<p>নবী-রাসুলরা আল্লাহর মনোনীত ও প্রেরিত পুরুষ। পৃথিবীর বুকে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতিষ্ঠা ও তাঁর দ্বিন প্রচারের জন্য আল্লাহ তাঁদের নির্বাচিত করেছেন। পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের ভেতর ২৫ জনের নাম পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে। এর মধ্যে ১৮ জনের নাম সুরা আনআমের ৮৩ থেকে ৮৬ নম্বর আয়াতে একত্রে বর্ণিত হয়েছে এবং বাকিদের নাম অন্যত্র এসেছে। মুসলিমরা নাম জানা ও অজানা সব নবী ও রাসুলকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। প্রথম মানুষ আদম (আ.)-এর মাধ্যমে পৃথিবীতে নবী আগমনের ধারাক্রম শুরু হয় এবং মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে তা শেষ হয়। ঐতিহাসিকরা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত নবী-রাসুলদের আগমনের একটি ধারাক্রম বর্ণনা করেন। এই ধারাক্রম যতটা না কোরআন-হাদিসনির্ভর, তার চেয়ে বেশি ইতিহাস-আশ্রিত। তবে কোরআনের আয়াত থেকেও নবী-রাসুলদের (আ.) ধারাক্রম সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। নিচে তা তুলে ধরা হলো—</p> <p> </p> <p><strong>আদম (আ.)</strong></p> <p>পৃথিবীর প্রথম মানব ও প্রথম নবী আদম (আ.)। তাঁর মাধ্যমেই নবী আগমনের ধারাক্রম শুরু হয়। আবু উমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করে, হে আল্লাহর রাসুল, আদম (আ.) কি নবী ছিলেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হ্যাঁ, আল্লাহর কালামপ্রাপ্ত (নবী ছিলেন)।’ (সহিহ আলবানি, হাদিস : ৩৫৯)</p> <p> </p> <p><strong>শিশ ইবনে আদম (আ.)</strong></p> <p>ঐতিহাসিকরা বলেন, আদম (আ.)-এর পর তাঁর পুত্র শিশ (আ.)-কে আল্লাহ নবী মনোনীত করেন। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘আদম (আ.) মারা যাওয়ার পর তাঁর পুত্র শিশ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, পৃষ্ঠা : ২৩২)</p> <p> </p> <p><strong>ইদরিস (আ.)</strong></p> <p>শিশ (আ.)-এর পর কোন নবীর আগমন হয়েছিল, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের ভেতর মতভিন্নতা রয়েছে। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.)-সহ এক দল ঐতিহাসিকের মত হলো, তিনি ছিলেন ইদরিস (আ.)। অন্যরা বলেছেন নুহ (আ.)।</p> <p> </p> <p><strong>নুহ (আ.)</strong></p> <p>নুহ (আ.) ছিলেন প্রথম রাসুল (যেসব নবী আল্লাহর পক্ষ থেকে শরিয়ত বা জীবনবিধান লাভ করেছিলেন)। পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে নুহ (আ.)-এর বর্ণনা এসেছে। তিনি তাঁর মূর্তিপূজারি জাতিকে সাড়ে ৯০০ বছর ইসলামের দাওয়াত দেন। কিন্তু খুব সামান্যসংখ্যক মানুষই তা গ্রহণ করে। অতঃপর তাদের অবাধ্যতার জন্য আল্লাহ মহাপ্লাবনের মাধ্যমে সেই জাতিকে ধ্বংস করে দেন। তাদের পরিণতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি নুহকে তার জাতির কাছে প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের মধ্যে ৫০ বছর কম এক হাজার বছর অবস্থান করে। অতঃপর মহাপ্লাবন তাদের গ্রাস করে। কারণ তারা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ১৪)</p> <p> </p> <p><strong>হুদ (আ.)</strong></p> <p>নুহ (আ.)-এর পর হুদ (আ.)-এর আগমন হয়। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা থেকেও বোঝা যায়, নুহ (আ.)-এর পর হুদ (আ.)-এর জাতির মাধ্যমে পৃথিবীতে নতুন সভ্যতার বিকাশ হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্মরণ করো, যখন নুহের পর তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৬৯)</p> <p> </p> <p><strong>সালেহ (আ.)</strong></p> <p>পবিত্র কোরআনের বর্ণনা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে হুদ (আ.)-এর জাতির পর সালেহ (আ.)-এর জাতির আবির্ভাব হয়। ইতিহাসে তারা ‘সামুদ’ নামে পরিচিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা স্মরণ করো, যখন আদ জাতির পর তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৭৪)</p> <p> </p> <p><strong>ইবরাহিম (আ.)</strong></p> <p>মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর আগমন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের পূর্ববর্তী নুহ, আদ, সামুদ সম্প্রদায়, ইবরাহিমের সম্প্রদায় এবং মাদিয়ান ও বিধ্বস্ত নগরের অধিবাসীদের সংবাদ কি তাদের কাছে আসেনি?’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭০)</p> <p>এই আয়াতের বিবরণ থেকে ধারণা হয়, সামুদ সম্প্রদায়ের পর ইবরাহিম (আ.)-এর আগমন হয়। তাঁর সম্প্রদায়ের নাম ছিল সাবিয়া। তারা চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ ও নক্ষত্রগুলোর পূজা করত। তিনি তাদের একত্ববাদের পথে আহ্বান জানান। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করে এবং ইবরাহিম খলিলুল্লাহ (আ.)-কে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু আল্লাহ তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন।</p> <p> </p> <p><strong>লুত (আ.)</strong></p> <p>ইবরাহিম (আ.)-এর যুগেই লুত (আ.) প্রেরিত হন। কোরআনের বিবরণ থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘লুত তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল। ইবরাহিম বলল, আমি আমার প্রতিপালকের উদ্দেশে দেশত্যাগ করছি। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২৬)</p> <p> </p> <p><strong>শোয়াইব (আ.)</strong></p> <p>লুত (আ.)-এর অল্প কিছুদিন পরই শোয়াইব (আ.) তাঁর দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করেন। কোনো ঐতিহাসিকের দাবি, তিনি ক্যালেডীয় অঞ্চলে আগমন করেন। পবিত্র কোরআনে তাঁর আগমনকাল সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘লুতের জাতি তোমাদের খুব বেশি আগের নয়।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৮৯)</p> <p> </p> <p><strong>ইসমাঈল (আ.)</strong></p> <p>ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী হাজেরা (আ.)-এর ঔরসে জন্ম হয় ইসমাঈল (আ.)-এর। তিনি পবিত্র কাবাঘর নির্মাণে তাঁর পিতাকে সাহায্য করেন। ইসমাঈল (আ.)-কে আরব জাতির পিতা বলা হয়। তাঁর বংশধররা আরবসভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন তাঁর বংশধর। তিনি আমালিক ও জুরহুম গোত্রের লোকদের মধ্যে এবং ইয়ামান অধিবাসীদের দ্বিনের দাওয়াত দেন।</p> <p> </p> <p><strong>ইসহাক (আ.)</strong></p> <p>ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী সারার ঔরসে জন্ম নেন ইসহাক (আ.)। তাঁর বংশধরদের মধ্য থেকে অসংখ্য নবী ও রাসুলের আগমন হয়। তাঁদের বেশির ভাগই বনি ইসরাঈলের নবী হিসেবে আগমন করেন।</p> <p> </p> <p><strong>অবশিষ্ট নবীদের ধারাক্রম</strong></p> <p>ইসহাক (আ.)-এর বংশধারা থেকে আল্লাহ একাধিক নবী প্রেরণ করেন। তাঁদের ধারাক্রম এমন—ইয়াকুব (আ.), ইউসুফ (আ.), আইয়ুব (আ.), জুলকিফল (আ.), ইউনুস (আ.), মুসা (আ.), হারুন (আ.), খিজির (আ.), ইউশা ইবনে নুন (আ.), ইলিয়াস (আ.), দাউদ (আ.), সোলাইমান (আ.), জাকারিয়া (আ.), ইয়াহইয়া (আ.) ও ঈসা (আ.)। এসব নবীর বেশির ভাগ বনি ইসরাঈলের প্রতি প্রেরিত হয়।</p> <p> </p> <p><strong>সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)</strong></p> <p>আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ বিন আবদুল মুত্তালিব (সা.)-এর মাধ্যমে নবী-রাসুলের ধারাক্রমের ইতি টানেন। তিনি ছিলেন ইসমাঈল (আ.)-এর বংশধর। মক্কার কোরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষের নবী। তাঁর পরে আর কোনো নবী আগমন করবেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন, তবে তিনি আল্লাহর রাসুল এবং সর্বশেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে অবগত।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪০)</p> <p style="text-align:right"><strong>মওদু ডটকম অবলম্বনে</strong></p>