<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানুষ মাটি থেকে সৃষ্ট, ভূপৃষ্ঠে তার বিচরণ এবং মাটিতেই হয় তার শেষ ঠিকানা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি মাটি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তাতেই তোমাদের ফিরিয়ে দেব এবং তা থেকে পুনর্বার তোমাদের বের করব।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা : তাহা, আয়াত : ৫৫)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাভাবিক নিয়ম হলো মানুষ মারা গেলে তাকে মাটিতে দাফন করা হয় এবং তার দেহ মাটিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, যা বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণিত। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতেও এর প্রমাণ মেলে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সে কি তোমাদের এই প্রতিশ্রুতিই দেয় যে তোমাদের মৃত্যু হলে এবং তোমরা মাটিতে ও অস্থিতে পরিণত হলেও তোমাদেরকে উত্থিত করা হবে?</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৩৫) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের লাশ মাটিতে বিলীন হয়ে যায় না, মাটি তাঁদের দেহ খায় না। আল্লাহ তাঁদের সম্মান ও মর্যাদা প্রমাণের জন্য তাঁদের দেহ অক্ষত রাখেন। তাঁরা হলেন নবী, শহীদ ও ওলি তথা তাঁর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দারা। তাঁদের মধ্যে নবীদের দেহ অক্ষত থাকার বিষয়টি বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। ধর্মতাত্ত্বিক আলেমরা বলেন, নবী-রাসুলদের একটি অভিন্ন মুজিজা হলো কবরে তাঁদের দেহ অক্ষত থাকা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিশ্চয়ই আল্লাহ মাটির ওপর নবীগণের দেহ খেয়ে ফেলা হারাম করেছেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">(সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৬৩৬)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একইভাবে শহীদের লাশ অক্ষত থাকার ব্যাপারেও একাধিক ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, জাবের (রা.) বলেন, উহুদের যুদ্ধের ৪০ বছর পর মুয়াবিয়া (রা.) উহুদের যুদ্ধক্ষেত্রের কাছে একটি খাল খনন করেন। তখন আমাদের ডাকা হয়। আমরা শহীদদের লাশ স্থানান্তরিত করি। তখন হামজা (রা.)-এর পায়ে আঘাত লেগে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে। জাবের (রা.) বলেন, আমরা যখন তাঁদের বের করলাম তখন দেখে মনে হলো তাঁদেরকে গতকাল দাফন করা হয়েছে। এই সময় আমার পিতাকে তাঁর কবরে পাওয়া যায়। যেন তিনি ঘুমিয়ে আছেন। তাঁদের সবার কবর থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৪/৮২)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল্লামা ইদ্রিস কান্ধলভি (রহ.) লেখেন, উহুদের শহীদদের লাশ স্থানান্তরিত করার ঘটনা মোট তিনবার ঘটেছে : ক. ছয় মাস পর, খ. ৪০ বছর পর খাল খননের সময়, গ. ৪৬ বছর পর বন্যা হলে। (হায়াতুস সাহাবা : ৫/২৫১)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নবী ও শহীদের মতো সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত না হলেও গবেষক ও পণ্ডিত আলেমরা বলেছেন, আল্লাহর ওলি ও প্রিয় বান্দাদের লাশও আল্লাহ সংরক্ষণ করেন। আল্লামা কুরতুবি (রহ.) বলেছেন, এ কথা প্রমাণিত নবী, ওলি ও শহীদদের দেহ মাটি খায় না। নিশ্চয়ই আল্লাহ মাটির ওপর তাঁদের দেহ ভক্ষণকে হারাম করে দিয়েছেন। (তাফসিরে কুরতুবি : ৯/৬)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল্লামা মুনাবি (রহ.) বলেন, ১০ শ্রেণির মানুষের দেহ মাটি নিঃশেষ করে ফেলে না। তাঁরা হলেন নবী, শহীদ, সিদ্দিক (সত্যবাদী), আমলদার আলেম, নামাজের সময়ের হিসাব সংরক্ষণকারী মুয়াজ্জিন এবং কোরআনের বাহক যে কোরআন মেনে চলে, ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষী, মহামারিতে মৃত ব্যক্তি যে ধৈর্যধারণ করেছিল, বেশি পরিমাণ জিকিরকারী, আল্লাহর জন্য যারা পরস্পরকে ভালোবাসে। অর্থাৎ সাধারণত সব মানুষের দেহ মাটি খেয়ে ফেলে, তবে তাদের মধ্যে অনেকের দেহ মাটি খায় না। (ফয়জুল কাদির : ৫/৯; শরহুজ জারকানি আল মুয়াত্তায়ে মালিক : ২/৩৩)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখানে স্মরণীয় যে কারো লাশ কবরে মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া তিনি পাপী হওয়ার প্রমাণ নয়। কেননা কবরস্থ দেহ মাটিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। আবার মাটির বৈশিষ্ট্যের কারণে কোনো কোনো অমুসলিমের কবরও অক্ষত পাওয়া যেতে পারে। তবে কোনো কোনো ঈমানদারের কবর বা লাশ অলৌকিকভাবে অক্ষত থাকাও ইসলামে প্রমাণিত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল্লাহ সবাইকে তাঁর নৈকট্য দান করুন। আমিন।</span></span></span></span></p>