<p>বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ও নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে সোমপুর বিহার, মহাস্থানগড়, লালবাগ কেল্লা, ষাটগম্বুজ মসজিদ, উয়ারী-বটেশ্বর ইত্যাদি। প্রাচীন সভ্যতার এই নিদর্শনগুলোর মধ্যে অনেক মিল থাকলেও একটি জায়গায় অমিল আছে উয়ারী-বটেশ্বরের। বাকি নিদর্শনগুলোর অবস্থান মাটির ওপরে হলেও উয়ারী-বটেশ্বরের অবস্থান মাটির নিচে। হাজার বছরের পুরনো এক দুর্গনগরী উয়ারী ও বটেশ্বর মূলত দুটি আলাদা গ্রাম। তবে গ্রাম দুটি পাশাপাশি অবস্থিত। তাই উয়ারীর সঙ্গে বটেশ্বরের নামও চলে আসে। ঢাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত নরসিংদী জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে বেলাব ও শিবপুর উপজেলার পাশে গ্রাম দুটির অবস্থান। উয়ারী-বটেশ্বরে প্রাপ্ত ফসিল থেকে গবেষকরা দাবি করেন, এখানে মানববসতি গড়ে ওঠে ঠিক নব্যপ্রস্তর [খ্রিস্টপূর্ব ১০২০০-৮৮০০ অব্দ] যুগের প্রথম দিকেই।</p> <p>উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব স্থানীয়দের নজরে আসে ১৯৩৩ সালের ডিসেম্বরের দিকে। শ্রমিকরা মাটি খননকালে উয়ারী গ্রামে একটি কলসিভর্তি মুদ্রা পান। স্থানীয় স্কুলশিক্ষক হানিফ পাঠান সেখান থেকে ২০-৩০টি মুদ্রা সংগ্রহ করেন। তৎকালীন সাপ্তাহিক ‘মোহাম্মদী’ পত্রিকায় ‘প্রাচীন মুদ্রা প্রাপ্তি’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করেন তিনি। হানিফ পাঠানের পুত্র মুহম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় আগ্রহী হন। ১৯৫৬ সালে স্থানীয় এক কৃষক মাটি খননকালে আরেকটি ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রার ভাণ্ডার পান। সেখানে প্রায় চার হাজারের মতো মুদ্রা ছিল। দীর্ঘদিন গবেষণার কাজ বন্ধ থাকার পর ১৯৯৬ সাল থেকে উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের কাজ শুরু হয় ও ২০০০ সাল থেকে নিয়মিত প্রত্নতাত্ত্বিক খননের কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাচীন দুর্গনগর, বন্দর, রাস্তা, পার্শ্ব রাস্তা, পোড়ামাটির ফলক, স্বল্প মূল্যবান পাথর, কাচের পুঁতি ও চারটি মাটির দুর্গপ্রাচীর। দুর্গপ্রাচীরের ধ্বংসপ্রাপ্ত কিছু অংশ [পাঁচ থেকে সাত ফুট উঁচু] এখনো সেখানে দেখা যায়। নব্যপ্রস্তর যুগের কাঠের তৈরি হাতিয়ার, পাথরের তৈরি দু’ধারী কুঠার, ছুরি, হাতুড়ি-বাটালী, লৌহবল্লম ইত্যাদির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে এখানে। এখানে উচ্চ তাপমাত্রায় লোহা গলানোর প্রযুক্তির প্রচলন ও ব্যবহারের ইঙ্গিত মেলে। তবে তখনকার মানুষরা কোন ধর্মের অনুসারী ছিল সেসবের স্পষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।</p> <p> </p> <p>♦  আল সানি</p>