<p>কষ্টি পাথর হলো এক ধরনের বিশেষ পাথর, যা বহু যুগ ধরে রত্নপাথর ও ধাতু শনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মূলত, কষ্টি পাথর দিয়ে সোনা, রুপা এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও রত্নের বিশুদ্ধতা যাচাই করা হয়। তবে আজকাল বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে আরো আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার হলেও, কষ্টি পাথরের গুরুত্ব এখনো টিকে আছে।</p> <p>কষ্টি পাথর একটি কঠিন, কালো বর্ণের পাথর, যা দেখতে মসৃণ এবং তুলনামূলকভাবে হালকা। এটি সাধারণত এক ধরনের শিলাপাথর। এতে সিলিকা উপাদান থাকে। এই পাথরটি খুব মসৃণ হওয়ার কারণে ধাতু ও রত্নপাথর ঘষলে তা একটি স্পষ্ট দাগ রেখে যায়। যা দিয়ে বিশেষজ্ঞরা সহজেই মূল্যবান ধাতু ও রত্নের বিশুদ্ধতা বা সত্যতা যাচাই করতে পারেন।</p> <p>কষ্টি পাথরের সবচেয়ে সাধারণ ব্যবহার সোনা বা রুপার বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করার জন্য। প্রাচীনকালে যখন আধুনিক প্রযুক্তি ছিল না, তখন ব্যবসায়ী ও কারিগররা কষ্টি পাথর ব্যবহার করে মূল্যবান ধাতুর বিশুদ্ধতা যাচাই করতেন। </p> <p>কষ্টি পাথর দিয়ে রত্নপাথর বা ধাতু পরীক্ষা করার পদ্ধতি বেশ সহজ এবং বাস্তবিক। প্রথমে ধাতু বা রত্নপাথরটি কষ্টি পাথরের ওপর ঘষা হয়। ঘষার ফলে পাথরের ওপর একটি দাগ বা চিহ্ন পড়ে, যা ধাতুর প্রকৃত উপাদান এবং বিশুদ্ধতা সম্পর্কে তথ্য দেয়।</p> <p>এরপর সেই দাগের ওপর বিভিন্ন প্রকার এসিড প্রয়োগ করা হয়। বিভিন্ন এসিডের প্রতিক্রিয়া থেকে জানা যায়, ধাতুটি কতটা বিশুদ্ধ। সোনার ক্ষেত্রে, উচ্চতর ক্যারাটের সোনা সাধারণত এসিডের সঙ্গে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় না, ফলে দাগটি অক্ষত থাকে। তবে মিশ্রিত বা কম বিশুদ্ধ সোনা প্রতিক্রিয়ায় রং পরিবর্তন করে। যদি রং পরিবর্তন না হয়, তাহলে ধাতুটি বিশুদ্ধ। রং পরিবর্তন হলে সেটি বেশি ভেজাল ধাতু হতে পারে।</p> <p>রত্নপাথরের ক্ষেত্রে, কষ্টি পাথর দিয়ে সরাসরি বিশুদ্ধতা যাচাই করা সম্ভব নয়। তবে, এর মাধ্যমে রত্নের সাধারণ চেহারা এবং উপাদানের পরিচিতি সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। সোনার ক্ষেত্রে যেমন কষ্টি পাথর এবং এ এসিডের ব্যবহার সরাসরি ফল দেয়, তেমন রত্নপাথরের ক্ষেত্রে পাথরের কঠিনতা, চেহারা এবং রং সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়।</p> <p>আজকের দিনে, রত্নপাথর বা ধাতু শনাক্ত করার জন্য আরো উন্নত এবং নির্ভুল যন্ত্রপাতির ব্যবহার হয়। যেমন স্পেকট্রোমিটার বা জেমোলজিক্যাল মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে খুব সহজে ধাতুর প্রকৃত উপাদান এবং বিশুদ্ধতা শনাক্ত করা যায়। তবে কষ্টি পাথরের ঐতিহ্য এবং তার সহজ ব্যবহার এখনো অনেক জায়গায় প্রচলিত রয়েছে, বিশেষ করে যেখানে প্রযুক্তির সুফল পৌঁছায়নি।</p> <p>কষ্টি পাথর একটি প্রাচীন এবং কার্যকর পদ্ধতি, যা মূল্যবান ধাতু যেমন সোনা এবং রুপার বিশুদ্ধতা শনাক্ত করতে সাহায্য করে। এটি সহজ এবং প্রমাণিত পদ্ধতি হওয়ায় বহু বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। আধুনিক বিজ্ঞানের আগ্রহ থাকলেও, কষ্টি পাথরের ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে আজও অব্যাহত আছে।</p> <p>সূত্র : হাউ ইটস ওয়ার্কস</p>