ঢাকা, শুক্রবার ১১ এপ্রিল ২০২৫
২৭ চৈত্র ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, শুক্রবার ১১ এপ্রিল ২০২৫
২৭ চৈত্র ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৬

স্বচ্ছতা নিশ্চিত করুন

  • সরকারি কেনাকাটায় অনিয়ম
শেয়ার
স্বচ্ছতা নিশ্চিত করুন

সরকারি কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনেক পুরনো। এ নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ব্যাপক সমালোচনা ছিল। দাতা সংস্থাগুলোর অসন্তোষ ছিল। টেন্ডারপ্রক্রিয়া, ঠিকাদারদের সিন্ডিকেটবাজি ও অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সরকারি কেনাকাটার ছিল রীতিমতো করুণ দশা।

সেই দশা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ২০১১ সালে সরকারি ই-প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) ব্যবস্থা চালু করা হয়, কিন্তু তাতেও সরকারি কেনাকাটার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়নি। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ই-জিপি ব্যবস্থায় বাজার দখল, ঠিকাদারদের যোগসাজশ এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিদ্যমান থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে। পর্যবেক্ষণে তারা বলেছে, সরকারি ক্রয় খাত এখনো জিম্মি অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে গবেষণা প্রতিবেদনে পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতির চেষ্টা কমবেশি সব দেশেই আছে। বেশির ভাগ দেশ, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো নানা প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সেসব প্রচেষ্টা রোধ করে। অন্য দেশগুলোতে দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে দুর্নীতি লাগামহীন হয়ে পড়ে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পাঁচ লাখ ৯৬ হাজার ৯৯১ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে শীর্ষ ১০ মন্ত্রণালয় প্রায় ৯২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে।

এই ১০টি মন্ত্রণালয়ের গড়ে ৬১ শতাংশ কার্যাদেশই চলে গেছে মাত্র ৫ শতাংশ ঠিকাদারের হাতে। তিনি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ মালিকানা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী প্রকল্পগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে। ফলে প্রতিযোগিতার সুযোগ কমে যাচ্ছে, যা সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা হ্রাস করছে।

সরকারি ই-প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে টিআইবি যেসব সুপারিশ করেছে তার মধ্যে রয়েছে, যুগ্ম উদ্যোগ (জেভি) বা যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম কঠোরভাবে পর্যালোচনা করা এবং এ জন্য স্বাধীন পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা। যে ঠিকাদার এককভাবে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম, তাকে জেভি গঠনের অনুমতি না দেওয়া।

ঠিকাদারদের জন্য বাজার শেয়ারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করার পাশাপাশি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা। সরকারি ক্রয়ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মানের নিয়ম-নীতি ও প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা। এ ছাড়া পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস সংশোধন করে সব কম্পানি ও জেভির প্রকৃত মালিকানা তথ্য উন্মুক্ত করতে হবে। ই-জিপি প্ল্যাটফরমের বাইরে থাকা উচ্চমূল্যের প্রকল্পগুলোকেও ই-টেন্ডারিং প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে হবে।

আমরা আশা করি, সরকারি কেনাকাটার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখাবে। এ ক্ষেত্রে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ান

    পাল্টা শুল্ক ৩ মাস স্থগিত
শেয়ার
কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ান

শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় শুল্কযুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি বাণিজ্য আছে এমন দেশগুলোর ওপর ট্রাম্প প্রশাসন নানা মাত্রায় শুল্ক আরোপ করেছে। অনেক অর্থনীতিবিদ আশঙ্কা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। এরই মধ্যে একটি সুখবর এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ছাড়া বিশ্বের অন্য সব দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিন অর্থাত্ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। বলা হয়েছে, এ সময় দেশগুলোর পণ্যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। অন্যদিকে চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে এ ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক অন্তত তিন মাসের বিরতির জন্য। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর প্রধান উপদেষ্টা এক্সে বলেছেন, ধন্যবাদ, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আমাদের শুল্কসংক্রান্ত ৯০ দিনের বিরতির অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার জন্য। আমরা আপনার বাণিজ্যিক এজেন্ডাকে সমর্থন জানাতে আপনার প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ট্রাম্প অসাধারণ সাহস দেখিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বের সব দেশকে জানিয়েছিলাম পাল্টা ব্যবস্থা না নিলে তোমরা পুরস্কৃত হবে। সুতরাং যারা আলোচনায় আসতে চায়, আমরা তাদের কথা শুনতে প্রস্তুত। এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত দেয় যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্যকে গুরুত্ব দেন এবং আমরা সত্ভাবে আলোচনা করতে চাই।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত অপর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে উত্পাদন ফেরাতে ওষুধে শুল্ক বসাতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য পলিটিকো জানিয়েছে, শিগগিরই ওষুধশিল্পে শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশের ওষুধশিল্পও আমাদের রপ্তানি খাতে বড় ভূমিকা রাখছে। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হলে ওষুধ রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সরকার এরই মধ্যে শুল্কারোপের বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও মনে করি, আলোচনাই একমাত্র পথ এবং তা আরো বাড়াতে হবে।

মন্তব্য

আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে

    ভারত হয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল
শেয়ার
আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে সম্পর্কের কিছুটা টানাপড়েন চলছে। ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশ ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করার যে সুযোগ বাংলাদেশ পেয়ে আসছিল, হঠাত্ করেই ভারত তা বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতীয় ভূখণ্ডে থাকা বাংলাদেশি যানবাহনগুলোকে দ্রুত বাংলাদেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চিকেন নেক বলে কথিত যে অঞ্চলটি ব্যবহার করে ওই দুটি দেশে আমদানি-রপ্তানি চালানো হতো, সেই অঞ্চলের নিরাপত্তার কারণেই ভারত এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে।

তাঁদের মতে, এতে দেশ দুটিতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি যেভাবে জোরদার হচ্ছিল, তা অনেকটাই ব্যাহত হবে।

গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশকে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে বাণিজ্যের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।

এর ফলে ভারতের বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে উল্লেখযোগ্য যানজট তৈরি হচ্ছে। লজিস্টিক পাঠাতে বিলম্ব এবং উচ্চব্যয় ভারতের নিজস্ব রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করছে।

তাই গত মঙ্গলবার এই সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

মুখপাত্র বলেন, ভারতের বন্দর ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর এটি প্রভাব ফেলবে না। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনও বলেছেন, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশের বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না। বুধবার কারওয়ান বাজারের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কার্যালয়ে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।

ব্যবসায়ী নেতাদের মতে, নেপাল ও ভুটানে আমাদের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকার সমমূল্যের। এ ছাড়া ২০২০ সালের জুন থেকে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতের কলকাতা এয়ার কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পেয়ে আসছিলেন। সুতরাং ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করার ফলে বাংলাদেশের তেমন একটা ক্ষতি হবে না। তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবহার করে এখনো নেপাল-ভুটানে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হয়নি। তবে সামান্য তুলা কাপড় আমদানি হয়।

এটিতে তৈরি পোশাকে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে নেপাল ও ভুটান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ দেশ দুটি পণ্য আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলো ব্যবহারের যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করছিল, তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে যে ব্যবসা, সেটি এখনো বড় আকারে গড়ে ওঠেনি। এর পরও বাংলাদেশের আশপাশের দেশগুলোর ব্যবসা প্রসারের যে সুবিধা নেওয়ার পরিকল্পা ছিল, সেটিতে হয়তো পরিবর্তন আসতে পারে। কারণ মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল প্রকল্পে যাঁরা ব্যবসা করবেন, তাঁরা চাইবেন দুই বন্দর ব্যবহার করে পাশের অঞ্চলগুলোতেও সুবিধা নেওয়ার। এখন ওই সব সুবিধা বন্ধ হচ্ছে কি না সেটি দেখার বিষয়।

ট্রান্সশিপমেন্ট পরিচালিত হয় ডব্লিউটিওর নীতিমালা অনুযায়ী। তবে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে করা চুক্তিতে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের কোনো সুযোগ রাখা আছে কি না, তা পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। যেখানে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক নানা জোটের মধ্য দিয়ে দেশগুলো নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে; সেখানে আমরা আশা করি, আগামী দিনে প্রতিবন্ধকতা নয়, সহযোগিতা ক্রমেই সম্প্রসারিত হবে।

মন্তব্য

কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করুন

    মাদকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ
শেয়ার
কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করুন

মাদক ক্রমেই এক ভয়ংকর সামাজিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠছে। দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স রয়েছে। লাগাতার অভিযান হচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হচ্ছে না। মাদকের বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না।

ক্রমেই বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। শহর শুধু নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও এখন মাদক সহজলভ্য। বেসরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) হিসাব মতে, দেশে এখন মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাদকের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা।
গত দুই বছরে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। একই সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের হার বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। শুধু সংখ্যাগত দিক থেকে নয়, বরং বদলে গেছে তাদের অপরাধের ধরন, প্রকৃতিও।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাদক সহজলভ্য হওয়ায় কিশোররা ক্রমেই বেশি করে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

এরপর মাদক ক্রয়ের অর্থ সংগ্রহের জন্য জড়িয়ে যাচ্ছে নানা ধরনের অপরাধে। অনেক সময় অর্থের জন্য বিভিন্ন অপরাধীচক্রের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। অনেকে তাদের ভাড়ায় খাটাচ্ছে। ফলে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। নিজেরা নিজেরা কিংবা বড় ভাইদের আশ্রয়ে গড়ে তুলছে কিশোর গ্যাং
সারা দেশেই সাধারণ মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে কিশোর গ্যাং। খুন, ডাকাতি থেকে এমন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে এরা জড়িত নয়। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, মাদক ব্যবসার স্পট পরিচালনাসহ খুচরা পর্যায়ে মাদক বিক্রিতে ব্যাপকহারে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আরো খারাপ বার্তাই দেয় আমাদের। কালের কণ্ঠের অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ জানিয়েছে, রংপুর নগরীসহ জেলায় কিশোর অপরাধে জড়িতদের বেশির ভাগই মাদকাসক্ত। প্রায় একই অবস্থা অন্যান্য স্থানেও।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুযায়ী মাদকদ্রব্য পরিবহন, কেনাবেচা, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, অর্থ লগ্নীকরণ, পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্ন অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড। এত কঠোর আইন সত্ত্বেও মাদকের বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। মাদকের ভয়ংকর থাবা থেকে দেশ বাঁচাতে মাদকের সহজলভ্যতা দূর করতে হবে। দেশে মাদক প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মাদকসংক্রান্ত মামলাগুলোর বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

 

মন্তব্য

বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে

    শুল্কযুদ্ধের মারাত্মক প্রভাব
শেয়ার
বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে

বৈশ্বিক পর্যায়ে রীতিমতো শুল্কযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, সেসব দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর মার্কিন প্রশাসন নানা মাত্রায় শুল্ক আরোপ করেছে। এর বিপরীতে অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্কযুদ্ধ বিশ্ববাণিজ্যকে অস্থির করে তুলেছে।

অনেক অর্থনীতিবিদ এ কারণে ব্যাপক আকারে বৈশ্বিক মন্দা শুরুরও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশও এই শুল্কযুদ্ধের বড় শিকার হয়েছে।

গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার শুল্কযুদ্ধ বা বাণিজ্যযুদ্ধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। মার্কিন প্রশাসনের আরোপিত ৩৪ শতাংশ শুল্কের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যেও একই পরিমাণ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন।

এরই জের ধরে চীনা পণ্যের ওপর আরো ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা জানান, চীনের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১০৪ শতাংশ করা হচ্ছে। বুধবার থেকেই এটি কার্যকর হবে। এদিকে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্ল্যাকমেইলিং আচরণ কখনোই মেনে নেবে না বলেও জানিয়েছে দেশটি। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীন মামলাও করেছে। একইভাবে পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও। পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে ইউরোপের ২৭টি দেশ। এভাবে পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের ফলে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।
বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য আমদানি করে তার ওপরও ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। জানা যায়, দেশটিতে বাংলাদেশ বছরে মোট ৮৫০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৭৫০ কোটি ডলারের। যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কারোপের ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ এই শিল্পে ৪০ লাখের বেশি শ্রমজীবী সরাসরি জড়িত। তাই অনেকে আশঙ্কা করছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতি ও সমাজজীবনে। গতকাল প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নতুন করে শুল্কারোপের কারণে অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ক্রয়াদেশ স্থগিত করতে শুরু করেছে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কোনো কোনো ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান মূল্যছাড়ও চাইতে শুরু করেছে। তাঁদের ধারণা, ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপের ঘটনায় মার্কিন বাজারে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রপ্তানি কমে যেতে পারে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি সামলাতে এর মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি করে পণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অতিরিক্ত শুল্কারোপ অন্তত তিন মাস স্থগিত রাখার জন্য চিঠি দিয়েছেন। তবে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্য বহুমুখী করতে হবে এবং বিকল্প বাজার খুঁজে বের করার ওপর আরো জোর দিতে হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ