ঢাকা, সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫
১৭ চৈত্র ১৪৩১

ঢাকা, সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫
১৭ চৈত্র ১৪৩১
বাধ্যতামূলক অবসরে নির্বাচনকালীন ২২ ডিসি

আওয়ামী প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মকর্তারা আতঙ্কে

উবায়দুল্লাহ বাদল
উবায়দুল্লাহ বাদল
শেয়ার
আওয়ামী প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মকর্তারা আতঙ্কে

বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত) দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মধ্যে যাঁদের চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে, তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আর যাঁদের চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হয়নি, তাঁদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হবে। এর মধ্যে চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া ২২ জন সাবেক ডিসিকে (বর্তমানে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব) বৃহস্পতিবার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা করার অভিযোগে যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এর আগে বুধবার একই কারণে ৩৩ জন সাবেক ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছে। এরও আগে ১২ সাবেক ডিসিকে ওএসডি করা হয়।

এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী আমলে প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে যাঁরা (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, মন্ত্রীদের পিএস) দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। চাকরি হারানোর পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার ঘানি টানার আশঙ্কায় তাঁদের রাতের ঘুম হারাম হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনেও চলছে তোলপাড়। সম্প্রতি ডিসি ফিটলিস্টে নাম তুলতে পরীক্ষা দিয়েছেন এমন একাধিক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে ফোন করে জানান, এই সরকারের ডিসি হলে পরের সরকার কিভাবে নেবে বুঝতে পারছেন না তাঁরা। পরে আবার ফেঁসে যাবেন না তো!

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান বলেন, সম্প্রতি জনপ্রশাসন সম্পর্কিত একটি কমিটি হয়েছে। সেখানে চারজন উপদেষ্টা আছেন।

এই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদসচিব ও আমি আছি। এখানে বড় কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচন রিটার্নিং অফিসারদের সহযোগিতায় সম্পন্ন করে সরকার। তাঁরা (ওই সময়ের ডিসিরা) অনেক বড় নেগেটিভ ভূমিকা রেখেছিলেন। কোনো একজন ডিসিও বলেননি আমি রিটার্নিং অফিসার থাকব না, রিজাইন করলাম, কাজ করব না।
আমরা তাঁদের মধ্যে ৪৩ জনকে (ডিসি) ওএসডি করেছি, যাঁদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম। আর চাকরির বয়স ২৫ বছরের বেশি এমন ২২ জন সাবেক ডিসিকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার আদেশ জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব রয়েছেন। বিতর্কিত নির্বাচন করার সময় প্রতিবাদ না করার ফলে এই জাতি যে পর্যায়ে এসেছে, সেখান থেকে মুক্ত হতে এই (শাস্তিমূলক) ব্যবস্থা নিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী আমলে তিনটি নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এতে প্রশাসনে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেবে। প্রশাসনিক কাজের গতি ব্যাহত হতে পারে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাঁদের সরকার ওএসডি করবে, প্রয়োজনে বরখাস্ত করবে, এটাই নিয়ম। কিন্তু নির্বাচন কি শুধু ডিসি-এসপি, ইউএনও-ওসিরাই পরিচালনা করেছেন? এই পদগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও নির্বাচনী কেন্দ্রের সর্বময় ক্ষমতা প্রিজাইডিং অফিসারদের হাতে থাকে। তাঁরাই ভোট বন্ধ করবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত দেন। সবাইকে ধরতে হলে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি ১৩-১৪ লাখ লোককেই ধরতে হবে। এভাবে শুধু ডিসি-এসপিদের ধরলে প্রশাসনে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে। এতে প্রশাসনে স্থবিরতা দেখা দেবে। একসময় কেউ-ই ডিসি-এসপি ও পিএসের দায়িত্ব নিতে চাইবেন না।

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হলো যাঁদের : বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান, ওএসডি সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মাসুদ করিম, ওএসডি অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা, এস এম আলম, তন্ময় দাস, রাব্বী মিয়া, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহম্মদ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শফিউল আরিফ, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কামরুন্নাহার সিদ্দিকা, আইএমইডির অতিরিক্ত সচিব ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, ভূমি সংস্কার বোর্ডের সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) উম্মে সালমা তানজিয়া, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হামিদুল হক, পরিকল্পনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এনামুল হাবীব, ব্যান্সডকের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শওকত আলী, বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের নিবন্ধক (অতিরিক্ত সচিব) তোফায়েল ইসলাম, আবুধাবিতে বাংলাদেশের লেবার মিনিস্টার (অতিরিক্ত সচিব) আবদুল আওয়াল, বিআইডিএর নির্বাহী সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর,  জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের পরিচালক যুগ্ম সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম এবং ওএসডি উপসচিব আহমেদ কবীর।

তালিকায় আছেন আরো অনেকে : জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তালিকায় প্রশাসনের আরো অনেক কর্মকর্তার নাম রয়েছে। যাঁরা গত ১৫ বছরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি গত তিন মেয়াদে আওয়ামী সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের পিএস হিসেবে কাজ করেছেন এমন অনেককে এরই মধ্যে ওএসডি করা হয়েছে। শিগগিরই তাঁদের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে। এমনকি যাঁরা এরই মধ্যে অবসরে গেছেন তাঁদেরও মুক্তি মিলবে না। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারকে সহযোগিতা ও টিকিয়ে রাখাসহ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে যাঁরা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তাঁদেরও খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এমন ইঙ্গিত দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, যাঁরা অবসরে চলে গেছেন, কিন্তু সার্ভিসে অনেকের নামে কোটি কোটি টাকার (দুর্নীতির) অভিযোগ, এ বিষয়ে আমরা দুদকে মামলা দিচ্ছি। অবসরে যাওয়া মানেই যে মুক্তি তা নয়। এই অপরাধের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, অবসরে যাওয়ার পরও ফলোআপ হচ্ছে। জনস্বার্থে সরকার এখানে ছাড় দেবে না। যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকবে, তাঁদের পুরো কেস টু কেস দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হবে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, চিঠিপত্র চলে গেছে।

যে কারণে কঠোর সরকার : ছাড় পাবেন না ২৪-এর নির্বাচনের ডিসিরাও। তাঁদের বিষয়ে জনপ্রশাসনসচিব বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে আমরা গোয়েন্দা সংস্থাকে পুরো তালিকা দিয়েছি। ওখান থেকে পাওয়ার পর আমাদের যে ব্যবস্থা, যাঁদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম হবে তাঁদের ওএসডি, যাঁদের ২৫ বছরের বেশি তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে। জনগণের হয়ে সরকার অনেক শক্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং এগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিছু মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব দায়িত্ব রয়েছে, যার যার মন্ত্রণালয়ের কাজ তারা করছে।

সামনে ভোট, আপনারা বর্তমানে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কী বার্তা দিতে যাচ্ছেনএমন প্রশ্নে মোখলেস উর রহমান বলেন, সামনে নির্বাচন। ডিসিরা তিন দিন (ডিসি সম্মেলনে অংশ নেওয়া) থেকে গেলেন। আমরা ডিসিদের এই মেসেজ দিতে চাচ্ছি, আপনারা রিটার্নিং অফিসার হবেন, ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সাহসের সঙ্গে আইন-কানুন মেনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। যাঁরা করবেন না, তাঁরা এই মেসেজ পেয়ে যাবেন, না হলে কী ফল হবে!

দুর্নীতি-বাড়াবাডির অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা : এখন যাঁরা অতিরিক্ত সচিব-সচিব রয়েছেন, তাঁদের কারো কারো বিরুদ্ধেও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের বিরুদ্ধেও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত আসছে কি নাএ বিষয়ে জনপ্রশাসনসচিব বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে যাঁদের নামে দুর্নীতি, অতিরঞ্জন, আইনের বাইরে থেকে অতিরঞ্জন হিসেবে যে কাজগুলো করেছেন, তাঁদের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। তাঁদেরও চাকরিবিধির অধীনে যাঁর যে সাজা তাঁরাও পাবেন।

বিতর্কিত সংশ্লিষ্ট সবার শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন সরকারে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও আলোচিত কর্মকর্তা মাহবুব কবীর মিলন। বৃহস্পতিবার তাঁর ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, সেই নির্বাচনে ৬৪ জেলায় ৬৪ জন জেলা প্রশাসক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই বিভাগীয় কমিশনার, মোট ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তো বাকি ৩৩ জনের শাস্তির কী হবে? রাতের ভোট তো শুধু ৩৩ জন ডিসি করে দেননি। বাকি ছয় বিভাগের কমিশনারদের কী হবে? সেই সময় পিএম অফিসে এবং সচিবালয়ে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কী হবে? পুলিশ, নির্বাচন কমিশন! গণনা করলে সেই তালিকা শেষ হবে না। যাই হোক, শাস্তি তাঁদের প্রাপ্য। এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন কাজ কেউ কখনো করতে না পারে। ভবিষ্যতের জন্য আসলেই কি তা সম্ভব?

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০-৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কালের কণ্ঠ বন্ধ থাকবে। তাই ৩১ মার্চ এবং ১-২ এপ্রিল পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। পবিত্র ঈদুল ফিতর ১ এপ্রিল হলে ৩ এপ্রিলও পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে ঈদের ছুটিতে কালের কণ্ঠ অনলাইন চালু থাকবে।

সম্পাদক

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

শেয়ার
শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা গতকাল বিজয়নগরে শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে বসে পড়েন।ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই উসকানি দেন।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের মনে কী আছে (হোয়াটস অন বাংলাদেশস আর্মি চিফস মাইন্ড?) শিরোনামে ইন্ডিয়া টুডেতে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত সেনাপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বেন কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা বিবিসি ও রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একজন রক্ষণশীল ও পেশাদার কর্মকর্তা, যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তাঁর সহকর্মীরা জানান, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে সামরিক শাসন কার্যকর নয়। ইতিহাস, বিশেষ করে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কঠোর দমন-পীড়ন না চালাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল এবং তা কার্যকর হয়েছিল।

তবে ওয়াকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি গুলি চালানোর অনুমতি দেননি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর উপদেষ্টাদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন।

সম্প্রতি কিছু ব্লগার ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভারতের প্রতি অনুগত এবং তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তবে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি কোনো গোষ্ঠীর অনুগত নন, বরং তিনি পেশাদার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুকরণ করে রাজনীতির বাইরে থাকতে চান।

এদিকে সেনাপ্রধান চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমর্থন দিতে পারেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীর।

আওয়ামী লীগপন্থী এই আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন; আর এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতে পারেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দ্রুত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবেন। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে পারবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে।

তবে তানিয়া আমীরের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।

এক সেনা কর্মকর্তা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, তিনি (সেনাপ্রধান) সেনা ও বাইরের সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চান। তিনি সেনা কর্মকর্তা ও অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা না করে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ তিনি একটি ঐকমত্য চান।

অন্যদিকে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, যাঁর অধীনে সেনাপ্রধান আগে চাকরি করেছেন, তিনি বলেন, যদি মনে হয় তাঁকে (সেনাপ্রধান) সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাহলে তিনি কঠোর ভূমিকা পালন করবেন।

ইন্ডিয়া টুডের সংবাদ বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি আফ্রিকা সফর শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যা আমি করতে চাই না। এতে বোঝা যায়, তিনি কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হতে পারেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তাঁর বাবা ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কিনেছিলেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের জন্য।

মন্তব্য

রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। রমজান এলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। বিশেষ করে রোজার ভোগ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন চিত্রই দেখে আসছে দেশবাসী।

তবে এবার ভিন্ন চিত্র। এবার রোজার ভোগ্যপণ্যের বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল। ভোক্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার রজমানে পণ্যের দাম সবচেয়ে কম। বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যই ক্রেতাসাধারণের হাতের নাগালে রয়েছে।

রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এবার রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল তা এখন ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ বছর রমজান সামনে রেখে ট্যাক্স-ভ্যাট কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি বেড়েছে, যার সুফল মিলছে বাজারে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। এতে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, দেশি রসুন, আলু ও আদাসহ কয়েকটি পণ্য। সবজি ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ছিল। 

এবার রমজানে পেঁয়াজ ও আলু গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বেশির সবজি গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কম দামে বিক্রি হয়েছে। রমজানে ইফতারসামগ্রীর বাজারেও তেমন বাড়াবাড়ি নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত তদারকি জোরদার করায় সবজির বাজার সিন্ডিকেট কাঁচা মরিচ ও বেগুনের দাম বাড়াতে পারেনি।

গত রমজানে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয় মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন ঈদ ঘিরে মুরগির দাম বাড়লেও রোজার শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় দরেই এবার মুরগি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, রোজার আগে আগে যা ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দাম কমে চিনি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে গম, ডাল, মুরগি, ডিম, মাছ, সয়াবিন, পামঅয়েল, চিনি, লবণ, আলু, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় এবার রমজানে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয়।

এদিকে এবার রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে আছে। সংস্থাগুলো হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মনিটরিং টিম। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও করা হচ্ছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ