<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে সরকারি ও বেসরকারি মূল্য শুল্কায়নে সরকারের দ্বৈত নীতির কারণে বেসরকারি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই খাতের উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে একই নীতিতে মূল্য শুল্কায়নের দাবি জানিয়ে আসছেন। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি দ্বৈত নীতির বৈষম্য নিরসনে জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) খালিদ আহম্মেদকে আহ্বায়ক করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জ্বালানি বিভাগ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কমিটিতে সদস্যসচিব হিসেবে রয়েছেন জ্বালানি বিভাগের উপসচিব (অপারেশন-১)। এ ছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা), জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব (অপারেশন-১), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট উইংয়ের একজন প্রতিনিধি, কাস্টম উইংয়ের একজন প্রতিনিধি, ক্যাবের একজন প্রতিনিধি, সরকারের মনোনীত একজন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) ও পাঁচটি বেসরকারি রিফাইনারির পাঁচজন প্রতিনিধি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গঠিত কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, ট্যারিফ ও ইনভয়েস ভ্যালুতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি শুল্কায়নে সুবিধা বা অসুবিধা ও চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনা করা এবং বিপিসি ও বেসরকারি প্লান্টের আমদানীকৃত জ্বালানি তেল শুল্কায়নে সৃষ্ট জটিলতা বা বৈষম্য নিরসনে মতামত বা সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কমিটিকে উল্লিখিত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে মতামত বা সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানি বিভাগে দাখিল করতে বলা হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা গেছে, এই কমিটির মূল্যায়ন ও সুপারিশের ভিত্তিতেই পরবর্তী সময়ে দ্বৈত নীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এই কমিটির মাধ্যমে শিগগির দ্বৈত নীতির বৈষম্য দূর হবে বলে আশা করছেন বেসরকারি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিকারকরা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূল্য শুল্কায়নে দ্বৈত নীতির কারণে বেসরকারি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিকারকদের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়তি ভ্যাট-ট্যাক্সও দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বিপুল বিনিয়োগে গড়ে ওঠা খাতটিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিপিসি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে ট্যারিফ ভ্যালুতে শুল্ক মূল্যায়ন করে যে পরিমাণ শুল্ক দিচ্ছে, বেসরকারি পর্যায়ে তার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি শুল্ক দিতে হচ্ছে। ফলে তাঁরা ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে বৈষম্য দূর করে সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। একই দেশে সরকারি ও বেসরকারি শুল্ক মূল্যায়ন পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে না। এতে দেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমানে বেসরকারি খাতে পাঁচটি রিফাইনারি রয়েছে। সেগুলো হলো সুপার পেট্রোকেমিক্যাল লিমিটেড, বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কম্পানি লিমিটেড, পারটেক্স পেট্রো লিমিটেড, পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারি লিমিটেড ও অ্যাকোয়া রিফাইনারি লিমিটেড।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানতে চাইলে পারটেক্স গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারি ও বেসরকারির মূল্য শুল্কায়নে দ্বৈত নীতি থাকার কারণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিকারকরা দুই দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অপরিশোধিত তেল আমদানির সময় ইনভয়েস ভ্যালুতে শুল্ক মূল্যায়ন করার কারণে আমাদের শুল্ক বেশি দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে আমরা যখন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করে বিপিসির কাছে বিক্রি করি, তখন তারা আমাদের ট্যারিফ ভ্যালুতে প্রাইসিং করে টাকা ফেরত দেয়। এতে আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এই মূল্য শুল্কায়নে দুই নীতির কারণে পুরো সক্ষমতায় আমরা উৎপাদনে যেতে সাহস পাচ্ছি না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার রিফাইনারিতেই দৈনিক ১২ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল উৎপাদন করছি। কিন্তু উৎপাদন সক্ষমতা আরো বেশি। বাড়তি শুল্কের কারণে উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। বেসরকারি রিফাইনারিগুলো যত বেশি পরিশোধন করবে, সরকারের তত লাভ। কারণ বেসরকারি রিফাইনারি থেকে বিশ্ববাজারের চেয়ে ১ শতাংশ কম মূল্যে পরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনতে পারছে সরকার। এখানে সরকারকে ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে না, কারণ রিফাইনারিগুলো ডলারে নয়, টাকায় তেল দিচ্ছে বিপিসিকে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুবীর কুমার ঘোষ আরো বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুল্কনীতির বৈষম্য যখন থাকবে না, তখন বেসরকারি রিফাইনারিগুলো অকটেনের চাহিদার পুরোটাই দেশে উৎপাদন করতে পারবে। এতে অকটেন আমদানির প্রয়োজন হবে না, সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক দেশে একই পণ্যের ক্ষেত্রে দ্বৈত নীতি থাকা ঠিক নয়। দ্রুত এই নীতি পরিবর্তন করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে এক নীতি বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তাঁরা। সরকারি ও বেসরকারি মূল্য শুল্কায়ন একই পদ্ধতিতে হতে হবে। হয় ট্যারিফ ভ্যালুতে শুল্ক মূল্যায়ন করে প্রাইসিং ফর্মুলা নির্ধারণ করতে হবে, না হয় ইনভয়েস ভ্যালুতে শুল্ক মূল্যায়ন করে প্রাইসিং ফর্মুলা নির্ধারণ করতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা গেছে, বিপিসি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে খালাস করার সময় ট্যারিফ ভ্যালুতে শুল্কায়ন করে। অন্যদিকে একই এইচএস কোডে যখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পণ্য আমদানি করে তাদের শুল্কায়ন করা হয় ইনভয়েস ভ্যালুতে। এর সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পণ্য খালাসের অনুমতি দেয় কাস্টম হাউস। পণ্যের ইনভয়েস ভ্যালুর ক্ষেত্রে পণ্যের ওপর আরোপিত কাস্টমস ডিউটি সঠিকভাবে নির্ধারণ না করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে বিপিসি। এর ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পরবর্তী সময়ে বিপিসিকে অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধের জন্য ডিমান্ড নোট করে থাকে, যা বিপিসি তার প্রাইসিং ফর্মুলায় অন্তর্ভুক্ত রাখে না। এখানে সরকারের সঙ্গে এনবিআরের দ্বৈত নীতি পরিলক্ষিত হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে অবশ্যই সরকারকে মূল্য শুল্কায়নে দ্বৈত নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সবার জন্য একই নীতিতে মূল্য শুল্কায়ন করতে হবে। তাহলেই অর্থসংকট কেটে যাবে এবং জ্বালানি তেল পাচার রোধ করাও সম্ভব হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক দেশে একই পণ্যের ক্ষেত্রে দ্বৈত নীতি থাকা ঠিক নয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার কোন চিন্তা-ভাবনা থেকে এমন নীতি করেছে এটি ভালো করে দেখা দরকার।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতি বছরের মার্চ থেকে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ শুরু করেছে সরকার। সে হিসাবে প্রতি মাসে নতুন দাম ঘোষণা করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা, অকটেন ১২৫ টাকা ও পেট্রলের দাম ১২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭২ লাখ মেট্রিক টন। মোট চাহিদার প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল ব্যবহার করা হয়। বাকি চাহিদা পূরণ করা হয় পেট্রল, অকটেন, কেরোসিন, জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেল দিয়ে।</span></span></span></span></p>