তরুণদের বিশ্বনেতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
তরুণদের বিশ্বনেতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূস

চুরাশিতেও টগবগে তারুণ্যে ভরপুর তিনি। এখনো প্রাণবন্ত, কর্মমুখর। বয়সের ভারে ন্যুব্জ না হয়ে বরং তিনি তারুণ্যকে অবগাহন করেছেন। তারুণ্যের শক্তিতে বিশ্বাসী বলেই এখনো তিনি নিজেই একজন টগবগে তরুণ।

এ জন্যই সৃজনশীলতা আর উদ্ভাবনীতে ভরপুর তিনি। সারাক্ষণ পৃথিবীর কল্যাণ নিয়ে ভাবেন। এখন তিনি বাংলাদেশের দায়িত্বে। তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুধু বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা নন, তিনি বিশ্ব তারুণ্যের আইকন। তরুণদের বিশ্বনেতা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দর্শনের মূল ভিত্তি হলোতারুণ্যের অফুরন্ত শক্তিকে কাজে লাগানো। তিনি বিশ্বাস করেন, তরুণদের মেধা, চিন্তা, সৃষ্টিশীলতা ও উদ্ভাবনকে কাজে লাগালেই বিশ্ব বিকশিত হবে।
যুদ্ধ, হানাহানি, জলবায়ুর ঝুঁকি, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে দরকার তরুণদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি, তাঁদের নীতিনির্ধারণে যুক্ত করা। তরুণদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা জীবন কাজ করে যাচ্ছেন ড. ইউনূস। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যা কিছু করেছেন, যা কিছু ভেবেছেন, সব কিছু তারুণ্যের স্বপ্নকে ঘিরে। আর এখন দেশ পরিচালনায় তরুণদের সামনে এনে সারা বিশ্বের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী এই প্রাজ্ঞজন। আগামী দিনে বিশ্ব বদলের মডেল হবে বাংলাদেশ।

যখন বাংলাদেশ এক কঠিন সময়ে, স্বৈরাচারের জগদ্দল পাথরের পৃষ্ঠে দেশের জনগণ, মুক্তির পথ খুঁজে না পাওয়ায় হতাশা সবার মধ্যে, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের তারুণ্যের এক অভূতপূর্ব জাগরণ হলো। জুলাই বিপ্লব আসলে তারুণ্যের বিপ্লব, তাদের সম্মিলিত বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। প্রচলিত ঘুনে ধরা ব্যবস্থা, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা আর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তারুণ্যের প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদের ভাষা, তরুণদের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা অনেকেই বুঝতে পারেননি, এখনো পারছেন না অনেকে। কিন্তু বুঝতে পেরেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর এ কারণেই তিনি তরুণদের এই আন্দোলনকে মনে-প্রাণে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তিনি জানতেন, তরুণরাই পারবেন বাংলাদেশের বুক থেকে পাথর নামাতে। অবশেষে তরুণরা যখন সাড়ে ১৫ বছরের জগদ্দল পাথরের মতো চেপে থাকা ফ্যাসিবাদের কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করেন, তখন তাঁরা একজন নেতা খুঁজছিলেন, যে নেতা তরুণদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে। তরুণদের ভাবতে সময় লাগেনি। মুহূর্তের মধ্যে তাঁরা ঠিক করেন ড. ইউনূসই হবেন তাঁদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই মানুষটি নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকা স্বভাবের, প্রচার বিমুখ। তিনি নিজের কাজ নিয়ে মেতে থাকতে পছন্দ করেন। মানবতার কল্যাণে, বিশ্ব কল্যাণের জন্য তিনি আত্মোৎসর্গকারী এক প্রাণ। এ ধরনের রাজনীতির ডামাডোলের মধ্যে নিজেকে জড়াবেন? এর আগেও ২০০৭ সালে তাঁকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তৎকালীন সেনা কর্মকর্তারা। কিন্তু সেই অনুরোধ তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি সাফ বলে দিয়েছিলেন, রাজনীতি আমার কাজ নয়, আমার কাজ যেটা মানুষের কল্যাণ, সেটা আমি করছি। কিন্তু এবার তিনি মুখ ফিরিয়ে নিতে পারলেন না। না বলতে পারলেন না। এর প্রধান কারণ হলোতারুণ্যের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং তারুণ্যের প্রতি তাঁর বিশ্বাস। আর তরুণদের এই বিজয়কে চূড়ান্ত বন্দরে নেওয়ার জন্য অভিভাবকের দায়িত্ব নিলেন তিনি। ৮ আগস্ট বিমানবন্দরে নেমেই তিনি সরাসরি বললেন, তরুণদের মতামত নিতে হবে এবং সব কর্মকাণ্ডে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রে থাকবে তরুণরা। মূলত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আগ্রহের কারণেই উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিভিন্ন সংস্কার কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তরুণদের। এ নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছেন বটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রে তারুণ্যর অবস্থান বিশ্বের জন্য এক অনন্য উদাহরণ। এটি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত নয়, বরং সারা জীবন তিনি যে বিশ্বাস এবং চিন্তাকে লালন করেছেন, তারই প্রায়োগিক রূপ। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সারা জীবন তারুণ্যের শক্তিতে বিশ্বাস করেছেন। তরুণদের ওপর নির্ভর করতে চেয়েছেন। তিনি তাঁর বক্তৃতাগুলোতে বলেছেন, তরুণরা এই পৃথিবীকে বদলে দেবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি কথা সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তিনি সব সময় বলে থাকেন, আমাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো সেকেলে প্রচলিত, কিন্তু তরুণরা নতুন ভাবনা নিয়ে আসে, নতুন উদ্ভাবন নিয়ে আসে এবং সেটি পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মযজ্ঞে তরুণদের প্রতি রয়েছে এক ধরনের নির্ভরতা এবং অগাধ বিশ্বাস। তিনি তরুণদের সম্মান দেন। তাঁদের চিন্তা-ভাবনাগুলো অনুধাবন করেন। তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব দেন। একটি নতুন চিন্তাকে স্বাগত জানান।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে রেখেছেন তরুণদের। তিনি সব সময় বিশ্বাস করেন, তরুণরাই পারেন, তরুণরাই পারবেন। আর এ কারণেই তিনি হয়ে উঠেছেন বিশ্ব তারুণ্যের কণ্ঠস্বর। কারণ তিনি তরুণদের ভাষা পড়তে পারেন, তাঁদের চিন্তাকে মূল্যায়ন করেন। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণরা জ্ঞানী, গুণী, বিজ্ঞজন এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদের বক্তব্য শুনতে চান নানা উপলক্ষে। আর সেই আগ্রহের তালিকায় সবার ওপরে আছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিশ্বের ৬০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সামাজিক ব্যবসা ক্লাব রয়েছে। বিশ্বের এমন কোনো প্রান্ত নেই, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্য দেননি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে আচার্য পদে সম্মানিত করা হয়েছে। বেশ কটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি ভিজিটিং প্রফেসর। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে তরুণদের আইকন, বিশ্ব তরুণদের নেতা, তার প্রমাণ পাওয়া যায় বিশ্বে চার হাজারেরও বেশি সামাজিক ব্যবসার ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে, যা তরুণদের দ্বারাই পরিচালিত। মূলত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম থেকে সামাজিক ব্যবসা, সামাজিক ব্যবসা থেকে তিন শূন্য তত্ত্ব সবই তরুণদের ঘিরে।

১৯৭৪ সালে যখন তিনি ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু করেছিলেন, তখন তিনি তরুণ ছিলেন এবং নিজের ওপর আস্থা রেখেছিলেন। আমরা যদি গ্রামীণ ব্যাংকের কাঠামো বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব, এখানে তারুণ্যের উদ্দীপনা এবং তারুণ্যের স্ফুরণ। তরুণরাই সৃজনশীল, তাঁরা নতুন ভাবনা ভাবতে পারেন, তাঁরা বৃত্তের বাইরে গিয়ে নতুন কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের জঞ্জাল, আবর্জনা পরিষ্কার করতে পারেন। এ জন্যই তরুণদের রাষ্ট্র পরিচালনার নেতৃত্বে আনার পক্ষে ড. ইউনূস।

ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা কার্যক্রম মূলত তরুণনির্ভর। একটি কথা শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ সব সময় বলেন, তা হলো—‘তরুণরা চাকরি খুঁজবে না, তারা চাকরি দেবে। তারা একেকজন উদ্যোক্তা হবে। এই উদ্যোক্তা হওয়ার তত্ত্ব এবং উদ্যোক্তার মাধ্যমে সামাজিক ব্যবসার বিকাশই যে বিশ্বের অর্থনীতিকে বদলে দিতে পারে তা আজ সবাই স্বীকার করছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চিন্তা-ভাবনা সুদূরপ্রসারী, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন। যার জন্য সাদা চোখে এই ভাবনাগুলো বোঝা যায় না। ড. ইউনূস বিশ্বাস করেন, তারুণ্যের কর্মশক্তি, তাঁদের উদ্দীপনা, তাঁদের সাহস এবং প্রবীণদের অভিজ্ঞতা মিলেমিশে একটি সুন্দর পৃথিবী বিনির্মাণ সম্ভব। সেই সুন্দর পৃথিবীর জন্য তিনি স্বপ্ন দেখেন এবং সেই স্বপ্ন যাত্রায় তিনি একজন বীর লড়াকু যোদ্ধা। এই লড়াইয়ে তিনি অনেক বিজয় অর্জন করেছেন। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের তরুণসমাজ এখন নানাভাবে হতাশাগ্রস্ত।

কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেন এ ব্যাপারে অনবদ্য সুযোগ পেয়েছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর বারবার তরুণদের উদ্দীপ্ত করছেন, তরুণদের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তাঁদের মতামতকে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুক্ত করেছেন। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী জায়গায় এনেছেন তরুণদের। আমরা এখন অনেক কিছুই নতুন দেখছি। নতুনকে গ্রহণ করতে আমাদের এক ধরনের অনভ্যস্ততা থাকে, থাকে অনীহা। কিন্তু এটিই হবে আগামীর বাংলাদেশের ভিত্তি। অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের সৃজনশীলতার মেলবন্ধনই নতুন করে বাংলাদেশ বিনির্মাণ হচ্ছে সবার অলক্ষ্যে। এর ফল আমরা পাব আরো পরে।

ড. ইউনূসের নিজের কোনো রাজনৈতিক অভিপ্রায় নেই। কিন্তু তিনি মনে করেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে গেলে তারুণ্যের সৃষ্টি সুখের উল্লাস প্রয়োজন। আর এ কারণেই তরুণদের রাজনৈতিক দলের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। বয়সের ব্যারিকেড উপড়ে ফেলে তরুণদের অনুধাবন করা এবং তরুণদের হৃদস্পন্দন বুঝতে পারা একটি অনন্য যোগ্যতা। নতুন চিন্তা, নতুন পরিকল্পনাকে যাঁরা স্বাগত জানাতে পারেন, পরিবর্তনে যাঁরা ভয় পান না, তাঁরাই আধুনিক অগ্রসর মানুষ। ড. ইউনূস তেমনি একজন অগ্রসর মানুষ। তিনি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে সব সময় আগ্রহী। তরুণরা সব সময় পথ দেখান। আমরা যদি বাংলাদেশের ইতিহাস বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন এবং চব্বিশের বিপ্লবসবই তারুণ্যের জয়গাথা। কাজেই তরুণরা যে পারেন সেটি নতুন করে পরীক্ষার কিছুই নেই। বিশ্বকে বদলে দিতে পারেন তরুণরা। কিন্তু তাঁদের দিতে হবে সেই সুযোগ। সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার এক পথপ্রদর্শক হলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর এ কারণেই সারা বিশ্বে তরুণরা যখন এক আদর্শ হাতড়ে বেড়ান, তাঁদেরকে যখন কেউ আশাবাদী করে না, ভরসা দেয় না, তাঁদের দমিয়ে রাখতে চায়, ঠিক সে সময় একটি মুখের প্রতিছব্বি তাঁদের উদ্বেলিত করে। আর তিনি হলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যিনি জীবনভর তারুণ্যের অর্গল মুক্তির গান গেয়ে যাচ্ছেন। তরুণদের মেধা, চিন্তা ও কর্মশক্তিতে যাঁর আস্থা সব সময়। আর সে কারণেই তিনি এখন বিশ্ব তারুণ্যের কণ্ঠস্বর, তারুণ্যের বিশ্বনেতা। বাংলাদেশে তরুণরা আজ চালকের আসনে। সামনে এটিই হবে বিশ্ব মডেল।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বিশেষ লেখা

বাংলাদেশ কি সত্যিই খাদের কিনারে?

    অদিতি করিম
শেয়ার
বাংলাদেশ কি সত্যিই খাদের কিনারে?

বিলেতের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হান্না এলিস পিটারসেন সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত্ হয়। এই সব কিছু মিলিয়ে সম্প্রতি তিনি দ্য গার্ডিয়ানে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এই প্রতিবেদনটি দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলেছে।

এই প্রতিবেদনের এক জায়গায় হান্না বলেছেন, ঢাকার রাজপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তাঁর মনে হয়েছে, বাংলাদেশ এখন খাদের কিনারে।

তাঁর এই সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনটি নিয়ে এ দেশের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো বটেই, বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনায়ও হান্না এলিস পিটারসেনের এই উক্তিটি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। অনেক রাজনীতিবিদ তাঁর উক্তিকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের সংকট মোকাবেলার জন্য আশু এবং জরুরি পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছেন।

বাস্তবতা কী বলে? বাংলাদেশ কি সত্যি খাদের কিনারে, নাকি হান্না এলিস পিটারসেনের বক্তব্য একটু বাড়াবাড়ি?

এ কথা ঠিক যে, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকার খুব একটা স্বস্তিতে নেই। এই সরকারের মধুচন্দ্রিমা সময় পার হয়েছে। এখন এই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশার চাপ দিন দিন বাড়ছে। প্রত্যাশা পূরণ না হলে হতাশাও তৈরি হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশের মানুষ ৫ আগস্টের পর অনেক বড় রকম একটা প্রত্যাশার ফানুস নিয়ে নতুন সরকারের দিকে তাকিয়ে ছিল। ১৫ বছরের দম বন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির পর এ দেশের জনগণ তাদের পুঞ্জীভূত বঞ্চনার অবসান চাচ্ছে খুব দ্রুত। আর এ কারণেই দাবি-দাওয়ার চাপ অনেক বেশি। বিশেষ করে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের গত ১৭ বছর জমে থাকা অভাব-অভিযোগ, বঞ্চনা, নিপীড়ন ইত্যাদি পূরণের জন্য তারা চটজলদি পথ খোঁজে রাজপথে নামার মাধ্যমে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর এই সরকার সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে তা হলো কথায় কথায় রাজপথ দখল এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়ক অবরোধ।

এটি জনজীবনকে রীতিমতো অতিষ্ঠ করে তোলে। বিভিন্ন সড়ক অবরোধ হওয়ার ফলে মানুষের কর্মজীবনে এক ভয়ংকর বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হয়। আমরা জানি যে শেখ হাসিনার পতনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এই বাহিনীর একটা বড় অংশ দলীয়করণের কারণে রীতিমতো আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। অনেকে গণ-অভ্যুত্থানের পর জনরোষের ভয়ে পালিয়ে যায়। ফলে পুলিশ প্রশাসনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। বেশ কিছুদিন পুলিশের কোনো কার্যক্রমই ছিল না।

নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর একটি ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে পুলিশ প্রশাসনকে নতুন করে গড়ে তুলছে। এই প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। এই গণ-অভ্যুত্থান সামগ্রিক ভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা পুলিশের মনোবলকে দুর্বল করে ফেলেছে। পুলিশের বেশ কিছু সদস্য এই গণ-অভ্যুত্থানে মারা গেছেন। এটিও গোটা বাহিনীর মনোবল ভেঙে যাওয়ার একটি বড় কারণ। ফলে ৫ আগস্টের পর তাঁরা আগের মতো উদ্যম এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন না। তাঁদের মধ্যে একটা ঢিলেঢালা ভাব। এক ধরনের আতঙ্ক এবং হতাশাগ্রস্ত মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন রাস্তায় কথায় কথায় অবরোধ এবং অবস্থান কর্মসূচিগুলোতে পুলিশ বাহিনী নিরাপদ দূরত্বে থাকছে। গা বাঁচিয়ে তামাশা দেখছে। পুলিশের এই হতাশাজনক অবস্থা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার প্রধান কারণ।

আমরা জানি, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন থানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লুট হয়েছিল। এসব অস্ত্র এখনো সন্ত্রাসীদের দখলে। অস্ত্র উদ্ধারের নামে যে অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, সেই অভিযান মোটেও সফল হয়নি। ফলে সন্ত্রাসীদের হাতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। পাশাপাশি ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী কারাগার থেকে মুক্তি পায়। তারা নতুন করে তাদের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। ফলে সারা দেশে চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বিচার নিজের হাতে তুলে নেওয়া এবং মব জাস্টিসের নামে এক ধরনের মতলববাজি সারা দেশে রীতিমতো আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরা এই সুযোগে যে যার মতো দখল বাণিজ্যে শামিল হয়ে প্রতিপক্ষের জমিজমা, ঘাট, হাট-বাজার ইত্যাদি সব দখল করে নিচ্ছে। দখল-পাল্টাদখল নিয়েও চলছে হানাহানি-খুনাখুনি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সারা দেশে নির্বিচারে নারী নিপীড়নের ঘটনা। বিশেষ করে মাগুরার আছিয়া গোটা বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে বিদায় নিয়েছে। এ রকম একটা নাজুক পরিস্থিতিতে শুধু সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কারণে এখনো মানুষের মধ্যে কিছুটা আশা আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একই রকম অবস্থান একটা পর্যায়ে মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে, হতাশ করে তোলে এবং মানুষ বিরক্ত হতে শুরু করছে। যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে কিছু দর্বৃত্ত মব করে হামলা চালাচ্ছে, লুটপাট করছে, আগুন লাগিয়ে বিচার নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, রাস্তায় কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে পেটানো হচ্ছে ইত্যাদি ঘটনাগুলো একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশে। এসব উদ্বেগজনক।

এ রকম একটি নাজুক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণেই দেশের অর্থনীতিতেও সৃষ্টি হয়েছে স্থবিরতা। ব্যবসায়ীরা কেউ নতুন বিনিয়োগ করছেন না। সাম্প্রতিক প্রধান উপদেষ্টা অর্থ মন্ত্রণালয়ের জন্য একজন বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছেন। ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদ। দেশে-বিদেশে তিনি বিভিন্ন উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক চিন্তার জন্য আলোচিত। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই একটি মতবিনিময়সভায় তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কে ব্যবসা করতে চাইবে? এই সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে মানুষের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। এই সরকার কত দিন টিকবে, সেটা মানুষ জানে না।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই সরকারের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য কী, সে সম্পর্কে একটা অস্পষ্টতা থাকার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ যেমন কমছে, তেমনি বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারাও বিনিয়োগে আগ্রহী নন। আমরা জানি, ৫ আগস্টের পর থেকে বহু শিল্প-কারখানা আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে দর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। অনেকে নিরুপায় হয়ে শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে লাখ লাখ শ্রমিক এখন বেকার। বেতন-ভাতার দাবিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন সড়ক অবরোধ হচ্ছে। সাধারণ চোখে আমরা মনে করতে পারি, বাংলাদেশ একটা নাজুক সময় পার করছে। দেশটির সার্বিক অবস্থা ভালো নয়।

কিন্তু আমরা যদি বিশ্বের যেকোনো দেশের বিপ্লবের তাৎপর্য অনুভব করি এবং বিপ্লবের পরবর্তী পরিস্থিতিগুলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করতে চাই, তাহলে দেখব, বিপ্লবোত্তর সমাজে এই ঘটনাগুলো স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে বিপ্লবের ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে নতুন সভ্যতার সূচনা হয়। নতুন দিন বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়। বাংলাদেশ এখন সেই নতুন বিনির্মাণের প্রাক-স্তরে রয়েছে। বাংলাদেশের গত ১৫ বছরে যে বিধিব্যবস্থা এবং আইন-প্রশাসন ইত্যাদি ছিল, সবই ছিল ভঙ্গুর, দলীয়করণে দুষ্ট। একটি নির্দিষ্ট দলকে ক্ষমতায় রাখার অভিপ্রায়ে আবর্তিত। এই অবস্থা থেকে একটি জনগণের সরকার এবং জনগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা অনেক কঠিন কাজ। ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ আসলে সেই কঠিন সময়টা পার করেছে। এ কারণেই হয়তো ঢাকার রাস্তায় ঘুরতে গিয়ে গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হান্না এলিস পিটারসেনের মনে হয়েছে, বাংলাদেশ খাদের কিনারে। সে জন্যই জনগণের মধ্যে সাময়িক অস্থিরতা, হতাশা। কিন্তু এই অস্থিরতা ও হতাশা বেশি দিন থাকবে না। অতীত ইতিহাস তাই বলে। হান্না এলিস পিটারসেন যদি বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো একটু গভীরভাবে অনুসন্ধান করতেন, এ দেশের মানুষের মনমানসিকতা, চেতনা, ঐতিহ্য এবং আকাঙ্ক্ষাগুলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতেন, তাহলে কিন্তু তিনি বাংলাদেশকে খাদের কিনারে দেখতেন না। তখন তিনি বাংলাদেশকে দেখতেন একটি নতুন অভিযাত্রার বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। তখন তিনি তাঁর লেখায় কবি সুকান্তকে উদ্ধৃত করতেন।

সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী

অবাক তাকিয়ে রয়:

জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার

তবু মাথা নোয়াবার নয়।

বাংলাদেশ যেন সেই রকমই একটি ঐতিহ্যকে ধারণ করে। যে দেশটি জ্বলে-পুড়ে ছারখার হওয়ার পরও আবার মাথা তুলে দাঁড়ায়। আবার ঘুরে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি। স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার অফুরন্ত সাহস। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক দুর্যোগ যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করে, ঘুরে দাঁড়ায়, হারে না, বাংলাদেশের মানুষ দমে না। নতুন স্বপ্নের জাল বোনে। এটাই হলো বাংলাদেশের ইতিহাস।

মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর আক্রমণ, হত্যা, লুণ্ঠন এবং অপারেশন সার্চলাইটের পরও বাংলাদেশ হারেনি। তখনো বাংলাদেশ খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের অকুতোভয় বীর জনগণ সেই খাদের কিনারা থেকে এক অভূতপূর্ব মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশকে মুক্ত করেছে। আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ।

অর্থনীতিবিদরা বলতেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভারাক্রান্ত বাংলাদেশ কখনো উন্নতি করতে পারবে না। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের একটি মডেল। যুক্তরাষ্ট্রের দুজন অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশ যদি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে, তাহলে সেটিই হবে বিশ্বের একটি মডেল। বিশ্বে তাহলে আর কোনো দেশেই ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবে না। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও শ্রম তাদের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ করেছে। স্বাধীনতার পর কেউ চিন্তা করেনি, বাংলাদেশ ক্ষুধা-দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশ সারা বিশ্বকে যেন অবাক করে দেওয়ার জন্যই জন্ম হয়েছে। আমরা দেখি, ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ পেরিয়ে বাংলাদেশ একটি সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের পথে অভিযাত্রা করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। এই দেশের ১৮ কোটি মানুষ অফুরন্ত প্রাণশক্তি দিয়ে খাদ্য উৎপাদন যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থনীতিকেও নিয়ে গেছে একটি সম্ভাবনার দুয়ারে। যার ফলে বাংলাদেশ সম্পর্কে স্বাধীনতার পর যে মূল্যায়ন করা হতো, সেই মূল্যায়ন ৫৩ বছর পর এসে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের সাফল্য। বাংলাদেশ সম্পর্কে তাই কোনো পূর্ব অনুমান ঠিক নয়। এ দেশের মানুষ আবেগপ্রবণ, ভালোবাসার আলিঙ্গনে আপনার জন্য সব কিছু উজাড় করে দেবে। এ দেশের মানুষ হাসতে হাসতে মরতে পারে। ধ্বংসস্তূপের অন্ধকারে নতুন স্বপ্নের সকাল গড়ে। বাংলাদেশ নিয়ে হতাশার মুহূর্তে এ দেশের জনগণ নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করে। আর এ কারণেই বাংলাদেশ নিয়ে আজ যে হতাশা বা দুর্ভাবনা, সেটি হয়তো শেষ বিচারে সঠিক হবে না। কারণ এ দেশের মানুষ পরাজয় মানে না, হার মানে না। একাত্তরে যেমন বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, তেমনি প্রমাণ করেছে চব্বিশে। বাংলাদেশ খাদের কিনারে নয়, বাংলাদেশ এখন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দুর্গম পথে। তবে এ দেশের জনগণের জয় অনিবার্য।

 

লেখক : নাট্যকার ও কলাম লেখক

auditekarim@gmail.com

 

মন্তব্য

সস্ত্রীক বিদেশ যেতে বাধা নেই ওরিয়ন চেয়ারম্যানের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সস্ত্রীক বিদেশ যেতে বাধা নেই ওরিয়ন চেয়ারম্যানের

ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রী মিসেস আরজুদা করিমের বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসা ও ওমরাহ হজ পালনের জন্য বিদেশ যেতে অনুমতি চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন ওবায়দুল করিম, তাঁর স্ত্রী আরজুদা করিম ও তাঁর মেয়ে জেরীন করিম। শুনানি শেষে আদালত ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশ যাওয়ার অনুমতির আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুল করিমসহ পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন আদালত। আবেদনে বলা হয়, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গোপন সূত্রে জানা যায়, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

তাদের বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন।

 

মন্তব্য
ডা. শফিকুর রহমান

শহীদ সেলিম ও মন্টু দাসের পরিবারের পাশে জামায়াত

ঝালকাঠি ও বরগুনা প্রতিনিধি
ঝালকাঠি ও বরগুনা প্রতিনিধি
শেয়ার
শহীদ সেলিম ও মন্টু দাসের পরিবারের পাশে জামায়াত
শফিকুর রহমান

রাজধানীতে জুলাইয়ে শহীদ সেলিম তালুকদারের শ্বশুরবাড়ি ঝালকাঠি শহরের কবিরাজবাড়ি এলাকায় গিয়ে তাঁর স্ত্রী-সন্তানের খোঁজখবর নিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল সোমবার দুপুরে ওই পরিবারকে সান্ত্বনা জানিয়ে শিশুটির দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

এর আগে গতকাল সকালে বরগুনায় নির্যাতিত শিশু এবং তার বাবা নিহত মন্টু চন্দ্র দাসের বাড়িতে গিয়ে অসহায় পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জামায়াতের আমির।

গতকাল দুপুরে হেলিকপ্টারে ঝালকাঠি শহরের পৌর মিনি স্টেডিয়ামে নামেন তিনি।

এ সময় জেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে শহীদ সেলিম তালুকদারের বাড়িতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা নবজাতক কন্যাসন্তানটির নাম রেখেছি সাইমা সেলিম রোজা। তার বেড়ে ওঠা, বিকশিত হওয়া, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিয়ে পর্যন্ত সব দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি।

দুপুরে ঝালকাঠি পৌর মিনি স্টেডিয়ামের সামনে এক পথসভায় জামায়াতের আমির বলেন, শহীদরা এ জাতির সম্পদ।

আমরা সবাই শহীদ পরিবারের সদস্য। জামায়াতে ইসলামী জুলাই-আগস্টের সব শহীদ পরিবারের প্রতি নৈতিক দায়িত্ব পালন করবে। 

তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি কল্যাণকর এবং মানবিক রাষ্ট্র গড়তে চাই। কোরআনের ভিত্তিতে একটি মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি আমরা।

সেই অভিযাত্রায় দেশবাসীকে পাশে থাকার আহ্বান জানাই।

জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে পথসভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বক্তব্য দেন ঝালকাঠি-২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী শেখ নেয়ামুল করিম, বরিশাল জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল জব্বার প্রমুখ। 

এর আগে, সকাল ১০টায় জামায়াতের আমির ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে বরগুনা সার্কিট হাউস মাঠে পৌঁছান। এরপর শহরের কালীবাড়ি এলাকায় মন্টু দাসের বাড়িতে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে উপহারসামগ্রী দেন। এরপর সকাল এগারোটায় বরগুনা শহীদ মিনারে এক পথসভায় অংশ নেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ আল-কোরআনে বলেছেন, যারা ধর্ষণ করে, তারা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। আমরা সামাজিকভাবে মজলুমের পাশে দাঁড়ালে, জুলুমকারী ভয় পাবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, বরগুনা জেলা আমির অধ্যাপক মহিবুল্লাহ হারুন প্রমুখ।

 

মন্তব্য
এনডিটিভিকে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র

    গ্যাবার্ডের মন্তব্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়নি : অন্তর্বর্তী সরকার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র
তুলসী গ্যাবার্ড

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটির গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বজুড়ে ইসলামী সন্ত্রাসবাদকে হারাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গতকাল সোমবার  সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়েছে।

এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন, হত্যা ও নিপীড়ন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।

এদিকে তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার স্পষ্ট করে বলেছে, তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তিনি তাঁর মন্তব্যে অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও হত্যা চলছে এবং বাংলাদেশের আদর্শ ও লক্ষ্যে ইসলামী সন্ত্রাসবাদীদের মূল নিহিত, যারা বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তাঁর এই বিবৃতি যেমন বিভ্রান্তিকর, তেমনি বাংলাদেশের সুনামের প্রতি অবিচার।

কারণ এই জাতি ঐতিহ্যগতভাবে ইসলামী রীতিনীতি অনুশীলন করে এবং সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে দেশটির প্রশংসনীয় অবস্থান রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোনো প্রমাণ ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়নি। তাঁর মন্তব্য পুরো জাতির ওপর কলঙ্ক লেপে দিয়েছে। বাংলাদেশ যেকোনো ধরনের ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থার নিন্দা জানায়।

তুলসী গ্যাবার্ড বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তবে এটি আমাদের উদ্বেগের কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।

এ সময় তিনি বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থা ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থানের কথা উল্লেখ করেন।

সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ড ইসলামী খিলাফত-এর আদর্শের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বজুড়ে চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো এমন একটি ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে। ইসলামী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক প্রচেষ্টা একই আদর্শ ও লক্ষ্যে নিবদ্ধ, যা হলো ইসলামী খিলাফতের মাধ্যমে শাসন বা শাসন করা।

তিনি আরো বলেন, এটি স্পষ্টতই অন্য যেকোনো ধর্মের মানুষকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে যারা তাদের গ্রহণযোগ্য ধর্মের বাইরে। তারা এটিকে সন্ত্রাস ও সহিংসতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চায়। সূত্র : এনডিটিভি

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ