<p>সব ক্ষমতার মালিক মহান আল্লাহ। তিনি পৃথিবীতে যাকে যেভাবে চান ক্ষমতার মালিক বানান। প্রত্যেকেই আপন অবস্থানে কিছু না কিছু ক্ষমতার মালিক হয়ে থাকে। মহান আল্লাহর নির্দেশমতো ইনসাফের সঙ্গে ক্ষমতার ব্যবহার না হলেই তা জুলুমের শামিল হয়। আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না। পরকালে তাদের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।</p> <p><strong>আল্লাহই ক্ষমতার মালিক</strong> : জগতের সব শক্তি ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর করায়ত্তে আছে। সম্মান ও অসম্মান তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি দরিদ্র ও পথের ভিখারীকে রাজ সিংহাসন ও মুকুটের অধিকারী করতে পারেন। আবার প্রবল প্রতাপান্বিত রাজা-বাদশাদের হাত থেকে রাষ্ট্র ও ঐশ্বর্য ছিনিয়ে নিতে পারেন। আল্লাহ বলেন, ‘বলো, হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ, তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করো এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নাও; যাকে ইচ্ছা তুমি পরাক্রমশালী করো, আর যাকে ইচ্ছা তুমি হীন করো। কল্যাণ তোমার হাতেই। নিশ্চয়ই তুমি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ২৬)</p> <p><strong>ক্ষমতার যথার্থ ব্যবহার</strong> : পৃথিবীতে মহান আল্লাহ সবাইকে কিছু না কিছু ক্ষমতার মালিক বানান। সে অর্থে কম-বেশি সবাই ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকে। ক্ষমতার যথার্থ ব্যবহার হলো—ন্যায়পরায়ণতা ও ইনসাফের সঙ্গে ক্ষমতার প্রয়োগ করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, অধিনস্তদের অধিকার পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের প্রতি কল্যাণকামী হয়ে কাজ করা। ন্যায়পরায়ণ শাসকের জন্য রয়েছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সীমাহীন মর্যাদা ও সম্মান। আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ন্যায়পরায়ণ শাসক তথা ক্ষমতার যথার্থ ব্যবহারকারী কিয়ামতের দিন আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় এবং সর্বাাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত হবেন। আর অত্যাচারী শাসক আল্লাহর কাছে সর্বাধিক ঘৃণিত ও সর্বাধিক শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। অধিকন্তু সে আল্লাহর দরবার থেকেও বহু দূরে অবস্থান করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৭৯)</p> <p><strong>নিজের প্রতি ক্ষমতার অপব্যবহার</strong> : মানুষের জীবন আল্লাহর একান্ত দান, যা অতি মূল্যবান। এই মূল্যবান জীবনকে অবমূল্যায়ন করে নিজের প্রতি নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার কোনোভাবেই কাম্য নয়। সেচ্ছায় নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিপতিত করা যাবে না। জীবন বিপন্ন হওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। নিজেকে হত্যা করা যাবে না। আত্মহত্যা নিজের প্রতি নিজের ক্ষমতার সবচেয়ে বড় অপব্যবহার। এ জন্যই আত্মহত্যা নিষেধ। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৯)</p> <p>আত্মহত্যাকারী যেভাবে আত্মহত্যা করে আল্লাহ জাহান্নামে তাকে সেভাবেই শাস্তি দেবেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড়ের ওপর থেকে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে অনন্তকাল ধরে অনরূপভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, বিষ তার হাতে থাকবে এবং অনন্তকাল ধরে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি লৌহ অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সেই লৌহ অস্ত্র জাহান্নামে তার হাতে থাকবে যা দিয়ে সে তার পেটে অনন্তকাল ধরে আঘাত করতে থাকবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪৪২; মুসলিম, হাদিস : ৩১৩)</p> <p><strong>কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার</strong> : সব কর্মজীবীর কিছু ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ থাকে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বা প্রভাব খাটিয়ে অন্যায়ভাবে স্বার্থ হাসিল করা ক্ষমতার সুস্পষ্ট অপব্যবহার। এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কারো ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা বা পদ-পদবি ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করা ইসলামের দৃষ্টিতে বড় অন্যায় ও জুলুম। আবু হুমাইদ আস-সাঈদি (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আসদ গোত্রের ইবনে লাতবিয়া নামক এক ব্যক্তিকে জাকাত উসুলের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করে কোথাও পাঠালেন। তিনি সেখান থেকে ফিরে এসে বললেন, এগুলো আপনাদের অর্থাৎ রাষ্ট্রের, আর এগুলো আমাকে উপহার দেওয়া হয়েছে। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বরে দাঁড়ালেন। আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, ‘সে কর্মচারীর কী হলো, যাকে আমি দায়িত্ব দিয়ে পাঠালাম, আর সে বলে, এগুলো আপনাদের এবং এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে? সে তার পিতার বা মাতার ঘরে বসে থেকে দেখে না কেন, তাকে উপহার দেওয়া হয় কি না? (বুখারি, হাদিস : ২৪৫৭)</p> <p><strong>আমানত আদায়ে ক্ষমতার অপব্যবহার</strong> : নিজের কাছে থাকা অন্যের কোনো কিছু যথাসময়ে যথাস্থানে মালিককে পৌঁছে দেওয়া হলো আমানত। আমানত শুধু অর্থ-সম্পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং ব্যাপক অর্থে চাকরি, সরকারি-বেসরকারি দাপ্তরিক কাজকর্ম, শিক্ষকতা, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ব-কর্তব্য সব আমানতের অন্তর্ভুক্ত। এমনকি নিজের হাত-পা, চোখ-কানসহ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও ব্যক্তির কাছে আমানত। এগুলোর খেয়ানতও ক্ষমতার অপব্যবহার। আমানতের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেন—আমানত তার হকদারকে প্রত্যর্পণ করতে। ’ (সুরা নিসা : আয়াত : ৫৮)</p> <p><strong>দায়িত্ব-কর্তব্যে ক্ষমতার অপব্যবহার</strong> : ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা ক্ষমতার অপব্যবহার। কর্তব্যে অবহেলা বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন—ইচ্ছা করে দায়িত্ব পালন না করা, অযথা কালক্ষেপণ, বিলম্বে কর্মস্থলে উপস্থিতি, নির্ধারিত সময়ের আগে প্রস্থান, সেবা প্রদানে অলসতা ইত্যাদি। দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলার জন্য প্রত্যেককে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৮৫৩; মুসলিম, হাদিস : ৪৮২৮)</p> <p><strong>আচার-আচরণে ক্ষমতার অপব্যবহার </strong>: বেশির ভাগ মানুষকে প্রতিদিন অনেকের মুখোমুখি হতে হয়। ছাত্ররা শিক্ষকদের, যাত্রীরা যান-পরিচালনাকারীদের এবং অন্য সেবাগ্রহীতারা সেবাপ্রদানকারীদের দারস্ত হয়। সবার কাছে আসা সবার সঙ্গে উত্তম ও শোভনীয় আচরণ একান্ত কাম্য। এটি উত্তম ইবাদতও বটে। এর ব্যতিক্রম করাও নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার। আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন কর্মবিচারের পাল্লায় বান্দার সবচেয়ে ভারী ও মূল্যবান আমল হবে সুন্দর আচরণ। আর সুন্দর আচরণের অধিকারী মানুষ শুধু তার সুন্দর আচরণের কারণে নফল নামাজ ও রোজা পালন করার সাওয়াব অর্জন করবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০০৩)</p> <p>পরিশেষে বলা যায়, যেহেতু সবাই কিছু না কিছু ক্ষমতার অধিকারী, কাজেই প্রত্যেককে নিজ অবস্থানে দায়িত্বশীল হতে হবে এবং নিজের ক্ষমতার যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।     </p>