দেশে বর্তমানে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে ৮৩ জন ‘গডফাদার’। তাদের শীর্ষ পর্যায়ের সহযোগী রয়েছে এক হাজার ১৮৫ জন। তালিকাভুক্ত এসব শীর্ষ ব্যবসায়ী মূলত সীমান্ত ও আকাশপথে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য দেশে আনছেন। গতকাল শনিবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
৮৩ গডফাদারের নিয়ন্ত্রণে দেশের মাদক ব্যবসা, সহযোগী ১১৮৫
- তরুণরাই বেশি মাদকে আসক্ত
- নারীরাও মাদকে আসক্ত হচ্ছে
রেজোয়ান বিশ্বাস

ডিএনসি সূত্র বলছে, তালিকাভুক্ত মাদকের গডফাদাররা পর্দার আড়ালে থেকে সব সময় এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। সহযোগীদের দিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে সেই মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে তারা। এতে আসক্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ধ্বংস হচ্ছে তরুণসমাজ। এর বাইরে শিশুসহ অনেক পেশাজীবীও এখন মাদকে আসক্ত।
মাদকের অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে এখন ধনীর দুলালরাও ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। এতে সমাজে অপরাধ বাড়ছে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, তালিকাভুক্ত এসব ‘গডফাদারের’ মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তাও আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসির পরিচালক (গোয়েন্দা অপারেশনস) উপমহাপরিদর্শক তানভীর মমতাজ কালের কণ্ঠকে বলেন, নতুন তালিকা ধরে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করতে দেশে অভিযান চলছে। একই সঙ্গে চেষ্টা চলছে মাদক নিয়ন্ত্রণের।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আড়ালে থাকা এসব গডফাদারের কারণেই মূলত সমাজে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বেসরকারি আহসানউল্লাহ মাদক নিরাময় কেন্দ্রের বর্তমান তথ্য বলছে, সম্প্রতি বিভিন্ন সময়ে তাদের এখানে ৮১৪ নারী মাদকসেবী ভর্তি হয়েছে চিকিৎসার জন্য।
ডিএনসির প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে (রিহ্যাব) গেছে অন্তত ৫৫ হাজার মাদকসেবী। গত পাঁচ বছরে রিহ্যাবে চিকিৎসা নেওয়া নারী মাদকাসক্ত বেড়েছে পাঁচ গুণ। ১৫ বছর ও তার কম বয়সী মাদকাসক্ত বেড়ে হয়েছে তিন গুণ। সংখ্যায় যা ৪৭ হাজার ৩৭৬।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মামলা, উল্লেখযোগ্য আসামি ও মাদকদ্রব্যের বিবরণের মধ্যে রয়েছে মোট অভিযান আট লাখ ৫৩ হাজার ২৫৮, মামলা হয়েছে দুই লাখ ২৮ হাজার ৭০৯ ও আসামি দুই লাখ ৪৪ হাজার ৮৯৪ জন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলছে, মাদক ব্যবসায়ীরা দেশ থেকে অর্থও পাচার করছেন। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারিদের অনেকে দেশ থেকে বিপুল অর্থপাচার করার তথ্য পেয়ে যাচাই করছে তারা। এই তালিকায় থাকা শীর্ষ অন্তত ১০ জন মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের তথ্য পাওয়া গেছে।
তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফের নুরুল হক ভুট্টো, সিদ্দিক আহমেদ, শফিক আলম ওরফে শফিক, ফজর আলী, নুরুল কবির, চট্টগ্রামের শফি, ঢাকার আদাবরের নুরুল ইসলাম, টঙ্গীর পূর্ব থানার পারুল, খুলনার শাহজাহান হাওলাদার ও পাবনার শাহীন আলম। তাঁদের মধ্যে দুজন গ্রেপ্তারের পর জামিনে রয়েছেন, অন্যরা পলাতক। মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে এর মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের তিন গডফাদারের প্রায় আট কোটি ১১ লাখ টাকা মূল্যের জমি ও বাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
এই তথ্য জানিয়ে গতকাল সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের গচ্ছিত এক কোটি এক লাখ ২৩ হাজার ৪২৫ টাকা জব্দ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৯.১১ একর জমি ও দুটি বাড়ি জব্দ তালিকায় রয়েছে, যার মূল্য আট কোটি ১১ লাখ টাকা। অন্যদের সম্পত্তি ক্রোক করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এই সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ১৯.৫৩৬ একর জমি, ১১টি বাড়ি ও একটি গাড়ি, যার মূল্য ২৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাংলাদেশের প্রচলিত মাদক আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এর পরও মাদক ব্যবসা থেমে নেই।
শীর্ষ পর্যায়ের মাদক ব্যবসায়ী :
উল্লেখযোগ্য মাদক গডফাদারদের বিষয়ে ডিএনসি সূত্র বলছে, ঢাকার সবচেয়ে বেশি শতাধিক শীর্ষ পর্যায়ের মাদক ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৪৫ জন বয়সে তরুণ। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকেন্দ্রিক মাদক ব্যবসায়ও এ ধরনের ব্যবসায়ী রয়েছেন। চট্টগ্রাম বিভাগে তাঁরা মোট ৭২ জন।
চট্টগ্রাম বিভাগে এসব শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে রয়েছেন কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়ার সাবেক এমপি, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং তাঁদের আত্মীয়-স্বজন। এর বাইরে রাজশাহী বিভাগে ২১ জন হেরোইন ব্যবসায়ীসহ ৩৫ জনের নাম রয়েছে। এরা রাজশাহী বিভাগের সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা। এই বিভাগে শীর্ষ ব্যবসায়ী, পাইকারি ব্যবসায়ী ও বহনকারী মিলিয়ে এক হাজার ৩৯২ জনের তালিকা রয়েছে। খুলনা বিভাগে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের তালিকায় নাম রয়েছে ২০ জনের। বরিশাল বিভাগে ১৫ জন, সিলেটে ২০ জন, রংপুরে ২৫ জন ও ময়মনসিংহে ২০ জনের নাম জানা গেছে।
ডিএনসি সূত্র বলছে, আগে ইয়াবা চোরাচালানের মূল রুট ছিল মায়ানমারের সীমান্তসংলগ্ন টেকনাফে। বর্তমানে এই রুটে বিজিবির টহল বাড়ায় চোরাকারবারিরা রুট পরিবর্তন করেছে। সাগরপথে উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ঢুকছে ইয়াবা। এ ছাড়া যশোরের বেনাপোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, লালমনিরহাট, চুয়াডাঙ্গা ও জয়পুরহাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে ঢুকছে ইয়াবা ও হেরোইন। এ ছাড়া আকাশপথেও মাদক আসার তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে মাদকসহ ধরা পড়েছে একাধিক দেশি-বিদেশি নাগরিক।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, দেশে বর্তমানে হেরোইন, মরফিন, আইস পিলসহ ২৪ ধরনের মাদক বিক্রি হচ্ছে। তবে এর মধ্যে ১১ ধরনের মাদক বেশি ব্যবহার হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে ইয়াবা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে ‘গডফাদারসহ’ এসব শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সম্প্রতি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ সায়েন্স অ্যান্ড ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, মাদক তরুণ সমাজকে এক কথায় ধ্বংস করে দিচ্ছে। দেশে যেভাবে মাদক ব্যবসা বাড়ছে, তাতে কঠোরভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা গেলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সম্পর্কিত খবর

নিনমাসের নতুন পরিচালক অধ্যাপক একে এম ফজলুল বারী
নিজস্ব প্রতিবেদক

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (নিনমাস) ঢাকার নতুন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন থাইরয়েড বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল বারী। গত মঙ্গলবার পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান কামরুল হুদা তাকে পরিচালক হিসেবে অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল বারীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। এ সময় নিনমাসের সকল চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
দায়িত্ব গ্রহণের পর এ কে এম ফজলুল বারী নিনমাসসহ পরমাণু শক্তি কমিশনের গবেষণাসেবা আরও উন্নততর করে নিনমাসকে ‘ওয়ার্ল্ড এক্সিলেন্স সেন্টার’ হিসেবে গড়ে তুলতে সব বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকের সহযোগিতা চান।
অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল বারী বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে পেশাজীবন শুরু করেন। ২০০৫ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীন নিনমাসে যোগ দেন। তিনি বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একজন আজীবন সদস্য এবং ডব্লিউএমআইম ভারতের সম্মানিত ফেলো।
অধ্যাপক বারী ২০১৭ সালে বঙ্গবীর ওসমানী পদক, ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

জনগণের নিকট দায়বদ্ধতা না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অর্থহীন : তথ্য উপদেষ্টা
অনলাইন ডেস্ক

জনগণের নিকট দায়বদ্ধতা না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অর্থহীন বলে মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্য সম্পর্কে সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে।
শনিবার (২২ মার্চ) রাজধানীর তথ্য ভবনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিল ও মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
গত ১৬ বছরে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ওই সময় সাংবাদিক সংগঠনগুলো ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে সমঝোতা করে পরিচালিত হয়েছে। এটি আমাদের জাতির জন্য দুর্ভাগ্য।
মাহফুজ আলম বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে মালিক ও সম্পাদকদের প্রভাব থেকেও সাংবাদিকদের মুক্ত করা প্রয়োজন। তিনি গণমাধ্যম সংস্কারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম মালিক, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
ইফতার মাহফিল ও মতবিনিময় সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থাসমূহের প্রধান এবং সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

চাঁদাবাজি প্রতিরোধে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ তৎপর : সড়ক সচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক বলেছেন, সামনের ঈদে প্রচুর মানুষ ঢাকা ছেড়ে ঈদ উদযাপন করতে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা দিবেন। মানুষের এই ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়ক বিভাগ থেকে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো মেরামত ও সংস্কারের কাজ চলমান, অতিরিক্ত বাস ভাড়া নিয়ন্ত্রণে বাস মালিক সমিতির সাথে কার্যকর আলোচনা হয়েছে। চাঁদাবাজি ও সড়কে ডাকাতি প্রতিরোধে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ তৎপর রয়েছে।
শনিবার (২২ মার্চ) গাজীপুরের জয়দেবপুরে অবস্থিত বিআরটি বাস ডিপোতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা, সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি ও তথ্য অধিকার সংক্রান্ত অংশীজন সভায় সভাপতির বক্তব্যে সড়ক সচিব এসব কথা বলেন।
সড়কে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফেরাতে অংশীজন সভায় আগত অতিথিদের পরামর্শ ও মতামত সাদরে গ্রহণ করা হবে বলে সড়ক সচিব আরো জানান, সড়ক বিভাগের ব্যাপারে অনেকের অভিযোগ আছে, তবে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি রাস্তায় শান্তি এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যাতে করে মানুষ নির্বিঘ্নে এবারের ঈদ পালন করতে পারে। এ সময় সভায় আগত অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে সড়ক সচিব প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন এবং সকলকে ধন্যবাদ ও ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নীলিমা আখতার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) মো. ইয়াসীন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. অনুপম সাহা, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান ও ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ।
এছাড়াও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত আজকের এই অংশীজন সভায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থার প্রতিনিধিরা, বাস মালিক সমিতির সদস্যরা, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ ও ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কুরআনের নূর—পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপ
আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় দেশসেরা ইরশাদুল
নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর—পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপে বিশ্বসেরা হাফেজের মুকুট অর্জন করেছেন ইন্দোনেশিয়ার মোহাম্মদ জাকি। দেশসেরা হয়েছেন নেত্রকোনার কিশোর হাফেজ মো. ইরশাদুল। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনজন এবং জাতীয় পর্যায়ে সেরা আটজন এই পুরস্কার জিতেছেন।
শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার নবরাত্রি হলে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের অর্থ ও সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।
এর মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম এবং সর্ববৃহৎ কুরআন তিলাওয়াতের প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় আসরের পর্দা নামল। অনুষ্ঠানের শুরুতে অনুষ্ঠানের এই যুগান্তকারী আয়োজনের প্রধান কাণ্ডারিও স্বপ্নদ্রষ্টা, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বাংলাদেশসহ ১৭টি দেশের হাফেজরা।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানারআপ নেত্রকোনার কিশোর হাফেজ মো. ইরশাদুল ইসলাম জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। সারা দেশে ১১টি জোনে অন্তত ১০ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে এই গৌরব অর্জন করেন তিনি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেন যথাক্রমে হাফেজ মো. জিহাদুল ইসলাম ও হাফেজ আব্দুর রহমান বিন নূর। এ ছাড়া চতুর্থ স্থানে হাফেজ মো. জুবায়ের আহমদ, পঞ্চম হাফেজ মো. শাহেদ আলম তারিফ, ষষ্ঠ হাফেজ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, সপ্তম হাফেজ মুহাম্মদ আফফান বিন সিরাজ এবং অষ্টম হাফেজ আব্দুর রাজ্জাক নোমান।
প্রথম পুরস্কার হিসেবে ১০ লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৭ লাখ টাকা, তৃতীয় পুরস্কার ৫ লাখ টাকা, চতুর্থ ও পঞ্চম পুরস্কার ২ লাখ টাকা এবং বাকি তিনটি পুরস্কার ১ লাখ টাকা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর হযরত মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘আল-কুরআনকে মানুষ ও সমাজের সামনে তুলে ধরার জন্য যে যতটুকু ভূমিকা রাখবে সে ততটুকু মোবারকবাদ ও সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। সামাজ ও দেশের মানুষের কাছে কুরআনকে বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের সহযোগীতায় দেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে এ জন্য তাদের মোবারকবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি প্রতিযোগিতা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখায় বিচারকমণ্ডলীসহ সবাইকে সাধুবাদ জানাই।’
তিনি বলেন, কুরআনকে সমাজের সামনের তুলে ধরতে বসুন্ধরা গ্রুপ অতিতে যেমন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে, আগামীতেও একইভাবে আয়োজন করার তৌফিক দান করুক। উত্তম কাজের প্রতিদান হিসাবে আল্লাহ পাক বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দুনিয়া ও আখিরাতে পুরস্কৃত করুক। কুরআন আল্লাহ প্রদত্ত দুনিয়ার সর্বশেষ্ঠ নিয়ামত ও দৌলত। এই কুরআনের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা যত বেশি করতে পারবে, জীবন তত সাফল্যমণ্ডিত হবে। শুধু কুরআন পড়তে জানলেই হবে না। সহীহ ও শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। নিয়মিত তিলাওয়াত করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, প্রত্যেক বস্তুর একটি গৌরবের বিষয় আছে, যার দ্বারা তা গৌরবান্বিত হয়। কিন্তু আমার উম্মতের সৌন্দর্য ও গৌরবের বিষয় হলো পবিত্র কুরআন। উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, মুসলমানদের সর্বকালের সর্বশেষ সংবিধান হলো আল-কুরআন। কুরআনই একজন মুমিনের জন্য গৌরবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ বসুন্ধরা গ্রুপকে কুরআনের খিদমতে কবুল করে নিক।’
অনুষ্ঠানে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘আল কুরআন হচ্ছে মানবতার মুক্তির দিশা। এটি মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। এটি আল্লাহর রহমত, এটি হিদায়াত, এটি নুর, এটি শিফা বা আরোগ্য। এটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মহান অধিপতির পবিত্র কালাম। কুরআনের অন্যতম অলৌকিক শক্তি হলো, তা মানুষের অন্তরে সংরক্ষিত হয়ে যায়। যারা এই কুরআন শেখে, চর্চা করে, গবেষণা করে, কুরআনের দাওয়াত দেয়, কুরআন মোতাবেক জীবন গড়ে, তারা মহান আল্লাহর বিশেষ বান্দায় পরিণত হয়। হাদিসের ভাষায় যাদের ‘আহলুল্লাহ’ বা আল্লাহর পরিজন বলা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, কুরআনের জ্ঞান এমন অমূল্য সম্পদ, যা আখিরাতে মানুষকে মর্যাদার মুকুট পরাবে, মহান আল্লাহর কাছে তার ধারকের জন্য সুপারিশ করবে, এমনকি কুরআন চর্চাকারীর মা-বাবাকে পর্যন্ত বিশেষ সংবর্ধনা দেবে। কুরআনের জ্ঞান ও তার তিলাওয়াতের তাওফিক আল্লাহর অনন্য নিয়ামত। তাই আমাদের উচিত, সম্ভব হলে নিজেই কুরআন হেফজ শুরু করা, তা সম্ভব না হলে কমপক্ষে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা, আর আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কুরআনে হাফেজ বানানোর চেষ্টা করা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর হজরতুল আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দিক বিল্লাহ মাদানী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিয়া আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শামসুল আলম, হাটহাজারী দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস হজরতুল আল্লামা মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর হজরতুল আল্লামা ড. খলিলুর রহমান মাদানী।
এ ছাড়া হুফ্ফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সভাপতি উস্তাদুল হুফ্ফাজ হাফেজ কারি শায়খ আব্দুল হক, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সম্মানিত ৪ জন পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান, শায়খুল হাদিস মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী আন নদভী, শায়খুল হাদিস মুফতি এহসানুল হক জিলানী, শায়খুল হাদিস মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম, কুরআনের নূর আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার চিফ কো-অর্ডিনেটর হায়দার আলী, ডেপুটি চিফ কো-অর্ডিনেটর আশিকুর রহমান শ্রাবণ, কো-অর্ডিনেটর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব আলী, মিজানুর রহমান মানিক, গুলজার আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ইসলামী সংগীতশিল্পী বদরুজ্জামান উজ্জল। পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করেন বিশ্ববিখ্যাত গুণী হাফেজদের মধ্যে হাফেজ মোহাম্মদ জাকি, হাফেজ আব্দুর রহমান বিন নূর, হাফেজ মো. জুবায়ের আহমদ।
২০২৩ সালে সফলভাবে আয়োজিত প্রথম আসরের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে পরের বছর আরো বৃহৎ আকারে আয়োজন করে বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো আয়োজন হয় ‘আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ২০২৪—পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপ’। গত বছরের ২৪ নভেম্বর সিলেট জোনের অডিশন দিয়ে শুরু হয় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। পবিত্র রমজানে ইফতারের আগে নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের পর্দায় প্রতিযোগিতাটি সম্প্রচার হয়েছিল। হাজার হাজার খুদে হাফেজ আর তাদের অভিভাবকদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছিল প্রতিটি বিভাগের অডিশনস্থল। জাতীয় পর্যায়ের রাউন্ড শেষ হলেই শুরু হয় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। তুরস্ক, জর্দান, ওমান, ইয়েমেন, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৬টি দেশের হাফেজরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণকারীরাও ছিল অনূর্ধ্ব-১৬ বছর বয়সী।
এবার জাতীয় পর্যায়ে পুরো দেশের মোট ১১ জোন থেকে অনূর্ধ্ব-১৬ বছর বয়সী ৩০ পারা কুরআনের হাফেজরা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। প্রতিটি জোন থেকে মূল্যায়িত সেরা হাফেজরা ইয়েস কার্ড প্রাপ্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় রাউন্ডে অংশ নেন। এরপর কুরআনের এই খুদে পাখিদের নিয়ে শুরু হয় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। দীর্ঘ অডিশনের মধ্য দিয়ে দেশবরেণ্য ইসলামিক স্কলার ও অভিজ্ঞ হাফেজদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী তাদের মধ্য থেকে আটজন হাফেজকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত করেন।
পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতা রাউন্ডের প্রতিযোগীদের সঙ্গে অংশ নেন জাতীয় পর্যায়ের প্রথম স্থান অর্জনকারী হাফেজ। দেশবরেণ্য ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান ইসলামিক স্কলারের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী ফাইনাল রাউন্ডে এদের মধ্য থেকেই তিনজন সেরা কুরআনের হাফেজকে বাছাই করেন।