ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গতকাল রবিবার স্থানীয় সময় ভোরে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বোমাবর্ষণে অন্তত ৩৫ জন প্রাণ হারিয়েছে। এ নিয়ে প্রায় ১৮ মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বেপরোয়া হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে।
গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ কথা জানায়। গাজা থেকে আলজাজিরার সংবাদদাতা বলেন, ‘যাদের একদিন জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল, তারা এখন আর নেই।
গাজার ৫০ হাজার নিহতের মধ্যে ১৭ হাজারই শিশু। একটা প্রজন্মই মুছে গেছে।’ ওই সংবাদদাতা আরো বলেন, বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে নিবন্ধকৃত তথ্যের ভিত্তিতে নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আরো অগণিত মানুষ ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে। তাদের কোনো হদিস মেলেনি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা শুরুর পর এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ২১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করা গেছে। আহত হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ২৭৪ জন। তবে গাজার মিডিয়া অফিস তাদের হালনাগাদ তথ্যে বলেছে, নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ জনের বেশি।
তারা বলেছে, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া ফিলিস্তিনিদের মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
প্রায় দুই মাস যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজার প্রাণহানি কমেছিল। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছিল। গত ১ মার্চ যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ শেষ হয়। এর পর থেকে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে যেতে অসম্মতি জানায় ইসরায়েল সরকার।
রোজা শুরুর পরই গাজায় ত্রাণসহ সব ধরনের পণ্য প্রবেশ আটকে দেয় ইসরায়েল। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপে গাজাবাসী আবারও নতুন করে হামলা শুরুর আশঙ্কায় করে। এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার থেকে গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। আর ফিলিস্তিনি ভূমিটি আবারও রক্তের বন্যায় ভাসছে।
নামাজরত অবস্থায় সস্ত্রীক হামাস কর্মকর্তা নিহত
ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার জ্যেষ্ঠ সদস্য সালাহ আল বারদায়েল নিহত হয়েছেন। হামাস জানায়, গতকাল ফজরের নামাজ আদায়ের সময় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে সস্ত্রীক নিহত হন বারদায়েল। হামলার সময় গাজার খান ইউনিসের একটি তাঁবুতে ছিলেন তাঁরা।
হামাস নেতাদের মিডিয়া উপদেষ্টা তাহের আল-নূর ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বারদায়েলের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। হামাস বলেছে, বারদায়েল ও তাঁর স্ত্রীর রক্ত আর শহীদরা মুক্তি ও স্বাধীনতার যুদ্ধে শক্তি জোগাবেন। সন্ত্রাসী শত্রুরা যোদ্ধাদের মনোবল ভাঙতে পারবে না।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরায়েলিদের বিক্ষোভ চলছেই। ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার সরকারি সিদ্ধান্ত এবং গাজায় আবার হামলা শুরুর প্রতিবাদে গত শনিবার তেল আবিব শহরে বিক্ষোভ করেন হাজারো মানুষ। তাঁরা হামলা বন্ধ করে গাজা থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের ফেরত আনার দাবি জানান। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ৬৩ বছর বয়সী এক ইসরায়েলি বলেন, ‘বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুই ইসরায়েলের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু। তিনি ২০ বছর ধরে দেশ ও জনগণের তোয়াক্কা করেননি।’
এদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার আগে গোয়েন্দা তথ্য দিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে নেতানিয়াহু সরকার গোয়েন্দাপ্রধান রোনেনকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁর সরকারের মন্ত্রিসভা তাতে অনুমোদনও দিয়ে ফেলেছে। তবে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট রোনেন বারকে বরখাস্তে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। শিন বেতের প্রধান রোনেন বারের বরখাস্তের সিদ্ধান্তেও প্রতিবাদ করছেন ইসরায়েলিরা। তাঁদের অভিযোগ, নেতানিয়াহুর এমন সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক। নিজের হাতে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করতেই তিনি ইসরায়েলের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা শুরু করেছেন। সূত্র : আলজাজিরা