লাইন ধরে মাদক কিনছেন মাদকসেবীরা

রেজোয়ান বিশ্বাস
রেজোয়ান বিশ্বাস
শেয়ার
লাইন ধরে মাদক কিনছেন মাদকসেবীরা
মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কিনতে লাইন। ছবি : কালের কণ্ঠ

দূর থেকে দেখে মনে হলো, যেন ত্রাণের জন্য দীর্ঘ লাইন। কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ভুল ভাঙল। ইয়াবা, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য কিনছেন মাদকসেবীরা। গত বুধবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্প এলাকায় গিয়ে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রির এই দৃশ্য চোখে পড়ে।

লাইন ধরে মাদক কিনছেন মাদকসেবীরাসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বর্তমানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ধারাবাহিক বিশেষ অভিযানেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না মাদক ব্যবসা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, রাজধানীতে সহস্রাধিক মাদক স্পট চিহ্নিত করে বিশেষ অভিযান চলছে। রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলায়এমনকি গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে মাদক ব্যবসা।

অভিযোগ রয়েছে, মাদকের টাকা জোগাড়ে কিশোর-তরুণ শিক্ষার্থীরা ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

ডিএনসি বলছে, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পসহ রাজধানীর ছয়টি এলাকায় মাদক ব্যবসা বেশি। অন্য এলাকাগুলো হচ্ছে মহাখালীর কড়াইল বস্তি, পল্লবীর কালশী বিহারি ক্যাম্প, কারওয়ান বাজার রেলগেট বস্তি, খিলগাঁও-বাসাবোর ওহাব কলোনি ও যাত্রাবাড়ী। তরুণরা ইয়াবা, হেরোইন ও ক্রিস্টাল মেথ ( আইস) সেবন করছে বেশি।

বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা হয়ে দেশে মাদক ঢুকছে জানিয়ে ডিএনসি ও পুলিশ বলছে, মাদক পাচারকারীরা বারবার রুট পরিবর্তন করছে।

সীমান্ত এলাকায় বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছে। এখন ট্রেনেও তারা মাদক পাচার করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদকদ্রব্য পাচারের অন্যতম রুট কক্সবাজার এবং মায়ানমারের সীমান্তঘেঁষা টেকনাফ। হেরোইন ও কোকেন দেশে এনে অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করছে তারা।

পুলিশ ও র‌্যাবের তথ্য মতে, বেনাপোলের পুটখালী, শিকারপুর, রঘুনাথপুর, অভ্রভুলাট ও দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত মাদক ঢুকছে দেশে।

আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ী চক্রের অর্ধশতাধিক সদস্য এতে জড়িত।

সর্বশেষ গত শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক লাখ ৬০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে ডিএনসি, যার বর্তমান বাজারমূল্য কোটি টাকা জানিয়ে ডিএনসির ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, টেকনাফ থেকে বিলাসবহুল গাড়িতে সংঘবদ্ধ একটি বড় মাদক ব্যবসায়ী চক্র এই বিপুল ইয়াবা এনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করত। এরা বায়িং হাউস ও আবাসান ব্যবসার মতো বিভিন্ন পেশার আড়ালে মাদক ব্যবসা করছে।

শামীম আহমেদ জানান, হাতিরঝিলে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন নজরুল ইসলাম ওরফে সোহেল রানা, আল-মামুন, মোহাম্মদ ফারুক ওরফে ওমর ফারুক ও ফারুকের স্ত্রী তানিয়া।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে ডিএনসি জানায়, আসন্ন ঈদ সামনে রেখে তারা বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাচারের উদ্যোগ নিয়েছে। মাদক ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে টেকনাফের একটি রিসোর্ট তারা ব্যবহার করছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মাদকদ্রব্যসংক্রান্ত মামলা হয়েছে আট হাজার ১৮টি। জানুয়ারি মাসে চার হাজার ৩৮৬ এবং ফেব্রুয়ারিতে তিন হাজার ৬৩২টি মামলা হয়। এর মধ্যে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে এক হাজার ৫৭টি।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রেপ্তার মোট আসামির মধ্যে মাদকদ্রব্যসংক্রান্ত মামলার আসামি বেশি।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, ইয়াবার পর কোকেন ও হেরোইন এখন দেশের তরুণ ও যুব সমাজের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্প : সরেজমিনে মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পের ৭ নম্বর ব্লকের সামনেই লম্বা লাইন ধরে মাদক কিনতে দাঁড়িয়ে আছে ১৫-২০ জন। পাশের ১, ২ ও ৩ নম্বর ব্লকে গিয়ে দেখা যায়, পুরোটা জুড়ে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি হচ্ছে। এ সময় শীর্ষ মাদক বিক্রেতা সাল্লু ও ইসতিয়াকের নিয়ন্ত্রণে অন্তত ২৫ জন খুচরা মাদক বিক্রেতা এই এলাকায় ঘুরে ঘুরে মাদক বিক্রি করছিল। তারা বিভিন্ন সাংকেতিক ভাষায় গ্রাহক ডাকছিল।

নাম প্রকাশ না করে এ নিয়ে ক্যাম্পের এক মাদক ব্যবসায়ী কালের কণ্ঠকে বলেন, মাদকসেবীরা সাংকেতিক শব্দ শুনলেই বুঝতে পারে, কার কাছে কী আছে। ক্রেতাদের বেশির ভাগই নিয়মিত জানিয়ে ওই ব্যক্তি দাবি করেন, তাঁরা প্রাশাসনকে ম্যানেজ করেই ক্যাম্পে মাদক বিক্রি করেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য, বর্তমানে মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পের ১৫টি চক্রের শতাধিক শীর্ষ পর্যায়ের মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছে আরজু, হৃদয় শাহ, বাচা, টুনটুন, পাঁচু, জামশেদ বুনডিয়া, জোসিম, আরমান, মুন্না, রাশেদ ওরফে মুকতার ও তার ভাই হামজা, পিচ্চি রাজা, তার শ্বশুর খুরশিদ, আদিল, বড় রাজা ও তার ভাই শাহজাদা। এই চক্রের অন্যতম সদস্য দিলদার চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা এনে ক্যাম্পে বিক্রি করেন। আরেক বড় মাদক ব্যবসায়ী চুয়া সেলিম বর্তমানে কারাগারে থাকলেও তাঁর পরিবারের সদস্যরা মাদক বিক্রি করছে। এর বাইরে নতুন একটি চক্রে রয়েছেন সামির ওরফে নেটা সামির ও তাঁর মামা কামরান। তাঁরা দিলদার নামের এক পাইকারি সরবরাহকারীর কাছ থেকে মাদক এনে বিক্রি করেন। কারাগারে থাকা পারভেজের সহযোগী আলমগীর এখন নতুন করে ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা শুরু করেছেন।

আকবর নামে ক্যাম্পের এক বাসিন্দা বলেন, মাদক বিক্রির সময় ক্যাম্পের চারপাশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর টহল থাকে। অজানা কারণে মাদক বিক্রির সময় তাদের গ্রেপ্তার করে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অনেক সোর্সও মাদক ব্যবসায় জড়িত।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, শুধু নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মাদক নির্মূল করা কঠিন। সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে এতে সুফল পাওয়া যেতে পারে।

ডিএনসির পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ বলেন, ইয়াবার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে কোকেন-হেরোইনের চালান দেশে ঢুকছে। তবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।

মাদকসেবীরা যা বলছেন : রাজধানীতে একাধিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন হেরোইন ও কোকেনে আসক্ত অন্তত ২১ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা পারিবারিক নানা অশান্তির পাশাপাশি বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে, মাদক ব্যবসায়ীদের দ্বারা আসক্ত হয়ে পড়েন। এর মধ্যে অনেক তরুণীও রয়েছেন।

জানতে চাইলে মানস-এর প্রতিষ্ঠাতা ডা. অরূপ রতন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, তরুণসমাজকে শিক্ষায় মনোযোগী করতে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যথারীতি মাদক নির্মূলে গতানুগতিক কাজ পরিচালিত হলেও একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে না। ফলে মাদক ব্যবসায়ীরা বা মাফিয়া চক্র এখন সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে।

গ্রেপ্তার মাদক ব্যবসায়ীদের ভাষ্য : গত ১২ মার্চ রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকা থেকে এক হাজার ৬৬৮ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার শফিকুল ইসলাম পুলিশকে জানান, সীমান্তপথে বিভিন্ন পরিবহনে মাদক এনে তাঁরা ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় বিক্রি করতেন। একই দিন গ্রেপ্তার রাজন নামের একজনকে পিস্তলের গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ জানতে পারে, জামিনে থেকে রাজন কারওয়ান বাজারসহ আশপাশের এলাকায় মাদক বিক্রি করছিলেন।

সম্প্রতি পুরান ঢাকার বংশাল এলাকা থেকে এক হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা এবং ইয়াবা পরিবহনে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলসহ গ্রেপ্তার হওয়া মিলন হোসেন জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায় জড়িত। মহাখালী এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ইব্রাহিম ওরফে পলাশ ও সোহেলের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে নিজ গ্রামের বাড়ির এলাকা মাদারীপুরে বেশি দামে বিক্রি করতেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তাঁদের সহযোগী রয়েছে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০-৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কালের কণ্ঠ বন্ধ থাকবে। তাই ৩১ মার্চ এবং ১-২ এপ্রিল পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। পবিত্র ঈদুল ফিতর ১ এপ্রিল হলে ৩ এপ্রিলও পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে ঈদের ছুটিতে কালের কণ্ঠ অনলাইন চালু থাকবে।

সম্পাদক

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

শেয়ার
শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা গতকাল বিজয়নগরে শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে বসে পড়েন।ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই উসকানি দেন।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের মনে কী আছে (হোয়াটস অন বাংলাদেশস আর্মি চিফস মাইন্ড?) শিরোনামে ইন্ডিয়া টুডেতে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত সেনাপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বেন কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা বিবিসি ও রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একজন রক্ষণশীল ও পেশাদার কর্মকর্তা, যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তাঁর সহকর্মীরা জানান, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে সামরিক শাসন কার্যকর নয়। ইতিহাস, বিশেষ করে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কঠোর দমন-পীড়ন না চালাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল এবং তা কার্যকর হয়েছিল।

তবে ওয়াকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি গুলি চালানোর অনুমতি দেননি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর উপদেষ্টাদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন।

সম্প্রতি কিছু ব্লগার ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভারতের প্রতি অনুগত এবং তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তবে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি কোনো গোষ্ঠীর অনুগত নন, বরং তিনি পেশাদার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুকরণ করে রাজনীতির বাইরে থাকতে চান।

এদিকে সেনাপ্রধান চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমর্থন দিতে পারেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীর।

আওয়ামী লীগপন্থী এই আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন; আর এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতে পারেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দ্রুত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবেন। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে পারবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে।

তবে তানিয়া আমীরের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।

এক সেনা কর্মকর্তা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, তিনি (সেনাপ্রধান) সেনা ও বাইরের সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চান। তিনি সেনা কর্মকর্তা ও অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা না করে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ তিনি একটি ঐকমত্য চান।

অন্যদিকে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, যাঁর অধীনে সেনাপ্রধান আগে চাকরি করেছেন, তিনি বলেন, যদি মনে হয় তাঁকে (সেনাপ্রধান) সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাহলে তিনি কঠোর ভূমিকা পালন করবেন।

ইন্ডিয়া টুডের সংবাদ বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি আফ্রিকা সফর শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যা আমি করতে চাই না। এতে বোঝা যায়, তিনি কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হতে পারেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তাঁর বাবা ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কিনেছিলেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের জন্য।

মন্তব্য

রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। রমজান এলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। বিশেষ করে রোজার ভোগ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন চিত্রই দেখে আসছে দেশবাসী।

তবে এবার ভিন্ন চিত্র। এবার রোজার ভোগ্যপণ্যের বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল। ভোক্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার রজমানে পণ্যের দাম সবচেয়ে কম। বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যই ক্রেতাসাধারণের হাতের নাগালে রয়েছে।

রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এবার রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল তা এখন ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ বছর রমজান সামনে রেখে ট্যাক্স-ভ্যাট কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি বেড়েছে, যার সুফল মিলছে বাজারে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। এতে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, দেশি রসুন, আলু ও আদাসহ কয়েকটি পণ্য। সবজি ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ছিল। 

এবার রমজানে পেঁয়াজ ও আলু গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বেশির সবজি গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কম দামে বিক্রি হয়েছে। রমজানে ইফতারসামগ্রীর বাজারেও তেমন বাড়াবাড়ি নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত তদারকি জোরদার করায় সবজির বাজার সিন্ডিকেট কাঁচা মরিচ ও বেগুনের দাম বাড়াতে পারেনি।

গত রমজানে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয় মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন ঈদ ঘিরে মুরগির দাম বাড়লেও রোজার শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় দরেই এবার মুরগি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, রোজার আগে আগে যা ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দাম কমে চিনি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে গম, ডাল, মুরগি, ডিম, মাছ, সয়াবিন, পামঅয়েল, চিনি, লবণ, আলু, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় এবার রমজানে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয়।

এদিকে এবার রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে আছে। সংস্থাগুলো হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মনিটরিং টিম। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও করা হচ্ছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ