কক্সবাজারের মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লায় বিপুল পরিমাণ কাদামাটি পাওয়া গেছে। ভেজাল কয়লা আমদানি তদন্তের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন-১) মোহাম্মদ সানাউল হককে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (উন্নয়ন-৫) মোহাম্মদ হোসেন পোটোয়ারী এবং বিপিডিবির উপ-পরিচালক (বেসরকারি প্রকল্প) মো. নাজমুল হক।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) জারি করা এক অফিস আদেশের মাধ্যমে কমিটিকে মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য ১১তম কয়লা চালানের তদন্ত এবং তিন কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন
‘অপরাধীদের প্রতি কোনো কৃপা প্রদর্শন করা হবে না’
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নমানের এ কয়লা ব্যবহার করলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে ৬৩ হাজার টন কয়লার বিশাল এ চালানটি ফিরিয়ে দিয়েছে বিদ্যুেকন্দ্র পরিচালনাকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কম্পানির (সিপিজিসিবিএল)।
সিপিজিসিবিএল’র কর্মকর্তারা বলছেন, টেন্ডারের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা সংগ্রহের দায়িত্ব পাওয়া মেঘনা গ্রুপের কম্পানি ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং ভারতের আদিত্য বিরলা গ্লোবাল ট্রেডিং কম্পানি পিটিই (সিঙ্গাপুর এর রেজিস্ট্রার্ড) এই চালান পাঠায়। কিন্তু চালানটির কয়লায় বিপুল পরিমাণে মাটি ছিল। ফলে এই কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহারোপযোগী নয়। ৬৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে জাহাজটি বন্দরে এলে প্রায় ২০ হাজার টন কয়লা খালাস করা হয়।
কিন্তু এসব কয়লা খালাস করতে গিয়ে দেখা যায় কয়লার সঙ্গে কালো রঙের কাদামাটি। স্বাভাবিকভাবে কয়লা কালো ও শুকনো থাকে। কিন্তু আমদানি করা কয়লার সাথে কাদামাটি মিশ্রণ আর ভেজা। এসব কাদামাটি খালাস না করে ফেরত পাঠিয়েছে সরকারী এ সংস্থাটি।
আরো পড়ুন
থানার গেইটে চলছিল মাদকের কারবার, ‘বিস্মিত’ ওসি
সিপিজিসিএল সূত্রে জানা গেছে, ৬৩ হাজার টন কয়লা নিয়ে গত ১৭ মার্চ ‘এমভি ওরিয়েন্ট অর্কিড’ নামের সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী একটি জাহাজ মাতারবাড়ি বন্দরের চ্যানেলে প্রবেশ করে।
গত ২১ মার্চ জাহাজ থেকে কয়লাগুলো খালাস করে বিদ্যুেকন্দ্রের কর্মকর্তারা। খালাস করার সময় দেখা যায়, কয়লাতে প্রচুর পরিমানের মাটির মিশ্রিত রয়েছে। অথচ চুক্তি ছিল, ইন্দোনেশিয়া থেকে উচ্চমানের কয়লা সরবরাহ করবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে কয়লা খালাসকালে বারবার আনলোডিং কনভেয়ার বেল্টে আটকে যাচ্ছিল। তখন বিদ্যুেকন্দ্রের কর্মকর্তারা জাহাজ থেকে কয়লা খালাস বন্ধ করে দিয়ে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙরে পাঠিয়ে দেয়। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, সরবরাহকারী মাটি মিশ্রিত নিম্নমানের কয়লা দেওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
অভিযোগ উঠেছে, জাহাজটির ব্যবহার অনুপযোগী কয়লা যে কোনোভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে গছিয়ে দিতে ব্যাপক তদবির চালানো হচ্ছে। এ কারণে জাহাজটি সাগরের দূরবর্তী স্থানে না পাঠিয়ে কাছাকাছি রাখা হয়েছে। বন্দর ও কয়লা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট লোকজন জানিয়েছেন, আমদানি করা প্রতি টন কয়লার দাম পড়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। ভারতীয় কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইন্দোনেশিয়া থেকে ভাল মানের কয়লা সরবরাহ করে দেওয়ার কথা থাকলেও মাটি মিশানো এবং ভেজা কয়লা সরবরাহ করে আসছিল। কয়লাবাহী জাহাজটি পরিচালনায় রয়েছে মেঘনা গ্রুপ অব কম্পানি।
আরো পড়ুন
গমের রাজ্যে নেই গম, কৃষকের অনাগ্রহে কমছে চাষ
মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটই সার্বক্ষণিক চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতি মাসে যেখানে চারটি জাহাজ ভর্তি করে কয়লা আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তখনই ঘটে চলেছে এমন ‘আজব ঘটনা।’ এমনিতে শীতের বিদায় নেয়ার পর দেশব্যাপী তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে চাহিদা বাড়ছে বিদ্যুতের। চাহিদা পূরণের জন্য কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এক সাথে নিরবিচ্ছিন্নভাবে দুটি ইউনিট চালুর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছে।