালে ১৩ মার্চ বিকেলে ময়মনসিংহ শহরের স্বদেশী বাজার এলাকার বহুতল ভবন রাইট পয়েন্টের ছাদ থেকে পড়ে অর্ক প্রিয়া ধর সৃজিদা (১৬) নামের এক মেয়ে আত্মহত্যা করে। মেয়েটি বিদ্যাময়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনির ছাত্রী ছিল।