<p>যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস ‘এসওএইচআর’ বলছে, সিরিয়ায় বিদ্রোহীরা আলেপ্পো দখলের পর আরো অগ্রসর হয়েছে এবং এর মধ্যেই গতকাল রবিবার তাদের লক্ষ্য করে অব্যাহত বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইদলিবের গ্রামীণ এলাকা ছাড়াও হামা’র যেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীরা নিয়েছে সেখানেও যুদ্ধবিমান হামলা করেছে।</p> <p>এদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার সরকার ও রাশিয়ার বিমান হামলায় উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছে। আজ সোমবার ভোরে হোয়াইট হেলমেট নামে পরিচিত সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠী চালিত রেসকিউ সার্ভিস জানিয়েছে।</p> <p>সিরিয়ান সেনাবাহিনী আরো বলেছে, তারা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিদ্রোহীদের দখলে চলে যাওয়া বেশ কয়েকটি শহর পুনরুদ্ধার করেছে। বাসিন্দারা বলেছেন, তুর্কি সীমান্তের কাছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বৃহত্তম শহর ইদলিবের কেন্দ্রে একটি জনাকীর্ণ আবাসিক এলাকায় হামলা হয়েছে। যেখানে প্রায় চার মিলিয়ন মানুষ অস্থায়ী তাঁবু এবং বাসস্থানে বাস করে। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, অন্তত সাতজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।</p> <p>পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে বলছে বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর এবারই প্রথম সিরিয়ার সরকার আলেপ্পোর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারালো।</p> <p>বিদ্রোহীদের এই বিস্ময়কর নতুন অভিযান শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটাই সেখানে বড় ধরনের লড়াই। বিদ্রোহীদের অভিযানের নেতৃত্বে আছে ইসলামপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম এবং তাদের সঙ্গে যোগসূত্র আছে এইচটিএস তুরস্ক সমর্থিত এমন কয়েকটি উপদল।</p> <p>এদিকে সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো থেকে দক্ষিণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিদ্রোহীরা। বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে গতকাল রবিবার দেশটিতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস গতকাল এ কথা জানিয়েছে। গত বুধবার থেকে সিরিয়ায় শুরু হওয়া সংঘাতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জন নিহত হয়েছে।</p> <p>অবজারভেটরি জানায়, আলেপ্পো শহর এখন বিদ্রোহীদের দখলে। বিদ্রোহীরা এখন দক্ষিণ দিকে হামার কাছে ছোট ছোট শহর দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। হামা সিরিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর। রাশিয়া ইদলিব ও হামা শহরের কাছে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় হামলা চালিয়েছে।</p> <p>২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ মারা গেছে। ২০২০ সালের যুদ্ধবিরতির পর থেকে সংঘাত প্রায় বন্ধই ছিল। অবজারভেটরি জানিয়েছে, গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া আলেপ্পোয় সহিংসতায় ২০ বেসামরিক লোকসহ এ পর্যন্ত ৩৭২ জন প্রাণ হারিয়েছে।  ইদলিবে  এ পর্যন্ত পাঁচজন নিহত হয়েছে। সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও তার মিত্র রাশিয়া বলেছে, তারা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আস্তানাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে বেসামরিকদের ওপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।</p> <p><strong>সিরিয়া সরকারের পাশে ইরান </strong></p> <p>সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে বিদ্রোহীদের হামলার মুখে আসাদ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি টেলিগ্রামে এক পোস্টে বলেছেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে সিরিয়া সরকার ও সেনাবাহিনীকে সমর্থন করি।</p> <p>আসাদ সরকারের প্রধান মিত্রদের অন্যতম ইরান।’ চলমান সংকট নিয়ে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাকচিকে পাঠাচ্ছে ইরান। দামেস্ক সফরের পর তিনি তুরস্কে যাবেন। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের একটি অংশকে তুরস্ক সমর্থন দিচ্ছে। এদিকে সিরিয়া আসাদ সেনাদের ওপর বিদ্রোহীদের আক্রমণ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র বলেছেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জড়িত হতে আসাদ সরকারের অস্বীকৃতি আর রাশিয়া ও ইরানের ওপর নির্ভরতার কারণেই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় বিদ্রোহী বাহিনীকে সমর্থন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।</p> <p><strong>পাল্টা হামলার প্রস্তুতি</strong></p> <p>বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে সিরীয় সরকার। গতকাল সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ফেসবুকে এক বার্তায় এ কথা জানায়। তারা জানায়, উত্তরাঞ্চলীয় ইদলিব ও হামা প্রদেশে রাশিয়া ও সিরিয়ার বিমানবাহিনী বিদ্রোহীদের ওপর আরো বিমান হামলা চালাচ্ছে। সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের শেষ শক্ত ঘাঁটি ইদলিব প্রদেশ। তুরস্ক সীমান্ত থেকে এটির অবস্থা খুব বেশি দূরে নয়। সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, উত্তরাঞ্চলীয় হামায় বিদ্রোহীদের মোকাবেলায় রকেট লঞ্চার ও ভারী সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে সেনারা গেছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ সব সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের মোকাবেলা করে সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ও ভূখণ্ডগত সংহতি রক্ষার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীদের আক্রমণ যতই জোরালো হোক না কেন, আমাদের সহযোগী ও বন্ধুদের সহায়তায় তাদের পরাজিত ও নিশ্চিহ্ন করা কোনো ব্যাপারই না। সেই সক্ষমতা আমাদের দেশের আছে।’</p> <p>এর আগে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে আলেপ্পো থেকে নিজেদের সেনা প্রত্যাহার করে নেয় আসাদ সরকার। বিদ্রোহীরা তেমন কোনো বাধার মুখোমুখি না হয়েই শহর দখল করে নেয়। ২০১৬ সালে আলেপ্পো থেকে বিদ্রোহীদের হটিয়ে দিয়েছিল সিরীয় বাহিনী। এবার আক্রমণ চালিয়ে শহরটি আবার দখল করে নিল তারা। </p> <p><strong> হামলাকারী বিদ্রোহীরা কারা</strong></p> <p>সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামের নেতৃত্বে  আক্রমণ শুরু হয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে জড়িত থাকার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর। ২০১১ সালে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির যাত্রা শুরু হয়। তখন এটি ‘জাবহাত আল-নুসরা’ নামের আল-কায়েদার সরাসরি সহযোগী হিসেবে কাজ করত। আরেক কট্টরপন্থী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি এটি গঠনে ভূমিকা রাখেন। সিরিয়ার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইকারী অন্যতম শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী হিসেবে এদের দেখা হতো। তবে জিহাদি মতাদর্শ ধারণ করায় এক সময় ফ্রি সিরিয়া ব্যানারে বিদ্রোহীদের প্রধান জোটের সঙ্গে তাদের মতানৈক্য দেখা দেয়।     </p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>