<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দীর্ঘদিন ধরেই তুরস্কের সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের ভূমিকা ছিল দৃঢ়। ফলে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরদোয়ানবিরোধী প্রচারের চেয়ে তাঁর দলের মাঠের রাজনীতি বেশি শক্তিশালী। এটি সত্যি, এরদোয়ানকে এবারের নির্বাচনের মতো কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি। এর পেছনের কারণ সব বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির এরদোয়ানবিরোধী জোট। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তুরস্কের সর্বশেষ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ ছিল রাষ্ট্রপতির শাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এরদোয়ান তাঁদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছেন। ফলে বিরোধী জোটের লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রপতি পদে জয় এবং সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের মাধ্যমে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা। অথবা এমন কোনো ব্যবস্থা প্রণয়ন যেখানে রাষ্ট্রপতির নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কমানো যায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন প্রেক্ষাপটে এরদোয়ান তাঁর নির্বাচনী প্রচার সাজিয়েছিলেন প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয়তাবাদী প্রচারের মাধ্যমে। নির্বাচন সামনে রেখে একাট্টা বিরোধীদের ঠেকাতে এটিই ছিল তাঁর প্রধান রাজনৈতিক কৌশল। নির্বাচনের দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে ড্রোনবাহী রণতরী </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডিসিজে আনাদোলু</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধজাহাজ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এবং গাড়ি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টগ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> উদ্বোধন ছিল এরদোয়ানের নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল। এর মাধ্যমে তিনি তুরস্কের জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, নিজস্ব প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা তাঁর ইশতেহার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এরদোয়ানের প্রচারণায় প্রাধান্য পেয়েছে তুরস্কের বিরোধী দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (এইচডিপি) সঙ্গে সীমান্তবর্তী বিচ্ছিন্নতাবাদী পিকেকে এবং সিরিয়াভিত্তিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী ওয়াইপিজের সম্পর্কও। বিরোধী জোট থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে জনগণকে তিনি বলেছেন, বিরোধী দল ক্ষমতায় এলে তুরস্কের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারবে না। এরদোয়ান তাঁর প্রচারণায় দাবি করেছেন, বিরোধী দল ক্ষমতায় গেলে তুরস্কের মূল ভূখণ্ড থেকে দক্ষিণ-পূর্ব অংশ বিচ্ছিন্ন হবে। এভাবেই জাতীয়তাবাদকে অগ্রাধিকার দিয়ে এরদোয়ান তাঁর প্রচারণা চালিয়েছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এবারের নির্বাচনে পশ্চিমারা খোলাখুলিই বিরোধী জোটকে সমর্থন দিয়েছেন। এটি একটি ঐতিহাসিক বিষয় হয়ে থাকবে। পশ্চিমাদের সঙ্গে এরদোয়ান সরকারের বিরোধ চলে আসছিল। এ পর্যন্ত সর্বশেষ নজির রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ ও কানাডার মতো দেশের সঙ্গে এরদোয়ানের মতভিন্নতা। এর আগে নাগার্নো-কারাবাখ ও সিরিয়ায় ১০২ কিলোমিটার </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেফ জোন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ঘোষণার সিদ্ধান্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক বিষয়েও তুরস্কের সঙ্গে পশ্চিমাদের ধারাবাহিক বিরোধ ছিল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে লিবিয়ায় বর্তমানে জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারকে তুরস্কের বায়রাখতার ড্রোনসহ সামরিক সাহায্যের বিষয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে এরদোয়ানের বিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিমাদের উদ্বেগ আছে মধ্য এশিয়া ও আফ্রিকায় তুরস্কের নিজস্ব নীতির বিষয়ে। মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষত ইরান, সংযুক্ত আরব-আমিরাত এবং কাতারের সঙ্গে কূটনীতিতে অভিন্ন নীতি অনুসরণ না করায় পশ্চিমাদের বিরাগভাজন হয়েছেন এরদোয়ান। এর ফলে বিগত নির্বাচনগুলোতে সরাসরি বিরোধিতা না করলেও এবারের নির্বাচনে এরদোয়ানের বিরোধিতায় কোনো রাখঢাক করেনি পশ্চিমারা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনায় এরদোয়ানের পুনর্নির্বাচিত হওয়া পশ্চিমাদের ওপর তেমন প্রভাব ফেলেনি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই ইউক্রেনকে আধুনিক অস্ত্র সহায়তা এবং ইউক্রেনীয় খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক বিপণন নিশ্চিতে চুক্তির জন্য এরদোয়ান ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পশ্চিমাদের কাছে নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তুরস্কের রাজনীতিতে পশ্চিমাদের প্রভাব ঐতিহাসিকভাবেই। ভোটের হিসেবে তুরস্কের ৪৭-৪৮ শতাংশ মানুষ এরদোয়ানের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। সংখ্যার হিসাবে যা প্রায় দুই কোটি ৪০ লাখ। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের বরাবরের মতোই পশ্চিমাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তুরস্ক নিজেই ন্যাটো সদস্য। বিভিন্ন সময় তুরস্ক ন্যাটো জোটের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ায় দেশটি এই সামরিক জোট থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাইবে না। ভবিষ্যতে কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলে রাশিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে ন্যাটো জোট তুরস্কের ট্রাম্প কার্ড।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে তুরস্কের অর্থনীতির ৪০ থেকে ৫০ শতাংশই পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে জড়িত। আমদানি-রপ্তানির জন্য তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপরই নির্ভরশীল। ফলে শিগগিরই এরদোয়ান পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পূর্ণ বৈরী সম্পর্ক করবেন এমন ধারণা করা কঠিন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে তুরস্কের নাগরিকদের অর্ধেক পশ্চিমা সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত। তারা পশ্চিমা উদারনৈতিক সংস্কৃতির আলোকেই নিজস্ব ভবিষ্যৎ দেখতে চায়। পশ্চিমা দেশগুলোর অনুরূপ ভোগবিলাসী ও গণতন্ত্রপরায়ণ জীবনব্যবস্থার জন্য তুরস্কে পশ্চিমা প্রভাব চলতেই থাকবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তুরস্কের বিরোধী দলগুলো এরই মধ্যে ফলাফল মেনে নিয়েছে। প্রধান বিরোধী প্রার্থী কিরিচদারগলু ফলাফল মেনে নিয়ে ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তুরস্কের ভোটপ্রক্রিয়া স্পষ্ট। এর ফলে নির্বাচনে কারচুপির সুযোগ নেই। গত  ২৫ বছরে যত ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে, সবই ছিল স্বচ্ছ। ভোট কারচুপির অভিযোগ তুরস্কে বিরল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এরদোয়ান দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতায় আছেন। তাঁর বিরোধীরাও দীর্ঘদিন নিজেদের রাজনৈতিক সংগ্রাম পরিচালনা করে আসছেন। তাই ঐকমত্যের বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এরদোয়ানের সামনে চ্যালেঞ্জটি অর্থনৈতিক। তাঁকে এটি দৃঢ়ভাবে সামাল দিতে হবে। অনেক বিশ্লেষকই আগাম নির্বাচনের বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। তবে সেটি সময়সাপেক্ষ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আট মাস পরে তুরস্কের বড় শহরগুলোতে স্থানীয় নির্বাচন। আপাতত বিরোধীরা ওই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তুরস্কের বেশির ভাগ বড় শহরে বিরোধীরা ক্ষমতায়। সুতরাং তুরস্কে গণতন্ত্রহীনতার যে ঢালাও অভিযোগ করা হয়, সেটির সত্যতা ততটা নেই। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে এরদোয়ান এখনই বিরোধীদের কোনো পদক্ষেপের সম্মুখীন হবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি এখন এরদোয়ানের চ্যালেঞ্জ। তাঁকে দ্রুতই একটি কার্যকর অর্থনৈতিক নীতি নিতে হবে। বিরোধীদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ সিরিয়া, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শরণার্থীদের নিয়ে। বিরোধীরা, এমনকি সাধারণ জনগণও শরণার্থীদের মেনে নিতে পারছে না। এটি বর্ণবাদে পরিণত হয়েছে। ফলে এটি এরদোয়ানের বিরুদ্ধে নতুন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের উদ্ভব ঘটাতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এরদোয়ান। এখন তাঁকে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মো. নাজমুল ইসলাম : তুরস্কের আংকারা ইলদিমির বেয়েজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তুর্কিয়ে, এশিয়া ও ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজের</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রধান সহকারী অধ্যাপক। </span></span></span></span></p> <p> </p>