সংস্কার কমিশন যেভাবে স্থানীয় নির্বাচন চায়

  • প্রথমেই ইউপি নির্বাচনের চিন্তা-ভাবনা। আগে দরকার সরকারের সিদ্ধান্ত
  • বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে হলে সন্দেহ বাড়বে
  • পদ্ধতি পরিবর্তনে মেয়র, চেয়ারম্যান পদে যোগ্যরা না-ও আসতে পারেন
  • সব স্থানীয় নির্বাচনে দুই বছর সময় প্রয়োজন
কাজী হাফিজ
কাজী হাফিজ
শেয়ার
সংস্কার কমিশন যেভাবে স্থানীয় নির্বাচন চায়

স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে, না পরেএ বিতর্কে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বেড়েছে। নির্বাচনব্যবস্থা ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকারের পক্ষে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এর পক্ষে জনমত জরিপও প্রকাশ করে বলেছে, ৬৪.৬৫ শতাংশের মত জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে। জামায়াতে ইসলামী  সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে মত প্রকাশ করেছে।

কিন্তু বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো চাচ্ছে আগে জাতীয় নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবিকে বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ সন্দেহের চোখেও দেখছেন।

গত শুক্রবার কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক করছে। তারা বলছে, স্থানীয় নির্বাচন আগে হতে হবে, তার পরে সংসদ নির্বাচন হবে।

স্থানীয় নির্বাচন আগে, নাকি সংসদ নির্বাচন আগে, এই কথাগুলো আসছে কেন?

গত ৮ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের (ইআইবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা বিয়ারের সঙ্গে আলোচনার সময় বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেন স্থানীয় সরকার সত্যিই স্থানীয় সরকার থাকে এবং একটি সরকার নিশ্চিত করা যায়। নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন না করার পক্ষে মতামত দিলেও ১১ ফেব্রুয়ারি বলেছে, সরকার চাইলে আগে স্থানীয় নির্বাচনও করা যেতে পারে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ অবস্থায় অনেকেই জানতে আগ্রহী, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবারও কি আগের পদ্ধতিতেই হবে, নাকি সংস্কার কমিশন থেকে যে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছিল তার বাস্তবায়ন হবে?

এ ছাড়া নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় সরকারগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ বছরই করতে গেলে বর্তমান পরিষদ ভেঙে দিতে হবে। কারণ পাঁচ বছর মেয়াদের ইউনিয়ন পরিষদের দশম সাধারণ নির্বাচন শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল, আর শেষ হয় ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। অন্তর্বর্তী সরকার অন্য স্থানীয় সরকারগুলো বিতর্কিত নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করলেও দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদে তা করা হয়নি। আবার ইউনিয়ন পরিষদ বাদ রেখে অন্য স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচন করতে গেলেও যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন।

এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন অতীতে ভালো উদ্দেশ্যে করা হয়নি। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন দল গঠন বা পছন্দের কোনো দলকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের নির্বাচন হয়েছে। সে কারণে এবারও আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সুপারিশ, দাবিতে সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য ড. আব্দুল আলীম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করতে হলে বর্তমান পরিষদ বিলুপ্ত করে নির্বাচন করতে হবে। কারণ বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়নি। উপজেলা, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনএসব স্থানীয় সরকারের যেকোনো একটির নির্বাচন করা যেতে পারে। সবগুলোর নির্বাচন করতে হলে দুই বছর সময়ের প্রয়োজন। এ ছাড়া নতুন পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হলে ভোটার ও প্রার্থীদের সচেতন করার জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। আইন সংশোধনও দরকার। সবচেয়ে আগে দরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ। রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন,  নির্বাচনব্যবস্থা ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংসদীয় পদ্ধতিতে করতে চাচ্ছে। এতে মেয়র, চেয়ারম্যান পদে সরাসরি ভোট হবে না। সরাসরি ভোট হবে সদস্য ও কাউন্সিলর পদে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সদস্য ও কাউন্সিলর পদে সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিরা আসতে চান না। কিন্তু মেয়র, চেয়ারম্যান হতে চাইলে আগে সদস্য ও কাউন্সিলর পদে তাঁদের নির্বাচিত হতে হবে। এ কারণে মেয়র, চেয়ারম্যান পদের উপযুক্ত লোকরা সংসদীয় পদ্ধতির নির্বাচন চান না বলেই জেনেছি।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সুপারিশ বা দাবি সন্দেহ সৃষ্টি করছে। কারণ আইয়ুব খান থেকে শুরু করে অনেকেই ক্ষমতায় থেকে দল গঠনের জন্য বা নিজের পছন্দের দলের শক্তি বাড়ানোর জন্য জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেছেন। আবার এ কথাও ঠিক যে দলীয় সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হতে পারে না।

আগেই ইউপি নির্বাচন! :  নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনই আগে করার চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। কারণ এ নির্বাচনটিই স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এতে দেশব্যাপী  ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকে। তবে এই আশঙ্কাও রয়েছে যে জাতীয় সরকারের আগে এ নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের অনেকে নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন। সর্বশেষ নির্বাচনে ৬২ শতাংশ ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন। আর  এ পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলটির বিদ্রোহীরা জয় পান ২২ শতাংশ ইউপিতে। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়নের বাইরে বিএনপির বিদ্রোহীরা জয় পান ৮ শতাংশ ইউপিতে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এ ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে প্রায় এক হাজার ৪০০ ইউপি চেয়ারম্যান লাপাত্তা বলে জানা যায়। 

সংস্কার কমিশন  যেভাবে স্থানীয় নির্বাচন চায় :

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি কালের কণ্ঠের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, বর্তমানে জাতীয় সরকার পার্লামেন্টারি বা সংসদীয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রেসিডেনশিয়াল বা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের মতো। স্থানীয় সরকার হচ্ছে এক ব্যক্তিসর্বস্ব, মেয়র বা চেয়ারম্যাননির্ভর। কাউন্সিলর বা সদস্যদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও সংসদীয় পদ্ধতিতে হওয়া দরকার। মেয়র বা চেয়ারম্যান পদে সরাসরি ভোট হবে না; ভোট হবে কাউন্সিলর বা সদস্য পদে। নির্বাচিত কাউন্সিলর বা সদস্যরা তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন। তবে যেহেতু আমি স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি, সেহেতু এখন এ বিষয়ে আমার নিজস্ব প্রস্তাবের বাইরে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা এবং তাঁদের সুপারিশের ভিত্তিতেই সুপারিশ রাখা হবে। তবে এরই মধ্যে যে প্রস্তুাব পেয়েছি, তাতে স্থানীয় সরকারের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওয়ার্ডগুলোর সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে ঘূর্ণায়মাণ পদ্ধতিতে নারীদের জন্য ওয়ার্ড নির্ধারণ করা দরকার। ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ডের সংখ্যাও জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারণ হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর ওয়ার্ডসংখ্যা ৯। ভোটারসংখ্যার ভিত্তিতে বড় ইউনিয়ন পরিষদগুলোর ওয়ার্ডসংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। বর্তমান আইন অনুসারে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফুল টাইম চাকরি করেনএমন কেউ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। আমি মনে করি, এই আইন বাতিল করা দরকার। ইউরোপের দেশগুলোর মতো নির্বাচনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরতদেরও অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকা দরকার। স্থানীয় সরকারের সদস্য বা কাউন্সিলরদের কাজ ফুলটাইম নয়। ফুলটাইম কাজ হচ্ছে মেয়র বা চেয়ারম্যানদের। মেয়র বা চেয়ারম্যানরা তাঁদের কাজে সহায়তার জন্য দু-তিনজন কাউন্সিলর বা সদস্য নিয়ে নির্বাহী কাউন্সিল গঠন করতে পারেন। এই নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্যদের কাজ হবে সার্বক্ষণিক এবং তাঁরা মাসিক ভাতা পাবেন। অন্যরা পাবেন মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার জন্য বিশেষ ভাতা। আর নির্বাচন ছাড়াও স্থানীয় কাঠামোগত সমস্যাও রয়েছে। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ নির্বাচন এক রকম নয়। ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নির্বাচন এক রকম না। উপজেলায় তিনটি পদে একই ধরনের নির্বাচন হয়। জেলা পরিষদে সে অর্থে নির্বাচনই হয় না। এই তিন প্রতিষ্ঠানের কাঠামো ও নির্বাচন একই রকম হওয়া দরকার।

গত ২৫ জানুয়ারি তিনি সাংবাদিকদের জানান, পৌরসভা-সিটি করপোরেশনের মেয়র ও ইউনিয়ন-উপজেলা-জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নিরক্ষর ও স্বল্পশিক্ষিতরা নির্বাচন করতে পারবেন না। এসব পদে নির্বাচিত হতে লাগবে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি।

ড. তোফায়েল আহমেদ গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে আমাদের আরো সময় প্রয়োজন। আগামী সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা আমাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেব। 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ চান জামায়াতের আমির

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ চান জামায়াতের আমির
শফিকুর রহমান

ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সরকারকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।

জামায়াতের আমির বলেন, এক মাস পবিত্র সিয়াম সাধনার পরে আনন্দের বার্তা নিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর আমাদের দুয়ারে সমাগত। জাতি এমন এক মুহূর্তে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে যাচ্ছে, যখন দেশ ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসা জালিমের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেশের মানুষ মুক্ত পরিবেশে শ্বাস নিতে পারছে। দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে এবং শান্তিতে-স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারছে।

জামায়াতের আমির আরো বলেন, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে জাতি শান্তি-স্বস্তির দেশ পেয়েছে এবং কথা বলার সুযোগ পেয়েছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আর যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন ও আহত হয়েছেন আমরা তাঁদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।

জামায়াতের আমির বলেন, দেশ থেকে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তারা বিদেশে বসে এবং দেশে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা তাদের দোসরদের দিয়ে দেশে নানাভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেই যাচ্ছে। দেশে যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হতে পারে, সে জন্য নানাভাবে বিতর্ক এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এ অবস্থার অবসান ঘটিয়ে সরকারকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। 

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়ার গুণাবলি সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আল্লাহর বিধান মেনে চলার দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের মাঝে আগমন করছে পবিত্র ঈদুল ফিতর।

মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জীবনে শান্তি ও আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। পবিত্র ঈদুল ফিতর ধনী-গরিব সব শ্রেণির মুসলমানের মধ্যে নিবিড় ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে। 

তিনি বলেন, পবিত্র ঈদের এই দিনে আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মানুষে মানুষে দয়া, সৌভ্রাতৃত্ব, সাম্য, ঐক্য ও ভালোবাসার এক মহা সেতুবন্ধ তৈরি করি। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে একটি হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত সমাজ গঠনে তৎপর হই এবং সমাজের অবহেলিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসি এবং একে অপরের সুখানন্দ ও দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নিই।

জামায়াতের আমির সবার সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য ও নিরাপদ জীবন কামনা করেন।

 

মন্তব্য

আমরা এখন পর্যন্ত গণতন্ত্র ফিরে পাইনি : ফখরুল

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
শেয়ার
আমরা এখন পর্যন্ত গণতন্ত্র ফিরে পাইনি : ফখরুল
মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা মুক্ত হতে পেরেছি। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত গণতন্ত্র ফিরে পাইনি এবং আমরা নির্বাচন পাইনি। নির্বাচন পেতে হলে আমাদের মধ্যে ঐক্যকে আরো অটুট রাখতে হবে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে রুহিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল বলেন, আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

এ সময় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় পর্যবেক্ষণ টিমের সহসভাপতি মফিদুল আলম খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক জাকির হোসেন, ঠাকুরগাঁও স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাসুদুল ইসলাম, সদস্যসচিব কামরুজ্জামান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রুহিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক জিল্লুুর রহমান।

 

 

মন্তব্য
অন্য জীবন

মোহনের সেই বিভীষিকার রাত

পিন্টু রঞ্জন অর্ক
পিন্টু রঞ্জন অর্ক
শেয়ার
মোহনের সেই বিভীষিকার রাত
জগন্নাথ হলে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও গণসমাধির সামনে মোহন রায়। ছবি : কালের কণ্ঠ

তখনো সূর্যের আলো ফোটেনি। দূর থেকে আসছে কান্নার শব্দ। এ যেন স্বজন হারানোর বেদনা। জগন্নাথ হলের গণসমাধির দিক থেকে আসছে কান্নার আওয়াজ।

কাছে গিয়ে দেখা গেল, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও গণসমাধির নিচে ঘাসের ওপর বসে কাঁদছেন এক ভদ্রলোক। পরনে নীল ফুলহাতা শার্ট, কালো প্যান্ট। একবার হাত দিয়ে গণসমাধি ছুঁয়ে দেখছেন, আরেকবার সবুজ ঘাস। চোখের জল যেন কিছুতেই বাঁধ মানছে না।
মিনিট দুয়েক পর পিঠে হাত দিলাম—‘দাদা কাঁদছেন কেন?

পেছন ফিরে তাকালেন। শার্টের হাতায় চোখ মুছে বললেন, ভাই, আজ ২৫ মার্চ। দিনটা এলে নিজেকে কিছুতেই স্থির রাখতে পারি না। একাত্তরের এই দিনে এই সবুজ চত্বর রাঙা হয়েছিল আমার স্বজনদের রক্তে।

কত যে লাশ টেনেছিলাম!

বলতে বলতে গলা ধরে আসে তাঁর। শুধু যে স্বজন বা পরিচিতদের হারিয়েছেন তা নয়, সেদিন নিজেও মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছিলেন।

নাম তাঁর মোহন রায়। পেশায় মালি। এখন ঢাকার বাংলামোটরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

থাকেন আজিমপুর। বয়স সত্তরের ঘরে। কিন্তু দেখলে বোঝার উপায় নেই। এই বয়সেও নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করেন।

২৫ মার্চ জগন্নাথ হল ও তত্সংলগ্ন এলাকায় গণহত্যার শিকার লাশগুলো জগন্নাথ হলের মাঠে জড়ো করার পর সবার সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন মোহন। পায়ে গুলি লাগলেও বেঁচে যান। জীবন-মৃত্যুর সংকটময় সময়ে মানবতার ডাকে সহযোদ্ধাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন।

স্কুলে যাওয়া হয়নি : মোহনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। অভাব মোহনদের সংসারে বারো মাসের গল্প। স্কুলে ভর্তি হতে পারেননি। তবে নাম-ঠিকানা লিখতে পারেন। তাঁর বাবা বাসু রাজভর ফজলুল হক হলের মালি ছিলেন। মোহন ঢাকা ক্লাবে টেনিস বয় হিসেবে কাজ করেছেন কয়েক বছর। সেই সুবাদে কাজ চালানোর মতো উর্দু বলতে পারতেন। পরে চাকরি পেয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে।

সেদিন জ্বর ছিল তাঁর : জগন্নাথ হলে রবীন্দ্রভবনের পেছনের পূর্ব পাশটায় ছিল মোহনদের বাসা। একাত্তরে তিনি ২০ বছরের তরুণ। ঢাকার রাজপথ উত্তপ্ত। মোহনরা টের পাচ্ছিলেন বড় কিছু একটা ঘটতে চলেছে। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণও শুনেছিলেন রেসকোর্স ময়দানে বসে। ২৫ মার্চ দুপুর থেকেই জ্বর ছিল তাঁর। শরীরটাও ছিল ক্লান্ত। সন্ধ্যার একটু পর ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভাঙে গোলাগুলির শব্দে। উঠে দেখেন লাল আলো এবং ধোঁয়া। হলের পাশের মেইন রোডে পাক সেনাদের অনেক গাড়ি। হলের ভেতরে দলে দলে সেনারা প্রবেশ করছে। অনবরত গুলির আওয়াজ। বাড়ির সবাই মিলে চৌকির নিচে আশ্রয় নিলেন। আক্রমণটা শুরু হলো রাত ১২টার দিকে। চারদিকে শুধু বাঁচাও-বাঁচাও শব্দ। হানাদারদের একটা গাড়ি তাঁদের বাসার সামনে রাখল। আর্মিরা দরজা খুলতে বলল। বাসু রাজভর উঠে দরজা খুলে দিলেন। ওরা সবাইকে বের হতে বলল। মোহন উর্দুতে বলেছিলেন, হাম লোক কৈ কাছর নেই হ্যায়, হাম লোককা উপর ক্যা জুলুমছে আয়া। ওরা বলল, তুম লোক উর্দুমে বাত চিতকে বাতায়া সামাজ মে নেহি তো হাম মেজর সাব কো বোলায়া।

জি সি দেব পড়ে ছিলেন মেঝেতে : মোহন মাঠে এসে দেখেন, টিনশেডের ছাত্রাবাস, সোনালি ব্যাংক জ্বলছে। মেজরের সামনে থেকে সেনারা মোহনদের ডেকে নিয়ে গেল লাশ টানার জন্য। বাংলা এবং উর্দু বলতে পারে যারাদুটো দলে ভাগ করল তাদের। দুই গ্রুপ সৈন্য ভার নিল কাজ করানোর। বাংলাভাষী গ্রুপ কাজ শুরু করল হলের ভেতর, আর অন্য গ্রুপকে নিয়ে গেল শিববাড়ীর দিকে।

মোহন বলেন, আমরা সামনে, পেছনে সেনারা। রাইফেল তাক করাযেন পালাতে না পারি। বুধিরাম, মিস্ত্রি, জহরলালসহ আমার সঙ্গে আরো পাঁচজন ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব। থাকতেন শিববাড়ীসংলগ্ন শিক্ষক কোয়ার্টারে। মোহনরা গিয়ে দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। পাক সেনারা লাথি মেরে ভাঙল। মোহন বলেন, ঘরের ভেতরে আর কেউ ছিল না। বাইরে থেকে জানালা দিয়ে দেব বাবুকে ওরা গুলি করেছে। ঘরে ঢুকে দেখি, দেববাবু মেঝেতে পড়ে আছেন। আমরা তাঁর লাশ টেনে নিয়ে বর্তমান জগন্নাথ হল শহীদ মিনারের কাছে রাখি। রক্তমাখা ভারী শরীর। আনার সময় তাঁর পরনের ধুতিটা খুলে গিয়েছিল। তখন লাশটা মাটিতে রেখে ধুতিটা ঠিক করে দিচ্ছিলাম। এর মধ্যেই ঘাড়ে রাইফেলের বাঁট দিয়ে মারল এক পাক সেনা। গালিও দিল—‘তুম ইয়ে লাশকো কিউ রাখতা হ্যায়, এক সাথমে টেনে চল।

মধুদা তখনো বেঁচে ছিলেন : চারদিক থেকে লাশ টেনে আনা হচ্ছে। মৃত ভেবে মধুদার লাশ আনতে যখন তাঁর বাসায় গেলেন, তখনো তিনি জীবিত ছিলেন বলে জানালেন মোহন। বললেন, আহত লোকটাকে নিয়ে আসতে হলো সেনাদের হুকুমে। তাঁর দেহটা রাখলাম মাঠে লাশের স্তূপে। রাখার পর গুলি করল সেনারা। গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি, বুট দিয়ে মুখটা থেঁতলে দিল।

জগন্নাথ হল থেকে যেসব লাশ টেনেছিলেনততক্ষণে সবার শরীর শক্ত হয়ে গেছে। উত্তরবাড়ি থেকে, পুকুর পার থেকেও বহু ছাত্রের লাশ এনেছেন। যেসব ছাত্রের সঙ্গে ফুটবল খেলেছেন তাঁদের অনেকের লাশও টানতে হয়েছে।

লাশ টানতে টানতে প্রায় ভোর হয়ে গেল। পরে উর্দু জানা সবাইকে নেওয়া হলো মেজরের কাছে। এদের মধ্যে মোহনের এক স্বজনও ছিলেন। তিনি উর্দুতে পাক সেনাদের সঙ্গে বাতচিত করলেন। অন্যদের কাতর প্রার্থনা। কিন্তু মন গলল না।

মরার মতো পড়ে রইলেন : যারা লাশ টেনেছে, সবাইকে নিয়ে আসা হলো হলের শহীদ মিনারের সামনে। কাঁদতে কাঁদতে প্রাণভিক্ষা চাইছিলেন সবাই। কিন্তু তাঁদের লাইন ধরে দাঁড়াতে বলা হলো। মোহন ছিলেন একেবারে প্রথমে। উর্দুতে নিজেকে বিহারি বলে পরিচয় দিয়ে প্রাণভিক্ষা চাইলেন তিনি। মেজর বলল, ওর লুঙ্গি উঁচিয়ে দেখ। একজন সৈনিক সজোরে মোহনের গালে থাপ্পড় মারল। ঘুরে কয়েকজনের পেছনে চলে গেলেন তিনি। এরপর লাইনে দাঁড় করানো লোকগুলোকে গুলি করলে গুলিবিদ্ধ লোকগুলো পড়ল মোহনের ওপর। রক্তে গা ভেসে গেল।

মোহন বলেন, ওরা মনে করল আমিও মারা গেছি। তবে কিছু সময় পর আমার পা নড়ে উঠলে পায়ে গুলি করল। গুলি খেয়েও মাটি কামড়ে পড়ে থাকলাম। একটা গুলি ডান পায়ের ঊরুতে এবং অপরটা বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচে লাগে।

অনেকক্ষণ গুলির শব্দ না পেয়ে মোহন চোখ খুলে দেখলেন, পাক সেনাদের দেখা যাচ্ছে না। তাঁর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে, পা ফুলে গেছে। কাছেই দেখলেন বুধিরামকে। বোনাই (দুলাইভাই) বলে ডাক দিলেন। পেটে গুলি লেগেছে তাঁর। খুব কষ্টে পেট চেপে ধরে রেখেছেন। বুধিরামের খুব রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাঁকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি।

আবার হলে ফেরা : স্বাধীন দেশে আবার হলে ফেরেন মোহন। আবার শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগানে ফুল ফোটানো। একসময় বিয়েও করেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন।

২৫ মার্চের সেই বিভীষিকা আর ভুলতে পারেননি। পায়ে এখনো গুলির ক্ষত রয়ে গেছে। সাইকেল চালালে ব্যথামুক্ত থাকেন। হাঁটতে গেলে এখনো ব্যথা পান বলে জানালেন মোহন।

 

 

মন্তব্য

বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়ে প্রস্তাবনা পাস অস্ট্রেলিয়ার সংসদে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়ে প্রস্তাবনা পাস অস্ট্রেলিয়ার সংসদে

বাংলাদেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংসদে প্রস্তাবনা পাস হয়েছে। দেশটির তিনটি রাজনৈতিক দললেবার, লিবারেল ও গ্রিন পার্টির সংসদ সদস্যরা এই বিল প্রস্তাব করেন, যা সংসদে পাস হয়।

গত বুধবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশটির সংসদের অধিবেশনে এই আহ্বান জানানো হয়। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট মো. রাশেদুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানো এবং নির্বাচনী সততা ও জবাবদিহির আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে শক্তিশালী দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে রূপান্তর; জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচনী রোডম্যাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সংসদ সদস্যরা।

সংসদে লিখিত বক্তব্য দেন এনএসডব্লিউয়ের সদস্য এবিগেইল বয়েড। তিনি বলেন, এই হাউস উল্লেখ করে যেক. ২৬ মার্চ ২০২৫ হচ্ছে বাংলাদেশের ৫৫তম স্বাধীনতা দিবস, যা বাংলাদেশের একটি স্বাধীন, সার্বভৌম জাতি হিসেবে ৫৫ বছর পূর্তি এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার দিনটিকে স্মরণ করে; খ. বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মুক্তি, ন্যায়বিচার, ঐক্য, সাম্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুষ্ঠু ভবিষ্যতের জন্য সংগ্রামে বাংলাদেশি জনগণের শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতা উদযাপন করে; গ. ২৩ মার্চ বাংলাদেশ কমিউনিটি কাউন্সিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য লাকেম্বা লাইব্রেরি হলে দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে অনেক সম্প্রদায়ের সদস্য এবং অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন, যাঁরা স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য একত্র হয়েছিলেন, যা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশি-অস্ট্রেলীয় সম্প্রদায়সহ বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি জনগণের জন্য একটি চিরন্তন গর্বের; ঘ. সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাবেক শাসনব্যবস্থার পতনের পর বাংলাদেশের জনগণ গুরুতর চ্যালেঞ্জ, দুর্নীতি, হুমকি এবং অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হচ্ছে। এই সংকটময় সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন এবং পদ্ধতিগতভাবে দুর্নীতি ভেঙে ফেলা, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ওপর জনসাধারণের আস্থা পুনরুদ্ধার, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহি করার নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এই সংসদ গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশি জনগণের চলমান লড়াইয়ের সঙ্গে তার সংহতি নিশ্চিত করে।

এবিগেইল বয়েড আরো বলেন, এই সংসদ অস্ট্রেলিয়ান সরকারকে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর এবং নির্বাচনী সততা, জবাবদিহি ও শক্তিশালী দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রূপান্তর এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়নের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ