ঢাকা, রবিবার ০৬ এপ্রিল ২০২৫
২৩ চৈত্র ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, রবিবার ০৬ এপ্রিল ২০২৫
২৩ চৈত্র ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৬

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র
সংগৃহীত ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যাকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।

বাংলাদেশের প্রধান দুই রপ্তানি বাজারের একটি যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের একটি বড় অংশ রপ্তানি হয় দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি হয় প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার, যা প্রধানত তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলারে।

নতুন করে উচ্চ মাত্রায় এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।

ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্যের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, ‘আজ খুব ভালো খবর’ থাকবে। এ সময় দর্শক সারি থেকে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়।

এই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ অভিহিত করেন ট্রাম্প।

নতুন শুল্ক আরোপকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, এই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করছে।

বাংলাদেশি পণ্য

ট্রাম্পের পাল্টা এই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩৪ শতাংশ।

এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে।

অন্যান্য যেসব দেশের পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

পাল্টা এই শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকা ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’। যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয় তার ৮০ শতাংশের বেশি সেদেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয় সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সেদেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য।

মার্কিন কম্পানি ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে কোনো দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।

শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আজকের দিনকে আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’ এবং আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে। এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধার মুখে রয়েছে।

অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা আরও খারাপ অবস্থা তৈরি করেছে। বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাসত্ত চুরিসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ করেছেন তিনি। সূত্র : রয়টার্স

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ব্লুমবার্গকে বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পথ খোঁজা হচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পথ খোঁজা হচ্ছে
সংগৃহীত ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পথ খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা ঘাটতি কমানোর সুযোগগুলো সক্রিয়ভাবে খতিয়ে দেখছি।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের ৪০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি শিল্পে বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে।

এই ধাক্কা সামলাতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাচ্ছে বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন

পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় স্বামীর বিশেষ অঙ্গ কাটলেন স্ত্রী

পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় স্বামীর বিশেষ অঙ্গ কাটলেন স্ত্রী

 

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পোশাক ক্রেতা। ফলে এই শিল্পের ওপর আঘাত লাগলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

গত বছর ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে দেশ।

বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা ব্লুমবার্গকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ধার্য হওয়া শুল্ক কমাতে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কমানোর উপায় খুঁজছে বাংলাদেশ। ট্রাম্প প্রশাসন যে কয়েকটি দেশের ওপর সর্বোচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এই পদক্ষেপ বস্ত্র রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ঝাঁকুনি দিতে পারে।

আরো পড়ুন

৪ বছরের শিশুর শ্লীলতাহানির চেষ্টা, অভিযুক্তকে গণধোলাই

৪ বছরের শিশুর শ্লীলতাহানির চেষ্টা, অভিযুক্তকে গণধোলাই

 

যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত নতুন শুল্ক পণ্যভিত্তিক মানদণ্ডের পরিবর্তে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতির ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়েছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এই পদ্ধতি বাংলাদেশের মতো বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থাকা অনেক ছোট অর্থনীতির দেশের জন্য অন্যায্য।

শুল্কের প্রভাব মূল্যায়ন করতে বাংলাদেশ সরকার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ মূল অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলাসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি বাড়ানো।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ—এর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলার আমদানি বাড়াতে পারি, তবে আমেরিকান তুলার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

আরো পড়ুন

স্নান উৎসব ঘিরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৫ কিলোমিটার যানজট

স্নান উৎসব ঘিরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৫ কিলোমিটার যানজট

 

এর আগে, গত ১৭ মার্চ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির পরিকল্পনা করছে।

তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। বাংলাদেশ আগেই শুল্কের আওতায় রপ্তানি করলেও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঝুঁকি সব সময় থাকে। আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করি এবং সেই তুলা দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করি, তাহলে তারা আমাদের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে।’

গত ২৭ মার্চ দেশীয় সুতাশিল্পের সুরক্ষায় স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ওয়ালমার্ট এবং গ্যাপ ইনকর্পোরেটেডের মতো বড় মার্কিন খুচরা বিক্রেতারা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক কেনে। আনোয়ার হোসেনের মতে, শুল্ক বৃদ্ধি তাদের ক্রয় কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ তথা বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির রপ্তানি দেড় শতাংশ কমে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

মুম্বাইয়ে ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অর্থনীতিবিদ অঙ্কুর শুক্লা মনে করেন, এই শুল্কের কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য আইএমএফ নির্ধারিত ঋণ কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি লিখেছেন, ‘এটি এই দেশগুলোতে তহবিলের ঋণকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে—যা প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে।’

তবে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা ইতিবাচক দিকও রয়েছে। পোশাক খাতে দেশের প্রতিদ্বন্দ্বী শ্রীলঙ্কা (৪৪ শতাংশ) এবং ভিয়েতনামের (৪৬ শতাংশ) তুলনায় বাংলাদেশের শুল্কের হার কম (৩৭ শতাংশ)। এ বিষয়ে অঙ্কুর শুক্লা বলেন, এটি ‘বাংলাদেশকে একটি তুলনামূলক সুবিধা দিতে পারে এবং কিছু বাজারের হিস্যা দখল করতে সাহায্য করতে পারে।’

কর্মকর্তারা বলছেন, পারস্পরিক বাণিজ্য আলোচনার অংশ হিসেবে শুল্ক সমন্বয়ের সুযোগ থাকতে পারে। 

তবে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বশির উদ্দিনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে ‘মেঘ জমেছে’। তিনি আরো বলেন, ‘এটি আর দ্বিপক্ষীয় বিষয় নয়—এটি একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সুনামি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

মন্তব্য

প্রতিকূল পরিবেশেও কমেছে খেলাপি ঋণ

মো. জয়নাল আবেদীন
মো. জয়নাল আবেদীন
শেয়ার
প্রতিকূল পরিবেশেও কমেছে খেলাপি ঋণ

দেশে অর্থনৈতিক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও খেলাপি ঋণ কমেছে। ২০২৪ সাল শেষে বেশির ভাগ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়লেও ভালো করেছে আটটি ব্যাংক। কারণ আগের বছরের তুলনায় তাদের খেলাপি ঋণ কমেছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে বিডিবিএল, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, ওয়ান, উত্তরা, এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রতিকূল পরিবেশেও খেলাপি ঋণ কমেছে

২০০৯ সালের পর থেকে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। আগের সব রেকর্ড ভেঙে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে ২০২৪ সাল শেষে। কারণ আওয়ামী সরকারের ওই ১৬ বছরে ২২ হাজার কোটি থেকে তিন লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ।

প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ভেঙে পড়ার কারণে এই সময়ের মধ্যে হলমার্ক, এননটেক্স, ক্রিসেন্ট, সাদ-মুসা, বেসিক ব্যাংক, এস আলম ও বেক্সিমকো কেলেঙ্কারির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে বাংলাদেশের। কমবেশি সব ব্যাংকেই খেলাপি ঋণের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর পরও কিছু ব্যাংক সেই খেলাপি ঋণের বেপরোয়া গতিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, এগুলো নতুন কিছু না, বরং কার্পেটের নিচে লুকিয়ে থাকা খেলাপি এখন বের হয়ে আসছে।

হাসিনা সরকার দেশ ছেড়ে পালানোর পরই মূলত খেলাপি ঋণ বাড়তে শুরু করেছে। তবে যেসব ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ভালো, তাদের খেলাপি ঋণ তেমন বাড়েনি। যারা দুর্নীতিতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ ছাড়া এই সংকটকালে খেলাপি ঋণ কমার আরো একটি কারণ রয়েছে, তা হলো ঋণ বিতরণ কমে যাওয়া। যদি কোনো ব্যাংক নতুন করে ঋণ বিতরণ না করে শুধু আদায় করতে থাকে, তাহলে তার খেলাপিও কমবে।

করোনা-পরবর্তী কয়েক বছর ধরে এই কাজটাই হয়ে আসছে। অনেক ব্যাংক নতুন করে ঋণ দিচ্ছে না বললেই চলে। এতে বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে।

আর ঋণ বিতরণ কমে বিনিয়োগ হ্রাসের সবচেয়ে বড় প্রমাণ ফেব্রুয়ারি মাসের বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি। কারণ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭.১৫ শতাংশ, যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) খেলাপি ঋণ ৯৮২ থেকে ৯৫৩ কোটিতে নেমে এসেছে। ২০২৩ সাল থেকে ২৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমেছে ২০২৪ সালে। ওই সময়ে ব্র্যাক ব্যাংকের এক হাজার ৭৫০ থেকে এক হাজার ৬১৭ কোটি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এক হাজার ৬৮৯ থেকে এক হাজার ৫৯০ কোটি, ওয়ান ব্যাংক দুই হাজার ৪৩৮ থেকে দুই হাজার ৩২৮ কোটি, উত্তরা ব্যাংক ৯৮৫ থেকে ৯৮০, এইচএসবিসি ৬৯৯ থেকে ৩২০ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ৯৬৪ থেকে ৮৩৬ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এক হাজার ৫৩৪ থেকে এক হাজার ২৭৮ কোটি টাকায় খেলাপি ঋণ কমিয়ে এনেছে।

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যেসব ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ভালো, তাদের ব্যাংক ভালোভাবে চলতে বাধ্য। যেমন—আমরা শুধু করপোরেট গ্রাহকের ওপর নির্ভরশীল নই। আমরা ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে বেশি মানুষের মধ্যে অর্থ বণ্টন করি। এতে ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। একই সঙ্গে আমাদের শক্তিশালী আদায় কমিটি (রিকভারি টিম) গঠন করা হয়েছে, যারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যদিকে যারা একই গ্রাহককে বেশি ঋণ দেয় আর যেকোনো কারণে সেটা খেলাপি হয়ে যায়, তখন পুরো ব্যাংক বিপাকে পড়ে। তাই ঋণ বিতরণের আগে খুব ভালোভাবে গ্রাহকের ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করা উচিত। পাশাপাশি বেশিসংখ্যক গ্রাহকের মধ্যে ঋণগুলো বিতরণ করলে খেলাপির ঝুঁকি কমে যায়।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য মতে, গত ডিসেম্বর শেষে এই খাতে মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ব্যাংক খাতের ২০.২০ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়েছে। ২২টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি আটটি ব্যাংকের খেলাপি ৬০ শতাংশের বেশি।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ও সমালোচিত গ্রুপগুলোর নামে-বেনামে যেসব ঋণ ছিল, তার প্রকৃত চিত্র এখন দেখাতে শুরু করেছে ব্যাংকগুলো। এতে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বাড়ছে। দেশের ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণও বেশ বেড়েছে। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, এস আলম গ্রুপসহ কিছু বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ ঋণ বেনামি, যা অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছিল।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মোহাইমিন পাটোয়ারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছার অন্যতম কারণ সিস্টেমকে ডাউনপ্লে করে সুবিধা নেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। তাই ব্যাংক খাতের এই পরিণতি। এখন সেই ব্যাংকিং সিস্টেমের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে দুষ্কৃতকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে; যদিও কিছুটা উন্নতি হয়েছে, আরো উন্নতি প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় অনিয়ম চর্চার কারণে বহু মানুষ (ব্যাংকার) খারাপ হয়ে গেছে। এখনো এসব মানুষই ব্যাংক চালাচ্ছে। তবে তাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। তা না হলে উন্নতি সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, বিগত সময়ে সরকারি কার্যক্রম, রাজনীতি, টেন্ডার—সব কিছু টাকা দিয়ে কিনে নেওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। তাই ব্যাংক খাতেও সেই কাদা লাগবে—এটাই স্বাভাবিক। কারণ ব্যাংকিং সিস্টেম কিন্তু সমাজের বাইরে না। অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে ব্যাংক খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।

মন্তব্য

অনেক বুথে টাকা নেই, সামনে ‘আউট অব সার্ভিস’ নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
অনেক বুথে টাকা নেই, সামনে ‘আউট অব সার্ভিস’ নোটিশ
সংগৃহীত ছবি

দীর্ঘ ৯ দিনের ঈদের ছুটিতে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আগামী রবিবার থেকে আবারো খুলবে এসব প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক বন্ধ থাকলেও সচল রয়েছে এটিএম বুথ, ইন্টারনেট ব্যাংকিংসহ বিকল্প ডিজিটাল সেবাগুলো। এসব সেবা নির্বিঘ্ন রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগাম নির্দেশনা দিলেও বাস্তবে বিভিন্ন স্থানে গ্রাহকরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

টাকা মিলছে না অনেক এটিএম বুথে। ঢাকার বাইরে এ সমস্যা বেশি।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বেসরকারি চারটি ব্যাংকের পাঁচটি এটিএম বুথ রয়েছে। কিন্তু বুথগুলোতে গত ৩০ মার্চ থেকে টাকা নেই।

শার্টারে দেওয়া নোটিশে লেখা রয়েছে, ‘আউট অব সার্ভিস’।

বুথে টাকা না থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কালাইয়া বন্দর শাখার ব্যবস্থাপক মো. আল মামুন একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যাংক না খোলা পর্যন্ত (আগামী রবিবার) বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে দুঃখ প্রকাশ করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু বাউফল নয়, একই অবস্থা রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী।

বর্তমানে দেশে ১২ হাজার ৯৪৬টি এটিএম বুথ এবং সাত হাজার ১২টি ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) রয়েছে।

তবে এরই মধ্যে অনেক এটিএম বুথে নগদ অর্থের সংকট দেখা গেছে এবং কিছু ব্যাংক নিজেদের গ্রাহক ছাড়া অন্যদের লেনদেন সীমিত করেছে। এতে সাধারণ গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।

ইসলামী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গ্রামাঞ্চলের বুথগুলোতে টাকা শেষ হয়ে গেলে নতুন করে টাকা পাঠানো একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তা ছাড়া ঈদ হওয়ার কারণে এক দিনেই টাকা শেষ হয়ে যায়।

এক হাজার টাকার নোট দিলে একবারে ৭০ লাখ দেওয়া যায়। আর ৫০০ টাকার নোট দিলে সর্বোচ্চ ৩৫ লাখ টাকা দেওয়া যায়। এখন ঈদ হওয়ার কারণে টাকা উত্তোলনের চাপ এত বেশি যে এক দিনেই টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া ১০ শতাংশ বুথে সমস্যা থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। ব্যাংক পুরোপুরিভাবে চালু হলে এসব সমস্যা থাকবে না বলে মত ওই ব্যাংকারের।

ঈদকে কেন্দ্র করে এবার ছুটি শেষে অফিস খুলবে আগামী ৬ এপ্রিল থেকে। গত ২৮ মার্চ থেকে টানা ৯ দিন বন্ধ রয়েছে। এর আগে ২৬ মার্চ বিজয় দিবসের ছুটির পরদিন এক দিন ছুটি নিয়ে অনেকে টানা ১১ দিনের ছুটি কাটাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বর্তমানে টাকা তোলার জন্য বুথ রয়েছে ২০ হাজারের মতো। এর মধ্যে শুধু টাকা তোলার এটিএম বুথ ১২ হাজার ৯৩৮টি। যার মধ্যে শহরেই ৯ হাজার ৯১টি। আর সিআরএম আছে সাত হাজার ১২টি। এ রকম একই বুথে টাকা জমা ও উত্তোলন করা যায়। যে কারণে এই ধরনের বুথে টাকার সংকট কম হয়। এই সিআরএম ৯টি শহরে আছে পাঁচ হাজার। আর গ্রামে আছে দুই হাজার ৩টি। গ্রামীণ বুথ বলতে ঢাকাসহ সব বিভাগীয়, জেলা ও পৌর এলাকার বাইরে স্থাপিত বুথকে বোঝানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ঈদের আগের মাস মার্চে দুই উপায়ে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু এটিএম বুথ থেকে ৩২ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা এবং সিআরএম থেকে ১৪ হাজার ১৬২ কোটি টাকা লেনদেন হয়।

মন্তব্য

মার্কিন শুল্ক : কী দেখছে বাংলাদেশ সরকার, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা

বিবিসি বাংলা
বিবিসি বাংলা
শেয়ার
মার্কিন শুল্ক : কী দেখছে বাংলাদেশ সরকার, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা
ছবি : এএফপি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, এর প্রভাব নিয়ে ঢাকায় চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলছেন, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে, বিশেষ করে পোশাক শিল্পে।

যুক্তরাষ্ট্র এটাকে রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, যেসব দেশ এতদিন মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক নির্ধারণ করে রেখেছিল, সেইসব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত তালিকায় বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ মার্কিন পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় এখন থেকে বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে ৩৭ শতাংশ নতুন অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

আগামী নয়ই এপ্রিল থেকে এই উচ্চতর শুল্ক আরোপ শুরু হবে। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগে যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে শুল্ক ছিল ১৫ শতাংশ।

অর্থাৎ, নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে এখন থেকে গড়ে ৫২ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে, বলছেন ঢাকায় অর্থনীতিবিদদের অনেকে।

এ ছাড়া, বাংলাদেশে মার্কিন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৭৪ শতাংশ শুল্ক রয়েছে বলে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

তাদের মতে, বাংলাদেশ মার্কিন পণ্যের ওপর গড়ে সাত থেকে আট শতাংশ শুল্ক আরোপ করে থাকে।

এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র কী কারণে বা কিসের ভিত্তিতে ৭৪ শতাংশ শুল্কের কথা বলছে, সে বিষয়টি দ্রুত স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর প্রযোজ্য শুল্কহার পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ৭৪ শতাংশ শুল্ক নিয়ে প্রশ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ, যা ইউএসটিআর নামে পরিচিত, তাতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল আনুমানিক এক হাজার ৬০ কোটি ডলার। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের মতো।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্য রপ্তানি হয় তার মধ্যে রয়েছে– কৃষিপণ্য যেমন, খাদ্যশস্য, বীজ, সয়াবিন, তুলা, গম এবং ভুট্টা।

এছাড়া যন্ত্রপাতি এবং লোহা ও ইস্পাত পণ্যওআসে বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পণ্যের মধ্যে আছে, তৈরি পোশাক, জুতা, টেক্সটাইল সামগ্রী ও কৃষিপণ্য।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর খুবই কম শুল্ক আরোপ করে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অতিরিক্ত শুল্ক বসাল, তার যৌক্তিকতা কী? কিভাবে তারা এই ৭৪ শতাংশের হিসাবটা করল? যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখ করা ৭৪ শতাংশ শুল্কটা আমাদের নাই এবং মার্কিন পণ্যে বাংলাদেশে শুল্ক খুবই কম।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলছে যে তারা এখানে শুধু শুল্ক বিবেচনায় নেয়নি। এক্সচেঞ্জ রেট পলিসি, ট্রেড পলিসি এগুলোও বিবেচনায় নিয়েছে। ওগুলো বিবেচনায় নিলেও ৭৪ শতাংশ শুল্ক হারের বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়ে যায়।’

এই অর্থনীতিবিদ উল্লেখ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০২৪ সালে ২২০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, এর বড় অংশই ছিল তুলা। বাংলাদেশে তুলার ওপর আমদানি শুল্ক ছিল শূন্য। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে লোহা ও পেট্রোলিয়াম আমদানি করা হয়েছে, যেগুলোর আমদানি শুল্ক যথাক্রমে শূন্য ও ৩১ শতাংশ।

তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে গড়ে আমদানি শুল্ক হয় সাত-আট শতাংশ হবে।’

আরেক অর্থনীতিবিদ সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘৭৪ শতাংশের বিপরীতে ৩৭ শতাংশ কিভাবে এলো বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেলও একইভাবে ব্যাখ্যা করছেন।

তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন এই ৭৪ শতাংশ শুল্কের বিষয়টি কিভাবে নির্ধারণ করেছে, তা জানি না। এটি বাংলাদেশ সরকারের হিসাব নয়। যুক্তরাষ্ট্র ওখানে অনেককিছু যোগ করেছে।’

যদিও গত বুধবার শুল্ক ঘোষণার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যারা আমেরিকান পণ্যের ওপর অসম শুল্ক আরোপ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রও তাদের ওপর এই পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে।

তবে, ট্রাম্প বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক অন্যদের আরোপিত শুল্কের প্রায় অর্ধেক। সুতরাং, সেই হিসাবে পুরোপুরি পাল্টা শুল্ক হচ্ছে না। তবে হ্যাঁ, আমি তা করতে পারতাম। কিন্তু এটি করলে অনেক দেশের জন্য কঠিন হয়ে যেত। আমি তা করতে চাইনি।’

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়বে?

অর্থনীতিবিদ ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন শুল্ক বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে আঘাত হানবে। এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের দাম বেড়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের কাছে দাম বেশি হলে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে যেতে পারে । ফলে, তখন সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘শুল্ক আরোপের কারণে শুধু বাংলাদেশে প্রভাব পড়বে না। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা বেড়ে গেছে, এই কারণে তাদের জিডিপি কমে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘একদিকে তাদের আয় কমবে, অন্যদিকে দাম বাড়বে। মার্কিন ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাবে। এর একটি প্রভাব বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপেও চাহিদা কমে যাবে।’

জাহিদ হোসেন জানান, বাংলাদেশ থেকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে তৈরি পোশাকই রপ্তানি হয়েছে ৭৪০ কোটি ডলারের। এর বাইরে ব্যাগ, প্লাস্টিক, জুতা, কৃষিপণ্যও বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে।

খান্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সাধারণত বাংলাদেশ থেকে যে ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করে, তা কম দামী। কারণ এখানে শ্রমিক খরচ কম। কিন্তু এই নতুন আরোপ করা শুল্কের কারণে তখন একই পণ্যের দাম আগের চেয়ে বেড়ে যাবে।’

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যের সিংহভাগ জায়গা দখল করে আছে তৈরি পোশাক খাত। ফলে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায়এর প্রভাব বেশি পড়বে পোশাক খাতে।

তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরাও পরিস্থিতিটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশে এসেছেই সস্তা শ্রম ও মূল্যের জন্য। যেখানে সস্তা পাবে, সেখানেই তারা যাবে। এটাই তাদের ব্যবসা। ব্র্যান্ডগুলো কখনোই চাইবে না যে বেশি টাকায় পণ্য কিনুক। সুতরাং, বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের দাম বেড়ে গেলে মার্কিন "বায়াররা বিকল্প খুঁজবে।’

এ ক্ষেত্রে, তাদের জন্য সম্ভাব্য গন্তব্য হতে পারে কেনিয়া, মিশর কিংবা হন্ডুরাসের মতো দেশ। কারণ ওই দেশগুলোতে শুল্কের হার ১০ শতাংশ এবং ওগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাছেও। এতে তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এই খাত যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল, মনে করেন মহিউদ্দিন রুবেল।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ইউরোপের কথাও মাথায় রাখতে হবে। দুই মার্কেটেই একই ঘটনা ঘটলে আমাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।’

যা বলছে সরকার, সমাধান কোথায়

যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের পর বাংলাদেশে আমদানি করা মার্কিন পণ্যের শুল্কহার পর্যালোচনা করার কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক ইস্যু সমাধানে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলে দূঢ় আশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। যেহেতু এটি আলোচনাযোগ্য, তাই আমরা আলোচনা করব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’

বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কক থেকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে এ কথা বলেন।

এ ছাড়া শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রফাইলে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর প্রযোজ্য শুল্কহার পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দ্রুততম সময়ে শুল্ক যৌক্তিককরণের বিকল্পগুলো খুঁজে বের করবে, যা এ বিষয়ে কার্যকর সমাধানের জন্য জরুরি।’

এদিকে, অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাংলাদেশের এখন স্বল্পমেয়াদী আর দীর্ঘমেয়াদী, দুই ধরনের করণীয় আছে। দীর্ঘমেয়াদীর মাঝে একটি করণীয় হলো– নির্দিষ্ট কোনো দেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। তবে আপাতত দ্রুত দর কষাকষিতে যেতে হবে। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক নিয়ে।

কারণ যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে তুলা আমদানিতে শূন্য এবং তুলার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম বৃহৎ আমদানিকারক দেশ হলো বাংলাদেশ।

সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা তাদেরকে বলতে পারি যে এই তুলা ব্যবহার করেই তৈরি পোশাক প্রস্তুত করে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করছি, আমাদের তৈরি পোশাকের মাঝে মার্কিন পণ্য নিহিত আছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘মার্কিন পণ্য ব্যবহার করে যারা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করবে, তাদের সাথে কিছুটা শৈথিল্য দেখানোর কথা বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই, এ ব্যাপারে আমরা দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করতে পারি।’

তবে যেহেতু শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিভিন্ন দেশের প্রতি এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, অন্যান্য দেশ কোন ধরনের কৌশল নেয়, সেটাও দেখার বিষয় রয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘একেক দেশ একেকভাবে কৌশল অবলম্বন করবে। চীন এই অতিরিক্ত শুল্কের উত্তর হিসাবে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক বসাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও হয়তো একই পথে যাবে। বাংলাদেশকেও চিন্তা-ভাবনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত এই শুল্ক নীতি টিকে থাকলে বাংলাদেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জানিয়ে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এই পলিসি না-ও টিকতে পারে। কারণ যাদের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তারা বলছে যে আমরাও ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

কিন্তু এই নীতির পরিবর্তন না হলে বাংলাদেশকে শক্ত অবস্থানে যেতে হবে বলে মনে করেন তিনি। কারণ এই নতুন আরোপিত শুল্ক অবিলম্বে কার্যকর হতে যাচ্ছে।

‘তাই, যে পণ্যগুলো এখনও জাহাজে আছে, বন্দরে পৌঁছায়নি বা বন্দরে পৌঁছালেও কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স হয়নি, ওগুলোর ওপরও এই নতুন শুল্ক আরোপ হবে। আর যেগুলো উৎপাদনে আছে, সেগুলোর ওপরও নতুন শুল্ক প্রযোজ্য হবে,’ বলেন জাহিদ হোসেন।

এ ক্ষেত্রে বায়ারদের কাছ থেকে বাংলাদেশের ওপর দাম কমানোর চাপ আসবে বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এখানে অন্য দেশগুলোর কৌশল পর্যবেক্ষণ করে আমাদের যৌথভাবে সমঝোতার চেষ্টা করতে হবে, যেন আমাদের ওপর এই বোঝা না চাপানো হয়।’

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ