ঢাকা, সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫
১৭ চৈত্র ১৪৩১

ঢাকা, সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫
১৭ চৈত্র ১৪৩১

দীপকদা বললেন ‘উঠে গেলি,উঠে গেলি!’

  • জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। খ্যাতিমান অভিনেতা ও আবৃত্তিশিল্পী। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন অসংখ্য নাটক ও চলচ্চিত্রে। বেতার ও যাত্রামাধ্যমেও অভিনয় করেছেন। তাঁর জীবনের গল্প শুনেছেন পিন্টু রঞ্জন অর্ক।
  • ছবি তুলেছেন মোহাম্মদ আসাদ
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
দীপকদা বললেন ‘উঠে গেলি,উঠে গেলি!’

সাতক্ষীরায় জন্ম আপনার?

আমার জন্ম সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে, ১৯৪৬ সালের ২৮ জুলাই। সেখানে আমাদের পরিবারের বাস প্রায় সাড়ে ৪০০ বছরের। বাংলাদেশের প্রাচীন পরিবারগুলোর মধ্যে আমাদেরটিও একটি। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে আমি অষ্টম।

বাড়িতে সবাই খোকন নামে ডাকত; রবিবার জন্মেছি বলে গ্রামের লোকেরা ডাকত রবিবাবু।

 

পরিবারে সাংস্কৃতিক আবহ ছিল?

বিরাট বাড়ি ছিল আমাদের। বাবা-কাকারা ছিলেন ১২ ভাই। গ্রামের অধিবাসীদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমানের অনুপাত ছিল আধা-আধি।

বছরে দুটি নাটক আর যাত্রা হতো বাড়িতে। বাবা বাড়িটা এমনভাবে তৈরি করেছিলেন, সামনের স্পেসটা ছিল বড় স্টেজের মতো। বাড়ির পাশে পুকুর ছিল। তার পাশে আট চালা একটি টিনের ঘর।
সেখানে প্রায় সারা বছর মহড়া চলত। বাড়ির পাশেই নদী। সেখানে নৌকাবাইচ হতো। এর জন্যও মহড়া চলত এক মাস আগে থেকে। লাঠিখেলায় নেতৃত্ব দিতেন বরকতউল্লাহ সরদার ও বলাই সরদার।
তাঁদের পদবী সরদার। অনেক আগে তাঁদের পূর্বপুরুষ ডাকাত ছিল। আমাদের পরিবার তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছিল। গ্রামে ঘোড়দৌড়ও হতো। আমাদের পাশের গ্রাম হাজীপুর। ওটার দক্ষিণ দিকে সুন্দরবন। বন কেটে আবাদ করতেন দাদু। সে জন্য হাজারীবাগ, মানভূম, সিংভূম থেকে ১০ হাজার আদিবাসী নিয়ে এসেছিলেন। বনের গাছ কেটে চারটি ইউনিয়ন তৈরি করে দিয়েছিলেন তাঁরা। এসব আমার জন্মের অনেক আগের কথা। বনের গাছ কাটতেন বলে তাঁদের ডাকা হতো বুনো। এখন তাঁরা চারটি গ্রামে আছেন। বাকিরা চলে গেছেন নানা অত্যাচারে। এই বুনোদের মধ্যে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। বুনোপাড়া থেকে তাঁরা আসতেন। তাঁরা গরু, ভেড়া পালতেন। মোরগ আর ভেড়ার লড়াই তাঁদের কাছ থেকেই আসা। সব মিলিয়ে গ্রামে সারা বছর উত্সব লেগে থাকত। মেলায় সার্কাস দল আসত, জাদুকর আসত। আমাদের উঠতি বয়সে অন্য কোনো দিকে তাকানোর সুযোগ ছিল না। আজ থেকে ৫০ বছর আগে আমাদের গ্রামে ক্রিকেট খেলা হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ক্রিকেটের নামই জানত না তখন। আমরা কোনো দিন প্রাইভেট পড়িনি। স্কুলই যথেষ্ট ছিল। আমাদের নকীপুর হরিচরণ হাই ইংলিশ স্কুলটি ১২০ বছর আগেকার। শিক্ষকদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল পিতা-পুত্রের মতো। ভয় পেতাম, আবার শ্রদ্ধাও করতাম।

 

প্রথম অভিনয়?

বাড়িতে আসা যাত্রাদলে পেশাদার অভিনেতাদের পাশাপাশি অল্প বয়সী গায়ক-গায়িকারাও ছিল। একবার এমনই এক শিশু অভিনেতা অসুস্থতার কারণে আসতে পারল না। যাত্রায় বিবেকের চরিত্রে অভিনয় করবেন আমার কাকা। বিবেকের সঙ্গে মন্দিরা বাজাবে কে? গানের ধুয়ো ধরবে কে? তাঁর আবার সংলাপও আছে দুটি। পরচুলা দিয়ে বাউলের ঝুঁটির মতো বেঁধে, গেরুয়া লুঙ্গি পরিয়ে, মেকআপ করিয়ে আমাকে মঞ্চে তুলে দেওয়া হলো। আমার তখন পাঁচ-ছয় বছর বয়স।

 

আবৃত্তির হাতেখড়িও পরিবারেই?

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ