<p>সিরিয়ার সেনাবাহিনী এবং মিত্র বাহিনী আজ মঙ্গলবার দেইর আল জোর প্রদেশের উত্তরাঞ্চলীয় গ্রামে সিরিয়ান বিদ্রোহীদের কবলে পড়েছে। সিরিয়ার বার্তা সংস্থা সানা এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে ইরান-সমর্থিত ইরাকি যোদ্ধারা। তারা উত্তর সিরিয়ার ফ্রন্টলাইনে লড়াইরত দুর্বল সিরীয় সেনাদের সহায়তায় এগিয়ে যাচ্ছে।</p> <p>রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লড়াইয়ে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সহায়তা করতে ইরাকি যোদ্ধারা সিরিয়ায় ঢুকেছে। সিরিয়া ও ইরাকের কর্মকর্তাদের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স। ইরাকের দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে বদর এবং নুজাবা গোষ্ঠীর অন্তত ৩০০ যোদ্ধা গত রবিবার রাতে সীমান্ত ক্রসিং এড়িয়ে ট্রাকে করে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে।</p> <p>সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘উত্তরের সম্মুখসারিতে আমাদের যোদ্ধাদের সহায়তা করার জন্য নতুন করে ইরাকি যোদ্ধাদের পাঠানো হচ্ছে। বিমান হামলা এড়াতে এই যোদ্ধারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সিরিয়ায় পৌঁছেছে।’ তবে আলেপ্পো নিয়ে এখনও নিশ্চুপ লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। </p> <p><strong>সিরিয়ায় নতুন করে গৃহযুদ্ধের কারণ কী?</strong></p> <p>এক সময় আল কায়দার অংশ ছিল এইচটিএস নামক জঙ্গি সংগঠন। তারাই নতুন করে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে। হায়াত তাহিরির আল-শাম, সংক্ষেপে এইচটিএস।</p> <p>তুরস্কের মদতপুষ্ট এই সংগঠনই গত এক সপ্তাহ ধরে সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরো বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ইসলামি সংগঠন। তবে নেতৃত্ব দিচ্ছে এইচটিএস। গত শুক্রবার তারা সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখল করে নিয়েছে। আশপাশের একাধিক গ্রামও এখন তাদের দখলে। তাদের পরবর্তী লক্ষ্য হামা শহরটি দখলে নেওয়া।</p> <p>সিরিয়ারযুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন নানার হাওয়াচ। কীভাবে গৃহযুদ্ধ শেষ করা যায়, তা নিয়েও কাজ করছেন তিনি।</p> <p>ডয়চে ভেলেকে নানার জানিয়েছেন, রবিবার হামা শহরে বাশার আসাদের সরকার বিরাট সেনা বাহিনী পাঠিয়েছে। এইচটিএস-কে তারা চাপ দিয়ে উত্তরের দিকে খানিকটা সরিয়ে দিতে পেরেছে। কিন্তু নানারের আশঙ্কা, এইচটিএস এতে থামবে না। আগামী কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যে আবার গোটা সিরিয়াজুড়ে প্রবল গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা করছেন এই গবেষক।</p> <p>তিনি জানান, এইচটিএস-এর পিছনে যেহেতু তুরস্কের হাত আছে, তারা যথেষ্ট শক্তি নিয়েই আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।</p> <p>এর আগেও হামা গৃহযুদ্ধের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। ২০১১ সালে গণতন্ত্রপন্থি গোষ্ঠীগুলি সিরিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিল। প্রাথমিকভাবে তারা খানিকটা অগ্রসরও হতে পেরেছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে হামায় আসাদ সরকার বিপুল পরিমাণ সেনা মোতায়েন করে। শুরু হয় প্রবল গৃহযুদ্ধ। আসাদ সরকার বিদ্রোহীদের দমন করতে সমর্থ হয়। সে সময় আসাদ সরকারকে সবরকমভাবে সাহায্য করেছিল ইরান এবং রাশিয়া। তারা এখনো আসাদ সরকারের বন্ধু।</p> <p><strong>লড়াইয়ের নতুন মুখ</strong></p> <p>একসময় আল কায়দার অংশ ছিল এইচটিএস। পরবর্তীকালে তারা আলাদা হয়ে যায়। ২০১৮ সালে অ্যামেরিকা এই সংগঠনকে জঙ্গি সংগঠন বলে চিহ্নিত করে। সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চল বিশেষ করে ইডলিব এলাকা এখন এইচটিএস-এর দখলে। প্রায় ৪০ লাখ উদ্বাস্তু সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইডলিবে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এইচটিএস তাদেরও ব্যবহার করার চেষ্টা করছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।</p> <p>তবে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে কেবল এইচটিএস লড়ছে না। তুরস্কের ছত্রছায়ায় থাকা সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বা এসএনএ-এর একটি অংশও লড়াইয়ে নেমে পড়েছে। উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার কুর্দ অধ্যুষিত অঞ্চলে তারা আক্রমণ চালাচ্ছে।</p> <p>তুরস্ক বরাবরই আসাদ সরকারের বিরোধী। সিরিয়ার সঙ্গে তাদের বিরাট সীমান্ত। তবে আসাদ সরকারের পাশাপাশি কুর্দ যোদ্ধাদেরও তুরস্ক জঙ্গি সংগঠন বলে মনে করে। এবং দীর্ঘদিন ধরেই তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে তুরস্ক।</p> <p>সূত্র ; ডয়চে ভেলে, রযটার্স<br />  </p>