ঢাকা, সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫
১০ চৈত্র ১৪৩১, ২৩ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫
১০ চৈত্র ১৪৩১, ২৩ রমজান ১৪৪৬
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়নি বলে ঘোষণাপত্র পাঠ স্থগিত

হাসান শিপলু
হাসান শিপলু
শেয়ার
রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়নি বলে ঘোষণাপত্র পাঠ স্থগিত

বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য না হওয়ায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেয়নি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া এই ধরনের ঘোষণার বিষয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহল থেকেও আপত্তি ছিল। ফলে কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে বৈষম্যবিরোধীরা।

গত সোমবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়।

এর ফলে আপাতত বড় ধরনের জটিলতা কাটানো গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে সরকারের উদ্যোগেও রাজনৈতিক ঐকমত্য না হলে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াতে পারে, তা-ও ভাবাচ্ছে বিভিন্ন দল ও মহলকে।  

বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ মহলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের পূর্বাপর ঘটনা জানা গেছে। গত সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।

এসব সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্র দেওয়ার বিষয়ে বিএনপি, জামায়াতসহ নিবন্ধিত কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। এর মধ্যে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দলেরই ঘোষণাপত্রের কয়েকটি বিষয়বস্তুর সঙ্গে ঐকমত্য হয়নি। তবে জামায়াত ও এবি পার্টি ছাত্রদের কর্মসূচি ও ঘোষণার সঙ্গে একমত ছিল বলে সূত্রগুলো দাবি করছে।

এ বিষয়ে কোনো পক্ষই নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

তবে কয়েকটি পক্ষের সূত্র নিশ্চিত করে ঘটনার বর্ণনা দেয়। তাতে জানা যায়, রাজনৈতিক ঐকমত্য না হওয়ায় সরকারসহ গুরুত্বপূর্ণ মহল ছাত্রনেতাদের ঘোষণাপত্র দেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানালে তাতে সম্মত হন তাঁরা।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সময় ও পরিস্থিতিই সব উত্তর দিয়ে দেবে।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, শিক্ষার্থীরা একটি ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল।

প্রধান উপদেষ্টা সেটিকে সর্বজনীন করার উদ্যোগ নিয়ে জাতিকে একটি বিভাজন থেকে রক্ষা করেছেন। তিনি আরো বলেন, আগামী দিনের নতুন বাংলাদেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই। এই পরিস্থিতিতে যেকোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত দেশকে পেছনে নিয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র জানায়, মূলত বিএনপির বিরোধিতার কারণে ছাত্ররা এই উদ্যোগ থেকে পেছনে সরে। কারণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের এই উদ্যোগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রথম থেকেই বিএনপিতে সন্দেহ, সংশয় ও উদ্বেগ ছিল। বিদ্যমান সরকার কাঠামো থেকে কেন তাঁরা এই উদ্যোগ নিচ্ছেন তা নিয়ে বিএনপির কাছে ভিন্ন ধরনের বার্তা ছিল।

দলটির একাধিক সূত্র জানায়, গত রবিবার বিকেলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঘোষণাপত্রের বিষয়ে তাঁদের আপত্তির কথা অবহিত করেন। সাক্ষাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশ কাটিয়ে এককভাবে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দিলে দেশে যে বিশৃঙ্খলা-সংকট তৈরি হবে, সেই শঙ্কার কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান মির্জা ফখরুল। মূলত তার পরই দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। ওই রাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গুলশানের বাসায় যান অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টা, যাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁরাও বিএনপি মহাসচিবের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাননি। এ ছাড়া সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টাও তাঁর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন।

জানা গেছে, বিএনপির পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আরো যে কয়েকটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তারাও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিএনপির মনোভাব জানতে পেরে ছাত্রদের উদ্যোগে ওই দলগুলোও সাড়া দেয়নি। এ ছাড়া ডান ও বামপন্থী গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দলের সঙ্গে ছাত্র নেতৃত্ব যোগাযোগ করেনি বলেও জানা গেছে। ফলে দলগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। 

একাধিক সূত্র জানায়, জামায়াত ছাড়া বেশির ভাগ দলের সম্মতি নেইএমন সংবাদ সরকার ও গুরুত্বপূর্ণ মহলের কাছে পৌঁছলে তারাও বিষয়টি নিয়ে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এক পর্যায়ে সোমবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা বৈঠক করে গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

বিএনপিসহ তিনটি দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের কয়েকটি বিষয় নিয়ে তাঁদের আপত্তি আছে। বিশেষ করে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের বিষয়টি। আরো কয়েকটি স্পর্শকাতর বিষয় ছিল, যা গুরুত্বপূর্ণ মহলের চোখ এড়ায়নি। এ বিষয়গুলো দেশকে সংকটে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। এর বাইরে কয়েকটি দল গত রবিবার ও সোমবার বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের বিরোধিতা করে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়। 

 

কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ছিল : বিএনপির স্থায়ী কমিটি

একটি দলের ইন্ধনে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশ কাটিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়ার মাধ্যমে দেশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। নির্বাচনকে বিলম্বিত করে তারা চলমান শাসনক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বলে মনে করছে দলটি।

গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলটির নেতারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশ কাটিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত  নেওয়া হলে তা অরাজকতা তৈরি করবে।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাত্রনেতাদের জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ এবং এরপর তাঁর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের সাক্ষাতের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

বৈঠকে নেতারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্ল্যাটফরমের এই নতুন উদ্যোগের সঙ্গে জনগণ, রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কেউ যুক্ত নয়। ছাত্ররা তাঁদের নিজেদের মতো করে বাংলাদেশের একটি চরিত্র দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। তাঁরা যে সংবিধান বাতিল করে দেওয়ার কথা বলছেন, সেই সংবিধানের আলোকেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে এবং রাষ্ট্রের একটা কাঠামোগত অবস্থান আছে। বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করে দেওয়া হলে দেশে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং সেই পরিস্থিতি জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এবং জনগণের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করে দিতে পারে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেস্থায়ী কমিটির বৈঠকে কয়েকজন নেতা সেই প্রশ্নও তোলেন। নেতাদের কেউ ছাত্র আন্দোলনের এসব উদ্যোগের দৃশ্যমান কোনো পৃষ্ঠপোষক খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জামায়াতের ইন্ধন আছে বলে মনে করেন নেতারা।

বৈঠকে দু-একজন অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাঁদের কাছে ষড়যন্ত্র বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কারণ বিএনপিকে টার্গেট করেই পুরো নকশা তৈরি করা হয়েছে।

বৈঠকে বিএনপির এক নেতা বলেন, ছাত্রদের কর্মসূচিকে ঘিরে সারা দেশ থেকে যেভাবে গাড়ি বোঝাই করে লোকজন আনা হচ্ছে, তাঁদের অর্থের উৎস কী? তাঁদের অনেকে এখনো ছাত্র, অন্যরা কয়েক দিন আগেও ছাত্র ছিলেন। সে কারণে তাঁদের কার্যক্রম জনমানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অন্য একজন নেতা বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কেউ ছাত্রলীগ, কেউ ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

বিএনপির কারো কারো অভিমত, গণ-আন্দোলন-বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দিতে হয় আন্দোলনের আগেই। জুলাই-আগস্টের যে গণ-আন্দোলন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনের আগেই সেটার ঘোষণাপত্র তুলে ধরলে জনগণ তাদের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেত। কারণ আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল কোটাবিরোধী ইস্যুতে। মানুষ তাদের সেই ঘোষণাপত্র গ্রহণ করবে কি করবে না, সে ব্যাপারে তারা তখন সিদ্ধান্ত নিত। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের প্রায় পাঁচ মাস পর ছাত্ররা যে বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসছে, সেটা সংকট ছাড়া অন্য কিছু তৈরি করবে না। যে বিষয়গুলো বলা হচ্ছে, সেটা বাস্তবসম্মত নয়।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

শেয়ার
পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
গাজীপুরের টঙ্গীতে গতকাল সকালে বেতন-বোনাসের দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করে কারখানার সামনে নিয়ে যান। তখন মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য
মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ

পুনর্বিবেচনার আবেদন পদোন্নতিবঞ্চিত শতাধিক কর্মকর্তার

উবায়দুল্লাহ বাদল
উবায়দুল্লাহ বাদল
শেয়ার
পুনর্বিবেচনার আবেদন পদোন্নতিবঞ্চিত শতাধিক কর্মকর্তার

গত বৃহস্পতিবার রাতে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন প্রশাসনের ১৯৬ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিসিএস ২৪তম ব্যাচের পদোন্নতিযোগ্য ৩২০ জনের মধ্যে পদোন্নতি পেয়েছেন ১৩৭ জন। বাদ পড়েছেন ১৮৩ জন। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্তত ১০০ জনই রবিবার সকালে দল বেঁধে মন্ত্রিপরিষদসচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে দেখা করে পদোন্নতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন দিয়েছেন।

এ সময় উভয় সচিবই বঞ্চিতদের দাবি মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বলে বঞ্চিতদের অনেকে কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রশাসনে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পান ১৯৬ জন উপসচিব। এর মধ্যে স্বাস্থ্য, খাদ্য ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টার একান্ত সচিবসহ (পিএস) ২১ জন জেলা প্রশাসকও (ডিসি) রয়েছেন।

এ ছাড়া পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকায় সালমান এফ রহমানের পিএস ও শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী সাবেক কয়েকজন ডিসিও রয়েছেন। প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পদোন্নতি পাওয়া শেখ হাসিনা আমলের প্রভাবশালীদের মধ্যে রয়েছেন সালমান এফ রহমানের পিএস আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ; দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থাকা এ কে এম মনিরুজ্জামান, সাবেক ডিসি সাহেলা আক্তার, শ্রাবস্তী রায় ও অলিউর রহমান প্রমুখ। এ ছাড়া পদোন্নতি পেয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা পিএস আবুল হাসান, খাদ্য উপদেষ্টার পিএস মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পিএস ড. মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম। এ ছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক ও এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের পিএস কামরুল হাসান ও আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর পিএস আমিনুর রহমানও।
তবে আগের সরকারের মন্ত্রীদের পিএস ও ডিসিসহ এই ব্যাচের অন্তত ১৮৩ জন কর্মকর্তা এবার পদোন্নতি পাননি।

পদোন্নতির পর প্রথম কর্মদিবস রবিবার সকাল ৯টায় বঞ্চিত কর্মকর্তারা দল বেঁধে প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পরে মন্ত্রিপরিষদসচিবের কাছে যান। তাঁরা এসএসবির প্রভাবশালী দুই কর্মকর্তার কাছেই যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি তাঁরা প্রত্যেকে আলাদাভাবে পদোন্নতি পুনর্বিবেচনার আবেদন দেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।

একাধিক বঞ্চিত কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, দুই স্যারই আমাদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেছেন।

মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেছেন, তিনিও একসময় বছরের পর বছর বঞ্চিত ছিলেন। বঞ্চনার বেদনা তিনি বোঝেন। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়কে জানাবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৪ ব্যাচের একজন বঞ্চিত কর্মকর্তা জানান, যেখানে অন্যান্য ব্যাচের যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার হার কমবেশি ৭০ শতাংশ, অথচ আমাদের ব্যাচের এই হার মাত্র ৪২.৮১ শতাংশ। সালমান এফ রহমানের পিএস যদি পদোন্নতি পান, তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পিএস কি দাবি করতে পারেন না? সে ক্ষেত্রে আমাদের অপরাধটা কী? যে বৈষম্যের অবসানের জন্য জুলাই বিপ্লব হলো, এ সরকারের আমলে তা যদি আরো প্রকট হয়, তাহলে তা হবে চরম হতাশার। আমরা শুধু ন্যায়বিচার চাই। আমরা বলেছি যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নেই, দুর্নীতির মামলা তো দূরের কথা, কোনো অভিযোগও নেই, এসিআরের নম্বর ভালো ও বিরূপ কোনো মন্তব্য নেই, শিক্ষাগত যোগ্যতায় রেজাল্ট ভালো, তাঁরা কেন বঞ্চিত হবেন? তাঁদের যেন সঠিক জাজমেন্ট হয়।

 

 

 

মন্তব্য

সুন্দরবনে ১৯ বছরে ৩০ বার আগুন, জ্বলছে নতুন এলাকা

    নাশকতা আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে
বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী, বাগেরহাট
বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী, বাগেরহাট
শেয়ার
সুন্দরবনে ১৯ বছরে ৩০ বার আগুন, জ্বলছে নতুন এলাকা

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের টেপার বিলে জ্বলতে থাকা আগুন নেভার আগেই নতুন করে শাপলার বিল এলাকা আগুনে পুড়ছে। নতুন স্থানে আগুনের ভয়াবহতা অনেক বেশি।

গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাগেরহাট জেলাধীন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির শাপলার বিল এলাকায় গহিন বনে আগুন দেখতে পায় বন বিভাগ। কলমতেজি ক্যাম্পের টেপার বিল এলাকায় যেখানে শনিবার সকালে আগুন দেখা গেছে, সেখান থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে এই শাপলার বিল এলাকা।

তবে টেপার বিল এলাকায় জ্বলতে থাকা আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ করা হয়েছে বলে বন বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান। এক দিনের ব্যবধানে সুন্দরবনের সাত কিলোমিটারের মধ্যে পৃথক স্থানে আগুনের ঘটনায় নাশকতা আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে বন অধিদপ্তর।

 

১৯ বছরে ৩০ বার আগুন

বন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনে গত ১৯ বছরে ৩০ বার আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুড়েছে প্রায় ৯০ একর বনভূমি।

এর আগে ২০২৪ সালের ৪ মে চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া ফরেস্ট ক্যাম্পের লতিফের ছিলা নামক স্থানে আগুনে ৭.৯৮ একর বনভূমি পুড়ে যায। তখনকার কমিটি আগুন লাগার সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে পারেনি। ২০২১ সালের ৩ মে দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগে। ২০১৭ সালের ২৬ মে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের আবদুল্লাহর ছিলায় আগুনে প্রায় পাঁচ একর বনভূমির ছোট গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় প্রতিবারই বন বিভাগ তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু কমিটির প্রতিবেদন সুপারিশ কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে, কাজের কাজ কিছুই হয় না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। গত ২০২৪ সালের মে মাসের আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি সুন্দরবনের ২৪, ২৫ এবং ২৭ নম্বর কম্পার্টমেন্টে মধু আহরণের পাস (অনুমতি) বন্ধ রাখার জন্য সুপারিশ করেছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হবে।

এবারও টেপার বিল এলাকায় আগুনের পর গতকাল তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ।

এই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভায়ীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও)।

গত দুই দিনের দুটি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী জানিয়েছেন।

 

শাপলার বিলে আগুন

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, আগুন যাতে বনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এ জন্য ফায়ার লাইন কাটা হচ্ছে। কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের ভোলা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে আগুন নেভানো হবে।

চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপেন চন্দ্র দাস জানান, আগুনের খবর পাওয়ার পর ড্রোনের মাধ্যমে বনের গহিনে তারা আগুন দেখতে পান। এরপর তাঁরা দ্রুত ফায়ার লেন কাটতে থাকেন। কিন্তু এর মধ্যেই কয়েকটি স্থানে আগুন ফায়ার লেন অতিক্রম করে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ফায়ার লেন কাটার কাজ চলছে। লেন কাটা শেষ হলেই ভোলা নদী থেকে পানি এনে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হবে। কিভাবে আগুন লেগেছে তার কারণ জানাতে পারেননি তিনি।

বাগেরহাট ফায়ার স্টেশনের ডিএডি সাকরিয়া হায়দার জানান, আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিতে তাঁরা সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। খুলনা, বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, মোল্লাহাট এবং শরণখোলার ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

 

টেপার বিলের আগুন নির্বাপণ

বাগেরহাট জেলার শরণখোলায় সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজি ক্যাম্পের টেপার বিল এলাকার আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণ করা হয়েছে। ভোলা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর আগেই ওই এলাকায় প্রায় চার একর বনভূমি পুড়ে গেছে। 

বাগেরহাট ফায়ার স্টেশনের ডিএডি সাকরিয়া হায়দার জানান, গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণ করা হয়।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, সুন্দরবনের টেপার বিলে এখন আগুনের অস্তিত্ব নেই। কোথাও ধোঁয়াও দেখা যাচ্ছে না। এর পরও বন বিভাগের স্টাফরা আগামী ২৪ ঘণ্টা সেখানে পর্যবেক্ষণে থাকবেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।

ডিএফও নুরুল করিমের ধারণা, মৌসুম শুরুর আগেই অবৈধভাবে কোনো মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারেন। মৌয়ালের মশাল অথবা বিড়ি-সিগারেটের অংশ থেকে সুন্দরবনে আগুন ধরতে পারে। এ ছাড়া আইন ভঙ্গ করে কোনো কোনো রাখাল ভোলা নদী পাড়ি দিয়ে তাদের গবাদি পশু নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। ওই রাখালদের ফেলে রাখা বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকেও সুন্দরবনে আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে।

 

নাশকতার আশঙ্কা

প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, এক দিনের ব্যবধানে দুটি পৃথক স্থানে আগুনের ঘটনায় নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। নাশকতামূলকভাবে কেউ সুন্দরবনে আগুন দিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

 

মন্তব্য

জি এম কাদের ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জি এম কাদের ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ
জি এম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) ও তাঁর স্ত্রী শেরিফা কাদেরের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। গতকাল রবিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) দেশের সব ব্যাংকে চিঠি দিয়ে তাঁদের হিসাব জব্দ করতে বলা হয়েছে।

সিআইসি সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখায় পরিচালিত হিসাবগুলো থেকে অর্থ উত্তোলন বা স্থানান্তর স্থগিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ জন্য দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আরেকটি চিঠিতে জি এম কাদের, তাঁর স্ত্রী শেরিফা কাদের, মেয়ে ইশরাত জাহান কাদের ও ভাই মাহফুজ আহমেদের ব্যাংক হিসাব বিবরণী পাঠাতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে করদাতার একক বা যৌথ নামে অথবা তাঁর মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত যেকোনো মেয়াদি আমানত হিসাব, এফডিআর, এসটিডি, যেকোনো মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, লকার বা ভল্ট, সঞ্চয়পত্র বা অন্য কোনো ধরনের সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্ট, ইনভেস্টমেন্ট স্কিম বা ডিপোজিট স্কিমের হালনাগাদ বিবরণী ও ঋণের বিপরীতে রক্ষিত জামানতের বিবরণী সাত দিনের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ করা হলো। এই সময়ের মধ্যে বা আগে হিসাব শুরু হয়ে তা বন্ধ হয়ে গেলে অথবা শেষ হয়ে গেলে বা সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও তথ্য পাঠাতে হবে।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এনবিআরকে সহযোগিতা করেনি বলে উল্লেখ করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

এবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য না দিলে এবং তথ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে আয়কর আইনের বিধান অনুযায়ী এককালীন ৫০ হাজার টাকা ও পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ৫০০ টাকা হারে জরিমানা আরোপ করা হবে। এ ছাড়া অর্থদণ্ডের ও কারাদণ্ড আরোপের জন্য প্রয়োজনীয় ফৌজদারি কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে জাতীয় পার্টি সব সময়ই একটি সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। ভোট কারচুপি ও আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে এই দলটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

এখন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ