মিয়ানমার থেকে ইয়াবার রুটেই কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে দেশে ঢুকছে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। ইয়াবার ‘র’ বা রাসায়নিক মিশ্রণ ছাড়া কাঁচামাল মেথা-অ্যামফিটামিনই হচ্ছে ক্রিস্টাল মেথ। শুকিয়ে বরফ খণ্ড বা কাচের দানার মতো করে প্রস্তুত করায় এটিকে বলা হয় আইস। সীমান্তে নজরদারি বাড়ায় ইয়াবা কারবারিরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে সরাসরি এই কাঁচামালের গুঁড়াই বেশি নিয়ে আসছেন দেশে।
‘র আইসের’ রমরমায় ভয়াবহ ক্ষতিতে সেবীরা
- ♦ এক দিনে ঢাকায় দুই নারীসহ ১০ জন গ্রেপ্তার
- ♦ টেকনাফ হয়ে চালান ঢুকছে চট্টগ্রাম ও ঢাকায়
- ♦ পুরনো ইয়াবা কারবারিরাই আইস বিক্রেতা
- ♦ হাউস পার্টি ও সিসাবার আসক্তি ছড়াচ্ছে
এস এম আজাদ

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এখন আইসের নামে বেশি ক্ষতিকর কাঁচামালের সাদা গুঁড়া সেবন শুরু হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ধনী শ্রেণির ইয়াবাসেবীরা ‘র আইস’ নামের নতুন ধরনের মাদক সেবন শুরু করেছে। গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডি, উত্তরাসহ অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাটে আড্ডার নামে হাউস পার্টিতে তরুণ-তরুণীরা এটি সেবন করছে।
কারবারিদের কাছ থেকে ইয়াবার সঙ্গেও উদ্ধার হচ্ছে আইস। সর্বশেষ গত শুক্রবার বনশ্রী, বারিধারা, উত্তরা থেকে ৫০০ গ্রাম আইস ও পাঁচ হাজার ইয়াবাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।
ডিএনসির প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ক্রিস্টাল মেথ বা আইস যেটি এক কথায় বলা যায় সেটি সরাসরি ইয়াবার কাঁচামাল। ইয়াবার চেয়ে শতগুণ বেশি ক্ষতিকর। ইয়াবায় অ্যামফিটামিনের সঙ্গে ক্যাফেইন থাকে। আর ক্রিস্টাল মেথ হচ্ছে সরাসরি অ্যামফিটামিন। এটিকে মেথা-অ্যামফিটামিনও বলা হয়। বিশ্বব্যাপী একই শ্রেণির উচ্চক্ষমতার মাদকের বাজার তৈরির প্রবণতা আছে। এ কারণে ইয়াবাসেবীদের কাছে এই কাঁচামাল পৌঁছে দিচ্ছে কারবারিরা। একই সঙ্গে তারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে চাইছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ক্রিস্টাল মেথ বা মেথা-অ্যামফিটামিন প্রধানত তৈরি হয় থাইল্যান্ডে। পাশাপাশি মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারে তৈরি হচ্ছে। মূলত এই তিন দেশ থেকে এটি ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়। বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে কারবারিরা। সেই সুযোগে বাজার তৈরির চেষ্টা চলছে। ইয়াবাসেবী সার্কেল ও অনলাইনে ডার্কনেটে বিক্রি শুরু হয়েছে কয়েক বছর।
ঢাকার ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় আনা হয়েছে আইস ও ইয়াবার চালান। গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডিসহ অভিজাত এলাকায় উঠতি বয়সের বখাটে যুবক-যুবতিদের কাছে এই মাদক বিক্রি করা হয়। মূল কারবারিদের ধরতে নজরদারি অব্যাহত আছে।
ডিএনসির অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, একটি মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরে একটি সিন্ডিকেটের ১০ জনের সন্ধান মেলে। আভিজাত এলাকায় তাদের বিচরণ।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ঝিগাতলার ৭/এ রোডের ৬২ নম্বর বাড়িতে হাসিব মুয়াম্মার রশিদ নামে এক যুবকের আইস বানানোর ছোট ল্যাবের সন্ধান পায় ডিএনসি। এটিই দেশে ধরা পড়া প্রথম চালান। ওই বছরের ২৭ জুন ভাটারা থেকে এক নাইজেরীয়কে ৫২২ গ্রাম আইসসহ গ্রেপ্তার করে ডিএনসি। এরপর ডিবি, র্যাব, ডিএনসি ঢাকায় আরো ছয়টি চালান ধরেছে। গত ৩ মার্চ কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়ার গোলাম নবীর বাড়ি থেকে তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহকে দুই কেজি আইসসহ গ্রেপ্তার করে ডিএনসি। নবীর আরেক ছেলে আব্দুর রহমান মিয়ানমার থেকে নৌপথে চালানটি আনে, যে এখনো ধরা পড়েনি। গত ২৫ মার্চ টেকনাফের উত্তর বরইতলী থেকে মো. হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে দুই কেজি আইসসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব। গত বছর মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ হত্যাকাণ্ডের দিন ট্রলার থেকে আইস উদ্ধারের গুঞ্জন রয়েছে, সেই ট্রলারেরই চালক হোসেন। তবে কারবারের মূল হোতা রশিদ র্যাবের হাত ফসকে পালায়। গত ৮ মে হ্নীলার নয়াপাড়ায় প্রায় এক কেজি আইসসহ হামিদ নামে এক রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ১৩ এপ্রিল টেকনাফ শীলখালি চেকপোস্টে বিজিবি সদস্যরা ১৬৭ গ্রাম আইসসহ একজনকে গ্রেপ্তার করেন।
ডিএনসির একজন কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, টেকনাফ থেকে কক্সবাজার হয়ে ইয়াবার মতোই চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে অ্যামফিটামিনের পাউডার ও দানা। নজর এড়াতে এবং বাজার তৈরি করতে ইয়াবা কারবারিরা এখন পাউডার বেশি আনছে। প্রথম দিকের চালানগুলো ক্রিস্টাল বা তালমিছরি দানার মতো পাওয়া যায়। এখন ধরা পড়ছে বেশির ভাগ পাউডার। এমন তথ্য পেয়ে সব সংস্থা নজরদারি বাড়িয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বিভিন্নভাবে ও কৌশলে ছোট চালানে মিয়ানমার থেকে আইস আসছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। আমরাও গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করেছি।’
সূত্র জানায়, ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের খুলশী থেকে ১৪০ গ্রাম আইসসহ শফিউল আলম ও ইয়াছিন রানা নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ২ মে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে আতাউল করিম নামে এক ব্যক্তিকে ২০০ গ্রাম আইসসহ গ্রেপ্তার করে ডিএনসি। ৮ মে টেকনাফে উত্তর লম্বরী থেকে ১০০ গ্রাম আইস ও ১৪ হাজার ইয়াবাসহ ওসমান গনি নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ১৬ জুন চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর মইজ্জারটেক থেকে পাঁচ গ্রাম আইসসহ সাগর নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১২ জুলাই নগরীর ফিশারীঘাট থেকে ৯৭৫ গ্রাম আইস গুঁড়োসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ১৪ জুলাই ৮০ গ্রাম গুঁড়ো আইস, ইয়াবাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। ১১ আগস্ট লালদিঘীর পার থেকে ৪৩০ গ্রাম গুঁড়ো আইসসহ নুরুল আবছার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবির দল।
ডিএনসির চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা আগেই তথ্য পেয়ে নজরদারি বাড়িয়েছি। অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে তথ্য বিনিময়ে অভিযানে চালান ধরা পড়ছে।’
চট্টগ্রাম ডিবি পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-উত্তর) সালাম কবির বলেন, ধরা পড়া আইসগুলো মেটাফিটামিনযুক্ত পাউডার। চট্টগ্রামকে রুট হিসেবে ব্যবহারের তথ্য পেয়ে নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

আজ ১৪ এপ্রিল সোমবার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কালের কণ্ঠের সব বিভাগ বন্ধ থাকবে। তাই কাল মঙ্গলবার পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে আমাদের অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া চালু থাকবে। —সম্পাদক
।
আধাপাকা ধান কাটার উৎসব


মডেল মেঘনার আটকাদেশ কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট
- গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না : আইন উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক

মিস আর্থ বাংলাদেশ বিজয়ী-২০২০ মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশ কেন অবৈধ নয়, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল রবিবার এ বিষয়ে এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এই আদেশ দেন। অন্যদিকে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলেছেন আদালত।
মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, কেন তাঁকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং কেন তাঁকে গ্রেপ্তার ও আটকের প্রক্রিয়াটি অসাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না—রুলে হাইকোর্ট এসব বিষয় জানতে চেয়েছেন।
আদালত স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছেন।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ মডেল মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন।
আদেশে বলা হয়, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২(এফ) ধারার জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী ক্ষতিকর কার্য থেকে নিবৃত্ত করার জন্য এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আবশ্যক অনুভূত হওয়ায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(১) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে মেঘনা আলমকে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এই আটকাদেশ স্বাক্ষরের তারিখ থেকে ৩০ দিন কারাগারে আটক রাখার আদেশ প্রদান করা হলো। পরে তাঁকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না : আইন উপদেষ্টা
এদিকে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, মডেল মেঘনা আলমকে রাতে যে প্রক্রিয়ায় বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা সঠিক ছিল না।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বীকার করছি, গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি।

জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জামায়াতের
নিজস্ব প্রতিবেদক

জামায়াত নিয়ে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যকে অসত্য উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক গত ১০ এপ্রিল একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে ‘জামায়াতে ইসলামী মসজিদে মসজিদে মহিলাগুলোকে একত্র করে বেহেশতের টিকিট দেওয়া শুরু করেছে’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তাঁর এই বক্তব্যে সত্যের লেশমাত্রও নেই। তাঁর এ বক্তব্য হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
জয়নুল আবদিন ফারুকের মতো একজন ব্যক্তির মুখে এ ধরনের বক্তব্য মানায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের সমালোচনা করার মতো কোনো কিছু না পেয়ে জয়নুল আবেদিন ফারুক ইসলামের দাওয়াত সম্পর্কে কটাক্ষপূর্ণ হাস্যকর বক্তব্য দিয়ে নিজের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন। এভাবে বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা অত্যন্ত হাস্যকর।’
বিবৃতিতে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘নিজের অবস্থান ও মর্যাদার কথা চিন্তা করেই জামায়াত সম্পর্কে বানোয়াট ও হাস্যকর মিথ্যা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য আমি বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।