শামসুন নাহার মাহমুদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ছিলেন এদেশের নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী, বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও লেখক। ১৯০৮ সালের ফেনী (বৃহত্তর নোয়াখালী) জেলার গুথুমা গ্রামে তার জন্ম। তার পিতা মুহম্মদ নুরুল্লাহ ছিলেন মুন্সেফ।
খানবাহাদুর আব্দুল আজিজ তার মাতামহ এবং হাবীবুল্লাহ্ বাহার চৌধুরী ছিলেন সহোদর ভ্রাতা।
শিক্ষাজীবনের শুরুতে তিনি চট্টগ্রামের খাস্তগীর গার্লস হাইস্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু সামাজিক অনুশাসনের কারণে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে নিজ চেষ্টায় তিনি প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে ম্যাট্রিক (১৯২৬) পাশ করেন। পরে ডাক্তার ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদের সঙ্গে বিয়ে হওয়ায় (১৯২৭) তিনি উচ্চশিক্ষার সুযোগ পান।
তিনি ১৯৪২ সালে এমএ পাশ করেন। বিএ পাশ করার পর বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাইস্কুল থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে তিনি বেগম রোকেয়ার নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে যুক্ত হন।
শামসুন্নাহার লেডি ব্রাবোর্ন কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন।
কলকাতায় থাকাকালে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার বহুবার সাক্ষাৎ হয়েছে। নজরুল তাকে সাহিত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ করেন। শামসুন্নাহার নিয়মিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতেন।
১৯৫২ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন। তিনি কলম্বোয় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব উইমেন দলের নেতৃত্ব দেন এবং সমগ্র এশিয়ার জন্য এই আন্তর্জাতিক মৈত্রী সংঘের আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োজিত হন।
এ ধরনের কাজের প্রয়োজনে তিনি বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্স-এসব দেশ ভ্রমণ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
তার প্রথম লেখা কবিতা প্রকাশিত হয় কিশোরদের ‘আঙ্গুর’ নামক মাসিক পত্রিকায়। আইএ পড়ার সময় তিনি ‘নওরোজ ও আত্মশক্তি’ পত্রিকার মহিলা বিভাগ সম্পাদনা করতেন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘বুলবুল’ (১৯৩৩) পত্রিকা হবীবুল্লাহ্ বাহার ও শামসুন্নাহার যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেছেন।
তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ-পুণ্যময়ী (১৯২৫), ফুলবাগিচা (১৯৩৫), বেগম মহল (১৯৩৬), রোকেয়া জীবনী (১৯৩৭), শিশুর শিক্ষা (১৯৩৯), আমার দেখা তুরস্ক (১৯৫৫), নজরুলকে যেমন দেখেছি (১৯৫৮) ইত্যাদি।
১৯৬৪ সালের ১০ এপ্রিল (আজকের দিনে) ঢাকায় তার মৃত্যু হয়।