<p>ইংল্যান্ডের আলমারিতে হয়তো ট্রফি রাখার জায়গার অভাব নেই। তবে ট্রফির অভাব রয়েছে তাদের। এই যেমন ফুটবলের মেজর ট্রফি বলতে তাদের আলমারিতে শুধু ১৯৬৬ বিশ্বকাপ জয়ের ট্রফিটিই শোভা পাচ্ছে। এরপর ৫৮ বছর কেটে গেলেও কোনো মেজর ট্রফি জেতা হয়নি তাদের।</p> <p>শিরোপার সেই দীর্ঘ খরা অনেকবার কাটানোর সুযোগ পেলেও কখনো ভাগ্য দেবী মুখ তুলে তাকায়নি ইংল্যান্ডের দিকে। সবচেয়ে সুবর্ণ সুযোগ ছিল ২০২০ ইউরোতে। সেবার ফাইনালে ইতালির কাছে হেরে অবশ্য আবারও হতাশ হতে হয়েছে তাদের। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের ফাইনালে টানা দ্বিতীয়বার উঠে আবারও সুযোগ পাচ্ছে তারা শিরোপা খরা কাটানোর। আগামীকাল রাতে বার্লিনের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ স্পেন।</p> <p>স্প্যানিশদেরও শিরোপা খরা এক যুগের। জাভি হার্নান্দেজ-ইনিয়েস্তাদের সময়ে সোনালি সময় কাটানো স্পেন বহু বছর পর দুর্দান্তে ছন্দে দেখা দিয়েছে। টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষদের ওপর আধিপত্য দেখিয়ে এবার শিরোপা জয়ের পথে ২০০৮ ও ২০১২ টানা দ্বিতীয় ইউরোজয়ীরা। মাঝে ২০১০ সালে বিশ্বকাপও জিতেছে তারা। তাই এবারের ইউরোর ফাইনালটা যে দুর্দান্ত হতে যাচ্ছে না তা বললেও চলে।</p> <p>ইংল্যান্ড-স্পেনের লড়াইয়ের বাইরেও ব্যক্তিগত কিছু লড়াই অপেক্ষা করছে বার্লিনে। যাদের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করবে দল দুটির শিরোপা। সংবাদ সংস্থা এএফপির চোখে এমন পাঁচ লড়াই চলুন দেখে নিই।    </p> <p><strong>কেইন বনাম লাপোর্তে</strong></p> <p>খেলেন ভালো কিন্তু শিরোপা জিততে পারেন না হ্যারি কেইন। জাতীয় দল হোক আর ক্লাব সবখানেই অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স করা ইংল্যান্ড অধিনায়ক এখন পর্যন্ত কোনো মেজর শিরোপা জিততে পারেননি ক্যারিয়ারে। টটেনহামের হয়ে বহু বছর টপ পারফরম্যান্স করেও যখন শিরোপা জিততে পারছিলেন না তখন পাড়ি জমান বায়ার্ন মিউনিখে। নিজের অভিষেক মৌসুমে ৪৫ ম্যাচে ৪৪ করেও দলের হয়ে জিততে পারেননি কিছু। অথচ তার যোগ দেওয়ার আগের মৌসুমে বায়ার্ন বেশ কিছু শিরোপা জিতেছে। এবার দলের মতো নিজের শিরোপা খরা কাটাতে নিশ্চিতভাবেই মুখিয়ে আছেন তিনি। টুর্নামেন্টে তিন গোল করে গোল্ডেন বুটের পুরস্কার জেতার দৌড়ে থাকা পারফরম্যান্স তাই প্রমাণ করছে। তবে শিরোপা জিততে হলে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে ব্যক্তিগত লড়াইয়ে স্পেনের ডিফেন্ডার আমেরিক লাপোর্তাকে হারাত হবে। এবারের টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ছন্দে আছেন এই সেন্টার ডিফেন্ডার। প্রিমিয়ার লিগ ছেড়ে সৌদি আরবে নাম লেখানোর কারণে যারা ধরে নিয়েছিলেন তার ক্যারিয়ার শেষ তাদের মিথ্যা প্রমাণ করেছেন আল নাসরের সেন্টার ব্যাক।</p> <p><strong>স্পেনের উইঙ্গার বনাম ইংল্যান্ডের ডিফেন্স</strong></p> <p>এবারের ইউরোতে দুর্দান্ত এক জুটি গড়েছেন লামিনে ইয়ামাল এবং নিকো উইলিয়ামস জুটি। দুই উইঙ্গারকে সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের। মুখায়ব থেকে এখন কৈশোরের ছাপ মুছে না যাওয়া লামিনে ইতিমধ্যে অ্যাসিস্টে এক টুর্নামেন্টে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। ১৭ বছরে পা দেওয়া লামিনের কাঁধে চড়েই মূলত ফাইনালে উঠেছে স্পেন। অন্যদিকে সুযোগ পেয়ে ক্লাবের দুর্দান্ত ছন্দটাই জাতীয় দলে নিয়ে এসেছেন অ্যাথলেটিক বিলবাওর ২১ বছর বয়সী উইঙ্গার নিকো। এই দুই উদীয়মান উইঙ্গারকে থামানোর দায়িত্ব রক্ষণভাগের পোড় খাওয়া ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকার ও লুক শ। সব শেষ  বিশ্বকাপে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে থামিয়ে বেশ প্রশংসা জুটেছিল ওয়াকারের। যদিও শেষ চারের ম্যাচে টাইব্রেকারে তাদের ম্যাচ হারতে হয়। এবার নিশ্চয়ই এমনটি চাইবেন না তিনি।   </p> <p><strong>সাকা বনাম কুকুয়েরা</strong></p> <p>বুকায়ো সাকার প্রতিভা নিয়ে কারো সংশয় নেই। আর্সেনালের হয়ে নিজের প্রতিভার প্রমাণ বহুবার দিয়েছেন তিনি। এবারের ইউরোতেও গ্যারেথ সাউথগেটের আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন ২২ বছর বয়সী উইঙ্গার। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে দুর্দান্ত এক গোল করে ইংল্যান্ডের শিরোপা স্বপ্ন বাঁচিয়ে দিয়েছেন তিনি। এবার তার কাঁধে দলকে শিরোপা এনে দেওয়া দায়িত্ব। তা করার জন্য স্পেনের ডিফেন্ডার মার্ক কুকুয়েরাকে ছিটকে ফেলতে হবে তাকে। নীরবে-নিভৃতে নিজেকে প্রস্তুত করা চেলসি ডিফেন্ডার সাকাকে সে সুযোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। চেলসির এই ডিফেন্ডার এবার যে ইউরোর সেরা একাদশে জায়গা পাওয়ার মতো পারফরম্যান্স করেছেন এবারের টুর্নামেন্টে।</p> <p><strong>রদ্রি বনাম বেলিংহাম</strong></p> <p>এবারে ব্যালন ডি অরের অন্যতম দাবিদার জুড বেলিংহাম ও রদ্রি। মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের মতোই বার্লিনের ফাইনালে তারা মুখোমুখি একে অপরের। এবারের ইউরোতে স্পেনের মাঝমাঠের হৃৎপিণ্ড হিসেবে খেলছেন রদ্রি। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৭৯ ম্যাচ খেলে মাত্র একবারই পরাজয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার। বিপরীতে এবারের টুর্নামেন্টে খুব একটা আলো ছড়াতে না পারলেও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে বেলিংহাম দেখিয়েছেন দলের বিপদের সময় তিনি ত্রাণকর্তা। বেশ কিছু ম্যাচ লস ব্ল্যাংকসদের শেষ মুহূর্তে জয় এনে দিয়েছেন। ইউরোর শেষ ষোলোর ম্যাচে স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ৯৫ মিনিটে সমতাসূচক গোলটিও তারই প্রমাণ।</p> <p><strong>পিকফোর্ড বনাম সিমোন</strong></p> <p>গোল করার পর যখন সব সতীর্থরা একত্রে উদযাপনে মাতোয়ারা তখন একা একাই তিন কাঠির নিচে আনন্দ করেন গোলরক্ষকরা। ‘নিঃসঙ্গ শেরপাদেরও’ অবশ্য কখনো কখনো নায়ক বনে যাওয়ার সুযোগ আসে। সেই সুযোগ এবারের ইউরোতে অনেক গোলরক্ষকই পেয়েছেন। বাদ যাননি ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড ও স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমোনও। গোলবারের নিচে মহাপ্রাচীর হয়ে দাঁড়ানো দুই গোলরক্ষক এবারের টুর্নামেন্টে একটি করে পেনাল্টি ঠেকিয়ে দলের নায়ক হয়েছেন। এবার আরো বড় সুযোগ তাদের সামনে। ফাইনালে তাদের ওপরেই যে নির্ভর করবে ইংল্যান্ড-স্পেনের শিরোপা ভাগ্য। যাদের একটি সেভ মনোবল বাড়িয়ে দিতে পারে পুরো দলের। কিংবা টাইব্রেকারের সেভ টুর্নামেন্টের শিরোপা এনে দিতে পারে।</p>