<p>মানুষ মাতৃগর্ভে অবয়ব লাভ করার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ফেরেশতারা তাদের সঙ্গে থাকেন। পার্থিব জীবনের মতো তাঁরা পরকালেও মানুষের সঙ্গী হবেন। মানুষ যদি পুণ্যবান হয়, তবে সঙ্গের ফেরেশতারা আল্লাহর দরবারে তাদের প্রশংসা করেন। মানুষের আমল মন্দ হলে আল্লাহর দরবারে তাঁরা মানুষের জন্য অভিশাপ করেন।</p> <p> </p> <p><strong>পার্থিব জীবনের সঙ্গী ফেরেশতা</strong></p> <p>পার্থিব জীবনে যেসব ফেরেশতা মানুষের সঙ্গী হন তাঁদের কয়েকজন হলো—</p> <p><strong>১. মাতৃগর্ভ থেকে মানুষের সঙ্গী :</strong> ফেরেশতারা মাতৃগর্ভ থেকে মানুষের সঙ্গী। মাতৃগর্ভেই আল্লাহ মানুষের ভাগ্যলিপি লেখার জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ মাতৃগর্ভে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, হে প্রতিপালক! এটি বীর্য। হে প্রতিপালক! এটি রক্তপিণ্ড। হে প্রতিপালক! এটি গোশতপিণ্ড। আল্লাহ যখন তার সৃষ্টি পূর্ণ করতে চান, তখন ফেরেশতা বলে, হে প্রতিপালক! এটি নর হবে, না নারী? এটি দুর্ভাগা হবে, না ভাগ্যবান? তার জীবিকা কী পরিমাণ হবে? তার জীবনকাল কী হবে? তখন (আল্লাহর নির্দেশমতো) তার মায়ের পেটে থাকাকালে তা লিখে দেওয়া হয়।’</p> <p>(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৫৯৫)</p> <p><strong>২. মানুষের নিরাপত্তায় ফেরেশতা : </strong>আল্লাহ মানুষের নিরাপত্তায় বিশেষ ফেরেশতা নিয়োগ দেন। তাঁদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের জন্য তার সামনে ও পেছনে একের পর এক প্রহরী থাকে; তারা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে। আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে। কোনো সম্প্রদায়ের সম্পর্কে যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন তবে তা রদ হওয়ার নয় এবং তিনি ছাড়া তাদের কোনো অভিভাবক নেই।’ (সুরা : রাআদ, আয়াত : ১১)</p> <p>উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রহ.) বলেন, আল্লাহ মানুষের নিরাপত্তায় সব সময় ফেরেশতা নিয়োজিত রাখেন। তাঁরা তাদের সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন। কিন্তু আল্লাহ যখন অকল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন ফেরেশতা নিরাপত্তা দান থেকে বিরত থাকেন।</p> <p><strong>৩. পাপ ও পুণ্য লিপিবদ্ধ করেন ফেরেশতা :</strong> আল্লাহ মানুষের পাপ ও পুণ্যের কাজ লিপিবদ্ধ করতে ফেরেশতা নিয়োজিত করেন। তাঁরা মানুষের ভালো-মন্দ, ছোট-বড় সব ধরনের কাজ লিপিবদ্ধ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই আছে তোমাদের জন্য তত্ত্বাবধায়কগণ, সম্মানিত লিপিকরবৃন্দ, যারা জানে তোমরা যা করো।’ (সুরা : ইনফিতার, আয়াত : ১০-১২)</p> <p><strong>৪. মুমিন বান্দার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা :</strong> ফেরেশতারা আল্লাহর অনুগত মুমিন বান্দাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আরশ বহন করছে এবং তার পাশে রয়েছে, তারা তাদের প্রভুর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করে, তার প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের প্রভু, আপনার জ্ঞান ও অনুগ্রহ সব কিছুকে আবৃত করে রেখেছে। আপনি তাদের ক্ষমা করুন, যারা তাওবা করেছে ও আপনার পথ অনুসরণ করেছে। তাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।’</p> <p>(সুরা : গাফির, আয়াত : ৭)</p> <p><strong>৫. মুমিনের জন্য দোয়া করা :</strong> মানুষ যখন কোনো নেক আমল করে, তখন ফেরেশতারা মানুষের জন্য দোয়া করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে রাত যাপন করেন, তাঁর শিয়রে একজন ফেরেশতা রাত যাপন করেন। তিনি যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হন (কোনো কোনো বর্ণনা মতে, যতবার ঘুমের ভেতর নড়াচড়া করেন) তখন ওই ফেরেশতা বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! অমুককে মাফ করে দিন। কেননা তিনি পবিত্র অবস্থায় রাত যাপন করেছেন।’</p> <p>(সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১০৫১)</p> <p><strong>৬. মৃত্যুর সময় থাকেন ফেরেশতা : </strong>মাতৃগর্ভে যেমন ফেরেশতা আল্লাহর নির্দেশে ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেন, তেমনি মৃত্যুর সময় হলে তাঁর আত্মাও ফেরেশতারা নিয়ে যান। মৃত্যুর পর মানুষের আত্মা আল্লাহর দরবারে ফেরেশতারাই উপস্থাপন করে থাকেন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য নিযুক্ত মৃত্যুর ফেরেশতারা তোমাদের জীবন সংহার করবেন। অতঃপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে।’</p> <p>(সুরা : সিজদা, আয়াত : ১১)</p>