প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রী থাকসিনের সাক্ষাৎ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রী থাকসিনের সাক্ষাৎ
সংগৃহীত ছবি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা।  গতকাল শুক্রবার ব্যাংককের শ্যাংরি-লা হোটেলে তারা সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাৎকালে অধ্যাপক ইউনূস ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ও তার পুরনো বন্ধু থাকসিনের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।

থাকসিন ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তার সহকর্মীদের নিয়ে বাংলাদেশ সফর এবং গ্রামীণ ব্যাংক পরিদর্শন করেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের মাইক্রোক্রেডিট কর্মসূচির সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি থাইল্যান্ডে একটি অনুরূপ মাইক্রোক্রেডিট কর্মসূচি চালু করেন। সেই বছরই জাতীয়ভাবে কর্মসূচির উদ্বোধনে অধ্যাপক ইউনূসকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

তারা চিয়াং মাই ও চট্টগ্রামের মধ্যে বিমান রুট পুনরায় চালুর সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন, যা একসময় বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে যাত্রার সময় এক ঘণ্টায় নামিয়ে এনেছিল। 

থাকসিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে উদ্বোধনী ফ্লাইটে চট্টগ্রাম থেকে চিয়াং মাই ভ্রমণের কথা স্মরণ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস ও থাকসিন পারস্পরিক আগ্রহের অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের আসিয়ান সদস্যপদ লাভে থাকসিনের সমর্থন চান।

তিনি সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তার শাসনামলে থাই-বাংলাদেশ বাণিজ্য ও সহযোগিতা সম্প্রসারণে ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এছাড়াও, তিনি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় করা, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সহায়তা ও এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় থাকসিনের মূল্যবান সহায়তা কামনা করেন।

আরো পড়ুন
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মায়ানমারের সরকারপ্রধান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মায়ানমারের সরকারপ্রধান

 

সাক্ষাৎকালে তারা বৈশ্বিক বাণিজ্য ইস্যু ও থাইল্যান্ডের গ্রামীণ অঞ্চলে মাইক্রোক্রেডিট ও সামাজিক ব্যবসা সম্প্রসারণ নিয়েও আলোচনা করেন। সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, লোডশেডিং সাড়ে ৪০০ মেগাওয়াট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, লোডশেডিং সাড়ে ৪০০ মেগাওয়াট
সংগৃহীত ছবি

কারিগরি ত্রুটির কারণে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট রয়েছে। যা এখন বন্ধ রয়েছে।

গত ৮ এপ্রিল আদানির প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

আর দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয়েছে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সদস্য (উৎপাদন) জহুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের ত্রুটির কারণে দুটি ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঘাটতি পূরণে গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে।

পাওয়ার গ্রিড কম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, বিকেল ৩টা নাগাদ দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার মেগাওয়াট। এ সময় সরবরাহ দেওয়া হয় ১৩ হাজার ৫৫২ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে এ সময় ঘাটতি ছিল সাড়ে ৪০০ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল।

৮ এপ্রিলের পরও ৭৫০ মেগাওয়াটের বেশি সরবরাহ করা হয়েছে। এখন আর কোনো বিদ্যুৎ আসছে না। আজ শনিবার সন্ধ্যায় একটি ইউনিট চালু করার কথা রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ শুরু না হলে আগামীকাল রবিবার লোডশেডিং আরো বাড়তে পারে। ঘাটতি মেটাতে পেট্রোবাংলার কাছে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ চেয়েছে পিডিবি।

শনিবার ছুটির দিন থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম আছে। তবে কাল সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস শুরু। এ দিকে দেশে তীব্রভাবে বেড়ে গেছে গরম। এ পরিস্থিতিতে আদানির কেন্দ্র চালু না করা গেলে দেশে লোডশেডিং বড় আকারে বেড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

মন্তব্য

ফিলিস্তিনের শান্তি কামনায় শেষ হলো ‘মার্চ ফর গাজা’

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ফিলিস্তিনের শান্তি কামনায় শেষ হলো ‘মার্চ ফর গাজা’
সংগৃহীত ছবি

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতা ও গণহত্যার প্রতিবাদে ডাকা ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি মোনাজাত মাধ্যমে শেষে হয়েছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক বিশেষ মোনাজাতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও শান্তি কামনা করেন। 

শনিবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেওয়া লাখো মানুষের চোখে ছিল অশ্রু।

মুফতি আব্দুল মালেক দোয়ায় বলেন, ‘হে আল্লাহ এ প্রতিবাদ মিছিল আপনি কবুল করুন।

আমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন। আমরা কিছুই করতে পারিনি। আমরা লজ্জিত। হে আল্লাহ! আমাদের ব্যক্তিগত অপরাধ থেকে তাওবা করছি।
সারা বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানকে বোঝার তাওফিক দান করুন।’

এদিকে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের আয়োজনে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

ঘোষণাপত্রে ইসরায়েলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে মুসলিমবিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানানো হয়।

এর আগে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে যোগ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সী মানুষ ছোট-বড় মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্রিত হয়।

আয়োজকদের মতে, এই কর্মসূচির লক্ষ্য গাজার নিরস্ত্র জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ, বিশ্বজনমত গঠন এবং মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে সোচ্চার হওয়া।

কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারি, জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মাওলানা আবদুল মালেক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অনেকে।

মন্তব্য
ঘোষণাপত্র

ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান, বিরোধিতা ওয়াকফ সংশোধনীর

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান, বিরোধিতা ওয়াকফ সংশোধনীর
লোকারণ্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ছবি : ফোকাস বাংলা

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি। সেখানে ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

ঘোষণাপত্রে ইসরায়েলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে মুসলিমবিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এ ছাড়া গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানানো হয়।

এর পাশাপাশি এতে উঠে আসে সারা বিশ্বে মুসলিমদের ওপর আগ্রাসন ও ওআইসিসহ মুসলিম নেতাদের নির্লিপ্ততার কথা।

ঘোষণাপত্রে সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করা হয়। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দটি ফের ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়।

ইসরায়েল ও এর সমর্থকদের পণ্য বয়কটেরও আহ্বান জানানো হয়।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি—সমবেত হয়েছি গাজার শহীদদের পাশে দাঁড়াতে। আজকের এই সমাবেশ শুধু প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেওয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ।’

‘এই পদযাত্রা ও গণজমায়েত থেকে আজ আমরা চারটি স্তরে আমাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করব।


আমাদের প্রথম দাবিগুলো জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ঘোষণা। যেহেতু—জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সব জাতির অধিকার রক্ষার, দখলদারি ও গণহত্যা রোধের সংকল্প প্রকাশ করে এবং আমরা দেখেছি গাজায় প্রতিদিন যে রক্তপাত, যে ধ্বংস চলছে, তা কোনো একক সরকারের ব্যর্থতা নয়—বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ফল। এই ব্যর্থতা শুধু নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদারকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এই গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে। এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইসরায়েলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।’

‘সেহেতু আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বলছি—১. জায়নবাদী ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে।

২. যুদ্ধবিরতি নয়, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ৩. ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে। ৪. পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। ৫. ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে। কারণ এই মুহূর্তে বিশ্বব্যবস্থা যে ন্যায়ের মুখোশ পরে আছে,
গাজার ধ্বংসস্তূপে সেই মুখোশ নির্লজ্জভাবে খুলে পড়ে গেছে।

‘আমাদের দ্বিতীয় দাবিগুলো মুসলিম উম্মাহর নেতৃবৃন্দের প্রতি। যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ড নয়, এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অংশ এবং গাজা এখন কেবল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর নয়—এটি আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। উম্মাহর প্রতিটি সদস্য, প্রতিটি রাষ্ট্র এবং প্রতিটি নেতৃত্বের ওপর অর্পিত আছে সেই আমানত, যা আল্লাহ প্রদত্ত ভ্রাতৃত্ব ও দায়িত্বের সূত্রে আবদ্ধ। ইসরায়েল একটি অবৈধ, দখলদার, গণহত্যাকারী রাষ্ট্র—যা মুসলিমদের প্রথম কিবলা ও একটি পুরো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে উদ্যত হয়েছে। ভারতের হিন্দুত্ববাদ আজ এই অঞ্চলে জায়নবাদী প্রকল্পের প্রতিবিম্বে পরিণত হয়েছে—মুসলমানদের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

ভারতে সম্প্রতি ওয়াকফ সম্পত্তি আইন সংশোধনের মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্বত্বাধিকার হরণ করা হয়েছে, যা উম্মাহর জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা।’

‘সেহেতু আমরা মুসলিমবিশ্বের সরকার ও ওআইসির মতো বহুজাতিক সংগঠনগুলোর নিকট দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই—১. ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে। ২. জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।
৩. গাজার মজলুম জনগণের পাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে—চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ। ৪. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে এক ঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে। ৫. জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইন সংশোধনের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে। কারণ, গাজার রক্তে রঞ্জিত হওয়ার আগেই, গাজার পাশে দাঁড়ানোই উম্মাহর জন্য সম্মানের একমাত্র পথ এবং—যে নেতৃত্ব আজ নীরব, কাল ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য হবে।’

‘আমাদের তৃতীয় দাবিগুলো বাংলাদেশ সরকারের প্রতি। যেহেতু বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, যার স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তিতেই নিহিত রয়েছে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেতনা এবং আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিনের প্রশ্নে বাংলাদেশ কেবল মানবতার নয়—ঈমানের পক্ষেও এক ঐতিহাসিক অবস্থানে আছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সরকারের দায়িত্ব, জনগণের ঈমানি ও নৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রাখা। বাংলাদেশের জনগণ গাজার পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। তাই রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’

সেহেতু আমরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই—১. বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ শর্ত পুনর্বহাল করা, ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরো সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে। ২. সরকারের ইসরায়েলি যত প্রতিষ্ঠানের সাথে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে। ৩. রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ৪. সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে। ৫. জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে; যেহেতু, হিন্দুত্ববাদ আজ শুধু একটি স্থানীয় মতবাদ নয়—বরং আন্তর্জাতিক জায়নিস্ট ব্লকের অন্যতম দোসর। ৬. পাঠ্যবই ও শিক্ষা নীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন, এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে—
যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুসলিম আত্মপরিচয়ের সাথে গড়ে ওঠে। কারণ, রাষ্ট্র কেবল সীমানা নয়, রাষ্ট্র এক আমানত। আর এই আমানত রক্ষা করতে না পারলে ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না।’

‘আমাদের সর্বশেষ দাবিগুলো নিজেদের প্রতি যা মূলত একটি অঙ্গীকারনামা। যেহেতু, আমরা বিশ্বাস করি, আল-কুদস কেবল একটি শহর নয়—এটি ঈমানের অংশ। আমরা জানি, বাইতুল মাকদিসের মুক্তি অন্য কারো হাতে নয়, আমাদেরই কোনো প্রজন্মের হাতে তা লেখা হবে। আমরা বুঝি, জায়নবাদ কেবল বাইরের দখলদার নয়, এটি ভেতরের আত্মবিস্মৃতির সুযোগে দাঁড়ায়। আজ যদি আমরা প্রস্তুত না হই, কাল আমাদের সন্তানেরা হয়তো এমন এক বাংলাদেশ পাবে, যেখানে হিন্দুত্ববাদ ও জায়নবাদ একত্রে নতুন গাজা তৈরি করবে। গাজা আমাদের জন্য এক আয়না, যেখানে আমরা দেখতে পাই, কিভাবে বিশ্বাসী হওয়া মানে কেবল বেঁচে থাকা নয়, সংগ্রামে দৃঢ় থাকা।’

‘সেহেতু, আমরা এই মাটির মানুষ, এই মুসলিমবঙ্গের নাগরিক, এই কওমের সন্তান, একটি অঙ্গীকার করছি— ১. আমরা বয়কট করব, প্রত্যেক সেই পণ্য, কম্পানি ও শক্তিকে যারা ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে। ২. আমরা আমাদের সমাজকে প্রস্তুত করব—এমন নুরউদ্দীন, এমন সালাহউদ্দিন তৈরি করার জন্য যারা বাইতুল মাকদিসের মিম্বার পুনরুদ্ধার করবে, ইনশাআল্লাহ।
৩. আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলব—যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে। ৪. আমরা বিভাজিত হব না, কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়। আমরা শুরু করব নিজেদের ঘর থেকে—ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, অর্থনীতি, সমাজ—সবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে। আমরা মনে রাখব, গাজার শহীদরা কেবল আমাদের দোয়া চান না—তাঁরা আমাদের প্রস্তুতি চান।’

সমাপ্তি— শান্তি বর্ষিত হোক গাজার সম্মানিত অধিবাসীদের ওপর—তাঁদের উপর, যাঁরা সবর করেছেন, যাঁরা ঈমানের প্রমাণ দিয়েছেন। যাঁরা ধ্বংসস্তূপের মাঝেও প্রতিরোধের আগুন জ্বেলেছেন, বিশ্বের নীরবতা ও উদাসীনতার যন্ত্রণা হাসিমুখে বুকের মাঝে ধারণ করেছেন। শান্তি বর্ষিত হোক হিন্দ রজব, রীম, ফাদি আবু সালেহ এবং মুহাম্মাদ আল-দুরাদের ওপর, যাঁদের রক্তে আকাশ রঙিন হয়েছে, যাঁদের চোখে ছিল প্রতিরোধের দীপ্তি। শান্তি বর্ষিত হোক বাইতুল মাকদিসের গর্বিত অধিবাসীদের ওপর, যাঁদের হৃদয়ে এখনো ধ্বনিত হয় ‘আল-কুদস লানা’। গাজার জনগণকে অভিনন্দন— আপনারা ঈমান, সবর আর কুরবানীর মহাকাব্য রচনা করেছেন। দুনিয়াকে দেখিয়েছেন—ঈমান আর তাওয়াক্কুলের শক্তি
আমরা, বাংলাদেশের মানুষ—শাহ জালাল আর শরীয়তুল্লাহর ভূমি থেকে দাঁড়িয়ে, আপনাদের সালাম জানাই। আপনাদের শহীদদের প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানাই, আর আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় এই দোয়া— হে আল্লাহ, গাজার এই সাহসী জনপদকে তুমি সেই পাথর বানাও, যার ওপর গিয়ে ভেঙে পড়বে সব জায়োনিস্টদের ষড়যন্ত্র।

মন্তব্য

এই জনসমুদ্র আল-আকসার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ : আজহারি

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
এই জনসমুদ্র আল-আকসার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ : আজহারি

ভৌগোলিক দিক থেকে দুই হাজার কিলোমিটার ‍দূরের ভূমি ফিলিস্তিন প্রত্যেক বাংলাদেশের হৃদয়ে বাস করে বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা মাওলানা ড. মিজানুর রহমান আজহারি।

তিনি বলেন, ‘এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে, আমাদের একজনের হৃদয়ে বাস করে একেকটা ফিলিস্তিন।’

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর গণহত্যা বন্ধের দাবিতে শনিবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির মঞ্চে দেওয়া বক্তব্যে মিজানুর রহমান আজহারি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘মার্চ করতে গিয়ে লাথি-গুতা সব খেয়েছি, তার পরও আজ বুঝেছি বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিন ও আল-আকসার পক্ষে।

এদিকে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের আয়োজনে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

ঘোষণাপত্রে ইসরায়েলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে মুসলিমবিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানানো হয়।

এর আগে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে যোগ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সী মানুষ ছোট-বড় মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্রিত হয়।

এ কর্মসূচিতে এক হয়েছে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নানান ধর্ম-বর্ণের মানুষ।

ইতিহাস সৃষ্টি করে করে ফিলিস্তিনের জন্য এক মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া শিল্পী, কবি, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয় মুখও যোগ দিয়েছেন কর্মসূচিতে। দল-মত-নির্বিশেষে এক কাতারে সবাই যোগ দিয়ে ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধে সাহসী উচ্চারণ করছেন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ