<p>সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে চলা শাসনের পতন হয়েছে অনেকটা আশ্চর্যজনকভাবে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে বিদ্রোহীরা যখন সিরিয়ার ইদলিবে তাদের ঘাঁটি থেকে নিজেদের অভিযান শুরু করেছিল, তখনো দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন ছিল প্রায় কল্পনাতীত।</p> <p>কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের শাসনের পতন ঘটিয়েছেন সশস্ত্র যোদ্ধারা। আসাদের পতন সিরিয়ার জন্য একটি মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনা। আসাদের পতন এই অঞ্চলের ক্ষমতার ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে পারবে কি না, সেই প্রশ্নটি নিয়েই এখন চর্চা চলছে।</p> <p>২০০০ সালে বাবা হাফেজের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন আসাদ। হাফেজ ২৯ বছর ধরে সিরিয়া শাসন করেছিলেন, অনেকটা তার ছেলের মতোই শক্ত হাতে। তবে আসাদ উত্তরাধিকার সূত্রেই সিরিয়ায় একটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত ও দমনমূলক রাজনৈতিক কাঠামো পেয়েছিলেন।</p> <p>অবশ্য আসাদ ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রত্যাশা ছিল তিনি বাবার চেয়ে আলাদা হতে পারেন। কারণ প্রথম দিকে বাবার চেয়ে উদার ও কম নিষ্ঠুর ছিলেন তিনি। তবে আসাদের এই আচরণ ছিল স্বল্পস্থায়ী।  বরং আসাদ চিরকাল সেই ব্যক্তি হিসেবেই স্মরণীয় হয়ে থাকবেন, যিনি ২০১১ সালে তার শাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে নির্মমভাবে দমন করেছিলেন। পরে যা একটি গৃহযুদ্ধের দিকে পরিচালিত করেছিল। ওই সময় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত ও ৬০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।</p> <p>আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের শাসনের অবসান এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্যকে পুনরুজ্জীবিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।</p> <p>আসাদের পতন ইরানের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে এটি আবারও একটি উল্লেখযোগ্য ধাক্কা। কারণ আসাদের অধীনে সিরিয়া, ইরান ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর মধ্যে সংযোগের অংশ ছিল। সিরিয়াই ছিল হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ স্থানান্তরের মূল পথ। কিন্তু হিজবুল্লাহ নিজেই ইসরায়েলের সঙ্গে বছরব্যাপী চলা যুদ্ধে মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ইরান সমর্থিত এই গোষ্ঠীটির ভবিষ্যৎও এখন অনিশ্চিত।</p> <p>অন্যদিকে ইরান সমর্থিত আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইয়েমেনের হুতিরাও বারবার বিমান হামলায় নাস্তানাবুদ হচ্ছে। তেহরানের কাছে প্রতিরোধের অক্ষ <span dir="ltr" lang="BN" style="font-family:SolaimanLipi">হিসেবে</span> আখ্যা পাওয়া <span dir="ltr" lang="BN" style="font-family:SolaimanLipi">এসব</span> সশস্ত্র গোষ্ঠী, ইরাকের মিলিশিয়া ও গাজার হামাস এখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গোটা অঞ্চলজুড়ে ইরানের কোণঠাসা হওয়ার এই করুণ চিত্র ইসরায়েলের মুখে হাসি ফুটাবে। কারণ বরাবরই ইরানকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে দেশটি।</p> <p>অনেকেই মনে করেন, তুরস্কের আশীর্বাদ ছাড়া বিদ্রোহীরা এই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারত না। অবশ্য তুরস্ক সিরিয়ার কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সহযোগিতা করলেও আসাদ সরকারের পতন অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামকে (এইচটিএস) সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। কখনো কখনো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান আলোচনার মধ্য দিয়ে বিরোধ মীমাংসার আহ্বান জানিয়েছেন। তুরস্কের মাথাব্যথার কারণ ওই দেশে আশ্রয় নেওয়া ৩০ লাখ সিরীয় শরণার্থী। তুরস্কে এটি স্পর্শকাতর একটি সমস্যা। তাই এরদোয়ান কূটনৈতিক সমাধান আশা করছিলেন, যাতে শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো যায়। কিন্তু বাশার আল আসাদ বরাবরই আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।</p> <p>অবশ্য আসাদের পতনে অনেকেই খুশি। তবে এরপর কী হবে সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে? কারণ আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এইচটিএসের রয়েছে সহিংস অতীত। অবশ্য বিগত বছরগুলোতে তারা নিজেদের একটি জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে পুনর্গঠনের চেষ্টা করেছে। তাদের সাম্প্রতিক বার্তাগুলোর মধ্যেও একটি কূটনৈতিক ও সমঝোতামূলক সুর লক্ষণীয়।</p> <p>কিন্তু তার পরও অনেকেই আশ্বস্ত হতে পারছে না। বরং ক্ষমতাসীন শাসকের পতনের পর তারা ঠিক কী করার পরিকল্পনা করছে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। একই সময়ে নাটকীয় পরিবর্তনগুলো সিরিয়াকে একটি বিপজ্জনক ক্ষমতাশূন্য পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত আরো বিশৃঙ্খলা এমনকি সহিংসতারও কারণ হতে পারে।      সূত্র : বিবিসি</p> <p> </p>