বড় পরিসরে চৈত্রসংক্রান্তি ও বর্ষবরণ উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাহাড় থেকে সমতলের সব জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে একসঙ্গে নানা অনুষ্ঠান উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে। বুধবার পৃথক দুটি সংবাদ সম্মেলনে এসব আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন অন্তর্র্বতী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তিনি জানিয়েছেন, চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে ১৩ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন করা হচ্ছে ‘ব্যান্ড শো’।
এতে পাহাড় ও সমতলের জনপ্রিয় ব্যান্ডদলগুলো অংশ নেবে। পরদিন পহেলা বৈশাখ চারুকলা অনুষদের নববর্ষের শোভাযাত্রায় বাঙালি ছাড়াও ২৭টি জাতিগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করবে। ২শ গিটার নিয়ে এতে অংশ নেবে রক মিউজিশিয়ানদের একটি দল। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনতার প্রতি সংহতি জানিয়ে তারা কণ্ঠে ধারণ করবে আলোচিত স্লোগান ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’।
আরো পড়ুন
দলীয় কর্মীকে হত্যায় জামায়াতের প্রতিবাদ, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা গ্রেপ্তার
বুধবার চৈত্রসংক্রান্তি ও বাংলা বর্ষবরণ ১৪৩২ উপলক্ষ্যে শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনস (বাম্বা) যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। দুপুর সাড়ে বারোটায় জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সদস্য শেখ মনিরুল আলম টিপু জানান, নববর্ষের শোভাযাত্রায় প্রথমবারের মতো বাম্বা যুক্ত হচ্ছে।
এ সময় সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যা হচ্ছে, এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা যদি শুধুমাত্র আমাদের দেশের শুভকামনা করি, তাহলে এরচেয়ে স্বার্থপরতা আর কিছু হতে পারে না। ফলে ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, এই নববর্ষে তার প্রতিবাদ করে যেন শান্তি ফিরে আসে এই কামনাটাও আমাদের করতে হবে।
তাহলেই বোঝা যাবে আমরা অন্যের জন্য ভাবছি। আমাদের সংস্কৃতিটা কী, এইটা তারও একটা স্টেটম্যান্ট।’
একই দিন বেলা আড়াইটায় বাংলা নববর্ষ এবং পাহাড় ও সমতলের জাতিগোষ্ঠীদের বর্ষবরণ উৎসব নিয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সংস্কৃতি উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।
নানান জনগোষ্ঠীর ভেতর এত দিন জিঁইয়ে রাখা দূরত্ব, সংশয়, অবিশ্বাস দূরে ঠেলে অন্তর্ভূক্তিমূলক সংস্কৃতিচর্চার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বলা হয়, সকল জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে এবার একত্রে উৎসব করা হবে।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উৎসবগুলো চৈত্রসংক্রান্তি ঘিরে হয়। আমাদের উৎসবটাও তাই এবার চৈত্রসংক্রান্তি থেকে শুরু হচ্ছে।’
তিনি জানান, চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে ১৩ এপ্রিল শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রয়েছে কনসার্ট। বিকাল ৩টা থেকে সেখানে গান গাইবে গারো সম্প্রদায়ের ব্যান্ড এফ মাইনর, মারমা সম্প্রদায়ের লা রং, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ইমাং, খাসিয়া সম্প্রদায়ের ইউনিটি, চাকমা সম্প্রদায়ের ইনভোকেশন, বাঙালির মাইলস, ওয়ারফেজ, ভাইকিংস, অ্যাভয়েড রাফা, দলছুট, স্টোনফ্রি।
অন্যদিকে, একই দিনে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশের ১২ জেলায় হবে সাধুমেলা। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সেখানে সাধুসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক গানের আসর বসবে। একই দিন শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে বসবে চা শ্রমিকদের ফাগুয়া উৎসব। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ১৩ ও ১৪ এপ্রিল রয়েছে দিনব্যাপী ধামাইল নৃত্য, গান, ভিডিও প্রদর্শনী, সন্ধ্যায় বাউল গান ও সেমিনার।
পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের নববর্ষের শোভাযাত্রায় এবার বাঙালিসহ ২৭টি নৃগোষ্ঠী অংশ নেবে। সবাই নিজের সংস্কৃতি, পোশাক, বাদ্যযন্ত্র নিয়ে হাজির হবেন। এ শোভাযাত্রায় প্রথমবারের মতো যোগ দিচ্ছে রক শিল্পীদের সংগঠন বামবা। রক শিল্পীদের সঙ্গে যোগ দিতে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে থাকা গিটার প্লেয়ারদের তাদের গিটার ও ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া আহ্বান জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
তিনি জানান, পহেলা বৈশাখ বিকেল ৩টা থেকে রাজধানীর মানিকমিয়া অ্যাভিনিউতে বৈশাখী কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এতে সহযোগিতা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। কনসার্টের পর সন্ধ্যা ৭টায় থাকবে একটা ড্রোন শো। এর থিম হচ্ছে করা হয়েছে, নতুন বছর, নতুন বাংলাদেশ। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ২ হাজার ৬০০ ড্রোন উড়ানো হবে। চীনা দূতাবাসের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিতব্য এ আয়োজনে জুলাই অভ্যুত্থান ও নববর্ষকে রাখা হবে কেন্দ্রে।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা জানান, নববর্ষে ছায়ানটের অনুষ্ঠানও হচ্ছে, থাকছে সুরের ধারার অনুষ্ঠানও। তবে সুরের ধারার অনুষ্ঠানটি এবার হবে রবীন্দ্রসরোবরে। অন্যদিকে, বিসিকের আয়োজনে পয়লা বৈশাখ থেকে সাত দিন বাংলা একাডেমিতে চলবে বৈশাখী মেলা।