মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের বিরুদ্ধে চীন ও কানাডা পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সব মার্কিন পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক এবং কিছু বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এদিকে সব ধরনের মার্কিন যানবাহনের ওপর ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। এসব পাল্টা ব্যবস্থা ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই দুই বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তির বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নতুন শুল্ক আরোপের আরেকটি বড় রাজনৈতিক ঝুঁকিও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দশক ধরে যে ‘মুক্তবাণিজ্য বিশ্বব্যবস্থা’ তৈরিতে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে আসছে, তাও থমকে যাবে ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে অর্থাৎ, ট্রাম্প যে নতুন বাজিটি ধরে বসেছেন, তা থেকে তিনি স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো রাজনৈতিক সুবিধাই হাসিল করতে পারবেন না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অনেক বিশ্লেষক এখনো বিশ্বাস করেন, এটা ট্রাম্পের এমন এক কল্পনা বা পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশিদের নতুন কারখানা স্থাপনে এক ধরনের চাপ দিচ্ছেন এবং সরবরাহ শৃঙ্খল আরো নির্বিঘ্ন করতে চাইছেন। কোনো কোনো দেশ হয়তো তা করবেও বটে, কিন্তু ট্রাম্পের পর যিনি বা যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তখন এই প্রকল্পগুলোর অবস্থা কী হবে? সাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার সুপ্ত বাসনার কথা জানা গেছে তাঁর কাছ থেকে।
এ নিয়ে তিনি বেশ গরম গরম কথাও বলছেন! যদিও ট্রাম্পের জন্য সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
তবে এটা ঠিক, ট্রাম্পের গৃহীত শুল্কব্যবস্থা সারা বিশ্বে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদ, বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য বিশ্লেষক এ নিয়ে সমালোচনা শুরু করেছেন এবং ভোক্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কারণ বর্ধিত শুল্কহারে আমদানীকৃত পণ্যের মূল্য বাড়বে এবং মুদ্রাস্ফীতি আরো বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র চরম অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হবে। চীনের ওপর শাস্তিমূলক শুল্কহার আরোপিত হওয়ায় এরই মধ্যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নতুন শুল্কহার আরোপিত হওয়ার ফলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় একটি দেশের অর্থনীতি পরিচালনায় এরই মধ্যে ট্রাম্পের ওপর আমেরিকানদের ক্রমহ্রাসমান আস্থায় আরো ধস নামবে।
বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিং জানিয়েছে, আগামী ১০ এপ্রিল থেকে মার্কিন পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ কার্যকর করা হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর ৫৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর রাতারাতি চীনের নতুন ঘোষণা এলো।
এই ৫৪ শতাংশ শুল্কের মধ্যে পূর্ববর্তী শুল্কও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, চীনা কাস্টমস শস্য রপ্তানিকারক সিঅ্যান্ডডি (ইউএসএ) ইনকরপোরেটেড থেকে আমদানির ওপর তাৎক্ষণিক স্থগিতাদেশ জারি করায় কৃষি বাণিজ্য আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনটি মার্কিন কম্পানি থেকে পোলট্রি ও হাঁসের মাংস আমদানিও স্থগিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রে সামারিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, লুটেটিয়াম, স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়ামসহ মাঝারি ও ভারী বিরল খনিজ রপ্তানির ওপর নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আইন অনুসারে প্রাসঙ্গিক পণ্যের ওপর চীন সরকারের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হলো জাতীয় নিরাপত্তা এবং স্বার্থকে আরো ভালোভাবে রক্ষা করা এবং পরমাণু বিস্তার রোধের মতো আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণ করা। চীন বলেছে, মার্কিন শুল্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় বেইজিং এই পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। সূত্র : এএনআই, বিবিসি, রয়টার্স।