<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যশোর শহরে হোটেল জাবিরে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। শহরের সবচেয়ে উঁচু ১৭ তলা এই ভবনটি পদ্মার দক্ষিণের ২১ জেলার একমাত্র পাঁচতারা হোটেল। মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শাহীন চাকলাদার।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><img alt="ক্ষমতার জোরে পাঁচতারা হোটেল চাকলাদারের" height="377" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/25-10-2024/89899090.jpg" style="float:left" width="346" />বিক্ষুব্ধ জনতা হোটেল জাবিরে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে এক পর্যায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এতে ভেতরে আটকে পড়া অনেকে আর বেরোতে পারেনি। শুধু হোটেলটির ছাদ থেকে হেলিকপ্টারে একজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সন্ধ্যার ঠিক আগ দিয়ে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে জমে গেছে লাশের সারি। যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ে পাঠানো তথ্য মতে, সেদিন হোটেল জাবির থেকে পুড়ে যাওয়া যে শতাধিক লোককে আনা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ২২ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে একজন ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁরা ২৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছিলেন। ঘটনার ব্যাপারে শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই ফন্টু চাকলাদার থানায় যে এজাহার দেন, সেখানেও ২৪ জনের মৃত্যুর তথ্য দেওয়া হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১৭ তলা ভবনটি এখনো দাঁড়িয়ে থাকলেও তা ব্যবহার উপযোগী আছে কি না, এ ব্যাপারে গণপূর্ত অধিদপ্তর যশোর সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ভবনটির ব্যাপারে তাঁদের কাছে কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে এটি কী অবস্থায় আছে, তা এখনই বলা যাবে না।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হোটেলটির মালিক শাহীন চাকলাদার নানা কারণে দেশজুড়ে আলোচিত। হত্যা, সন্ত্রাসী বাহিনী লালন, জমি দখল, প্রতিপক্ষকে উচ্ছেদ, টেন্ডারবাজি, চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ বাণিজ্য, পদ বাণিজ্য</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এমনকি ওসিকে থানায় বোমা নিক্ষেপের পরামর্শ দেওয়ার মতো গর্হিত কাজে তিনি যুক্ত ছিলেন বলে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। কোনো কোনো গণমাধ্যম তাঁকে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যশোরের গডফাদার</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> হিসেবেও চিত্রিত করেছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গোয়েন্দা দপ্তরগুলো বিভিন্ন সময় শাহীনের কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনও পাঠিয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">স্নেহধন্য</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হোটেল জাবিরে হামলার নেপথ্যে</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা জয়ী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হোটেল জাবিরে কেন হানা দিল, এ ব্যাপারে জানতে কালের কণ্ঠ কথা বলেছে যশোরের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু বলেন, হোটেল জাবির ছিল দুঃশাসনের প্রতীক। পতনের আগের দিনও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা করে। পরদিন মানুষের সব আক্রোশ গিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ সেক্রেটারির মালিকানাধীন হোটেল জাবিরের ওপর।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যশোরে নাগরিক আন্দোলনের পরিচিত মুখ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ নেতা জিল্লুুর রহমান ভিটু মনে করেন, ৪ আগস্ট বিএনপি কার্যালয়ে হামলা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দেশলাইয়ের কাঠি জ্বেলে রেখেছিল। এরই প্রতিফলন ঘটেছে পরদিন ৫ আগস্ট হোটেল জাবিরে হামলার মধ্য দিয়ে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যশোর থেকে প্রকাশিত লোকসমাজের প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত বলেন, যশোরে আওয়ামী অপকর্মের আইকনিক টাওয়ার ছিল হোটেল জাবির। আওয়ামী লীগের নেতারাই বলতেন, ক্ষমতা না থাকলে ফ্যাসিবাদের আইকনিক স্থাপনা থাকবে না। সেটাই সত্যি হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><strong><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দখল করা জমিতে ভবন নির্মাণ</span></span></span></span></span></strong></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শহরের কেন্দ্রস্থলে বহু বছর ধরে একটি সিনেমা হল ছিল। নাম চিত্রা সিনেমা হল। সেই অনুযায়ী স্থানটির নামও হয়ে যায় চিত্রা মোড়। এটির সর্বশেষ মালিক ছিলেন আনোয়ারা বেগম নামের এক স্কুল শিক্ষিকা। সিনেমা হলের জমি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আনোয়ারা গিয়েছিলেন শাহীন চাকলাদারের কাছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অভিযোগ রয়েছে, শাহীন বিরোধ নিষ্পত্তি না করে উল্টো সামান্য টাকা দিয়ে নিজের নামে রেজিস্ট্রি ও দখল করে নেন কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি। এরপর সেখানে ১৭ তলা ভবন তৈরির কাজে হাত দেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ধোঁকা খেয়ে আনোয়ারা বেগম প্রতিকার পাওয়ার আশায় মুখ খুলতে গিয়ে শাহীন চাকলাদার এবং তাঁর গুণ্ডা বাহিনীর হুমকিতে পারেননি। তিনি এখন শয্যাশায়ী। এ বিষয়ে আনোয়ারা বেগম গণমাধ্যমসহ অন্য কোথাও কোনো বক্তব্য দেন না।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আরো যেসব কারণে আলোচিত জাবির</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভবন তৈরির সময় শাহীন চাকলাদার নিজের প্রভাব খাটিয়ে সামনের ব্যস্ত মাওলানা মোহাম্মদ আলী সড়কের অর্ধেকটা নির্মাণসামগ্রী দিয়ে বন্ধ করে দেন। এতে শহরজুড়ে যানজট লেগেই থাকত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এসব নির্মাণসামগ্রী সরানোর কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বরং পাহারা দিয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অভিযোগ রয়েছে, হোটেল জাবিরের সামনের অংশ পৌরসভার রাস্তার জায়গার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর পৌরসভার অব্যাহতি পাওয়া মেয়র হায়দার গনি খান পলাশ ঢাকা থেকে টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভবনটি যখন নির্মাণ করা হচ্ছিল, তখন মেয়র ছিলেন শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। ভূমি দখল করে ভবনটি পৌরসভার জায়গার মধ্যে ঢুকে পড়েছে কি না, তা বলতে পারবেন রেন্টু। আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেন্টু চাকলাদার আত্মগোপনে আছেন। ফোনেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভবন নির্মাণের পর সেটি নিজের একমাত্র ছেলে জাবিরের নামে আবাসিক হোটেল হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নেন শাহীন চাকলাদার। অভিযোগ রয়েছে, শর্ত পূরণ না হলেও ক্ষমতার দাপটে তিনি এটিকে পাঁচতারা হোটেলের স্বীকৃতিও আদায় করেন।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">লাপাত্তা শাহীন চাকলাদার</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৫ আগস্ট দুপুরের পর থেকে শাহীন চাকলাদারের আর দেখা নেই। গত আড়াই মাসে কাছে বা দূরের কোনো লোক তাঁর চেহারা দেখেনি। মাঝে একবার রটেছিল, আওয়ামী লীগের ২৫-২৬ জন নেতা যশোরের একটি সুরক্ষিত স্থানে অবস্থান করছেন, যাঁদের মধ্যে শাহীন চাকলাদারও রয়েছেন। কিন্তু এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত ১৬ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শাহীন চাকলাদার ও তাঁর স্ত্রী ফারহানা জাহান মালা, দুই মেয়ে সামিয়া জাহান অন্তরা ও মাঈসা জাহান অহনা এবং ছেলে জাবির চাকলাদারের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন আদালত।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>