<p style="text-align:justify">মোহাম্মদ আশরাফুলের ডাক শুরুতে শুনতে পাননি স্টিভেন টেলর। এরপর রেজাউর রহমান রাজাকে ডেকে রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিং কোচ বললেন, ‘ওকে এদিকে আসতে বল, বোলিং করতে হবে।’ কোচের বার্তা পেয়ে তাৎক্ষণিক নেটে ছুটলেন টেলর। প্রায় আধাঘণ্টার বোলিং সেশনের পর এবার প্রধান কোচ মিকি আর্থারের শরণাপন্ন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">প্রথমবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) খেলতে এসে সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে টেলরের কাছে। যদিও দলীয় কম্বিনেশনের কারণে রংপুরের একাদশে নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছেন না এই অলরাউন্ডার। তবু উচ্ছ্বাসিত টেলর বলছিলেন, ‘লম্বা সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পরিবেশ পেলাম বোধহয় এখানে। কোচ ও খেলোয়াড়দের কেউই আমাকে চেনে না। কিন্তু তাঁরা এমন আচরণ করেছেন, যেন লম্বা সময় ধরে আমি তাঁদের পরিচিত ভাই। অনেক দিন পর এমন একটা পরিবেশ পেয়েছি।’</p> <p style="text-align:justify">বিশ্ব ক্রিকেটে টেলরের খুব বেশি সুখ্যাতি নেই। তবু এরই মধ্যে একটি বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছেন এই আমেরিকান। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়েই মূলত আলোচনায় আসেন তিনি। অথচ অন্যান্য মার্কিনীদের মতো শৈশবে বেসবল, বাস্কেটবল, ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল (অ্যাথলেটিক), সকার (ফুটবল) ছিল তাঁর প্রিয় খেলা। এরপর বাবাকে দেখে সাপ্তাহিক ছুটির দিন অর্থাৎ রবিবারে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন টেলর। সেই যে ভালো লাগা শুরু, এরপর আর ক্রিকেটের মোহ কাটাতে পারেননি তিনি।</p> <p style="text-align:justify">স্মৃতির সাগরে ডুব দিয়ে সেই গল্প শোনালেন টেলর, ‘আমার বাবা জ্যামাইকা থেকে বস্টন, এরপর ওখান থেকে মায়ামিতে আসেন। সে প্রতি রবিবার খেলতে চাইতেন, আমি তাকে অনুসরণ করতাম। আমার বাবারই সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল। দাদা খেলতেন, কিন্তু সিরিয়াস কিছু না। বাবা জাতীয় দলের ট্রায়াল অবধি গিয়েছিলেন। এটা (ক্রিকেট) আমার জন্য সবসময়ই স্বপ্নের ছিল। বেড়ে উঠার সময় বাবাকে দেখেছি ক্রিকেট খেলছেন, আমিও তার মতো হতে চাইতাম। আমি বাস্কেটবল, ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড, সকারে ছিলাম। কিন্তু আমার ভালোবাসা ক্রিকেটের গিয়ে আটকায়।’</p> <p style="text-align:justify">বয়সভিত্তিক দলে শুরুতে ছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার, এখন ওপেনিংয়ের পাশাপাশি অফ স্পিনের দক্ষতা অর্জন করেছেন টেলর। এরই মধ্যে আমেরিকার হয়ে ৪৯টি ওয়ানডে ও ৩০টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি। ৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপে খেলতে পারা জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন তাঁর কাছে। টেলর বলছিলেন, ‘আমার জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা এটা। কারণ ছেলেবেলা থেকে বেড়ে উঠেছি,  সবাই বিশ্বকাপ খেলতে চায়। এটাই সবচেয়ে বড় মঞ্চ, সবাই জানে। সবগুলো মহাদেশেই বিশ্বকাপ দেখে, ফুটবল থেকে বাস্কেটবল; সবাই চায় বিশ্বমঞ্চে দেখতে চায়। যখন সবাই আমাকে বিশ্বকাপে দেখেছে, এটা দারুণ একটা অনুভূতি।’</p> <p style="text-align:justify">আমেরিকায় জন্ম হলেও পিতৃভূমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে পারতেন টেলর। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে জ্যামাইকার হয়ে অভিষেক হয়েছিল তার। তবে আমেরিকার হয়ে ক্যারিয়ার বড় করার দিকেই সমস্ত দৃষ্টি ছিল টেলরের। তিনি বলেন, ‘দিন শেষে আমি আমেরিকান। এখানেই জন্মেছি, বেড়ে উঠেছি। আমি সবসময় আমার দেশকে ভালোবাসি। আমেরিকা পৃথিবীর শীর্ষ দেশগুলোর একটি। তারা যখন একটা খেলা ধরে, মাল্টিমিলিয়ন খেলা হয়ে যায়। আপনি দেখেন বাস্কেটবল, বেসবল, সকার, সবকিছুই মাল্টিমিলিয়ান। এটা ক্রিকেট ওই জায়গায় যেতে পারে। এটা দারুণ একটা অনুভূতি হবে তরুণদের জন্য।’</p>