ভারতে আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ধর্ষক রাম রহিমের প্যারোলে মুক্তির আবেদনকে সমর্থন করেছে দেশটির হরিয়ানা সরকার।
গত মে মাসে তার আবেদন খারিজ করেছিলেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট। তাতে যুক্তি ছিল, গুরমিত রাম রহিম সিং জেলের বাইরে বেরোলে ২০১৭ সালের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু, এক মাস বাদে সেই পর্যবেক্ষণকে কার্যত পাত্তাই দিল না রাজ্য সরকার।
তা অমান্য করে ৫১ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ধর্মগুরুর আবেদনের স্বপক্ষে সুপারিশ পাঠাল আদালতে।
পালিত কন্যার বিয়েতে উপস্থিত থাকার জন্য প্যারোলের আবেদন করেছিলেন রাম রহিম। তাই মানবিক কারণে তার আবেদনকে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় খাট্টার প্রশাসন।
হরিয়ানার কারামন্ত্রী কে এল পানোওয়ার বলেন, 'প্রত্যেক সাজাপ্রাপ্তের একবছর বাদে প্যারোলের জন্য আবেদনের অধিকার রয়েছে।
তিনি একটি আবেদন পাঠিয়েছিলেন। আমরা সেটি সিরসা জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছি। প্রতিবেদন দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নির্বাচনের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই। যদি সত্যিই আমাদের সেই উদ্দেশ্য থাকত তাহলে লোকসভা নির্বাচনের আগে তাকে ছেড়ে দিতাম। এই ধরনের কোনও চিন্তা সরকারের নেই।'
রাজ্যের অন্য দুই মন্ত্রী কৃষ্ণা পওয়ার এবং অনিল ভিজও ধর্ষণে সাজাপ্রাপ্ত ধর্মগুরুর আবেদনকে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রধান রাম রহিমের ব্যবহার জেলে খুব ভালো ছিল। তাই অন্য বন্দির মতো তারও প্যারোলে বাইরে বেরোনোর অধিকার রয়েছে।
গত মে মাসে ধর্ষক ধর্মগুরুর প্যারোলের জন্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে আবেদন জানান পালিত কন্যা। কিন্তু, তা খারিজ করে দেন বিচারপতি কুলদীপ সিং। তাঁর যুক্তি ছিল, সাজাপ্রাপ্ত জেলের বাইরে বেরোলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে। নতুন করে তাকে গ্রেপ্তার করতে সমস্যা হতে পারে। তাই প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার কোনও কারণ নেই।
আইনজীবীরা বলছেন, একজন বন্দি দুই বছর পর প্যারোল পেতে পারেন। কিন্তু, রাম রহিম এক বছর বাদেই সেই আবেদন করেছেন। তাই, নিয়ম অনুযায়ী তা অনুমোদন পাবে না। পাশাপাশি এই বিষয়ে আদালতের নির্দেশ যৌক্তিকও। কিন্ত, এটিই মানতে চাইছে না হরিয়ানা সরকার। বরং এর সমর্থনে আদালতে সুপারিশ করছে।
২০০২ সালে হরিয়ানার বিতর্কিত ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রধান রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ডেরার দুই নারী চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানান জেলা প্রশাসনের কাছে। এ নিয়ে মামলা চলার পর তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
অন্য এক মামলায় একজন সাংবাদিককে খুনের অভিযোগে ১৬ বছরের কারাদণ্ড হয় তার।
বিরোধীদের অভিযোগ, চার মাস পর হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচন। তাই পরিকল্পনামাফিক এই পদক্ষেপ নিয়েছে বিজেপি সরকার। কারণ, হরিয়ানা ও প্রতিবেশী পাঞ্জাবে রাম রহিমের প্রচুর সমর্থক আছে। প্যারোলের বিষয়ে সাহায্য করে সেই সমর্থকদের মন জয় করতে চাইছে খাট্টার প্রশাসন। নির্বাচন জেতার জন্যই এই পন্থা অবলম্বন করেছেন তাঁরা।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন