মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের মতো সশস্ত্র বাহিনীকেও যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। দেশের যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময়ে, অর্থাৎ দিনে বা রাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যাবে। ছুটির দিনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায়ও কোনো বাধা থাকবে না। মোবাইল কোর্টসংক্রান্ত নির্দেশনায় শৃঙ্খলা বাহিনীসহ যেকোনো সরকারি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সহযোগিতা করতে বাধ্য থাকবে।
বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত
মোবাইল কোর্টে যুক্ত হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী
বাহরাম খান

সম্প্রতি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অধীনে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের শাস্তির বেশ কয়েকটি ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। মোবাইল কোর্ট নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের আগে থেকেই ‘মোবাইল কোর্ট বিধিমালা, ২০২১’-এর খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছিল। মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯-এর অধীনে এসংক্রান্ত খসড়া তৈরি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মোবাইল কোর্ট আইনের বৈধতা নিয়ে মামলা চলছে উচ্চ আদালতে। হাইকোর্ট বিভাগ আইনের কয়েকটি ধারা ও উপধারা অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন। সরকারপক্ষ আপিলে গেলে আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন, যার শুনানি এখানো হয়নি। রায় স্থগিত থাকায় আইনের বিধিমালা প্রণয়নে বাধা নেই বলে মনে করেন রিট মামলার বাদী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান আজীম।
মোবাইল কোর্ট আইন প্রণয়নের পর থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় জনবল পেতে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেটদের। যদিও মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯-এর ১২(১) ধারায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট সরকারি কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রদানে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, কিন্তু এই সহায়তা না দিলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা আইনে নেই। খসড়া বিধিমালার বিধি ১৮(২) অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা বা আদালত অবমাননার দায়ে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। বিধি ১৮(৩) এই অসহযোগিতা প্রমাণিত হলে দণ্ডবিধির ১৮৭ ধারার অপরাধ সংঘটনের দায়েও সরকারি ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। দণ্ডবিধির ১৮৭ ধারা অনুযায়ী, কেউ সরকারি কাজের প্রয়োজনে ইচ্ছাকৃতভাবে সহযোগিতা না করলে সংশ্লিষ্টদের জন্য ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
এদিকে মোবাইল কোর্ট আইনের ১২(১) ধারায় মোবাইল কোর্টকে সহযোগিতার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সাধারণ সময়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে পুলিশ, র্যাবের সহযোগিতা নেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা, কিন্তু প্রস্তাবিত বিধিমালার বিধি ২-এ ‘শৃঙ্খলা বাহিনী’-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘অর্থ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫২-এর উপ-অনুচ্ছেদ (১)-এ বর্ণিত এবং অন্যান্য আইনে ঘোষিত শৃঙ্খলা বাহিনীকে বোঝাবে।’ এর মাধ্যমে নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীকেও বোঝানো হয়েছে। সংবিধানের ১৫২(১)-এ ‘শৃঙ্খলা বাহিনী’ বলতে ‘(ক) স্থল, নৌ বা বিমানবাহিনী; (খ) পুলিশ বাহিনী; (গ) আইনের দ্বারা এই সংজ্ঞার অর্থের অন্তর্গত বলিয়া ঘোষিত যেকোনো শৃঙ্খলা বাহিনী’কে বোঝানো হয়েছে।
মূল আইনে সশস্ত্র বাহিনীর কথা উল্লেখ না থাকায় বিধিমালায় তা অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ আছে কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, বিধিমালা মূলত আইনের অধীন। তাই আইনে যা নেই বিধিমালায় এসংক্রান্ত মৌলিক কোনো বিষয় যুক্ত করার সুযোগ নেই।
অন্যদিকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনে সুনির্দিষ্ট কোনো সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি। খসড়া বিধিমালার ৪(৪) বিধিতে বলা হয়েছে, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বা অপরাধ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে সরকারি ছুটির দিনসহ দিনে অথবা রাতের যেকোনো সময়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যাইবে।’ অর্থাৎ বছরের ৩৬৫ দিনের রাত কিংবা দিনের যেকোনো সময়েই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যাবে।
বর্তমানে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের বিচারকরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিচারসংশ্লিষ্ট আদেশ বা কাগজপত্রের নকল দেওয়ার ক্ষেত্রে সময়ের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। প্রস্তাবিত বিধিমালার ২০(৬) বিধিতে সেটা পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে দেওয়ার বাধ্যবাধ্যকতা রাখা হয়েছে। এতে অভিযুক্ত ব্যক্তি তুলনামূলক দ্রুত মামলাসংশ্লিষ্ট কাগজ পেতে সুবিধা হবে। বিধি ২১-এ ডিজিটাল আলামতকে অপরাধের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করারও সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘মোবাইল কোর্ট ও আপিল আদালতের কার্যক্রমে প্রয়োজনবোধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর ও বায়োমেট্রিকস ব্যবহার করা যাইবে এবং অপরাধসংশ্লিষ্ট আলোকচিত্র, অডিও, ভিডিও বা উপযুক্ত অন্য কোনো উপায়ে গৃহীত তথ্য বা উপাত্তকে অপরাধের প্রমাণ বা আলামত হিসেবে ব্যবহার করা যাইবে।’
এদিকে বিশেষ প্রয়োজন ও পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্টকে সহযোগিতা করতে পারেন বা করে থাকেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র কালের কণ্ঠকে জানায়, জাতীয় নির্বাচন বা দেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। তাঁরা ‘আইন-শৃঙ্খলা’ রক্ষা বাহিনীর সদস্য নন, তাঁদের পরিচয় ‘শৃঙ্খলা বাহিনীর’ সদস্য হিসেবে। যেমন—জাতীয় নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকেন। তখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে তাঁদের বিভিন্ন মোবাইল কোর্ট অভিযানে নেওয়া যায়। অন্যদিকে বর্তমানে করোনায় চলা বিশেষ সময়েও একাধিকবার ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করেছে সরকার।
মাঠ প্রশাসনের একাধিক ডিসি ও ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাকালে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় যখন সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকে, সেই ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় তাদের সহযোগিতা নেওয়া যায়। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র কালের কণ্ঠকে জানায়, বিশেষ পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনী যখন মাঠে থাকে তখন স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের কাজে লাগায়। কিন্তু আইনগত বা বিধির মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীকে মোবাইল কোর্টের সঙ্গে যুক্ত করার সুযোগ নেই। বিধিটি যেহেতু খসড়া পর্যায়ে, চূড়ান্ত পর্যায়ে এটি বাতিল করতে হবে বলেই মনে হয়।
সম্পর্কিত খবর

চট্টগ্রামের ডিসি হিল
মিছিল নিয়ে এসে মঞ্চ ভাঙচুর, বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে না, আটক ৬
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে মঞ্চ এবং আশপাশের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। এ সময় তারা শেখ হাসিনার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেয়।
সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের ব্যানারে এখানে বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয়ে আসছে।
ভাঙচুরের আগে বিকেল সাড়ে ৪টায় জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে ২০টি সংগঠনের একটি তালিকা দেওয়া হয় আয়োজকদের।
‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার চিহ্নিত দোসরদের নেতৃত্বে বাংলা নববর্ষ অনুষ্ঠান উদযাপন আয়োজনের প্রতিবাদে’ এই মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মূলত জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস), বিএনপির সহযোগী সংগঠন মিলে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
যারা এসব অভিযোগ তুলেছেন, তাঁরাই সন্ধ্যায় ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে আয়োজকদের অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শী সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ আলী বলেন, সন্ধ্যার দিকে ৪০ জনের মতো একটি দল মিছিল নিয়ে আসে। তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। এ সময় ‘হাসিনার দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান, হাসিনার ফাঁসি চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়। ঘটনাস্থলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল করিম বলেন, একটি মিছিল এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভাঙচুর করে চলে গেছে। বিষয়টা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
জানতে চাইলে পরিষদের সমন্বয়ক সুচরিত দাশ বলেন, ‘আমরা সোমবার (আজ) আর পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান করব না। যারা বিভিন্ন সংগঠনের নামে অভিযোগ দিয়েছে, তারাই এই ভাঙচুর করেছে। এভাবে আর অনুষ্ঠান করা যায় না। প্রশাসন শুরু থেকে আমাদের অনুমতি দিতে গড়িমসি করেছে। অসহযোগিতা করেছে। এ কারণে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাসাসের সদস্যসচিব ও নববর্ষ উদযাপন মঞ্চের সংগঠক মামুনুর রশিদ (শিপন) বলেন, ‘তারা হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে চায়। যারা ডিসি হিলে অনুষ্ঠান করছে, তারা দোসর। আমরা মানববন্ধন করে ডিসিকে স্মারকলিপি দিয়েছি। ভাঙচুরের বিষয়ে অবগত নই।’
জানতে চাইলে রাত পৌনে ৯টার দিকে নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের থানায় নেওয়া হয়েছে। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা


নারায়ণগঞ্জের আলোচিত জাকির খানের কারামুক্তি শহরজুড়ে শোডাউন
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলোচিত-সমালোচিত সেই জাকির খান কারামুক্তি লাভ করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ ফোরকান ওয়াহিদ বলেন, সকালে তিনি নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে বের হয়েছেন। তিনি ১৯ মার্চ কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে অবস্থান করছিলেন।
জাকির খানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাজিব মণ্ডল গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘদিন পর জাকির খান মুক্ত বাতাসে ফিরেছেন।
মুক্তি পেয়ে জাকির খান বলেন, ‘তারেক রহমানের ৩১ দফা দাবি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বাস্তবায়ন করবই। আমার শরীরের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে দিলেও নারায়ণগঞ্জবাসীর ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না।
এদিকে জাকির খানের কারামুক্তি উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নারায়ণগঞ্জ কারাগারের সামনে ভিড় করে। সাউন্ড বক্স, শত শত মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে কারাগারের সামনে জড়ো হয় তারা। সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নেতাকর্মীদের মধ্যে হৈ-হুল্লোড় পড়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সোহেল রানা বলেন, সকাল থেকেই একজনের কারামুক্তিকে ঘিরে সড়কে মানুষের প্রচুর চাপ ছিল। পরে তারা বিশাল শোভাযাত্রা করে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চারটি হত্যা মামলাসহ মোট ৩৩টি মামলার আসামি ছিলেন জাকির খান। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর র্যাব-১১-এর একটি অভিযানে ঢাকার একটি আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন মামলায় জামিন পান তিনি। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি সাব্বির আলম হত্যা মামলার রায়ে তিনি এবং মামলার অন্য আসামিরা খালাস পান।

শাহজাদপুরে আ. লীগ সমর্থক ও ফুলবাড়িয়ায় বাবা-ছেলেকে হত্যা
- পৃথক স্থানে আরো ছয় খুন
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে খাসজমি দখল নিয়ে যুবদল নেতার লোকজনের হামলায় আওয়ামী লীগের এক সমর্থক নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় সালিসে না আসায় বাবা ও ছেলেকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
নেত্রকোনার মদনে ছাগলে ধান খাওয়া নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, নরসিংদীতে একজন, বরিশালের গৌরনদীতে একজন, বগুড়ার ধুনটে একজন ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক গৃহবধূ খুনের ঘটনা ঘটেছে।
শাহজাদপুর : নিহত মদিন মোল্লা (৫৫) বড়ধুনাইল গ্রামের মৃত সগির মোল্লার ছেলে ও আওয়ামী লীগের জাফর মোল্লা পক্ষের লোক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়ধুনাইল গ্রামে একটি সরকারি খাসজমি আওয়ামী লীগ সমর্থক জাফর মোল্লার দখলে ছিল। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর যুবদল নেতা আব্দুর রাজ্জাক সেখের পক্ষ ওই জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে জাফর ও রাজ্জাকপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।
শাহজাদপুর থানার ওসি আসলাম আলী বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই হামলাকারীরা পালিয়েছে। মদিন মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
ফুলবাড়িয়া : ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার নাওগাঁও ইউনিয়নের নাওগাঁও দক্ষিণপাড়া গ্রামে গতকাল মাদক ব্যবসা ও চুরির অভিযোগে সালিস বৈঠক বসানো হয়। সেই সালিস থেকে শত শত মানুষ গিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে আ. গফুর (৪০) ও তাঁর ছেলে মেহেদী হাসানকে (১৫) কুপিয়ে হত্যা করে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে গফুরের বাড়িসংলগ্ন নাওগাঁও হোসেনীয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার সামনে গ্রামের শত শত মানুষের সালিস বসে। সালিসকালে আ. গফুর ছেলেসহ উপস্থিত না হয়ে নিজ ঘরে রামদা নিয়ে বসে ছিলেন। এ সময় সালিস থেকে লোকজন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। পরে শত শত মানুষ রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে গিয়ে হারুন অর রশিদ নামের একজনের বাসা, দোকানঘর ও একটি মাজার ভাঙচুর করে।
বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার কাজী আখতারুল আলম। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রামটি প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিস বসেছিল। সালিস থেকে গিয়ে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটায়।’
মদন : নেত্রকোনার মদনে ছাগলে ধান খাওয়া নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইমাম হোসেন (৫৫) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নারীসহ অন্তত ১৮ জন আহত হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের আখাশ্রী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, আখাশ্রী গ্রামের কৃষক সোনাতন মিয়ার একটি বোরো ক্ষেতের ধান খাচ্ছিল একই গ্রামের আকবর মিয়ার ছাগল। এ নিয়ে গতকাল বিকেলে দুই পক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। এ পর্যায়ে তারা দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মো. জামাল মিয়া (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার রাতে সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাঁটিহাতা গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নরসিংদী : নরসিংদীর শিবপুরে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে (৩৫) গলা টিপে হত্যার পর স্বামী তারেক মিয়া (৪০) পালিয়ে গেছেন। পুলিশ জানায়, রবিবার সকালে বাড়ির লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে খাদিজার মরদেহ দেখতে পায়।
গৌরনদী : বরিশালের গৌরনদীর সিংগা গ্রামে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় দেলোয়ার হোসেন ফকির (৫৫) খুন হয়েছেন।
ধুনট : বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বাবার ঘর থেকে গতকাল প্রাপ্তি বালা (১১) নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পঞ্চম শ্রেণির এই শিক্ষার্থীর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ঝুলন্ত অবস্থায় ঝর্না (২৪) নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী মো. শারফিনকে (৩৪) আটক করেছে পুলিশ। ঝর্নাকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।