<p style="text-align:justify">অর্থসংকটে পড়েছে দেশের স্বাস্থ্য খাত। ৯ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে স্বাস্থ্য খাতের ৩৪টি উন্নয়ন কর্মসূচি। পাঁচ বছর মেয়াদি অপারেশনাল প্ল্যান (ওপি) চালু না থাকায়এসব কর্মসূচি এখন বন্ধ। এর মধ্যে অন্যতম—সংক্রামক রোগ, অসংক্রামক রোগ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য, বিকল্প চিকিৎসা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="স্বাস্থ্যের ৩৪ উন্নয়ন কর্মসূচি টাকার অভাবে বন্ধ" height="240" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/02/22/1740172845-a48cde2e727d3ecee26856707a250f1b.jpg" style="float:left" width="400" />সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় পাঁচ বছর মেয়াদি ওপি বাতিল করে দুই বছরের প্রকল্প প্রণয়নের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে।</p> <p style="text-align:justify">জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে জাতীয় স্বাস্থ্য ভয়াবহ সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আগে যেসব রোগ নির্মূল করা গেছে, সেগুলো আবারও বাড়বে। একই সঙ্গে বিগত বছরগুলোয় স্বাস্থ্যে যত বিনিয়োগ করা হয়েছে তা আর কোনো কাজে আসবে না।</p> <p style="text-align:justify">খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের ওষুধ, বেতন দেওয়া এবং সব সেবা চলে ওপির অর্থে। ক্লিনিকগুলোয় মজুদ থাকা ওষুধে এরই মধ্যে সংকট তৈরি হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, হেপাটাইটিস, ডেঙ্গু, এইডস, জলাতঙ্ক, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মতো কার্যক্রম। জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের (আইপিএইচএন) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গর্ভবতী নারী ও কিশোরীদের জন্য জরুরি ফলিক এডিস ও আয়রন ট্যাবলেটও দেওয়া হচ্ছে না।</p> <p style="text-align:justify">স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. হালিমুর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৩৪ ওপির আলাদা আলাদা কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখায় আছে ১০টি। যার মধ্যে রয়েছে ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, হেপাটাইটিস, ডেঙ্গু, এইডস, জ্বলাতঙ্ক, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মতো কার্যক্রম। বর্তমানে এসব কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করায় দেশে কিছু রোগ নির্মূল হয়েছে এবং কিছু রোগ কমে আসছিল। এভাবে কর্মসূচি বন্ধ থাকলে এসব রোগ আবারও বাড়বে। সরকার যদি ওপি বন্ধ করে দেয়, অন্যভাবে হলেও এ কার্যক্রম চালাতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">দেশের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচি চলে ৩৪টি অপারেশন প্ল্যান (ওপি) বা বিষয়ভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে। বাতিল হতে যাওয়া পঞ্চম এইচএনপিএসপিতে ৩৮টি ওপি রয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ২৩টি এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে ১৫টি। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বাড়ানো, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমানো এবং পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা।</p> <p style="text-align:justify">দেশে গত চার অপারেশন প্ল্যান (ওপি) তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য উন্নয়ন কর্মসূচিতে স্বাভাবিক বরাদ্দ না থাকায় এমন কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে, যা আমরা খালি চোখে দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু এ সমস্যা যখন প্রকাশিত হতে শুরু করবে তখন শুধু আপসোস করতে হবে। হারিয়ে যাওয়া মূল্যবান জীবনগুলো আর ফিরে পাব না।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘আগে প্রতিবছর পাঁচ লাখ শিশু মারা যেত, এর মধ্যে দেড় লাখ শিশু টিকার আওতায় যেসব রোগ আছে সেসব রোগে মারা যেত। একটা সময় পোলিও থেকে শিশু বিকলাঙ্গ হয়ে যেত। অনেক শিশু ও মা ধনুষ্টংকারে মারা যেত। ইপিআই কর্মসূচির টিকার দ্বারা এসব মৃত্যু অনেক কমে এসেছে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, জলাতঙ্ক এসব রোগের কোনোটি নির্মূল হয়েছে, কোনোটি নির্মূলের পথে। আমরা কালাজ্বর নির্মূল কর্মসূচি শুরু করেছিলাম ২০০৫ সালে। ২০ বছর লেগেছে নির্মূল হতে। এসব সম্ভব হয়েছে ওপির ধারাবাহিকতার কারণে। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আমাদের ওপির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা উচিত। এখানে কিছু অপচয়, অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনায় সমস্যা থাকতে পারে। এ দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি বরাদ্দ বাড়িয়ে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো অব্যাহত রাখা উচিত।’</p> <p style="text-align:justify">সেক্টর কর্মসূচির প্রধান কাজগুলো হচ্ছে— প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, কমিউনিটি বেইজড হেলথকেয়ার (সিবিএইচসি), সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি), অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি), স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থাপনা ও ই-হেলথ, হাসপাতাল সেবা ব্যবস্থাপনা, জীবনধারা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা ও প্রচার, মাতৃ, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন, সম্প্রসারিত টিকা কার্যক্রম (ইপিআই), জাতীয় চক্ষুসেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, সচেতনতামূলক কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ বা উচ্চশিক্ষা, ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কর্মশালা বা সেমিনার, তথ্য ব্যবস্থাপনা বা মানবসম্পদ উন্নয়ন, মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন, গবেষণা, ক্রয়, মজুদ ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, যক্ষ্মা-কুষ্ঠ ও এইডস এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষাসেবা।</p> <p style="text-align:justify">স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট শাখা বলছে, ওপির মাধ্যমেই দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়। এর ওপর সব জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা যন্ত্রাংশ, অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম ও অন্যান্য উপকরণের শতভাগ অর্থায়ন নির্ভরশীল।</p> <p style="text-align:justify">মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর অর্ধেকের বেশি যন্ত্রাংশ দেওয়া হয় ওপির মাধ্যমে। বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল, রিঅ্যাজেন্ট এবং ওষুধের এক-তৃতীয়াংশ দেওয়া হয়। সরকারি হাসপাতালে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তাকর্মীদের বেতনও এভাবে দেওয়া হয়। ওপি না থাকায় বন্ধ রয়েছে এসব কার্যক্রম।</p>