আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠন। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর এসব বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা দ্রুততম সময়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানান। পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চললে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয় তারা।
গতকাল জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্রদক্ষিণ করে ইনকিলাব মঞ্চ। বিক্ষোভ মিছিল শেষে দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করে তারা।
এ সময় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিয়ে যদি নির্বাচন করা হয় তবে বাংলাদেশে রক্তের যমুনা বয়ে যাবে। দুই হাজারেরও বেশি শহীদ, ৫০ হাজারেরও বেশি অঙ্গহারা আহত ও তাদের মা-বাবার কসম, ওয়াসিম, মুগ্ধসহ শহীদদের রক্তের কসম—আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগকে দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেব না৷’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিক্ষোভ মিছিল
গতকাল দুপুর সোয়া ২টার দিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে দিয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
বিক্ষোভ সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মুখপাত্র আশরেফা খাতুন বলেন, ‘এখনো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আমাদের রাস্তায় নামতে হয়।
যেখানে পাঁচ আগস্ট নির্ধারণ হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ থাকবে কী থাকবে না। আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের পাঁয়তারা চলছে৷ যত দিন আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকবে তত দিন পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে ফিরতে দেব না। যত দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হয়, আওয়ামী লীগের বিচার না হয়, তত দিন পর্যন্ত আমরা রাস্তায় থাকব।’
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে নতুন মঞ্চ ঘোষণা
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে নতুন মঞ্চের ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সহসমন্বয়ক এবি জুবায়ের ও মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই মঞ্চের ঘোষণা করা হয়।
এ সময় মঞ্চ থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে আজ শনিবার বিকেল ৫টায় গণ-ইফতার ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
মঞ্চের বিষয়ে বলা হয়, ‘আপনি যে দলের, মতের হোন না কেন, আপনি যদি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক চান, তাহলে আমাদের পাশে দাঁড়ান। আপনারা যদি সত্যিকার অর্থে চান আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক, তাহলে আপনারা গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হোন। আমাদের প্ল্যাটফর্ম গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্ল্যাটফর্ম।’
গতকাল বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কাজ ছিল জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা, কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে গণভোট আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা কলেজে ও উত্তরায় বিক্ষোভ মিছিল
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা কলেজ ও রাজধানীর উত্তরায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল জুমার নামাজের পর ঢাকা কলেজের হলপাড়ায় জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এরপর মিছিলটি হলপাড়া ঘুরে কলেজের মূল ফটকের সামনে এসে শেষ হয়। এদিকে উত্তরায়ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জাবিতে বিক্ষোভ
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে চবিতে বিক্ষোভ মিছিল
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা এবং জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। গতকাল সাহরির আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭৫ সাল থেকে যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই এই দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ যে গণহত্যা চালিয়েছে, তার প্রতিটি ঘটনার বিচার করে দলটিকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৭২ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি
আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ আয়োজিত সমাবেশে এই দাবি জানানো হয়।
এর আগে দুপুর ২টার দিকে আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি আন্দরকিল্লা, লালদীঘি, কোতোয়ালি হয়ে নিউমার্কেটে গিয়ে শেষ হয়।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চবি প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম)

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। ছবি : কালের কণ্ঠ